প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসস্তূপে শিক্ষার্থীদের উল্লাস, দায় কার?

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ১, ২০২৪, ০৮:৩৮ পূর্বাহ্ণ
শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ধ্বংসস্তূপে শিক্ষার্থীদের উল্লাস, দায় কার?

Manual7 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এক প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা অন্য প্রতিষ্ঠান ভেঙে গুড়িয়ে দিচ্ছে, লুট করে নিয়ে যাচ্ছে আসবাবপত্র। শুধু তাই নয়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যখন ধ্বংসস্তূপে পরিণত হচ্ছে তখন উল্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। আবার তা ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে। এমন ঘটনা বাংলাদেশের ইতিহাসে ঘটেনি বলছেন শিক্ষাবিদ ও সংশ্লিষ্টরা। তাদের অভিমত, এ দায় শিক্ষার্থীদের নয়। প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক তাহলে দায় কার?

Manual4 Ad Code

গত ১৪ সেপ্টেম্বর রাজধানীর সেন্ট্রাল রোডে আইডিয়াল কলেজের ব্যানার খুলে নিয়ে যায় ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীরা। একজন ছাত্রকে মারধরের ঘটনায় আইডিয়াল কলেজে ঢুকে ভাঙচুর করে তারা। দুপক্ষের মধ্যে সেদিন সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটে।

এ ঘটনা যখন ঘটে সেই সময় দেশের বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে অধ্যক্ষ, প্রধান শিক্ষকদের জোর করে পদত্যাগ করানোর হিড়িক চলছিল। ছাত্ররা সমন্বয়কদের নাম ব্যবহার করে অধ্যক্ষদের পদত্যাগ করানোর ‘উৎসব’ শুরু করে। এ জন্য সংশ্লিষ্ট কলেজের শিক্ষকদের ভূমিকা নিয়েও খবর প্রকাশিত গণমাধ্যমে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ৭ আগস্ট রাজধানীর ঢাকা সিটি কলেজে নিয়মিত অধ্যক্ষ অধ্যাপক বেদার উদ্দিন আহমদকে সরিয়ে দিতে বাইরের একদল শিক্ষার্থীকে প্রতিষ্ঠানে নিয়ে আসা হয়। বহিরাগত এই শিক্ষার্থীদের সঙ্গে ছিলেন ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষকও। পদত্যাগপত্র লিখে নিয়ে এসে তাতে জোর করে অধ্যক্ষের সই নেওয়া হয়। বিষয়টি সেখানেই থেমে থাকেনি। বহিরাগত শিক্ষার্থীদের সহযোগিতা নিয়ে সিটি কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ পদে বসেন ওই কলেজের ইংরেজি বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মো. নেয়ামুল হক। এরপর তিনি ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষের পদে নিয়োগ দেন মার্কেটিং বিভাগের শিক্ষক অধ্যাপক মোখলেছুর রহমানকে। যদিও পরে মোখলেছুর রহমান নিজের পদ থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর থেকে এই প্রতিষ্ঠানে অস্থির অবস্থা চলতে থাকে।

জোর করে পদত্যাগ করানো অধ্যক্ষকে পদে বসানো, ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ ও ভারপ্রাপ্ত উপাধ্যক্ষকে সরিয়ে দেওয়াসহ সাত দফা দাবিতে গত ২৭ ও ২৮ অক্টোবর রাস্তা অবরোধ করে আন্দোলন শুরু করেন ঢাকা সিটি কলেজের শিক্ষার্থীরা। এক পর্যায়ে প্রতিষ্ঠানটি বন্ধ ঘোষণা করা হয়।

এরপর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন। গত ১৮ নভেম্বর সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা এককভাবে সরকারি তিতুমীর কলেজকে স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে রূপান্তর করার দাবিতে সড়ক ও রেলপথ অবরোধ করেন। এদিন ট্রেনে শিক্ষার্থীদের হামলায় একজন মা ও তার শিশু সন্তান গুরুতর আহত হয়। গত ১৯ নভেম্বর পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলে।

এই ঘটনার পর ঢাকা কলেজের এক ছাত্রকে চড়-থাপ্পড় মারার ঘটনায় গত ২০ ও ২১ নভেম্বর ঢাকা কলেজ ও সিটি কলেজ সংঘর্ষে জড়ায়। বন্ধ হয়ে যায় দুই কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম।

