প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২১শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৬ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১লা রজব, ১৪৪৭ হিজরি

গণমাধ্যমের আদলে ফেসবুক পেজ, বাড়ছে বিভ্রান্তি

editor
প্রকাশিত আগস্ট ২০, ২০২৫, ১০:৩৪ পূর্বাহ্ণ
গণমাধ্যমের আদলে ফেসবুক পেজ, বাড়ছে বিভ্রান্তি

Manual8 Ad Code

 

Manual2 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

দেশের প্রথম সারির পত্রিকা, অনলাইন, টেলিভিশনের লোগো কপি করে তৈরি হয়েছে একাধিক ফেসবুক পেজ। মজা করার উদ্দেশ্যে এসব পেজ তৈরি করা হলেও এগুলো নিয়ে এখন ব্যাপক বিভ্রান্তি ছড়িয়ে পড়ছে। এসব পেজে অপতথ্য, ভুয়া খবর ছাড়াও প্রচুর রাজনৈতিক কনটেন্ট পোস্ট করা হচ্ছে। এমনকি মূল গণমাধ্যমের কনটেন্টও কপি করে ছাড়া হচ্ছে পোস্ট। এভাবে জনপ্রিয় গণমাধ্যমের নাম-লোগো ব্যবহার করে নকল বা ভুয়া পেজ খোলায় সেসব গণমাধ্যমের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়েছে। ‘রেপুটেশন’ বা সুনাম ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার নতুন চ্যালেঞ্জে পড়ছে গণমাধ্যম। তাই অপতৎপরতা রোধে এখনই কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা বলেছেন বিশেষজ্ঞরা।

 

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. সাইফুল আলম চৌধুরী বলেন, ‘টিভি, সংবাদপত্রকে নকল করে যেসব ফেসবুক পেজ তৈরি হচ্ছে, সেগুলোর টিভি বা সংবাদপত্র হিসেবে অস্তিত্ব নেই। এ ধরনের বিষয়ের জন্য রাষ্ট্রীয় পলিসি থাকা উচিত। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের কপিরাইটের বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হবে। একটা-দুটা পেজ বন্ধ করে কোনো সমাধান হবে না। একটা বন্ধ করা হলে আরেকটা খুলবে।’

এই প্রবণতার কারণ উল্লেখ করে এ শিক্ষক বলেন, যখন রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা থাকে, তখন সারা বিশ্বে এ ধরনের বিষয় লক্ষ করা যায়। নির্বাচনের আগে মতামতকে প্রভাবিত করার জন্যও এসবের ব্যবহার বেড়ে যায়। ফটোকার্ড, লোগো নকল করে অপতথ্য ছড়ানো হয়। মানুষ তো সবাই সচেতন নয়। যখন প্রথম সারির পত্রিকা, টিভির মতো করে একই ধরনের ফটোকার্ড তৈরি করা হয়, সাধারণ জনগণ সেটি বুঝবে না। তখন তারা বিভ্রান্ত হবে।

