প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নির্বাচনের ঘোষণাতেও শঙ্কা কাটেনি

editor
প্রকাশিত আগস্ট ১৪, ২০২৫, ০৭:৩৫ পূর্বাহ্ণ
নির্বাচনের ঘোষণাতেও শঙ্কা কাটেনি

Manual5 Ad Code

 

Manual5 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

শুধু তারিখ ঘোষণাটাই বাকি। তারপরও নির্বাচন নিয়ে সংশয় দূর হচ্ছে না। সরকারপ্রধানের পর নির্বাচন কমিশনের (ইসি) ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের ঘোষণা, আরপিও সংশোধনের উদ্যোগ কোনো কিছুতেই নির্বাচনী কার্যক্রম দানা বাঁধছে না। পেশাজীবীদের মতো সাধারণ মানুষেরও প্রশ্ন ফেব্রুয়ারিতে ভোট হবে তো?

ঘোষণার পরও ভোট নিয়ে শঙ্কার আলোচনা চাঙা হয়ে উঠছে রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যের কারণে। দলগুলোর শর্তের জালে নির্বাচন আটকে যাওয়ার ভয় রয়েছে। পিআর পদ্ধতি নিয়ে এখনো কঠোর মনোভাব দেখাচ্ছে ইসলামী দলগুলো। জুলাই সনদ নিয়ে অনড় জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। আইনশৃঙ্খলার অবনতি তো প্রতিদিনই দুশ্চিন্তা বাড়াচ্ছে। সরকারের দায়িত্বশীলরা যথাসময়ে নির্বাচনের কথা বললেও ভোটের হাওয়া বইছে না।

Manual7 Ad Code

ঢাকা বিশ^বিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মোহাম্মাদ নুরুল আমিন ব্যাপারী বলেন, ‘জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) জুলাই সনদের যা চেয়েছে এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী উচ্চকক্ষে পিআর পদ্ধতি নিয়ে যে অবস্থান নিয়েছে, তা নিয়ে বিএনপির সঙ্গে ঐকমত্যে আসতে না পারলে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা থেকে যাবে। এজন্য তাদের নিজেদের বসে আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করতে হবে। এর জন্য বাইরের ভূমিকা লাগবে।’

বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান গত সোমবার এক বক্তব্যে বলেছেন, ‘দেশের গণতান্ত্রিক অবস্থা ফিরিয়ে আনা এবং জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করতে নানা ষড়যন্ত্র চলছে।’ দলটির অন্য নেতারা বলছেন, জাতীয় নির্বাচনের আগে বিভিন্ন দাবি ব্যবহার করে নির্বাচন পেছানোর চেষ্টা হচ্ছে। বিশেষ করে জুলাই সনদ কার্যকর না করা, বিচার প্রক্রিয়া চালানো, পিআর পদ্ধতিসহ বিভিন্ন ইস্যু সামনে এনে সময়ক্ষেপণ করার পাঁয়তারা হচ্ছে। এনসিপি নির্বাচনের পক্ষে নয় বলে মত প্রকাশ করেছে। তাদের মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেছেন, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হলে তা গ্রহণযোগ্য হবে না। আবার জামায়াতে ইসলামীও নির্বাচন পেছানোর বিষয়ে আপত্তি না জানালেও সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন নিশ্চিত করতে বিচার ও সংস্কারের ওপর জোর দিয়ে বসে আছে। তারা সরকারের প্রতি দাবি করেছে, নির্বাচনের আগে সংস্কারগুলো বাস্তবায়ন করতে হবে। ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশ জুলাই সনদের আলোকে নির্বাচন হতে হবে এটা প্রধান দাবি বলে জানাচ্ছে।

তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি না হলে সুষ্ঠু নির্বাচন করা কঠিন হবে। আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়া বা না নেওয়ার বিষয়ে সরকারকে স্পষ্ট সিদ্ধান্ত নিতে হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ড. ইমতিয়াজ আহমেদ বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের ঘোষণা দিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার নির্বাচনের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। এ অবস্থায় নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা থাকার কথা নয়। কে কী বলল তাতে কিছু যায়-আসে না। নির্বাচন হতে হবে। নির্বাচন না হওয়ার বিকল্প নেই।’

