প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সিলেট সীমান্তে হচ্ছেটা কী?

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১, ২০২৫, ০৫:৩০ পূর্বাহ্ণ
সিলেট সীমান্তে হচ্ছেটা কী?

Manual6 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
সিলেট বিভাগের তিন দিকে ভারত সীমান্ত। কোথাও নদী আবার কোথাও কাটাতারের বেড়া বিভক্ত করে রেখেছে দুইদেশের ভূখণ্ড। বেশিরভাগ সীমান্ত এলাকা দুর্গম হওয়ায় এই অঞ্চল দিয়ে চোরাচালানও বেশি হয়ে থাকে। অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারেরও কাজ করে শক্তিশালী সিন্ডিকেট। প্রায়ই সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বিএসএফ ও খাসিয়াদের হাতে বাংলাদেশি নাগরিক হত্যার ঘটনা ঘটে থাকে।

তবে ৫ আগস্ট পরবর্তী পটপরিবর্তনের পর সিলেট সীমান্তে চোরাচালান, অনুপ্রবেশ ও হত্যা বেড়েছে। গত ৪ মাসে বিএসএফ ও ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে নিহত হয়েছেন ৩ জন বাংলাদেশি নাগরিক। আর দুই দেশে অনুপ্রবেশের সময় আটক হয়েছেন শতাধিক ব্যক্তি। এর মধ্যে অনেক নারী ও শিশু রয়েছেন। ফলে দিন দিন অনিরাপদ হয়ে ওঠছে সিলেট সীমান্ত।

Manual7 Ad Code

সিলেট সীমান্তে দুই দিনের ব্যবধানে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে নিহত হয়েছেন দুই বাংলাদেশি। গত শুক্রবার সন্ধ্যায় সিলেটের গোয়াইনঘাট উপজেলার দমদমিয়া সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে নিহত হন সবুজ মিয়া (২০) নামের এক যুবক। তিনি গোয়াইনঘাট ভিতরগুল পাহাড়তলী গ্রামের আবুল মিয়ার ছেলে। এলাকার কয়েকজনের সাথে তিনি ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিলেন। এসময় খাসিয়াদের গুলিতে তিনি নিহত হন। পরে তার সহযোগীরা তার লাশ বাংলাদেশে নিয়ে আসেন।

এর আগের দিন বৃহস্পতিবার দুপুরে গোয়াইনঘাটের মিনাটিলা সীমান্তের ওপারে ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে একইভাবে প্রাণ হারাণ এক কিশোর। মারুফ মিয়া (১৬) নামের ওই কিশোর জৈন্তাপুর উপজেলার ঝিঙ্গাবাড়ি গ্রামের মো. সাহাব উদ্দিনের ছেলে।

এর আগে ১ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের কুলাউড়া সীমান্তে বিএসএফ’র গুলিতে স্বর্ণা দাস নামের এক কিশোরী নিহত হয়। সে জুড়ি উপজেলার পশ্চিম জুড়ি ইউনিয়নের কালনীগড় গ্রামের পরেন্দ্র দাসের মেয়ে। ৪ ডিসেম্বর ভারতের অভ্যন্তরে কাঠ আনতে গিয়ে মারা যান আশরাফ উদ্দিন নামের এক বাংলাদেশি নাগরিক। পাহাড় থেকে পড়ে তার মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি করা হলেও তার মৃত্যুর প্রকৃত রহস্য উদঘাটন হয়নি। আশরাফ কোম্পানীগঞ্জের কালাইরাগ এলাকার বাটরা গ্রামের মৃত শামসুদ্দিনের ছেলে।

Manual8 Ad Code

সূত্র জানায়, সিলেটের সীমান্তবর্তী উপজেলা গোয়াইনাট, জৈন্তাপুর, কোম্পানীগঞ্জ ও কানাইঘাটের কিছু লোকজনের সাথে ভারতীয় খাসিয়ারা মিলে চোরাকারবারের সিন্ডিকেট তৈরি করেছে। দুইপাড়ের সিন্ডিকেট চোরাকারবারের পাশাপাশি অবৈধভাবে সীমান্ত পারাপারের মাধ্যমে মানবপাচার ও মাদক ব্যবসার সাথে জড়িত।

