প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

১৫ বছরে সীমান্তে ছয় শতাধিক হত্যা

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৭, ২০২৫, ১২:১৯ অপরাহ্ণ
১৫ বছরে সীমান্তে ছয় শতাধিক হত্যা

Manual2 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual8 Ad Code

সীমান্ত হত্যা থামছেই না। ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) বারবার কথা দিলেও তারা কথা রাখছে না। নিয়মিতই তাদের বন্দুকের গুলির শিকার হচ্ছে বাংলাদেশিরা। চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে নভেম্বর মাস পর্যন্ত সীমান্তে অন্তত ২৮ জন বাংলাদেশি হত্যার শিকার হয়েছে।
আর গত ১৫ বছরে ছয় শতাধিক বাংলাদেশিকে হত্যা করেছে বিএসএফ।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, জবাবদিহির বাইরে থাকার কারণেই মূলত সীমান্ত হত্যা বন্ধ হচ্ছে না। আন্তর্জাতিক আইন কোনো বাহিনীকে বিশ্বের কোথাও নিরস্ত্র বেসামরিক নাগরিকদের গুলি বা নির্যাতন করার অনুমতি দেয় না।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার লালমনিরহাটের পাটগ্রাম সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে সবুজ ইসলাম (২৫) এবং মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার দশটেকি এলাকায় সুকিরাম (২৫) নামের দুই বাংলাদেশি যুবক নিহত হয়েছেন।
ভারতের পশ্চিমবঙ্গের কোচবিহার জেলার পচাভাণ্ডার সীমান্ত পিলার ৮৬৪ সংলগ্ন এলাকায় ভারতের প্রায় ৩০ গজ ভেতরে সবুজ ইসলাম নিহত হন। আর কুলাউড়ার সুকিরাম নিহত হন সীমান্ত এলাকায় গরু চরানোর সময়।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, কখনো গরু চোরাচালান, কখনো অনুপ্রবেশের অভিযোগ এনে গুলি চালানো হয়। অথচ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, সীমান্তে কেউ অবৈধভাবে প্রবেশ করলে তাকে গ্রেপ্তার করে প্রচলিত আইনে বিচার করার কথা।

Manual3 Ad Code

সীমান্ত হত্যা বন্ধে দুই দেশের সীমান্তরক্ষী বাহিনী এবং স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পর্যায়ে বহুবার বৈঠক হয়েছে। ভারত বারবার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে যে তারা সীমান্তে নন-লেথাল উইপন (প্রাণঘাতী নয় এমন) ব্যবহার করবে এবং প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার বন্ধ করবে। কিন্তু এই প্রতিশ্রুতি রক্ষায় তাদের কোনো ভূমিকা দেখা যাচ্ছে না।

সূত্র জানায়, সীমান্তে যারা নিহত হয়, তাদের বেশির ভাগই সীমান্তবর্তী এলাকার দরিদ্র মানুষ। অনেকে কৃষিকাজ করতে গিয়ে বা ভুলবশত জিরো লাইনের কাছে চলে গেলে গুলিবর্ষণের শিকার হয়।
ফেলানীর লাশ কাঁটাতারে ঝুলে থাকার দৃশ্য আজও বাংলাদেশের মানুষের মনে গেঁথে আছে, যা সীমান্তের নির্মমতার প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছে।

সীমান্ত হত্যার প্রতিবাদ জানিয়ে বিবৃতি দিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু)। গত বুধবার ডাকসুর সাধারণ সম্পাদক (জিএস) সম্পাদক (জিএস) এস এম ফরহাদের স্বাক্ষরিত বিবৃতিতে বলা হয়, বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এখন পর্যন্ত সীমান্ত হত্যা বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রতিটি হত্যাকাণ্ডের জন্য বিএসএফের বিরুদ্ধে অবশ্যই কূটনৈতিক ও আইনি পদক্ষেপ নিতে হবে; আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে উত্থাপন করে বিচার নিশ্চিতে জরুরি পদক্ষেপ নিতে হবে।