তিনি বলেন, ‘জুলাই সনদ ঘোষণা করে তা বাস্তবায়ন, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ খুন, গুমের সঙ্গে জড়িতদের বিচার, নির্বাচনের পরিবেশ তৈরিসহ বিভিন্ন ইস্যুতে বিএনপি, জামায়াতে ইসলামী, এনসিপিসহ ইসলামী দলগুলোর মধ্যে এক ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। যথাসময়ে নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা দেখা যাচ্ছে। জাতীয় ঐকমত্য কমিশন বিশেষজ্ঞসহ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আবার যে বৈঠকে বসবে, সেখানে আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান হবে। সবার মতামতের ভিত্তিতে জুলাই সনদ ঘোষণা করলে এ শঙ্কা কেটে যাবে বলে আশা করি।’

 

অন্যদিকে বিভিন্ন দলের মধ্যে মতবৈষম্য ও শঙ্কা

থাকলেও সামগ্রিকভাবে নির্বাচন আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়েছে। দলগুলো দাবি ও ভোটের মাঠের প্রস্তুতি একই সঙ্গে চালানোর চেষ্টা করছে। নির্বাচন ঘিরে চলছে উত্তেজনা, তবে দেশের জনগণ এখন নির্বাচনের পক্ষে প্রবল উৎসাহী এবং রাজনীতির মাঠে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ও রাজনৈতিক কর্মসূচি ত্বরান্বিত হচ্ছে। গত সোমবার রাতে বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠক হয়। সেখানে আগামী নির্বাচন নিয়ে দলের বেশ কিছু সিদ্ধান্ত আসে। বৈঠক সূত্রগুলো বলছে, প্রধান উপদেষ্টার ঘোষিত সময়ে নির্বাচন যাতে হয়, সেজন্য সরকারের ওপর একদিকে চাপ অব্যাহত রাখা, অন্যদিকে নির্বাচনের প্রস্তুতি চালিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত হয়েছে।

বৈঠকে জানানো হয়, নির্বাচন বানচালে অদৃশ্য শক্তি কাজ করছে। নির্বাচন পেছাতে পরিকল্পিতভাবে নানা ইস্যু সামনে আনছে কয়েকটি রাজনৈতিক দল। নির্বাচনের আগে সংস্কার বাস্তবায়ন, জুলাই সনদ কার্যকর, পিআর (আনুপাতিক হার) পদ্ধতিতে নির্বাচন দাবিসহ একের পর এক ইস্যু তৈরি করছে তারা। সংবিধান পরিবর্তনের প্রস্তাবও নির্বাচন পেছানোর ষড়যন্ত্রের একটি অংশ বলে মনে করেন দলগুলোর নেতারা। এজন্য পার্শ্ববর্তী একটি দেশ বাংলাদেশের নির্বাচনসহ নানা বিষয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে বলেও মনে করেন তারা।

Manual2 Ad Code

বিএনপির একাধিক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে অভিযোগ করে বলেন, নির্বাচনের আগে ডাকসু, চাকসু, রাকসু নির্বাচন সেই ষড়যন্ত্রের অংশ হতে পারে। নির্বাচন কেন্দ্র করে তিনটি বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ অশান্ত করে জাতীয় নির্বাচন বানচালের অপচেষ্টা হতে পারে। এ ছাড়া নির্বাচনের আগে অনেক প্ল্যাটফর্ম ইতিমধ্যে সক্রিয় হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন জরিপের নামে নতুন নতুন তথ্য প্রকাশ করা হচ্ছে। এসব নির্বাচন বিলম্বিত করার অপকৌশলের দৃশ্যমান প্রমাণ। তাছাড়া সংসদ নির্বাচন ব্যাহত করতে একটি মহল পরিকল্পিতভাবে মবোক্রেসি, হত্যা, ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজি ইত্যাদি অপরাধমূলক কর্মকা-ে উসকানি দিচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলোর অযোগ্যতা এবং নির্লিপ্ততা পরিস্থিতি আরও অবনতির দিকে নিয়ে যাচ্ছে। সংশ্লিষ্ট দায়িত্বপ্রাপ্ত উপদেষ্টারা গণমাধ্যমে শুধু কথাই বলছেন কিন্তু কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ। এতে নির্বাচন ঠেকানোর ষড়যন্ত্রকারীরা সুযোগ পাচ্ছে। তারা বলেন, বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে রাজপথে একের পর এক গোষ্ঠী আন্দোলনে নামছে। এসব আন্দোলনে সম্পৃক্ত হচ্ছে ফ্যাসিস্ট সরকারের লোকজন। নির্বাচন বানচালে তাদের হাত থাকতে পারে।

