প্রজন্ম ডেস্ক:
“সার আমরা সাধারণত ডিলারের কাছে পাই না। খুচরা দোকান থেকেই কিনি বলে সরকার নির্ধারিত দামে সার পাই না। বেশি দামের সারের সাথে সেচের পয়সা যোগ করলে লাভ যা থাকে, সেটা বলার মত না।”
ন্যায্যমূল্যে সার না পাওয়া নিয়ে হতাশার সুরে বলছিলেন চাঁদপুরের শাহরাস্তি উপজেলার চাষি শিবলুর রহমান। বললেন, প্রতিবছর এক একরের বেশি জমি বর্গা নিয়ে ধান চাষ করেন। ভালো ফলন হলেও সারের বাড়তি দামের জন্য খুব একটা লাভ হয় না।
“এই সবের সাথে নিজের মজুরির দাম হিসাব করলে আসলে শেষ পর্যন্ত লাভের লাভ কিছুই থাকে না।”
একই ধরনের সংকটের কথা বলছিলেন এ এলাকার আরেক চাষি দুলাল হোসেন।
“চাষের খরচের বড় একটি অংশ চলে যায় সার কিনতেই। সারের দামটা যদি আরও একটু নিয়ন্ত্রণে রাখা যেত, তাহলে ধান চাষ করে আমাদের পকেটে আরও দুটো পয়সা থাকত। কিন্তু এইবার তা হল না। আমাদের বেশি দামে সার কিনতে হচ্ছে।”
সরকারি একটি গোয়েন্দা সংস্থার তথ্য বলছে, সরকারের বিপুল ভর্তুকির পরও সারের বাজার পরিবেশক (ডিলার) সিন্ডিকেট থেকে মুক্ত হতে পারেনি। পরিবহন ঠিকাদার ও ডিলাররা অবৈধভাবে সার মজুত করে ‘কৃত্রিম সংকট’ সৃষ্টি করছে।
সেই সঙ্গে সঠিক সময়ে সার খালাস না করা, ডিলার নিয়োগে অনিয়মের মত কারণেও বাড়তি দাম গুনতে হচ্ছে কৃষকদের।
সিন্ডিকেটের নেপথ্যে কারা
সারের বাজারে যে কৃত্রিম সংকট কিংবা কারসাজি রয়েছে তা ওই গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিবেদনে উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে সংস্থাটি মাঠ থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে নিজেদের পর্যবেক্ষণ ও এ নিয়ে বেশ কিছু সুপারিশও তুলে ধরেছে। প্রতিবেদনটি সরকারের কৃষি, বাণিজ্য ও শিল্প মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
এতে বলা হয়, সম্প্রতি প্যারাগন কোম্পানি রংপুরের গংগাচড়া উপজেলার নামে বরাদ্দ করা ৬০ বস্তা সার নীলফামারীর ডিমলা উপজেলায় নিয়ে যাচ্ছিল। পথে ওই জেলার জলঢাকা উপজেলায় স্থানীয় কৃষকরা তা আটকে প্রশাসনকে জানায়। পরে সেই সার গংগাচড়া উপজেলার গুদামে ফেরত আনা হয়।
মাঠ পর্যায়ের গোয়েন্দা তথ্যের বরাতে দিয়ে প্রতিবেদনে এও বলা হয়, নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ ও ডিমলা উপজেলায় এবং ঝিনাইদহের শৈলকূপা উপজেলার সার ডিলাররা কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ১০৫০ টাকার ৫০ কেজির ডিএপি সারের বস্তা বেচেন ১৪০০ থেকে ১৭০০ টাকায়। বাড়তি দাম আর পর্যাপ্ত সার না পেয়ে স্থানীয় কৃষকরা ক্ষুব্ধ।
প্রতিবেদনে বলা হয়, দেশের প্রতিটি জেলায় মৌসুমের চাহিদা অনুযায়ী ডিলারের কাছে সার বিতরণ করা হলেও পরিবহন ব্যবসায়ী ও ডিলাররা সিন্ডিকেট করে দেশে সারের সরবরাহে কৃত্রিম ঘাটতি দেখিয়ে বিক্রির সময় অতিরিক্ত অর্থ আদায় করছে।
এ পরিস্থিতিতে আগামী মৌসুমেও (নভেম্বর-মার্চ) সারের সরবরাহ ও দাম নিয়ে সংকট তৈরির শঙ্কা দেখা দিয়েছে।
