প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১১ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৬শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আদালতে মুনতাহা হ ত্যা র প্রধান আসামী মার্জিয়ার মুখে ছিলো রহস্যময় হাসি!

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ১৭, ২০২৪, ০৬:৩০ পূর্বাহ্ণ
আদালতে মুনতাহা হ ত্যা র প্রধান আসামী মার্জিয়ার মুখে ছিলো রহস্যময় হাসি!

Manual4 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
একটি পুষ্পমুখ, আর কাদামাখা নিথর দেহ দেখে কেঁদেছে পুরো দেশ, সেই কোমল শিশু হত্যার প্রধান অভিযুক্ত রহস্যময়ী যুবতীর মুখে সারাক্ষণ লেগে আছে হাসি! দৃশ্যটি শনিবার (১৬ নভেম্বর) দুপুরে আদালতপাড়ায় আসা লোকজনকে করেছে হতবিহ্বল।

সিলেট জেলার কানাইঘাট উপজেলার শিশু মুনতাহা আক্তার জেরিন (৬) হত্যা মামলার চার আসামিকে ৫ দিনের রিমান্ড শেষে আদালতে হাজির করা হয়েছিলো শনিবার। দুপুর ১টার দিকে আসামিদের জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট ১ম আদালতে তাদের তোলা হয়। চার আসামির মধ্যে প্রধান অভিযুক্ত শামীমা বেগম মার্জিয়া (২৫) আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দেওয়ার কথা থাকলেও আদালতে এসে মুখে কুলুপ এঁটে দেন তিনি, দেননি ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী। বরং আদালতে থাকাকালে তার মুখে সারাক্ষণ লেগেছিলো রহস্যময় হাসি। মাঝে-মধ্যে তিনি দাঁত কেলিয়েও হাসেন।

আদালত সূত্র জানায়, মুনতাহা হত্যা মামলার চার আসামি কানাইঘাট থানার বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের মৃত ময়না মিয়ার স্ত্রী আলিফজান (৫৫), তাদের মেয়ে শামীমা বেগম মার্জিয়া (২৫) এবং একই এলাকার ইসলাম উদ্দিন (৪০) ও নাজমা বেগম (৩৫)-কে পুলিশ গত ১১ নভেম্বর আদালতে প্রেরণ করে ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করে পুলিশ। আদালত সে সময় ৫ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করলে পুলিশ আসামিদের হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে।

জিজ্ঞাসাবাদকালে প্রধান অভিযুক্ত মার্জিয়া নিজের দোষ স্বীকার করে এবং আদালতে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিবে বলে পুলিশকে জানায়। তাই রিমান্ডের ৫ দিন শেষে শনিবার দুপুর সাড়ে ১২টার দিকে ৪ আসামিকে আদালতে তোলা হয়। কিন্তু আদালতে এসে নিজের বক্তব্য পাল্টে ফেলে প্রধান অভিযুক্ত মার্জিয়া, দেননি স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী।

Manual6 Ad Code

মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা কানাইঘাট থানার এস.আই শামসুল আরিফিন বলেন- রিমান্ডের সময় জিজ্ঞাসাবাদে মার্জিয়া নিজের দোষ স্বীকার করে এবং আদালতে এসে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিবে বলে জানায়। কিন্তু আজ (শনিবার) আদালতে এসেই সে সিদ্ধান্ত পাল্টে ফেলে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দী দিবে না বলে জানায়। পরে বিজ্ঞ বিচারক আসামিদের কারাগারে প্রেরণের নির্দেশন। তিনি বলেন- প্রয়োজন মনে করলে আমরা আবার তাদের রিমান্ডে নেওয়ার আবেদন করবো।

Manual5 Ad Code

এক প্রশ্নের জবাবে এস.আই শামসুল আরিফিন বলেন- জিজ্ঞাসাবাদে বেশ কিছু নতুন তথ্য দিয়েছে আসামিরা। বিশেষ করে মার্জিয়া। তথ্যগুলো আমাদের তদন্তকাজে বেশ সহায়তা করবে। তদন্তের স্বার্থে এসব এখনই আমরা বলতে পারছি না।

গত ৩ নভেম্বর বাড়ির পাশে খেলতে গিয়ে নিখোঁজ হয়েছিলো কানাইঘাট সদরের বীরদল ভাড়ারিফৌদ গ্রামের শামীম আহমদের মেয়ে মুনতাহা আক্তার জেরিন। সেদিন সকালে বাড়ির অদূরে একটি মাদরাসার ওয়াজ মাহফিল থেকে ছেলে আব্দুর রহিম ও মেয়ে মুনতাহাকে নিয়ে বাড়ি ফেরেন শামীম আহমদ। সেখান থেকে তাদের ফল কিনে দেন।