গত মঙ্গলবার বিকেলে রাজধানীর খামারবাড়িতে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউটে এনসিপি যুব উইং জাতীয় যুবশক্তির সম্মেলনে প্রধান অতিথির বক্তব্যে নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, ‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না। সে সময় নির্বাচন হলে যারা শহীদ হয়ে কবরে আছেন, তাদের জীবন ফিরিয়ে দিতে হবে। আর যে ভাইটি হাত হারিয়েছেন, তার হাত ফিরিয়ে দিতে হবে।’

তার এমন বক্তব্যের এক দিন পর গতকাল বুধবার সচিবালয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ‘ইউ পেনশন অ্যাপ’-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘কোনো ব্যক্তি বা দলের কথায় নির্বাচন বন্ধ হবে না। আগামী জাতীয় নির্বাচন সুষ্ঠু ও সুন্দর করার লক্ষ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় সব ধরনের সহায়তা করছে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে রাখতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে সব ধরনের লজিস্টিক সহায়তা দেওয়া হচ্ছে। আগামী নির্বাচন অবশ্যই সুষ্ঠু হবে।’

গতকাল রাজধানীর আগারগাঁওয়ের নির্বাচন ভবনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের চার সদস্যের প্রতিনিধিদল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে। এরপর দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব ও দলের মুখপাত্র গাজী আতাউর রহমান বলেন, ‘যেহেতু একটা জুলাই বিপ্লব হয়েছে। জুলাই অভ্যুত্থান হয়েছে যে প্রত্যাশার আলোকে, সেই প্রত্যাশার আলোকে এখানে জুলাই সনদ হবে। সনদের আইনি ভিত্তি হবে। সেই সনদের আলোকে নির্বাচন হতে হবে। এটা আমাদের প্রধান দাবি।’

ভোটের মাস-তারিখ নিয়ে দ্বিমত না থাকলেও জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দল নির্বাচনী প্রার্থী বাছাইয়ে কাজ চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানা গেছে। বিভিন্ন দাবি নিয়ে সরকারের সঙ্গে আলোচনা এবং নির্বাচনের প্রস্তুতি একসঙ্গে চালানোর কৌশল নিয়েছে তারা। নির্বাচনের প্রস্তুতি আগেভাগেই শুরু করেছে জামায়াতে ইসলামী। ৩০০ আসনে প্রার্থী ঠিক করার বিষয়টিও অতীতে জানানো হয়েছিল দলটির পক্ষ থেকে। জুলাই সনদ ও ঘোষণাপত্রের কার্যকারিতার ভিত্তিতে সামনের নির্বাচন হতে হবে বলে দাবি জানালেও এনসিপি তাদের প্রার্থী বাছাইয়ে চালিয়ে যাচ্ছে বলে সূত্রগুলো দাবি করছে।

Manual4 Ad Code

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন বলেন, ‘আজকে আমরা অনেক কথা শুনতে পাই। কেউ কেউ হুমকি দেন যে, ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হতে দেবেন না। মনে হচ্ছে, সেই স্বৈরাচারের যে আচরণ ছিল, স্বৈরাচারের যে কথা ছিল সেই ধরনের কথার পদধ্বনি আমরা শুনতে পাই। আমি আহ্বান জানাব, আপনাদের কর্মসূচি নিয়ে মাঠে থাকেন, ধমক দিয়ে দাবিয়ে রাখা যাবে না নির্বাচনী অভিযাত্রাকে।’

‘ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচন হবে না’ এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরুদ্দীন পাটওয়ারীর এমন ঘোষণার সমালোচনা করে জাতীয়তাবাদী গণতান্ত্রিক আন্দোলন (এনডিএম) চেয়ারম্যান ববি হাজ্জাজ বলেন, ‘তার (নাসীরুদ্দীন) এমন বক্তব্য দেশের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার জন্য নেতিবাচক দৃষ্টান্ত। তারা সরকারের সঙ্গে সরাসরি আলোচনা করার সুযোগ রাখে। তাই এ ধরনের মন্তব্যের আগে সরকারের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত ছিল।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code