সাধারণত ডিলাররা সরকারের কাছ থেকে পাওয়া সার নিজস্ব গুদামে মজুত করেন। সেখান থেকে কৃষকদের কাছে সরকার নির্ধারিত মূল্যে বিক্রি করেন। কিন্তু কিছু ‘অধিক মুনাফালোভী’ ডিলার কারসাজির মাধ্যমে গোপনে সার মজুত রেখে বাজারে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করেন বলে গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
চাহিদা কখন বেশি, মজুত কেমন
চলতি বছর সারাদেশে রাসায়নিক সারের চাহিদা ৫৭ লাখ ৮৫ হাজার টন। এ চাহিদার প্রায় ৮০ শতাংশ বিভিন্ন দেশ থেকে সরকারিভাবে আমদানি করা হচ্ছে। বাকি সারের চাহিদা মেটে দেশের কারখানাগুলোর মাধ্যমে।
আমদানির বাইরে যে ২০ শতাংশ দেশে উৎপাদন হয়, এসব সারের সরবরাহের জোগান দেয় শিল্প মন্ত্রণালয়ের অধীন বাংলাদেশ কেমিক্যাল ইন্ডাস্ট্রিজ করপোরেশন (বিসিআইসি) ও বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)।
এ দুই প্রতিষ্ঠান উৎপাদন, আমদানি পরবর্তী মজুত ও সরবরাহ নিশ্চিত করে মূলত নিজেদের নিয়োগ করা পরিবহন ঠিকাদার ও ডিলারদের মাধ্যমে।
দেশে সবচেয়ে বেশি সার প্রয়োজন হয় রবি মৌসুমে; অর্থাৎ নভেম্বর থেকে মার্চ (কার্তিক-ফাল্গুন) মাসে। এ সময় মোট চাহিদার ৪০ শতাংশ সার প্রয়োজন হয়। পরবর্তী মৌসুম হচ্ছে আউশ ধানের সময়; এই মৌসুমের ব্যাপ্তি এপ্রিল থেকে জুলাই (চৈত্র-আষাঢ়) পর্যন্ত। এ সময় চাহিদার ৩০ শতাংশ এবং আমন মৌসুমে সেপ্টেম্বর থেকে ডিসেম্বর (আশ্বিন-মাঘ) বাকি ৩০ শতাংশ সারের দরকার পড়ে।
বিএডিসির তথ্য বলছে, ২০২৫-২৬ অর্থবছরে সারাদেশে জুলাই মাসের চাহিদা অনুযায়ী সার ডিলারদের কাছে সরবরাহ করার পরও বর্তমানে বিভিন্ন গুদামে ছয় লাখ ৩০ হাজার ৬১৩ টন ইউরিয়া সার মজুত রয়েছে।
এছাড়া দুই লাখ ১৭ হাজার টন টিএসপি (ট্রিপল সুপার ফসফেট), দুই লাখ ৭৩ হাজার টন ডিএপি এবং দুই লাখ ৮১ হাজার টন এমওপি মজুত রয়েছে। এই সার দিয়ে দেশে অন্তত তিন মাসের সারের চাহিদা মেটানো সম্ভব।
পাশাপাশি ২৫ হাজার টন টিএসপি, এক লাখ ১০ হাজার টন এমওপি এবং এক লাখ ২০ হাজার টন ডিএপি জাহাজে রয়েছে, যা ধারাবাহিকভাবে দেশে পৌঁছার কথা।
গোয়েন্দা সংস্থাটি বলছে, ১০ হাজার টন ধারণক্ষমতার বিসিআইসির নতুন ১৩টি বাফার গুদাম হস্তান্তরের সময় পেরোলেও এখনো কয়েকটি হস্তান্তর হয়নি। এছাড়া আরও ৩৪টি বাফার গুদাম নির্মাণ করার পরিকল্পনা থাকলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। প্রয়োজনীয় সংখ্যক গুদাম না থাকায় ইউরিয়া সারের আপদকালীন মজুদ ৭ লাখ টন থেকে কমিয়ে ৪ লাখ টন করা হয়েছে।
দাম বাড়ার পেছনে যত কারণ
গোয়েন্দা প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএডিসি ও বিসিআইসির হিসাব মোতাবেক সারের কোনো সংকট না হওয়ার কথা থাকলেও- কিছু কিছু জেলার অসাধু ডিলার ও পরিবহন সংস্থার সিন্ডিকেটে সারের দাম বেড়েছে।