এরপর গত ২৪ নভেম্বর রাজধানীর ডেমরায় ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হাওলাদারে ভুল চিকিৎসায় অভিযোগে শিক্ষার্থীরা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অবরোধ করে এবং ভাঙচুর করে কলেজটির শিক্ষার্থীরা। এতে প্রায় ১০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে বলে দাবি করে ওই কলেজের কর্তৃপক্ষ। এদিন মেডিক্যালের সামনেই একদল শিক্ষার্থী ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপরে হামলা করে।

ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের এক শিক্ষার্থী জানান, এর আগেও পুরান ঢাকার কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের ওপর হামলা চালায়। এর প্রতিবাদে তারা ন্যাশনাল মেডিক্যালের সামনে বিক্ষোভ শুরু করেন বলে জানান তিনি।

Manual2 Ad Code

জানা গেছে, গত ১৬ নভেম্বর ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থী অভিজিৎ হালদার ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ভর্তি হন ন্যাশনাল মেডিক্যালে। ১৮ নভেম্বর রাতে আইসিইউ-তে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। ভুল চিকিৎসার অভিযোগে এনে ২০ ও ২১ নভেম্বর ন্যাশনাল মেডিক্যাল করে অবরোধ করে অভিজিতের সহপাঠীরা। তাদের দাবি, এদিন হাসপাতালের পক্ষ নিয়ে মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপরে পাল্টা হামলা করে সোহরাওয়ার্দী ও কবি নজরুল কলেজের একদল শিক্ষার্থী।

Manual5 Ad Code

পরে গত ২৪ নভেম্বর (রবিবার) ‘সুপার সানডে’ ঘোষণা করে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীসহ অন্যান্য কয়েকটি কলেজের শিক্ষার্থীরা সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সরকারি কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলা করে।

সাত কলেজের অনার্স প্রথম বর্ষের পরীক্ষার দিন সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ কেন্দ্রে হামলার পাশাপাশি সরকারি কবি নজরুল কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করে ড. মাহবুবুর রহমান কলেজসহ অন্যান্য কলেজের শিক্ষার্থীরা। হামলার সময় সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সরকারি কবি নজরুল কলেজের মালামাল লুট করে কাগজপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে নষ্ট করে শিক্ষার্থীরা।

পরদিন (২৫ নভেম্বর) ‘মেগা মানডে’ ঘোষণা করে সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের নেতৃত্বে কবি নজরুল কলেজের শিক্ষার্থীসহ সাত কলেজের হাজার হাজার শিক্ষার্থী মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজে হামলা ও ভাঙচুর চালায়।

একের পর এক হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় সেন্ট গ্রেগরি, ঢাকা মহানগর মহিলা কলেজ, সরকারি বাংলা বাজার গার্লস হাইস্কুল, দনিয়া কলেজ, হিড ইন্টারন্যাশনাল স্কুলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আক্রান্ত হয় এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। হামলা ও পাল্টা হামলার ঘটনায় এ পর্যন্ত রাজধানীর ৯টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে।

এই হামলার সঙ্গে সোহরাওয়ার্দী কলেজ ছাত্রদলের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন একাত্মতা ঘোষণা করেন। তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের যেকোনও যৌক্তিক আন্দোলনের সঙ্গে ছাত্রদল সর্বদা একাত্মতা পোষণ করে। কিন্তু আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টি করলে তা কখনোই ছাত্রদল মেনে নেবে না।’

সরকারি কবি নজরুল কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজ এবং ন্যাশনাল মেডিক্যালে ব্যাপক ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে। সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজের ডিপার্টমেন্টের আলমারি ভেঙে নগদ অর্থ লুট, সার্টিফিকেট, বই, অফিস ফাইল, শিক্ষার্থীদের মার্কশিট, প্রশংসাপত্রসহ ভিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র নিয়ে গেছে এবং কিছু নথি নষ্ট করা হয়েছে বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এক কলেজের শিক্ষার্থীরা অন্য কলেজের শিক্ষার্থীদের কলেজে হামলা ভাঙচুর ও লুটপাট শেষে লুটের মালামাল নিয়ে আনন্দ-উল্লাস করেছে; যার ছবিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়।