এরপর মুনতাহা শিশুদের সঙ্গে বাড়ির সামনের সড়কে খেলতে যায়। বেলা আড়াইটার দিকে খাবার খেতে মুনতাহার ডাক পড়ে। খুঁজতে গিয়েও শিশুটিকে আর পাওয়া যায়নি। এরপর ওইদিন রাত ১২টায় মুনতাহার বাবা শামীম আহমদ কানাইঘাট থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন।

একদিন-দুদিন-তিনদিন যায়- খোঁজ মিলে না মুনতাহার। এরই মধ্যে ফেসবুকে ঝড় তুলে নিষ্পাপ এই শিশুর নিখোঁজের খবরটি। তার মায়াবি মুখের ছবি দিয়ে শোবিজের তারকারা পর্যন্ত ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে মুনতাহার সন্ধান কামনা করেন। তার প্রবাসী ভাই মুনতাহার খোঁজ দিলে আর্থিক পুরস্কার দিবেন বলেও ঘোষণা দেন। কিন্তু মুনতাহা আর জীবিত ফিরে আসেনি। সপ্তাহান্তে মিলে ভয়ঙ্কর খবর। মুনতাহাকে হত্যার পর মরদেহ বাড়ির পাশের একটি খালে কাঁদামাটিতে চাপা দিয়ে রাখা হয়েছিল এই কদিন।

হত্যাকাণ্ডটি ভিন্নখাতে প্রবাহিত করতে লাশটি চাপা দেওয়া অবস্থা থেকে উদ্ধার করেন মর্জিয়ার মা আলিফজান। ১০ নভেম্বর ভোররাত ৪টার দিকে মুনতাহার মরদেহ কোলে তুলে পার্শ্ববর্তী পুকুরে ফেলার চেষ্টাকালে স্থানীয়রা তাকে হাতেনাতে আটক করেন। এসময় দেখা যায়- মুনতাহার হাত দুটো বাধা, গলায় রশি পেঁচানো।

Manual4 Ad Code

এই ঘটনায় অভিযুক্ত মর্জিয়া আক্তার, তার মা আলীফজান ও আলীফজানের মা কুতুবজানকে আটক করা হয়। ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ জনতা মার্জিয়ার বসতঘর পুড়িয়ে দেন। শিশু মুনতাহার গলিত নিথর দেহ দেখে শোকে স্তব্ধ হয়ে যায় পুরো দেশ।

স্থানীয়রা জানান, মুনতাহাকে ২৫০ টাকায় প্রাইভেট পড়াতেন মর্জিয়া। তার মা আলিফজান ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। ঘরে তার ৮৫ বছর বয়সী নানি কুতুবজান ছিলেন। মার্জিয়া মুনতাহা ও তার বড় বোনের কাপড় চুরি করলে এবং তার (মার্জিয়া) চলাফেরা উগ্র হওয়ায় টিউশনি থেকে তাকে বাদ দেয় মুনতাহার পরিবার। সেই ক্ষোভে প্রতিশোধপরায়ণ হয়ে উঠেন মার্জিয়া। পরিবারের উপর প্রতিশোধ নিতে গিয়ে শিশু মুনতাহাকে অপহরণের পর হত্যা করেন তিনি।

জনতার হাতে আটকের পর মর্জিয়ার মা আলিফজান বেগম বলেন, ‘‘মুনতাহা অপহরণের পর মর্জিয়াকে তিনি আটকাতে চেয়েছিলেন। তখন মেয়ে তাকে বলে- ‘৫ লাখ টাকা পাবো, আমি আরো দুটি শিশু ব্যবস্থা করে দিলে’। অপহরণের রাতে মুনতাহাকে জীবিত ঘরে নিয়ে আসে। এরপর আবার তাকে নিয়ে যায়। পরে কী করেছে জানি না।’’

Manual7 Ad Code

এই ঘটনায় যাতে নিজে ফেঁসে না যান সে জন্য ঘরের পাশের খালে কাদামাটি থেকে শিশুটির মরদেহ কোলে করে নিয়ে পুকুরে ফেলার চেষ্টাকালে তিনি ধরা পড়ে মার্জিয়ার মা আলিফজান।

এদিকে, মার্জিয়ার নানি কুতুবজান বিবি (৮৫)-কে প্রথমে আটক করলেও বয়সের বিবেচনায় পরে তাকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধির জিম্মায় ছেড়ে দেওয়া হয়। পরে গত বৃহস্পতিবার সকালে কানাইঘাট সদর ইউনিয়নের ছাউরা গ্রামে তার ছোটভাইয়ের বাড়িতে স্বাভাবিকভাই মারা যান তিনি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code