প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১০ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৫শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত বিজয়ের দিন আজ

editor
প্রকাশিত আগস্ট ৫, ২০২৫, ০৭:২৬ পূর্বাহ্ণ
ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত বিজয়ের দিন আজ

Manual5 Ad Code

 

# মুক্তির আনন্দ দেশজুড়ে, সবার মুখে ছিল বিজয়ের স্লোগান

# বেলা ১১টার দিকে বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে গণভবন ছাড়েন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

# তরুণদের চোখে ছিল ন্যায়-সাম্যভিত্তিক, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

Manual3 Ad Code

আজ ৫ আগস্ট, মুক্তির দিন। দীর্ঘ পনেরো বছরের আওয়ামী লীগ সরকারের স্বৈরাচারী শাসনের কবল থেকে দেশকে মুক্ত করার দিন। ছাত্র-জনতার রক্তস্নাত সেই বিজয়ের দিন ফিরে এসেছে। গত বছর আজকের এই দিনে আপামর ছাত্র-জনতা বিজয়োল্লাসে জাতীয় পতাকা হাতে ঘর ছেড়ে পথে নেমে এসেছিলেন।

বেলা ৩টা, ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট। সেনাপ্রধানের ভাষণের অপেক্ষা না করে মুক্তির আনন্দে বেরিয়ে পড়ে দেশের সর্বশ্রেণির মানুষ। প্রতিটি গলির মুখ থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল। ছোট্ট শিশু।
কলেজ ড্রেস পরা বালক-বালিকা। কপালে পতাকা বাঁধা তরুণ। মসজিদের ইমাম। পাড়ার সবজি বিক্রেতা।
সাদা চুলে মেহেদি পরা বৃদ্ধ। একে একে সেই মিছিলে শরিক হচ্ছেন সবাই। গন্তব্য রাজপথ। সবার মুখে বিজয়ের স্লোগান! দেশমাতৃকার নাম বাংলাদেশ! বাংলাদেশ!

দিনটি উপলক্ষে রাষ্ট্রপ্রতি মো. সাহাবুদ্দিন ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস ছাত্র-জনতাকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়ে বাণী দিয়েছেন। রাষ্ট্রপতি তাঁর বাণীতে বলেছেন, ‘বৈষম্যমূলক রাষ্ট্রব্যবস্থা ও ফ্যাসিবাদী অপশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র-শ্রমিক-জনতা সম্মিলিত প্রতিরোধ গড়ে তুলে ২০২৪ সালের এই দিনে চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে।

’ অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বাণীতে বলেছেন, ‘জুলাই আমাদের নতুন করে আশার আলো- একটি ন্যায় ও সাম্যভিত্তিক, বৈষম্য ও দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখিয়েছে।’

 

Manual6 Ad Code

ছাত্র-জনতার রাজপথে নেমে আসার এই রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের শুরুটা হয়েছিল ২০২৪ সালের জুলাইয়ে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন থেকে। তারা তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের চাকরিতে কোটা সংরক্ষণের সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে স্লোগান তোলে- কোটা না মেধা! মেধা, মেধা! মেধাবী শিক্ষার্থীদের সেই স্লোগান ধীরে ধীরে এক দফায় পরিণত হয়। সবার মুখে একই কথা- এক দফা, এক দাবি/ হাসিনা তুই কবে যাবি!

 

জুলাইজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন ক্রমশ দেশের অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোতেও ছড়িয়ে পড়ে। সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, স্কুল, কলেজ, মক্তব, মাদরাসা- সব প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা রাজপথে নেমে আসে। ১৬ জুলাই দুপুরে রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের সামনে পার্ক মোড়ে বুক পেতে দাঁড়িয়ে থাকা আবু সাঈদকে লক্ষ্য করে গুলি করে পুলিশ। হাসপাতালে নেওয়া হলে মারা যান তিনি। নিরস্ত্র আবু সাঈদের গুলিবিদ্ধ হওয়ার ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে সারা দেশে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। প্রায় একই সময়ে চট্টগ্রামে শাহাদাতবরণ করেন ছাত্রদল নেতা ওয়াসিম! হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে সোচ্চার হয় সাধারণ মানুষ। কোটা সংস্কার আন্দোলন তখন সরকার পতনের আন্দোলনে রূপান্তরিত হতে থাকে। বাড়তে থাকে শহীদের সংখ্যা।

 

তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৩ আগস্ট শিক্ষার্থীদের আলোচনার প্রস্তাব দিয়ে বলেন, আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের জন্য গণভবনের দরজা খোলা। ওই প্রস্তাব নাকচ করে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। ছাত্র-জনতার শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে নির্বিচার গুলি ও হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে এবং ৯ দফা দাবিতে ৩ আগস্ট সারা দেশে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ হয়। ওই দুপুরের আগেই বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে জড়ো হতে থাকেন ছাত্র-জনতা। বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে বিপুলসংখ্যক মানুষের উপস্থিতিতে সরকার পতনের এক দফা ঘোষণা করেন তখনকার বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক নাহিদ ইসলাম। সরকারের বিরুদ্ধে অসহযোগ আন্দোলন সফল করতে ছাত্র-জনতার প্রতি ১৫টি নির্দেশনা দেওয়া হয় ওই সমাবেশ থেকে। শহীদ মিনারে সমাবেশের পাশাপাশি ৩ আগস্ট বিকালে ধানমন্ডির রবীন্দ্রসরোবরে সংগীতশিল্পীদের প্রতিবাদী সমাবেশ থেকেও সরকারের পদত্যাগ দাবি করা হয়।

 

জুলাই হত্যাকাণ্ড সামরিক বাহিনীতেও প্রতিক্রিয়া তৈরি করে। ৩ আগস্ট ঢাকায় সেনা সদরে নিয়মিত কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ‘অফিসার্স অ্যাড্রেস’ (সেনা কর্মকর্তাদের মতবিনিময়) হয়। ওই মতবিনিময়ে সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বিভিন্ন পর্যায়ের সেনা কর্মকর্তাদের বক্তব্য শোনেন। ওই দিন সেনা কর্মকর্তারা স্পষ্ট জানিয়ে দেন, তারা ছাত্র-জনতার বুকে গুলি চালাতে পারবেন না। মতবিনিময় অনুষ্ঠানে জেনারেল ওয়াকার-উজ-জামান বলেন, বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দেশের জনগণের আস্থার প্রতীক। জনগণের স্বার্থে এবং রাষ্ট্রের যেকোনো প্রয়োজনে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী সব সময় জনগণের পাশে আছে এবং থাকবে।

 

অসহযোগ আন্দোলনের প্রথম দিন ৪ আগস্ট সারা দেশ থেকে একের পর এক মৃত্যুর খবর আসতে থাকে। এক দফা দাবি আদায়ে ৬ আগস্ট মার্চ টু ঢাকা কর্মসূচির যে ঘোষণা দিয়েছিল বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা তা এগিয়ে এনে ৫ আগস্ট বাস্তবায়নের ঘোষণা দেওয়া হয়। ৫ আগস্ট সকাল থেকেই রাজধানীর প্রবেশপথগুলোতে ব্যারিকেড দেন সেনাবাহিনী, বিজিবি, র‌্যাব, পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর সদস্যরা। সেই ব্যারিকেড ভেঙে ছাত্র-জনতা এগোতে থাকেন। বেলা ১১টার পর থেকে ঢাকার পথে ঢল নামে মানুষের। কারফিউ ভঙ্গ করে বিভিন্ন স্থান থেকে আসতে শুরু করেন তারা। একপর্যায়ে শাহবাগ, কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারসহ গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট লোকে লোকারণ্য হয়ে ওঠে। দুপুরে গণমাধ্যমে খবর পাঠানো হয়, জাতির উদ্দেশে ভাষণ দেবেন সেনাপ্রধান।

 

Manual8 Ad Code

 

শেখ হাসিনার পলায়ন :

Manual6 Ad Code

আওয়ামী লীগ সরকারের তখনকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, তার বোন শেখ রেহানাকে নিয়ে দেশ ছেড়েছেন বলে আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এএফপি ব্রেকিং নিউজ হিসেবে প্রচার করে। বেলা ১১টার দিকে দেশ ছাড়েন বলে বিবিসির প্রতিবেদনে প্রকাশ করা হয়। সেনাবাহিনী সূত্রে বিবিসি জানতে পেরেছে, ৫ আগস্ট বেলা ১১টার মধ্যেই শেখ হাসিনা গণভবন ছেড়ে গেছেন। সেখান থেকে বাংলাদেশের হেলিকপ্টারে করে ত্রিপুরার আগরতলা পৌঁছেন। এরপর ভারতের বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ বিমানে চেপে শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা দিল্লি পৌঁছান। এরই মধ্যে চালু হয় ইন্টারনেট। ছড়িয়ে পড়ে শেখ হাসিনার পলায়নের খবর। বাঁধ ভাঙা উচ্ছ্বাসে ফেটে পড়ে দেশের মানুষ। শুরু হয়ে যায় ‘পলাইছে রে পলাইছে, শেখ হাসিনা পলাইছে’ স্লোগান। লাখো বিক্ষুব্ধ জনতা ততক্ষণে পৌঁছে যায় গণভবনে। সেখানে লাল-সবুজের পতাকা উড়িয়ে মুক্ত বাতাসে স্বাধীনতার স্বাদ উপভোগ করে সংগ্রামী জনতা। রাস্তায় রাস্তায় শুরু হয় উন্মত্ত জনতার আনন্দোচ্ছ্বাস। গোটা বাংলাদেশ পরিণত হয় এক উৎসবের নগরীতে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code