প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জনপ্রশাসনে সংস্কার: ডিসি-ইউএনওদের পদবি বদলে যাচ্ছে

editor
প্রকাশিত জুলাই ২২, ২০২৫, ০৮:৪১ পূর্বাহ্ণ
জনপ্রশাসনে সংস্কার: ডিসি-ইউএনওদের পদবি বদলে যাচ্ছে

Manual2 Ad Code

 

# সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস গঠন করতে যাচ্ছে সরকার।
# সব সার্ভিসের মেধাবী জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের জন্য এসইএস।
# সংস্কার কমিশনের ১০ সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা।
# এসইএস গঠনে ক্যাডার দ্বন্দ্ব বৃদ্ধির আশঙ্কা বিশেষজ্ঞের।

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual2 Ad Code

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস-SES) গঠন করতে যাচ্ছে সরকার। বিভিন্ন সার্ভিস থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে এই সার্ভিসে যোগ দেওয়া যাবে। এসইএসের অধীনে থাকবে উপসচিব থেকে সচিবের সব পদ। এ ছাড়া জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসার পদের নাম পরিবর্তনসহ সংস্কার কমিশনের ১০টি সুপারিশ বাস্তবায়নে মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে নির্দেশনা দিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

Manual2 Ad Code

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ এবং জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় শীর্ষ কর্তৃপক্ষের নির্দেশনায় সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের কাজ শুরু করেছে বলে সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে।

বর্তমানে উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত পদগুলোকে সরকারের পদ বলা হয়। এখন প্রশাসন ক্যাডারের ৭৫ শতাংশ এবং অন্য সব ক্যাডারের ২৫ শতাংশ কর্মকর্তা উপসচিব পদে পদোন্নতি পান। প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা উপসচিব থেকে সচিব পর্যন্ত শতভাগ পদে পদোন্নতির দাবি জানিয়ে আসছেন। আর প্রশাসন ক্যাডার বাদে অন্য সব ক্যাডারের কর্মকর্তারা পরীক্ষা নিয়ে উপসচিবের শতভাগ পদে পদোন্নতির দাবি জানিয়েছেন।

Manual6 Ad Code

সূত্র জানায়, সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস ব্যবস্থা প্রবর্তন, জেলা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পদবি পরিবর্তন, ১৫ বছর চাকরির পর পেনশনসহ স্বেচ্ছা অবসরে যাওয়ার সুযোগ, বাংলাদেশ শিক্ষা সার্ভিস কমিশন গঠন, ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস সংস্কার, মাদ্রাসা শিক্ষার সংস্কার, কারিগরি শিক্ষার উন্নয়ন, কর্মকর্তাদের নিয়মিত পদোন্নতির ব্যবস্থাসহ সংস্কার কমিশনের ১০টি সুপারিশ বাস্তবায়নের নির্দেশনা দিয়ে গত রোববার মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে চিঠি পাঠিয়েছে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়।

মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একজন কর্মকর্তা জানান, সুপারিশগুলো বাস্তবায়নে কাজ শুরুও হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দপ্তরকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। সংস্কার কমিশনের সুপারিশ অনুযায়ী জেলা প্রশাসক পদবি পরিবর্তন করে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা কমিশনার এবং উপজেলা নির্বাহী অফিসারের পদবি পরিবর্তন করে উপজেলা কমিশনার করার পদক্ষেপ নিতে প্রশাসনিক পুনর্বিন্যাসসংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটিকে (নিকার) নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এর বাইরে অন্য সুপারিশগুলো সরকার প্রজ্ঞাপন জারি করে বাস্তবায়ন করতে পারবে। তার আগে সংশ্লিষ্ট সরকারি দপ্তর থেকে ফাইল তৈরি করে প্রধান উপদেষ্টার অনুমোদন নিতে হবে।

জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন পাবলিক সার্ভিস কমিশন পুনর্গঠন করে তিনটি কমিশন গঠনের সুপারিশ করেছে। প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ পর্যন্ত এর মধ্যে শুধু পাবলিক সার্ভিস কমিশন (শিক্ষা) গঠনের নির্দেশনা দিয়েছে। পাবলিক সার্ভিস কমিশন (সাধারণ) এবং পাবলিক সার্ভিস কমিশন (স্বাস্থ্য) গঠনের বিষয়ে কিছু বলেনি।

সূত্র জানায়, প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী ভূমি রেজিস্ট্রেশন অফিস সংস্কারের অংশ হিসেবে এই অফিসের কার্যক্রম আইন ও বিচার মন্ত্রণালয় থেকে নিয়ে ভূমি মন্ত্রণালয়ের অধীনে ন্যস্তের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এ বিষয়ে আইন ও ভূমি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আনুষ্ঠানিকভাবে আলোচনায় বসবে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।