দাম বাড়ার কারণ হিসেবে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সার আমদানি প্রক্রিয়া সম্পন্ন হতে ছয় থেকে আট মাস সময় লাগে। আমদানি করা বেশির ভাগ সার নৌপথে আসে। সার খালাস করতে অনেক সময় লাগে।
কিছু কিছু ক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা জাহাজ থেকে সার খালাসে ইচ্ছে করে বেশি সময় ব্যয় করে। এতে বাজারে সারের সংকট সৃষ্টি হয় এবং দাম বেড়ে যায়।
পাশাপাশি গুদামেও সার দেরিতে পৌঁছানোর মাধ্যমেও সংকট সৃষ্টি হচ্ছে। সরবরাহ পর্যায়ে অনেক ডিলার নিয়মিত সার উত্তোলন করছেন না।
গোয়েন্দা সংস্থাটি বলছে, দেশে যে পরিমাণ সার উৎপাদন হয় তা চাহিদার তুলনায় অপ্রতুল। তেল ও গ্যাস সংকটের কারণে দেশের ৮টি সার কারখানা তাদের সক্ষমতা অনুযায়ী সার উৎপাদন করতে না পারায় দিন দিন সারের আমদানি নির্ভরতা বাড়ছে।
এছাড়া রাজনৈতিক অস্থিরতা, ডলার সংকট, বৈশ্বিক বাণিজ্যে মন্দাভাবের কারণে যথাসময়ে আমদানি ব্যাহত হয়; যার প্রভাবে প্রান্তিক পর্যায়ে সারের মূল্য বেড়ে যায় বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিএডিসি ও বিসিআইসিতে বর্তমানে সাত হাজার ১৫০ জন ডিলার রয়েছেন। এর মধ্যে বিএডিসি অনুমোদিত পাঁচ হাজার ২২ জন এবং বিসিআইসির দুই হাজার ১২৮ জন।
গোয়েন্দাদের মূল্যায়ন, এমন অনেক ডিলার রয়েছেন- যারা ভিন্ন নামে একাধিক ডিলারশিপ নিয়েছেন। সারের কৃত্রিম সংকটের জন্য সঠিকভাবে ডিলার নিয়োগ না দেওয়াকেও দুষছেন তারা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ইউরিয়া সারের সার্বিক ব্যবস্থাপনা করে বিসিআইসি। বর্তমানে বিসিআইসির বাফার গুদাম, কারখানা গুদাম ও ট্রানজিট গুদামসহ মোট গুদাম রয়েছে ৩৫টি; যার ধারণক্ষমতা ৩ লাখ ৫১ হাজার ৫০০ টন। ধারণ ক্ষমতার অতিরিক্ত সার ঠিকাদাররা খোলা আকাশের নিচে অরক্ষিত অবস্থায় রাখে, যা অনেক ক্ষেত্রে সারের গুণগত মান কমিয়ে ফেলে, সুযোগ হয় সার আত্মসাতের।
তাছাড়া পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া, রংপুর, ঝিনাইদহ, কুষ্টিয়া, যশোরসহ বেশ কয়েকটি জেলায় তামাক চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে। এসব জেলায় কৃষিখাতের ভর্তুকির সার শিল্পখাতের তামাক চাষে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
বিসিআইসির একজন ডিলার বলেন, “অনেক ডিলার অসদুপায় অবলম্বন করে সারের সংকট তৈরি করে, যা অনেকসময় কৃষকের কাছে পৌঁছায় বাড়তি দামে। তবে সবাই না। এরকম সাধারণত ওইসব অঞ্চলে ঘটে- যেখানে কর্তৃপক্ষের নজরদারি সাধারণত কম।
“শুধু মনিটরিং জোরদার করা গেলেই এটা নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব। আর সার খালাসের প্রক্রিয়াও আর একটু দ্রুত করা গেলে ভালো হত। অন্য সময়ে খুব বেশি সমস্যা তো না। কিন্তু মৌসুমে কঠোর নজরদারি করতে পারলে এটা নিয়ন্ত্রণে আসবে।”
তিনি বলেন, “ডিলার নিয়োগে অনিয়মের তথ্য আমিও শুনেছি। দলীয় পদবি ব্যবহার করে কেউ কেউ একাধিক ডিলার নিয়েছেন। শুনেছি সরকার তালিকা করছে।”
সার সংকট নিরসনে যত সুপারিশ
