প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি পুঁজি গেছে ভারতে

editor
প্রকাশিত ডিসেম্বর ৭, ২০২৪, ০৬:০৯ পূর্বাহ্ণ
গত অর্থবছরে সবচেয়ে বেশি পুঁজি গেছে ভারতে

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
করোনা সংক্রমণের আগে থেকেই দেশের অর্থনীতিতে মন্দা চলছে। ২০২০ সালে করোনার সংক্রমণের পর আরও খারাপ অবস্থায় পড়ে অর্থনীতি। ২০২২ সালে বৈশ্বিক মন্দা দেখা দিলে দেশের অর্থনীতিতেও এর প্রভাব প্রকট আকার নেয়। এর মধ্যে ভয়াবহ ডলার সংকট টাকার মান কমিয়ে দেয়। যা পুরো অর্থনীতিকে আক্রান্ত করে। এর নেতিবাচক প্রভাব এখনও অর্থনীতিতে বিদ্যমান।
অর্থনীতির এমন দুঃসময়েও দেশ থেকে বৈদেশিক মুদ্রায় নিট পুঁজি বিদেশে সরানোর প্রবণতা বেড়েছে। এক বছরে বৃদ্ধির পরিমাণ ৬০ শতাংশ। ৫ বছরের মধ্যে গত অর্থবছরেই সর্বোচ্চ পরিমাণ পুঁজি দেশ থেকে বৈধভাবে বিদেশে নেওয়া হয়েছে। এটা টাকার অঙ্কে ২৪০ কোটি এবং বৈদেশিক মুদ্রায় প্রায় ২ কোটি ডলার। এছাড়া অবৈধভাবে আরও কয়েকশগুণ বেশি পুঁজি বিদেশে সরানো হয়েছে। সম্প্রতি প্রকাশিত অর্থনীতি বিষয়ক শ্বেতপত্র প্রণয়ন কমিটির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে গত ১৫ বছরে দেশ থেকে প্রতিবছর গড়ে ১৬০০ কোটি ডলার পাচার হয়েছে।

সূত্র জানায়, আগে দেশ থেকে বিদেশে পুঁজি বিনিয়োগের কোনো অনুমোদন দেওয়া হতো না। গত সরকারের আমলে সীমিত আকারে কিছু পুঁজি বিনিয়োগের অনুমোদন দেওয়া হয়। এর মধ্যে বিদেশে আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতেই বৈধভাবে বেশি পুঁজি নেওয়া হয়েছে। এছাড়া কয়েকজন ব্যবসায়ীকে বিদেশে কারখানা স্থাপনের জন্য পুঁজি নেওয়ার অনুমোদন দেওয়া হয়। কিন্তু বৈধভাবে নেওয়া হয়েছে খুবই সামান্য। পাচারের মাধ্যমে বিপুল অঙ্কের পুঁজি বিদেশে নেওয়া হয়েছে। এসব দিয়ে গত সরকারের প্রভাবশালী অনেক ব্যবসায়ী বিদেশে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন। এর মধ্যে রয়েছেন, বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমান পরিবার, এস আলম গ্রুপের সাইফুল আলম মাসুদের পরিবার, সাবেক ভূমিমন্ত্রী সাইফুজ্জামান চৌধুরী জাভেদের পরিবার, নাসা গ্রুপের নজরুল ইসলাম মজুমদারের পরিবারসহ আরও অনেকে। এছাড়াও বিসমিল্লাহ গ্রুপ, সামিট গ্রুপের নামেও বিদেশে অনেক ব্যবসা-বাণিজ্যের তথ্য পাওয়া গেছে।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের প্রতিবেদন থেকে দেখা যায়, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে দেশ থেকে নিট পুঁজি হিসাবে নেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৯৮ লাখ ডলার বা প্রায় ২ কোটি ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় ২৪০ কোটি টাকা। গত ৫ বছরের মধ্যে দেশ থেকে নেওয়া এ পুঁজির পরিমাণ সর্বোচ্চ। ডলার সংকটের মধ্যেও এই প্রবণতা বেড়েছে প্রায় ৬০ শতাংশ। দেশের তীব্র অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেই এই অর্থ বিদেশে নেওয়া হয়েছে বৈধভাবে। বিদেশে বাংলাদেশের মালিকানাধীন কোম্পানিগুলো ব্যবসা করে যে মুনাফা করে তা থেকে ওই বছরে বিনিয়োগ করা হয়েছে ১ কোটি ১৪ লাখ ডলার। যা আগের বছরের তুলনায় ৫৫ দশমিক ৭০ শতাংশ কম। বিদেশে কার্যকর এক কোম্পানি অন্য কোম্পানি থেকে ঋণ নিয়েও পুঁজি বিনিয়োগ করতে পারে। আগে ঋণ নিয়ে পুঁজি বিনিয়োগ করলেও গত অর্থবছরে ঋণ পরিশোধ করার প্রবণতা ছিল বেশি। ফলে ওই বছরে ঋণ নিয়ে কোনো বিনিয়োগ হয়নি। উলটো আরও ৩ কোটি ২৪ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। আগের বছরের তুলনায় ঋণ পরিশোধ বেড়েছে ৫৩ দশমিক ৪০ শতাংশ। ফলে ওই বছরে দেশ থেকে নিট হিসাবে পুঁজি নেওয়ার পরিমাণ কমেছে। ফলে বাংলাদেশি উদ্যোক্তাদের বিদেশে বিনিয়োগ করা পুঁজি স্থিতির পরিমাণ আগের চেয়ে কমে দাঁড়িয়েছে ৩২ কোটি ৮৯ লাখ ডলার। তবে গ্রস পুঁজি বিনিয়োগের পরিমাণ আগের বছরের তুলনায় ১ কোটি ৪১ লাখ ডলার বা ১৭ দশমিক ২৮ শতাংশ বেড়ে ৮ কোটি ১৫ লাখ ডলারে দাঁড়িয়েছে। গত ৩ অর্থবছর ধরে বিদেশ থেকে বাংলাদেশে সরাসরি বৈদেশিক বিনিয়োগ কমছে। গত অর্থবছরে বিদেশ থেকে পুঁজি হিসাবে মূলধন আসা কমেছে ৫ দশমিক ৯৮ শতাংশ এবং গ্রস বিনিয়োগ আসার প্রবণতা কমেছে ৮ দশমিক ৮০ শতাংশ। ২০২২-২৩ অর্থবছরে বিদেশে বিনিয়োগ করা পুঁজির স্থিতি ছিল ৩৪ কোটি ১৪ লাখ ডলার। ওই বছরে দেশ থেকে নিট পুঁজি হিসাবে নেওয়া হয়েছে ১ কোটি ২৪ লাখ ডলার। মুনাফা থেকে বিনিয়োগ হয়েছে ২ কোটি ৫৮ লাখ ডলার। ঋণ পরিশোধ করা হয়েছে ২ কোটি ১১ লাখ ডলার। ওই বছরে গ্রস বিনিয়োগ ছিল ৬ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। নিট বিনিয়োগ ছিল ১ কোটি ১০ লাখ ডলার।

