প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মানবতাবিরোধী অপরাধ: হাসিনার বিচার শেষ হতে পারে ডিসেম্বরে

editor
প্রকাশিত জুলাই ২১, ২০২৫, ১১:০৫ পূর্বাহ্ণ
মানবতাবিরোধী অপরাধ: হাসিনার বিচার শেষ হতে পারে ডিসেম্বরে

Manual3 Ad Code

 

Manual6 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারকাজ শেষে রায় ঘোষণা হতে পারে চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যেই। একই সময়ে আরও কয়েকটি মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের সূত্র এসব কথা জানিয়েছে। সূত্র বলেছে, দুই ট্রাইব্যুনালের চলমান গতিপ্রকৃতি বিবেচনায় এমন আশা করা হচ্ছে।

Manual8 Ad Code

ট্রাইব্যুনালে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে ইতিমধ্যে দুটি মামলার আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ শুরু হয়েছে। এর একটিতে পাঁচটি অভিযোগে শেখ হাসিনা, সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এ মামলায় রাজসাক্ষী হয়েছেন চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হওয়া অপর মামলাটি রাজধানীর চানখাঁরপুলে ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা। এই মামলায় আসামি ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ পুলিশের আট সদস্য।

Manual1 Ad Code

এ ছাড়া সাভারের আশুলিয়ায় গুলি করে হত্যার পর পাঁচজনের মরদেহ ও একজনকে গুরুতর আহত অবস্থায় পুড়িয়ে হত্যা এবং রংপুরে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় করা মামলা দুটিতে অভিযোগ জমা দেওয়ার পর আমলে নিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। আদালত অবমাননার এক মামলায় ইতিমধ্যে শেখ হাসিনার ছয় মাসের কারাদণ্ড হয়েছে ট্রাইব্যুনালে।

আগামী ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের এক বছর পূর্ণ হবে। এখনো জুলাই হত্যাকাণ্ডের কোনো মামলার বিচার শেষ না হওয়ায় নিহতদের পরিবার হতাশ। দ্রুত বিচারের দাবি উঠছে।

জানতে চাইলে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, এক বছরে বিচারকাজের যে অগ্রগতি, তাতে ডিসেম্বরের মধ্যেই কয়েকটি মামলার বিচারকাজ শেষ করা সম্ভব। সেই গতিতে বিচারকাজ এগিয়ে যাচ্ছে। এর মাধ্যমে প্রধান প্রধান যাঁরা অপরাধী, তাঁদের বিচারকাজ হয়তো শেষ করা সম্ভব হবে।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে সারা দেশে মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলার বিচারের জন্য হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদারকে চেয়ারম্যান করে ১৪ অক্টোবর আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল পুনর্গঠন করে অন্তর্বর্তী সরকার। ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হলেন হাইকোর্ট বিভাগের অতিরিক্ত বিচারপতি শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মহিতুল হক এনাম চৌধুরী। ১৮ অক্টোবর শেখ হাসিনা, ওবায়দুল কাদেরসহ ৪৬ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির মাধ্যমে শুরু হয় ট্রাইব্যুনালের কার্যক্রম।

বিচারকাজ দ্রুত করার জন্য সরকার চলতি বছরের ৮ মে ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করে। এই ট্রাইব্যুনালের চেয়ারম্যান করা হয়েছে হাইকোর্ট বিভাগের অবসরপ্রাপ্ত বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে। ট্রাইব্যুনাল-২-এর অপর দুই সদস্য হলেন অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং মাদারীপুরের জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

চিফ প্রসিকিউটর বলেন, তদন্ত সংস্থা, প্রসিকিউশন ও ট্রাইব্যুনাল—সবাই জাতিকে ন্যায়বিচার উপহার দিতে একনিষ্ঠভাবে কাজ করছেন। চলতি মাসে আরও অনেক তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল হবে এবং বিচারপ্রক্রিয়া শুরু হবে। খুব দ্রুত এসব মামলা পর্যায়ক্রমে নিষ্পত্তি হতে থাকবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।

Manual4 Ad Code

সূত্র বলেছে, জুলাই-আগস্টের ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের ৩৫০ টির মতো অভিযোগ জমা হয়েছে ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন ও তদন্ত সংস্থায়। প্রায় সব কটিতে শেখ হাসিনার নাম রয়েছে। বর্তমানে অর্ধশত অভিযোগের তদন্ত চলছে। এর মধ্যে আওয়ামী লীগের আমলের দেড় দশকে গুম-খুন, জঙ্গি নাটক এবং শাপলা চত্বরে হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও রয়েছে। এসব ঘটনায় শেখ হাসিনা ছাড়াও সাবেক মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের সাবেক সংসদ সদস্য, র‍্যাব ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম রয়েছে।

ট্রাইব্যুনালের বিচারকাজের পদ্ধতি হচ্ছে, তদন্ত সংস্থা মামলার তদন্ত শেষে প্রসিকিউশনে প্রতিবেদন জমা দেয়। এরপর প্রসিকিউশন প্রতিবেদন যাচাই-বাছাই করে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ জমা দেয় ট্রাইব্যুনালে। ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিয়ে পরোয়ানা জারি করেন। পরোয়ানার পর আসামি গ্রেপ্তার না হলে তাঁকে হাজির হতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হয়। এরপরও পলাতক থাকলে আসামির পক্ষে আইনজীবী নিয়োগ দেন ট্রাইব্যুনাল। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে অভিযোগ গঠন করা হয়। এর মধ্য দিয়ে শুরু হয় আনুষ্ঠানিক বিচারকাজ। প্রসিকিউশনের সূচনা বক্তব্যের পর সাক্ষ্য গ্রহণ, জেরা ও উভয় পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের পর বিচারকাজ শেষে রায় ঘোষণা করেন ট্রাইব্যুনাল।

প্রসিকিউটর আব্দুস সাত্তার পালোয়ান বলেন, রাজধানীর রামপুরার ঘটনায় করা মামলার প্রতিবেদন প্রায় চূড়ান্ত করেছে তদন্ত সংস্থা। হয়তো শিগগির তা প্রসিকিউশনে জমা হবে। চলতি মাসে আরও কয়েকটি মামলার তদন্ত প্রতিবেদন প্রসিকিউশনের হাতে আসতে পারে। বর্তমানে যে গতিতে চলছে, তাতে ডিসেম্বরের মধ্যে দুটি ট্রাইব্যুনালে অন্তত চার-পাঁচটি মামলার বিচারকাজ শেষ হতে পারে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code