Manual6 Ad Code

সমাধানের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘মিডিয়া লিটারেসি বাড়াতে হবে; যা স্কুল থেকে শুরু করা উচিত। কিন্তু আমাদের দেশে তা নেই। আগে মানুষের মৌলিক অধিকার ছিল পাঁচটি। এখন হয়ে গেছে ছয়টি। তথ্যের অধিকারও এখন মৌলিক অধিকার। খাবার, শিক্ষা, স্বাস্থ্যে যে রকম ভেজাল হয়, সে রকম তথ্যেও ভেজাল হয়। খাবারের ভেজালটা আমরা রোধ করি মানুষকে সচেতন করে। মানুষ একসময় পণ্যের মেয়াদ দেখত না। কিন্তু যখন বিষয়টা জানতে পারল, তখনই চেক করে পণ্য কেনার অভ্যাস তৈরি হলো। এখন এই শিক্ষাটা তাকে দিতে হবে- তথ্যেও ভেজাল হয়।’ তিনি বলেন, ‘নির্ভুল তথ্য কীভাবে পাবে, সেটা সম্পর্কে মানুষকে ধারণা দিতে হবে। বিষয়টিকে বেসিক লিটারেসির মধ্যে আনতে হবে। একদিনে দু-একটা পেজ বন্ধ করে দিলেই এটার সমাধান হবে না। মেটা, ইউটিউব তেমন কিছু করবে না। কমপ্লেন দিলে হয়তো সরিয়ে দেবে। যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের সরকার এসব নিয়ে কঠোর নিয়ম অনুসরণ করে। কিন্তু আমাদের দেশে মেটা সহজে ব্যবসা করতে পারে। যার কারণে কে হেট স্পিচ ছড়াচ্ছে, এসব মেটা খুব বেশি গুরুত্ব দিয়ে দেখছে না। কারণ মেটা দেখে, কার ফলোয়ার বেশি। এটা এক দিনের প্রবলেম নয়, তাই এক দিনে সমাধানও সম্ভব নয়। মানুষকে সচেতন করতে হবে ভেজাল খাদ্যের মতো ভেজাল তথ্যেও ঝুঁকি রয়েছে। ভেজাল ইনফরমেশনে শুধু নিজে না, পুরো কমিনিউটি ঝুঁকিতে পড়বে।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের তথ্যপ্রযুক্তি ইনস্টিটিউটের পরিচালক অধ্যাপক ড. বি এম মইনুল হোসেন বলেন, ‘সরকারকে বিজনেসের সুরক্ষার বিষয়ে চিন্তা করতে হবে। অন্যের ডিজাইন, লোগো ব্যবহার করে অপতথ্য ছড়িয়ে রেপুটেশন নষ্ট করার বিষয়টি মনিটরিং করতে হবে। আমরা নিজেরাই তো কনফিউজড হয়ে যাচ্ছি নিখুঁত ডিজাইন দেখে। এসব নিয়ে অসন্তোষ বা একধরনের অস্থিরতা তৈরি করা হচ্ছে। ক্ষেত্রবিশেষে তো সংঘর্ষেও রূপ লাভ করতে দেখেছি আগে।’ তিনি বলেন, ‘জিনিসটার গুরুত্ব বিবেচনায় মনিটরিং সেল গঠন করা হচ্ছে না, অপরাধ ইউনিটকে কাজ করতে দেখছি না। এই মুহূর্তে মনিটরিং করা খুবই জরুরি। এটা মনিটরিং করা এবং প্রতিরোধে ব্যবস্থা নেওয়া ছাড়া বিকল্প নেই। এ বিষয়ের দায়িত্বে যে মন্ত্রণালয় বা অধিদপ্তর আছে, তাদের ব্যবস্থা নিতে হবে।’

Manual8 Ad Code

পর্যালোচনায় দেখা যায়, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে তুলনামূলক এ ধরনের নকল পেজ বেশি দেখা যাচ্ছে। ইদানীং যমুনা টিভির লোগো নকল করে Anwar Tv নামে একটি ফেসবুক পেজ পরিচালনা করা হচ্ছে। ২০২৫ সালের ২৬ মে পেজটি চালু করা হয়। তিন মাস পূর্ণ হওয়ার আগেই যার ফলোয়ার সংখ্যা দাঁড়ায় ২ লাখ ৩৮ হাজারে। ‘এ পেজটি শুধুমাত্র বিনোদনের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছে, দয়া করে কোনো পোস্ট সিরিয়াসলি নিবেন না, আমরা শুধুমাত্র সমসাময়িক নিউজগুলো সারকাজম আকারে প্রকাশ করি’ এমনটি লেখা থাকলেও এটা নিয়ে ব্যাপক বিভ্রান্তি তৈরি হচ্ছে। কারণ এই পেজ থেকে তৈরি কনটেন্ট ব্যাপক শেয়ারের কারণে এটা যে ফান কনটেন্ট, সেটা অনেকেই বুঝতে পারেন না। ফলে ব্যাপক নেতিবাচক মন্তব্যও করতে দেখা গেছে ফেসবুক ব্যবহারকারীদের।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থী রায়হান ফেসবুকে লিখেছেন, ‘পাঠ্যপুস্তকে সার্কাজম, মিমস, আইরনি, ফ্যাক্টচেকিং ইত্যাদি বিষয় যুক্ত করা উচিত। আজকে দেখলাম দ্য দিল্লি স্টার এবং আনোয়ার টিভির নিউজকে সিরিয়াস মনে করে কমেন্ট বক্সে ধুমাইয়া গালাগালি করতেসে কিছু লোক।’ সেই পোস্টে একজন মন্তব্য করেন- ‘ঝামেলা হচ্ছে যে, আনোয়ার টিভি আসার পর থেকে প্রত্যেকটা পোস্ট দু-তিনবার করে ফ্যাক্ট চেক করা লাগে।’