শিক্ষাবিদরা বলছেন, ছাত্রদের এই কাজে ব্যবহার করা অন্যায় হয়েছে। আর সে কারণেই ছাত্রদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়েছেন শিক্ষকরা। তাছাড়া প্রতিষ্ঠান প্রধানরা যখন পদত্যাগ করানো নিয়ে ভয়ে ছিলেন তখন শিক্ষার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করার সাহস হারিয়ে ফেলেন তারা। অভিভাবকরাও দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। ফলে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে রাজধানীর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে চলেছে ধ্বংসলীলা।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা শিক্ষাবিদ রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘শিক্ষকরাও এই ঘটনায় দায়ী, তবে অভিভাবকদের দায় আরও বেশি। যা ঘটছে তা গ্রহণযোগ্য না। একদিকে রাষ্ট্রের সংস্কার চাওয়া হচ্ছে— অপরদিকে সরকারকে সংস্কারের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। তাহলে কে বা কারা উসকানি দিয়ে এসব ঘটাচ্ছে, তা দেখা দরকার। শিক্ষার্থীরা তো এমনিতেই মাঠে নামবে না। তাহলে কারা এসব করাচ্ছে, পেছনে কেউ না কেউ আছে। এটা বের করার দায়িত্ব সরকারের। লাঠিপেটা ভাঙচুর, লুটপাট ফৌজদারি অপরাধ। আইনের মাধ্যমে না গিয়ে এগুলো করানো হচ্ছে। যে শিক্ষার্থী মারা গেছে, তার বিচার করার জন্য তো আইন-আদালত আছে। নীতি-নির্ধারকরা বলছেন, আইন কেউ হাতে তুলে নেবেন না, অথচ অহরহ আইন হাতে তুলে নেওয়া হচ্ছে।’

Manual2 Ad Code

রাশেদা কে চৌধুরী বলেন, ‘তিতুমীর কলেজ ও সাত কলেজের আন্দোলনটা তো জাতীয় ইস্যু না। অনেক হয়েছে। শিক্ষক, অভিভাবক সমন্বয়কসহ সংশ্লিষ্ট সব মহলের কাছ থেকে কড়া বার্তা যেতে হবে— শিক্ষার্থীদের ক্লাসে যেতে হবে। আমরা কোভিডের প্রভাবমুক্ত হইনি, আমাদের লেখাপড়ার বারোটা বেজে গেছে, সেই জায়গা থেকে আমাদের সামনে এগোবার স্বপ্ন তো চুরমার হয়ে যাবে। সংস্কার চলতে থাকুক, কিন্তু শিক্ষাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। শিক্ষার ট্রেন যাতে লাইনচ্যুত হয়ে না যায়।’

বেসরকারি টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শিক্ষক সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি ধানমন্ডির ইন্টারন্যাশনাল এডুকেশন কলেজের অধ্যক্ষ ড. নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ায় মনোযোগ নেই। এই বিষয়টি শিক্ষা ও অভিভাবকদের ভাবতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে কঠোর হতে হবে। শিক্ষকদের অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্বে শিক্ষার্থীদের ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। সবার আগে দায় নিতে হবে অভিভাবক ও শিক্ষকদের। তবে আমাদের কারও এ দায় এড়ানোর সুযোগ নেই। শিক্ষার্থীরা লুটপাট করবে, ভাঙচুর করবে, এগুলোতে তারা আবার উল্লাস করবে, আর আমরা সবাই চুপচাপ বসে দেখবো, অথচ এগুলো বন্ধের পদক্ষেপ নেবো না— তাহলে সবাইকে তো এজন্য দায়ী হতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের ক্লাসে ফেরাতে হবে, ক্লাসে ফেরানোর পরিস্থিতি তৈরি করতে হবে। প্রয়োজনে শিক্ষার্থীদের মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার ব্যবস্থা নিতে হবে। শুধু শিক্ষার্থীদের দায়ী করে লাভ নেই। তাদের আমরা এই পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিয়েছি। এখন তার ফল ভোগ করছি।’

সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজের অধ্যক্ষ ড. কাকলি মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘মোল্লা কলেজের শিক্ষার্থীদের হামলায় আমার কলেজের ৩০ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে। অনেক ডকুমেন্ট নষ্ট হয়েছে, তা টাকার মূল্যে নিরূপণ করা সম্ভব না। পুরো ঘটনায় প্রশাসনের কোনও সহযোগিতা পাইনি।’

সর্বশেষ খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গুলিভর্তি ম্যাগজিন চুরির অভিযোগে ড. মাহবুবুর রহমান মোল্লা কলেজসহ বিভিন্ন কলেজের ৮ হাজার শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা করেছে পুলিশ। পুলিশের উপপরিদর্শক এ কে এম হাসান মাহমুদুল কবীর বাদী হয়ে রাজধানীর সূত্রাপুর থানায় রবিবার মামলাটি করেন।

লালবাগ ডিসি অফিসে কর্মরত কনস্টেবল মো. আশরাফুল ইসলামের নামে ইস্যু করা পিস্তল, ৮ রাউন্ড গুলিসহ একটি ম্যাগজিন ছিনিয়ে নেওয়ারও কথা উল্লেখ করা হয় এজাহারে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code