বাজারে সারের সরবরাহ স্বাভাবিক রাখা এবং দাম নিয়ন্ত্রণে বেশ কিছু সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে ওই প্রতিবেদনে, যার মধ্যে রয়েছে—
>> সরকারি বরাদ্দ অনুযায়ী সারের সরবরাহ নিশ্চিত করা।
>> ডিলার ও পরিবহন কোম্পানির সিন্ডিকেট রোধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নজরদারি বৃদ্ধি করা, প্রয়োজনে আইন প্রয়োগ করা।
>> একই ব্যক্তি যাতে ভিন্ন ভিন্ন নামে একাধিক ডিলারশিপ না পায়, সে বিষয়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা।
>> কৃষি খাতে ব্যবহারের সার যেন শিল্পপণ্য উৎপাদনে ব্যবহৃত না হয়, সে বিষয়ে মনিটরিং ব্যবস্থা জোরদার করা।
>> ডিলাররা যাতে সরকার নির্ধারিত মূল্যের অতিরিক্ত মূল্যে সার বিক্রয় করতে না পারে, সে বিষয়ে উদ্যোগ গ্রহণ করা।
>> ডিলার ও পরিবহন সংগঠন সিন্ডিকেটের মাধ্যমে মাদার ভেসেল থেকে সার খালাসে যাতে বিলম্ব সৃষ্টি করতে না পারে, তার উপর তীক্ষ্ম দৃষ্টি রাখা।
>> বিসিআইসি ও বিএডিসির নির্মিতব্য সারের গুদামগুলোর নির্মাণ কার্যক্রম দ্রুততম সময়ে সম্পাদন করা।
>> রাজনৈতিক প্রভাবের ঊর্ধ্বে থেকে ডিলার ও পরিবহন কোম্পানি নিয়োগের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া।
>> রাসায়নিক সারের বিকল্প হিসাবে জৈবসার ব্যবহারে কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করা।
>> যেসব জেলায় সারের চাহিদা বেশি থাকে, সেসব জেলায় বিশেষ বরাদ্দ প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
>> সার সংরক্ষণের জন্য দেশের সকল জেলায় সরকারিভাবে আধুনিক ও মান সম্মত গুদামের ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
>> দেশে সার উৎপাদন বৃদ্ধিতে এবং কারখানাগুলো সচল রাখতে গ্যাসের স্বাভাবিক সরবরাহ নিশ্চিত করা।
উত্তরণের পথ কী
সারের বাজারে সংকট ও কারসাজি নিয়ে জানতে চাইলে কৃষি মন্ত্রণালয়ের সার ব্যবস্থাপনা ও উপকরণ উইংয়ের অতিরিক্ত সচিব আহমেদ ফয়সল ইমাম বলেন, “যেটা হয় আমাদের দেশে, সবাই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করে। দেশে সারের মজুত বা সরকারিভাবে সরবরাহের কোনো ঘাটতি নাই, কোনো সংকট নাই।
“এমনকি সরকার সারের মূল্য নির্ধারণ করে দিয়েছে, প্রতি বছর সরকার সারে বিপুল ভর্তুকি দিচ্ছে। চারটা সারেই সরকার ভর্তুকি দেয়; প্রায় ৩০ হাজার কোটি টাকার মতো।”
তার দেওয়া তথ্যানুযায়ী, সরকার প্রতি কেজি ইউরিয়া এবং টিএসপি ২৭ টাকা কেজি করে বিক্রি করে। আর ডিএপি ২১ টাকা ও এমওপি বিক্রি করে ২০ টাকায়।
ফয়সল ইমাম বলেন, বাস্তবে সরকারের আমদানি ব্যয় অনেক বেশি। বিশ্ববাজারে ওঠানামা অনুযায়ী ক্ষেত্রবিশেষে ৮০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্তও কেজি পড়ে।
“সরকার এই ভর্তুকি এ কারণেই দেয়, যাতে কৃষকের উৎপাদন ব্যয় কম থাকে। কারণ উৎপাদন ব্যয় কম থাকা মানে হচ্ছে দেশের সাধারণ মানুষও তুলনামূলক কম দামে খেতে পারবে।