বিবৃতিতে আরো বলা হয়, স্বাধীনতার পর থেকে বিএসএফ অব্যাহতভাবে আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে বাংলাদেশি নাগরিকদের সীমান্তে গুলি করে হত্যা করছে। কিশোরী ফেলানীর কাঁটাতারে ঝুলে থাকা লাশ কিংবা স্বর্ণা দাসকে নির্মমভাবে হত্যার ঘটনা সারা বিশ্বের বিবেক নাড়া দিলেও বিএসএফের মনোভাব বদলায়নি।

Manual5 Ad Code

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে দীর্ঘ চার হাজার ৯৬ কিলোমিটার সীমান্ত রয়েছে। দুই দেশের মধ্যে ঐতিহাসিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর ও বন্ধুত্বপূর্ণ। কিন্তু এই বন্ধুত্বের সম্পর্কে একটি বড় কাঁটা হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ‘সীমান্ত হত্যা’।

Manual3 Ad Code

মানবাধিকার সংস্থা আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত সীমান্তে কমপক্ষে ২৮ জন বাংলাদেশি নিহত হয়েছে। ২০০৯ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত ১৫ বছরে নিহত হয়েছে ৬০৭ জন।

মানবাধিকারকর্মী আবু আহমেদ ফয়জুল কবির বলেন, ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) যে পদ্ধতিতে প্রাণঘাতী অস্ত্র ব্যবহার করছে, তা আন্তর্জাতিক নীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার আইন বলছে, সীমান্ত নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে প্রথমত অহিংস পন্থা, পরে প্রয়োজনে অপ্রাণঘাতী অস্ত্র এবং একান্ত ব্যতিক্রমী পরিস্থিতিতে ন্যূনতম মাত্রায় শক্তি প্রয়োগ করা যেতে পারে। কিন্তু সীমান্তে বারবার যে ঘটনা ঘটে, তা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে এই নীতি পুরোপুরি মানা হচ্ছে না।

মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিমিনোলজি ও পুলিশ সায়েন্স বিভাগের অধ্যাপক মুহাম্মদ উমর ফারুক বলেন, ‘ধারাবাহিকভাবে এ ধরনের মৃত্যু পৃথিবীর অন্য কোনো দেশের সীমান্তে ঘটেছে এমন নজির নেই। অথচ সীমান্ত হত্যা শূন্যে নামিয়ে আনার জন্য বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অনেক দিন ধরে তাগিদ দেওয়া হচ্ছে ভারতকে। প্রতিবারই সীমান্তে আর গুলি চালাবে না বলে প্রতিশ্রুতি দেয় বিএসএফ। কিন্তু সেই প্রতিশ্রুতি রক্ষা করা তারা প্রয়োজন বলে মনে করে না। এসব হত্যাকাণ্ডের একটিরও বিচার হয়নি। এমনকি বিএসএফ বা ভারত সরকার হত্যাকাণ্ডের কোনো ঘটনায় উদ্বেগও প্রকাশ করেনি।’

তিনি আরো বলেন, আন্তর্জাতিকভাবে সীমান্ত হত্যার যে আইন আছে, বাংলাদেশ সরকার ন্যূনতমভাবে তা প্রয়োগ করেনি। তাই আজও এর সমাধান হয়নি।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধ করতে হলে শুধু কূটনৈতিক বৈঠক বা মৌখিক প্রতিশ্রুতিই যথেষ্ট নয়; প্রয়োজন মাঠ পর্যায়ে কঠোর নজরদারি ও সদিচ্ছা। চোরাচালান বন্ধে দুই দেশকেই যৌথভাবে কাজ করতে হবে, কিন্তু তার সমাধান কখনোই ‘গুলি’ হতে পারে না। বন্ধুত্বের মর্যাদা রক্ষায় সীমান্তে লাশের মিছিল বন্ধ হওয়া এখন সময়ের দাবি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code