ইংরেজি দৈনিক The Daily Star-কে নকল করে তৈরি করা হয়েছে The Delhi Star নামে আরেকটি পেজ। যার ফলোয়ার সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার। গত ১৭ আগস্ট পেজটিতে ১৫ সেকেন্ডের একটি ভিডিও ক্লিপ ছাড়া হয়। যাতে লেখা ছিল “ভোরের আলো ফুটতেই ঢাবি ক্যাম্পাসে সাদা পোশাকধারীদের অনুপ্রবেশ। আতঙ্কে শিক্ষার্থীরা, তাদের ধারণা এরা ‘র’ কিংবা ‘আইএসআই’ এজেন্ট।” সেই ভিডিওতে সাদা ড্রেস পরা একদল লোককে হাঁটতে দেখা যায়। এই ভিডিওটি দেখা হয়েছে ১১ লাখ বার। বিষয়টিকে সিরিয়াসলি নিয়ে অনেককে বাজে কমেন্ট করতে দেখা গেছে। সেই কমেন্টে মূল ইংরেজি দৈনিক The Daily Star-কে গালি দিতে দেখা যায়। এটা যে ফেইক পেজ তা অনেকেই বুঝতে পারেননি। একজন মন্তব্য করেন, ‘মানুষ কে কত বোকাসোকা ভাবে এরা বুঝছেন ভাই, এভাবেই এরা গুজব ছড়িয়ে দেশটা ধ্বংস করেছে।’ আরেকজন সচেতন ব্যক্তি মন্তব্য করেন, ‘এটা সার্কাজম। সার্কাস্টিক পেইজ। দিল্লি স্টার নামের কমেডি পেইজ, ডেইলি স্টার না। একটু বুঝেন আগে।’

দৈনিক মানবজমিনকে নকল করে গত ১৩ আগস্ট খোলা হয়েছে ফেসবুক পেজ মনিরজমিন। লোগো, ফ্রন্ট অনেকটা একই মূল মানবজমিনের মতো। যেখানে রাজনৈতিক নেতিবাচক পোস্ট করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া প্রথম সারির পত্রিকা, টিভি চ্যানেল নিয়েও আরও অনেক পেজ খোলা হয়েছে।
বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সাধারণ মানুষ আসল ও নকল পেজ আলাদা করতে না পারার কারণে বিভ্রান্ত হচ্ছেন। ভুয়া খবরের কারণে দোষ পড়ছে প্রকৃত গণমাধ্যমের ওপর। তাদের ব্যাপারে নেতিবাচক ধারণা তৈরি হচ্ছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, বর্তমান সময়ে অনলাইনে পাওয়া তথ্য যাচাই করে বিশ্বাস করতে হবে। এ ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের ভেরিফায়েড (নীল চিহ্নযুক্ত) পেজ অনুসরণ করা উচিত। একই সঙ্গে ভুয়া পেজ চিহ্নিত হলে রিপোর্ট করতে হবে।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code