যেভাবে গঠিত হবে এসইএস

Manual2 Ad Code

সব সার্ভিস থেকে অধিকতর মেধাবী ও দক্ষ কর্মকর্তাদের নিয়ে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিব পর্যন্ত পদগুলোর জন্য সুপিরিয়র এক্সিকিউটিভ সার্ভিস (এসইএস) গঠনের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। সব সার্ভিস থেকে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার ভিত্তিতে এসইএসে নিয়োগ দেওয়া হবে। এতে মেধার প্রাধান্য নিশ্চিত হওয়ার পাশাপাশি আন্তসার্ভিস অসমতা দূর হবে বলে মত সংস্কার কমিশনের।

কমপক্ষে ১০ বছরের চাকরির অভিজ্ঞতাসম্পন্ন যেকোনো সার্ভিসের সিনিয়র স্কেলপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা এসইএসের উপসচিব পদের জন্য আবেদন করে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবেন। পাবলিক সার্ভিস কমিশন এই পরীক্ষা নিয়ে সরকারের কাছে সুপারিশ পাঠাবে। উপসচিব, যুগ্ম সচিব ও অতিরিক্ত সচিব পদের জন্য প্রতিবছর একবার করে আলাদাভাবে এই পরীক্ষা হবে। এই পরীক্ষায় কেউ একবার উত্তীর্ণ না হতে পারলে পরের ব্যাচে আরেকবার পরীক্ষা দিতে পারবেন। কোনো কর্মকর্তা এসইএসে প্রবেশের পরীক্ষায় পরপর দুইবার অকৃতকার্য হলে তিনি আর পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পাবেন না।

এসইএসে প্রবেশের পর কর্মকর্তাদের জ্যেষ্ঠতা নির্ধারণ করা হবে সম্মিলিত পরীক্ষার মেধাক্রম অনুসারে। কোনো বিশেষায়িত সার্ভিসের কোনো কর্মকর্তা একবার এসইএসে প্রবেশের পর তিনি আর তার আগের সার্ভিসে ফেরত যেতে পারবেন না। এসইএস পরীক্ষার ফলাফলের ভিত্তিতে সব সার্ভিসের সদস্যদের নিয়ে সম্মিলিত মেধা তালিকা তৈরি করা হবে।

বর্তমানে উপসচিব থেকে অতিরিক্ত সচিবের পদে থাকা কর্মকর্তারা সবাই এসইএস গঠনের পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে এতে অন্তর্ভুক্ত হবেন। সচিব, মুখ্যসচিব ও মন্ত্রিপরিষদ সচিবও স্বয়ংক্রিয়ভাবে এসইএসের সদস্য হবেন। আর একজন মন্ত্রীর নেতৃত্বে একটি মন্ত্রিসভা কমিটি অতিরিক্ত সচিবদের মধ্য থেকে বাছাই করে সচিব এবং সচিবদের মধ্য থেকে মুখ্য সচিব পদে পদোন্নতির জন্য সরকারের কাছে প্রস্তাব পাঠাবে।

এসইএস গঠন হলে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা সহকারী কমিশনার, সিনিয়র সহকারী কমিশনার বা উপজেলা কমিশনার, জেলা কমিশনার (বর্তমানে জেলা প্রশাসক), অতিরিক্ত বিভাগীয় কমিশনার ও বিভাগীয় কমিশনার পদে পদায়িত হবেন। জেলা কমিশনার পদটি এসইএসের জন্য বরাদ্দ থাকলেও সেখানেও প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তাদের পদায়নের সুপারিশ করেছে সংস্কার কমিশন। এ ক্ষেত্রে একই পদে তিনি এসইএস কর্মকর্তার সমমান পাবেন না।

এই প্রসঙ্গটি তুলে ধরে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ফিরোজ মিয়া বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের অনেক প্রস্তাব অসামঞ্জস্যপূর্ণ। অসামঞ্জস্যপূর্ণ সুপারিশ বাস্তবায়ন করা সরকারের জন্য খুব একটা সহজ হবে না। এসইএস গঠন করলে ক্যাডার দ্বন্দ্ব আরও বাড়বে। কারণ উপসচিব পদের কোটা নিয়েই তাদের বিরোধ বেড়েছে।’

ফিরোজ মিয়া আরও বলেন, ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের যেসব প্রস্তাব যৌক্তিক নয়, সেগুলো সংশোধন না করে বাস্তবায়নযোগ্য নয়। কিছু কিছু প্রস্তাব বাস্তবায়ন করলে প্রশাসনে চরম বিশৃঙ্খলা দেখা দেবে। তবে সরকার প্রস্তাবগুলো কীভাবে বাস্তবায়ন করতে যাচ্ছে, আগে সেটি দেখতে হবে।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code