“কিন্তু, সরকার তো দোকান খুলে বিক্রি করতে পারে না। সরকার আমদানি করে। বিক্রি করে কারা, সারাদেশের বিভিন্ন উপজেলা-ইউনিয়নে সরকার ডিলার নিযুক্ত করে রেখেছে, তারা বিক্রি করে।”
কিছু অসাধু ডিলারদের কারণেই দাম বেড়ে যায় মন্তব্য করে তিনি বলেন, “যেই সার কৃষকদের কাছে ২৭ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়, সেই সার সরকার ডিলারদের দিচ্ছে ২৫ টাকায়। প্রতি কেজিতে দুই টাকা লাভ দিচ্ছে।
“কিন্তু কিছু অসাধু ডিলার সরবরাহ সংকট দেখিয়ে সরকার নির্ধারিত মূল্যের চাইতে বেশি দামে বিক্রি করে।”
সার ব্যবস্থাপনার দায়িত্বপ্রাপ্ত এ কর্মকর্তা বলেন, “আমরা প্রতিদিনই পত্র-পত্রিকা থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ে খোঁজ-খবর নিচ্ছি। যেখানেই আমরা কোনো ডিলারের বিরুদ্ধে অনিয়মের খবর পাচ্ছি, সাথে-সাথেই আমরা ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য জেলা প্রশাসক, ইউএনওদের নির্দেশ দিচ্ছি। এবং নিয়মিত তদারকি করছি।”
ডিলার নিয়োগে সমন্বিত নীতিমালা নেওয়া হচ্ছে জানিয়ে ফয়সল বলেন, “বর্তমানে ডিলার নিয়োগে দুটি নীতিমালা আছে। এখন আমরা একটা সমন্বিত নীতিমালা করার চেষ্টা করছি।
“সারা দেশে মাঠ পর্যায় থেকে আমরা ডিলারদের তথ্য চেয়েছি, যেসব ডিলার অনিয়মের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছে, তাদের বাতিল করছি। আমরা খুব স্বচ্ছ এবং একটা বাস্তবসম্মত প্রক্রিয়ার মধ্যে যাচ্ছি।”
সার ব্যবস্থাপনা নিয়ে সার্বিক পরিকল্পনা থাকা দরকার বলে মনে করেন কৃষি অর্থনীতিবিদ এ এইচ এম সাইফুল ইসলাম।
তিনি বলেন, “ধান উৎপাদনের জন্য সার যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনই ধান চাষের মৌসুমেও এটা পৌঁছানো খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সারের সাপ্লাই চেইনে যুক্ত কৃষি মন্ত্রণালয়, শিল্প মন্ত্রণালয়সহ সবার নজরদারিটা এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ।”
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি অর্থনীতি বিভাগের এই অধ্যাপক মনে করেন, সারের কৃত্রিম সংকট মোকাবেলায় সরকারের আগাম পরিকল্পনা গুরুত্বপূর্ণ।
“গত এক বছরে আমাদের সার্বিক মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমে গেছে। এর মধ্যে খাদ্য বহির্ভূত খাতে মূল্যস্ফীতি বেশি কমেছে। কিন্তু খাদ্যে মূল্যস্ফীতি এখনো বেশি।
“খাদ্যে মূল্যস্ফীতির ৫১ শতাংশই আবার চালের ওপর নির্ভরশীল। চালের উৎপাদন মূলত সারের ওপর নির্ভরশীল; সেটা যদি ব্যহত হয়, তখন দেখা যাবে চাল আমদানি করা লাগবে। অর্থনীতিতেও তখন সেটার প্রভাব পড়বে।”
অধ্যাপক সাইফুল বলেন, “সেজন্য এখন থেকেই সরকারকে ইউরিয়া, টিএসপি, এমওপি কোনটার কত প্রয়োজন, কী পরিমাণ মজুত আছে, সেটা নির্ধারণ করা থাকলে সংকট দেখা দেবে না।
“আর নজরদারি ঠিক থাকলে কৃত্রিম সংকটও থাকবে না। সব মিলিয়ে একটা সার্বিক পরিকল্পনা থাকা দরকার।”
Sharing is caring!