২০২১-২২ অর্থবছরে দেশ থেকে নিট পুঁজি নেওয়া হয়েছে ৬৯ লাখ ডলার। মুনাফা থেকে বিনিয়োগ করা হয় ২ কোটি ৬ লাখ ডলার, ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা হয় ৪ কোটি ৩২ লাখ ডলার। মোট বিনিয়োগ করা হয়েছে ৭ কোটি ৫৪ লাখ ডলার। এর মধ্যে মুনাফা হিসাবে ফেরত আনা হয় ৪৭ লাখ ডলার। এ হিসাবে ওই বছরে নিট বিনিয়োগ ছিল ৭ কোটি ৭ লাখ ডলার। ওই বছরে বিদেশে নিট বিনিয়োগের স্থিতি ছিল ৩৯ কোটি ৭১ লাখ ডলার।

Manual2 Ad Code

২০২০-২১ অর্থবছরে দেশ থেকে নিট পুঁজি হিসাবে নেওয়া হয় ৪১ লাখ ডলার। মুনাফা থেকে বিনিয়োগ হয় ২ কোটি ৭৮ লাখ ডলার। ঋণ নিয়ে বিনিয়োগ করা হয় ২ কোটি ৭৪ লাখ ডলার। মোট বিনিয়োগ হয় ৬ কোটি ৫২ লাখ ডলার। এর মধ্যে মুনাফা বাবদ দেশে আনা হয় ৫৮ লাখ ডলার। ফলে নিট বিনিয়োগ ছিল ৫ কোটি ৯৩ লাখ ডলার। ওই বছরে বিনিয়োগের স্থিতি ছিল ৩৭ কোটি ১০ লাখ ডলার।

২০১৯-২০ অর্থবছরে দেশ থেকে নিট পুঁজি নেওয়া হয়েছে ১ কোটি ৪৯ লাখ ডলার। মুনাফা থেকে বিনিয়োগ করা হয় ১ কোটি ৯৬ লাখ ডলার। ঋণ নিয়ে ওই বছরে নতুন কোনো বিনিয়োগ হয়নি। বরং আগে নেওয়া ঋণ থেকে ২ কোটি ৪০ লাখ ডলার পরিশোধ করা হয়েছে। ওই বছরে মোট বিনিয়োগ হয় ৩ কোটি ৭৫ লাখ ডলার। এর মধ্যে মুনাফা বাবদ ফেরত আনা হয় ২ কোটি ৭০ লাখ ডলার। ফলে নিট বিনিয়োগ ছিল ১ কোটি ৫ লাখ ডলার। আলোচ্য সময়ে বিদেশে বিনিয়োগের নিট স্থিতি ছিল ৩০ কোটি ৬৪ লাখ ডলার। ২০১৯-২০ অর্থবছরে এ স্থিতি ছিল ৩১ কোটি ৯৮ লাখ ডলার।

Manual6 Ad Code

আগের নেওয়া ঋণ পরিশোধ করায় ২০২২-২৩ অর্থবছরের তুলনায় গত অর্থবছরে বিদেশে নিট পুঁজির স্থিতি কমেছে ৩ দশমিক ৬৫ শতাংশ। আগের ২০২২-২৩ অর্থবছরে এ স্থিতি কমেছিল ১৪ দশমিক ০৪ শতাংশ।

Manual5 Ad Code

গত অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে সবচেয়ে বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়েছে ভারতে ৩ কোটি ১৫ লাখ ডলার। দ্বিতীয় অবস্থানে সংযুক্ত আরব আমিরাতে ১ কোটি ৮ লাখ ডলার, তৃতীয় আয়ারল্যান্ডে ১৩ লাখ ডলার। বাংলাদেশি উদ্যোক্তারা বিদেশে সবচেয়ে বেশি পুঁজি বিনিয়োগ করেছেন আর্থিক প্রতিষ্ঠান খাতে ৭ কোটি ১ লাখ ডলার ও খনিজ খাতে ৯৪ লাখ ডলার। এছাড়া টেক্সটাইল, সেবা ও বাণিজ্য খাতে কিছু পুঁজি বিনিয়োগ করা হয়েছে।

Manual3 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code