প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৩ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৮শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২২শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

মায়ের ধারণা বদলে দিয়েছেন এক সময়ের অবাধ্য মোরসালিন

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ২০, ২০২৫, ০২:২৪ অপরাহ্ণ
মায়ের ধারণা বদলে দিয়েছেন এক সময়ের অবাধ্য মোরসালিন

Manual4 Ad Code

 

Manual3 Ad Code

ফরিদপুর প্রতিনিধি:

Manual1 Ad Code

 

ঢাকার জাতীয় স্টেডিয়ামে সেই মুহূর্তে সাময়িক নিস্তব্ধতা। চোখ–মন–শ্বাস থমকে ছিল লাখো মানুষের। কারণ তখনই (১২ মিনিট) ম্যাচের সবচেয়ে বড় সুযোগটা পায় বাংলাদেশ। অভিজ্ঞ ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেনের বাড়ানো পাসে পা ছুঁয়ে ভারতের জালে পাঠালেন ২০ বছরের তরুণ শেখ মোরসালিন। সঙ্গে সঙ্গেই উল্লাসে ফেটে পড়ে গ্যালারি। সেই লিড ধরে রেখে ২২ বছর পর ভারতের বিপক্ষে জয়োৎসবে মাতে বাংলাদেশ।

 

Manual3 Ad Code

ফিলিপাইনের রেফারি শেষ বাঁশি বাজানোর সঙ্গে সঙ্গে বাধভাঙা উদযাপন শুরু হয় দেশের আনাচে-কানাচে। বাংলাদেশের জয়সূচক একমাত্র গোলের নায়ক ফরিদপুর চরভদ্রাসনের ছেলে মোরসালিন। ২০০৫ সালের ২৫ নভেম্বর চরভদ্রাসন উপজেলার বিএস ডাঙ্গী গ্রামে জন্ম তার। বাবা শেখ মজিবর কর্মসূত্রে সৌদি আরব প্রবাসী। ফলে মোরসালিনের ছোটবেলা কাটে মায়ের কোল আর নানাবাড়ির উঠোনে। দাদাবাড়ির গ্রামের নাম ছবুল্যা মাতুব্বরের ডাঙ্গী। নানার নাম শেখ আলাউদ্দিন– পেশায় ব্যবসায়ী, স্বভাবে সরল। সেই বাড়ির মাটির গন্ধ, উঠোনের বাতাস আর পুকুরঘাটের নরম বিকেল আজও মোরসালিনের স্মৃতিতে উজ্জ্বল।

 

দুই ভাইয়ের মধ্যে মোরসালিন বড়। তার ছোট ভাই মুস্তাকিম এখন সপ্তম শ্রেণির ছাত্র– তারও প্রেম ও ঝোঁক আছে ফুটবলের প্রতি। মোরসালিনের ফুটবল–যাত্রা শুরু হয় গ্রামের আদর্শ মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের মাঠে। ক্লাস শেষ হলেই তাকে আর পাওয়া যেত না। বল নিয়ে দৌড়ে চলে যেতেন মাঠে। মা শেফালী বেগম বলেন, ‘ও যেন বল নিয়েই জন্মেছে! বকাঝকা করতাম, পড়া শিখতে বলতাম, কিন্তু মাঠের ডাক সে কখনও অমান্য করেনি।’

 

মোরসালিন দিন গুনছিলেন। মা ছেলের জেদ দেখে মেনে নেওয়া ছাড়া উপায় ছিল না। একসময় সেই জেদই বদলে দেয় পথ। ২০১৫ সালে মামা সোবহান প্রামাণিক মোরসালিনকে ফরিদপুরের একটি বাছাইয়ে নিয়ে গেলেন। সেই বাছাইয়ে টিকে যাওয়া ১০–১৩ বছরের ছেলেটিই পরে ঢাকার বিকেএসপিতে সুযোগ পায় ২০১৬ সালে। সেখান থেকেই তার স্বপ্নের পথচলা। মামা সোবাহান নিজেও এক সময় ফুটবল খেলতেন, তবে বড় পরিসরে যেতে পারেননি। তাই হয়তো মোরসালিনের প্রতি তার আরও বেশি টান।

 

মোরসালিনের মামা জানান, ‘খেলায় হার–জিত আছে, কিন্তু তার চোখে যে আগুন দেখি তেমনটা কারও চোখে পাইনি। তাইই তাকে নিয়ে যাওয়া, সুযোগ করে দেওয়া…আজ ও বাংলাদেশের গর্ব।’ নানা আলাউদ্দিন (৭২) স্মৃতি রোমন্থন করেন একটু ভিন্নভাবে, ‘ওর বয়স যখন তিন, তাকে ১০০ টাকা দিলেও নিত না। কিন্তু দোয়েল আঁকা দুই টাকার নোট হাতে পেলেই ওর মুখ হাসিতে ভরে যেত। সেই হাসিই আজও আছে, শুধু লক্ষ্যটা বড় হয়েছে।’

কৈশোরে মোরসালিন খেলতেন চরভদ্রাসন সরকারি কলেজ মাঠে। খেলেছেন সেখানকার স্পোর্টিং ক্লাবের হয়েও। মোরসালিনকে দেখে অনেকেরই আগ্রহ বাড়ছে বলে জানান ক্লাবটির সভাপতি নাজমুল হুদা, ‘তার সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এখন অনেক শিশু-কিশোর ফুটবলের দিকে ফিরছে। সে চরভদ্রাসনের গর্ব।’

 

এক সময় মা শেফালী বেগমের কথা না শোনায় আক্ষেপ ছিল, তার চোখে আজ আনন্দাশ্রু। ফলে এখন উল্টো মোরসালিনকে সাহস দেন তার মা, ‘মানুষ তোমাকে ভালোবাসে। এই ভালোবাসা ধরে রেখে এগিয়ে যাও। ফুটবলের মাঠে দেশকে তুলে ধরো, ছেলের মতো গর্ব বাড়াও।’

Manual2 Ad Code

ভারতকে হারানোর সেই গোল নিয়ে মোরসালিন খুব সহজ ও বিনয়ী উত্তর দিলেন। গোলের খেলা ফুটবলে গোলদাতারাই নায়ক হন। তাই স্বাভাবিকভাবেই মোরসালিনকে নিয়েই সর্বত্র আলোচনা। কিন্তু তিনি ওই গোলের শতভাগ কৃতিত্ব দিলেন বল বাড়িয়ে দেওয়া আরেক ফরোয়ার্ড রাকিব হোসেনকে। মোরসালিন বলেন, ‘আসলে আমি তো শুধু পা ছুঁয়েছি, এই গোলের শতভাগ অবদানই রাকিব ভাইয়ের। অসাধারণ বল দিয়েছিলেন তিনি, এখানে আমার চেয়ে তার কৃতিত্বই বেশি।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code