বাংলাদেশের সিন্ডিকেট সদস্যরা ভারতে গিয়ে চিনি, কাপড়, প্রসাধনী সামগ্রী, সিগারেট, গরু ও মহিষসহ বিভিন্ন পণ্য নিয়ে আসে। আর বাংলাদেশ থেকে রসুন ও মাছসহ বিভিন্ন পণ্য ভারতে পাচার করে থাকে চোরাকারবারীরা। মাঝে মধ্যে দুই দেশের চোরাকারবারীদের মধ্যে লেনদেন নিয়ে বিরোধ দেখা দিলে মারমুখী হয়ে ওঠে ভারতীয় খাসিয়ারা। তারা বাংলাদেশি চোরাকারবারিদের ডেকে নিয়ে গুলি করে খুন করে থাকে। কখনো কখনো সেদেশে আটকে মুক্তিপণ আদায় এবং না পেলে বিএসএফ কিংবা পুলিশের হাতে তুলে দেয়। সিলেট সীমান্তে সক্রিয় চোরাকারবারি সিন্ডিকেটের একাধিক সদস্যের সাথে আলাপ করে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

Manual8 Ad Code

সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার ও শুক্রবার ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে নিহত দুইজনই চোরাকারবারের সাথে জড়িত ছিল। দলের অন্য সদস্যদের সাথে তারা চোরাকারবারের জন্য ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল। কারবারের বিরোধের জেরে তারা ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে প্রাণ হারান।

বিজিবি ৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. হাফিজুর রহমান জানান, নিহত সবুজ ও মারুফ সহযোগীদের সাথে ভারতে অনুপ্রবেশ করেছিল। দ্বন্দ্বের জের ধরে তারা ভারতীয় খাসিয়াদের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছেন। এ ঘটনায বিএসএফ-৪ এর কমান্ড্যান্ট এর সাথে আলোচনা করে হত্যাকান্ডের তীব্র প্রতিবাদ এবং এ ঘটনার সাথে জড়িত ভারতীয় নাগরিকদের বিরুদ্ধে আইনী ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানানো হয়েছে।

এদিকে, এর আগে গত ২৩ ডিসেম্বর সিলেটের তামাবিল সীমান্তের ওপারে ভারতে ডাউকি এলাকা থেকে বাংলাদেশের ১৩ নাগরিককে আটক করে বিএসএফ। ওই ১৩ জনও চোরাচালানের সাথে জড়িত বলে বিজিবির কাছে দাবি করেছে বিএসএফ।

সূত্র আরও জানায়, সীমান্ত সিন্ডিকেট চোরাকারবারের পাশাপাশি মানবপাচারের সাথেও জড়িত। ৫ আগস্টের পর সিলেট বিভাগের বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে অবৈধভাবে ভারতে প্রবেশ ও ভারত থেকে ফেরার সময় শতাধিক ব্যক্তিকে আটক করেছে বিজিবি। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে মানবপাচারকারীরা ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে গেছে। এছাড়া গত ৫ মাসে সিলেট সীমান্ত থেকে বিজিবি প্রায় শত কোটি টাকার চোরাইপণ্য জব্দ করেছে।

Manual1 Ad Code

বিজিবি-৪৮ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্ণেল মো. হাফিজুর রহমান জানিয়েছেন, উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা অনুযায়ী সীমান্তে নিরাপত্তারক্ষা ও চোরাচালান প্রতিরোধে বিজিবির অভিযানিক কার্যক্রম ও গোয়েন্দা তৎপরতরা সর্বোতভাবে অব্যাহত রয়েছে। এরই ধারাবাহিকতায় বিজিবির বিভিন্ন বিওপির টহল দল অভিযান চালিয়ে চোরাইপণ্য জব্দ ও অনুপ্রবেশকারীদের আটক করছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code