প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

চার প্রদেশ ‘বিলাসিতা’, বাড়বে রাজনৈতিক জটিলতা কোন্দল ব্যয়

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ২৮, ২০২৫, ১২:১০ অপরাহ্ণ
চার প্রদেশ ‘বিলাসিতা’, বাড়বে রাজনৈতিক জটিলতা কোন্দল ব্যয়

Manual1 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

দেশের পুরোনো চারটি বিভাগকে চারটি প্রদেশ করার সুপারিশের কথা ভাবছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি বাংলাদেশের মতো ছোট দেশের জন্য বাস্তবসম্মত নয়। চার প্রদেশ এক ধরনের বিলাসিতা। বরং এর ফলে দেশে রাজনৈতিক জটিলতা ছাড়াও কোন্দল ও ব্যয় বাড়বে।

 

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের পর গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার রাষ্ট্রের বিভিন্ন খাতের সংস্কার প্রস্তাব তৈরির জন্য ১১টি কমিশন গঠন করে দেয়। এর মধ্যে রয়েছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন।

গণমুখী, জবাবদিহিমূলক, দক্ষ ও নিরপেক্ষ জনপ্রশাসন গড়ে তুলতে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের সাবেক চেয়ারম্যান আবদুল মুয়ীদ চৌধুরীর নেতৃত্বে গত ৩ অক্টোবর এ সংস্কার কমিশন গঠন করা হয়। কমিশনের মেয়াদ আগামী ১৫ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত। এসময়ের মধ্যেই প্রতিবেদন জমা দেবে সংস্কার কমিশন।

 

কমিশন সূত্রে জানা গেছে, ক্ষমতা বিকেন্দ্রীকরণের অংশ হিসেবে ঢাকা, চট্টগ্রাম, রাজশাহী ও খুলনাকে প্রদেশ করার চিন্তা করছে কমিশন। যদিও বিষয়টি এখনো চূড়ান্ত নয়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, চার প্রদেশ দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আরও খরচ বাড়াবে। দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই মুহূর্তে এটি মোটেও ইতিবাচক নয়। ছোট এ দেশে চার প্রদেশের প্রয়োজন নেই।

Manual6 Ad Code

 

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘এটা মোটেও বাস্তবসম্মত নয়। আমাদের স্থানীয় সরকারের যে বিদ্যমান কাঠামো আছে সেগুলোই আপনি অ্যাফেক্টিভলি রান করতে পারেননি। সেখানে আরেকটা কাঠামো তৈরি করে সেটা যে রান করতে পারবেন, এটার কোনো গ্যারান্টি আছে?’

 

Manual6 Ad Code

‘এখন পর্যন্ত একটা শক্তিশালী স্থানীয় সরকার কাঠামোই তো গড়ে উঠল না, যেটা আসলে জনগণের স্বার্থে বা জনগণের জন্য কাজ করে। এক এক সরকার আসে এগুলোকে তাদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে। আবার পরের সরকার এসে আবার তাদের দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করে। সামরিক শাসন এলে তাদের স্বার্থে ব্যবহার করে। জনমুখী যে স্থানীয় সরকার, সেটা কখনো গড়ে ওঠার সুযোগই তো পেল না।’

তিনি বলেন, ‘আপনি প্রদেশ দিয়ে কি করবেন? আপনার দরকার বিদ্যমান শাসনব্যবস্থার দায়বদ্ধতা নিশ্চিত করা। প্রধানমন্ত্রীর ক্ষমতাকে দায়বদ্ধতায় আনা। সেগুলোতে আপনি জোর না দিয়ে আরও চারটা প্রদেশ করবেন, দেশের অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় আরও খরচ বাড়াবেন, এটার কোনো যৌক্তিকতা আমি অন্তত পক্ষে দেখি না।’

ড. সাব্বির আহমেদ বলেন, ‘আমাদের মতো ছোট দেশের মধ্যে চার প্রদেশ এক ধরনের বিলাসিতা। এই বিলাসী চিন্তা যারা করে, তাদের এর পেছনে উদ্দেশ্য থাকতে পারে। আমার উদ্দেশ্য নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে।’

Manual3 Ad Code

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান মেজবাহ-উল-আজম সওদাগর বলেন, ‘এটি একটি সাংবিধানিক ব্যাপার। অর্থাৎ এ দেশে একটি যুক্তরাষ্ট্রীয় সরকার ব্যবস্থার সুপারিশ তারা করছেন। সেটি সুপারিশ করার কথা সংবিধান সংস্কার কমিশনের। কিন্তু তারা এ ধরনের সুপারিশ করেননি। করছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন, এটি একটি প্রশ্ন।’

তিনি আরও বলেন, ‘আর এত ছোট একটি দেশে চারটি প্রদেশ করার প্রয়োজন এখনো অনুভূত হয়নি। এর ফলে দেশের রাজনৈতিক জটিলতা বাড়বে। কোন্দল বাড়বে, ব্যয় বাড়বে। দেশের জাতীয় নিরাপত্তার জন্য এই মুহূর্তে এটি মোটেও ইতিবাচক নয়।’

Manual2 Ad Code

শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকার পতনের পর গত অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে গঠন করা হয় ছয়টি সংস্কার কমিশন। সেগুলো হলো– নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কমিশন, পুলিশ প্রশাসন সংস্কার কমিশন, বিচার বিভাগ সংস্কার কমিশন, দুর্নীতি দমন সংস্কার কমিশন, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন ও সংবিধান সংস্কার কমিশন।

এরপর গত নভেম্বরে আরও পাঁচটি কমিশন গঠন করা হয়। সেগুলো হলো– স্বাস্থ্যবিষয়ক সংস্কার কমিশন, গণমাধ্যম সংস্কার কমিশন, শ্রম অধিকারবিষয়ক সংস্কার কমিশন, নারীবিষয়ক সংস্কার কমিশনের এবং স্থানীয় সরকার সংস্কার কমিশন।

ইতোমধ্যে প্রথম পর্যায়ে গঠন করা চার কমিশন তাদের প্রতিবেদন জমা দিয়েছে। গত ১৫ জানুয়ারি বেলা সাড়ে ১১টার দিকে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয়ে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে সংবিধান, নির্বাচনব্যবস্থা, দুর্নীতি দমন কমিশন ও পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদন জমা দেওয়া হয়।

কমিশনগুলোর সুপারিশ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে ফেব্রুয়ারিতে আলোচনা হবে বলে সরকারের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। ১৫ জানুয়ারি বিকেলে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান এ তথ্য জানান।

সুপারিশগুলো নিয়ে কবে নাগাদ রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা শুরু হবে– জানতে চাইলে উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘যেহেতু কমিশনপ্রধানরা এক মাস সময় চেয়ে নিয়েছেন। তারা নিজেরা বসে প্রাধান্যগুলো ঠিক করবেন। আমার ধারণা, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে হয়ত আলোচনা শুরু করা যাবে। রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে এক ধরনের প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেছে। তারা তাদের লিখিত মতামত দিয়েছেন।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code