প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিগত সরকারের গুম-খুন কাণ্ড : এ ভয়ের সংস্কৃতি বন্ধ হোক চিরতরে

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ৩০, ২০২৫, ০৭:৫১ পূর্বাহ্ণ
বিগত সরকারের গুম-খুন কাণ্ড : এ ভয়ের সংস্কৃতি বন্ধ হোক চিরতরে

Manual4 Ad Code

সম্পাদকীয়:
বিরোধী মত দমনে হেন কাজ নেই, যা করেনি বিগত সরকার। ভয়-ভীতি প্রদর্শন তো আছেই, নির্যাতন, এমনকি গুম-খুনেরও অসংখ্য ঘটনা ঘটানো হয়েছে। আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ সম্প্রতি এ সম্পর্কিত এক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে, যেখানে উঠে এসেছে, সরাসরি গুম-খুনের নির্দেশদাতা ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের হাতে প্রতিবেদন হস্তান্তরকালে সংস্থাটির এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক এলেইন পিয়ারসন জানিয়েছেন, শেখ হাসিনা বা তার সরকারের শীর্ষ কর্মকর্তারা নিখোঁজ হওয়ার বিষয়ে জানতেন। অনেক ক্ষেত্রে শেখ হাসিনা সরাসরি গুম ও হত্যার নির্দেশও দিয়েছিলেন। জুলাই গণ-অভ্যুত্থান এবং বাংলাদেশের মানবাধিকার পরিস্থিতি নিয়ে এদিন প্রকাশিত ‘আফটার দ্য মুনসুন রেভুল্যুশন : আ রোডম্যাপ টু লাস্টিং সিকিউরিটি সেক্টর রিফর্ম ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামের ৫০ পৃষ্ঠার ওই প্রতিবেদনে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করতে সরকারকে মূল কাঠামোগত সংস্কারের ওপর জোর দেওয়ার সুপারিশও করা হয়েছে। আটকের ক্ষেত্রে আইন অনুসরণ এবং সমালোচকদের দমনের জন্য ব্যবহৃত আইন বাতিলের পাশাপাশি গণগ্রেফতার ও প্রতিশোধমূলক সহিংসতা বন্ধ করার তাগিদও দিয়েছে সংস্থাটি। রয়েছে বিচারবহির্ভূত হত্যা ও গুমে জড়িত থাকায় বিশেষায়িত বাহিনী র‌্যাবকে বিলুপ্তির সুপারিশও।

Manual4 Ad Code

বিনাবিচারে কাউকে আটক বা বন্দি রাখা বা গুম করা সম্পূর্ণ বেআইনি। একইসঙ্গে তা দেশীয় ও আন্তর্জাতিক আইনসহ মানবতা ও মানবাধিকারের পরিপন্থি। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতাগ্রহণের পর এ বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে ইতোমধ্যে গত ১৫ বছরে আওয়ামী লীগের শাসনামলে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে গুম হওয়া ব্যক্তিদের সন্ধানে পাঁচ সদস্যের কমিশন গঠন করেছে। শুধু তাই নয়, জাতিসংঘের গুম ও নির্যাতনবিরোধী আন্তর্জাতিক কনভেনশনে স্বাক্ষরও করেছে বাংলাদেশ। কাজেই গুম-খুনের বিরুদ্ধে এ সরকারের অবস্থান যে দৃঢ়, তা স্পষ্ট।

Manual8 Ad Code

দেশে মানবাধিকারের ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় সমস্যাগুলো হলো-বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড, রাষ্ট্রীয় বাহিনীর হাতে গুম, বিনাবিচারে আটক, নির্বিচারে অবৈধভাবে আটক, সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলা ও নির্যাতন, খুন, সন্ত্রাস, নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ইত্যাদি। বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডসহ এসব ঘটনার জন্য জাতিসংঘ ও বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা, যেমন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ও অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল তৎকালীন সরকারকে নিন্দা জানালেও তাতে তারা কর্ণপাত করেননি। মানবাধিকার সংস্থাটি জানিয়েছে, জুলাই বিপ্লবে প্রায় এক হাজার বাংলাদেশি গণতন্ত্রের জন্য লড়াই করতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছে, শুরু হয়েছে একটি যুগান্তকারী অধ্যায়ের। বাংলাদেশে একটি অধিকার ও সম্মানজনক ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ তৈরি হয়েছে। তবে ভবিষ্যতের সরকারের যে কোনো দমন-পীড়ন প্রতিরোধে দ্রুত ও কাঠামোগত সংস্কার করতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকারের কষ্টে অর্জিত অগ্রগতির সুফল মিলবে না।

আমরাও মনে করি, ভবিষ্যতে কোনো সরকারের আমলেই যেন দেশে এ ধরনের কোনো ঘটনা আর না ঘটে, তা সুনিশ্চিত করার এখনই উপযুক্ত সময়। আর তা সুনিশ্চিত করতে হবে মানবাধিকার প্রতিষ্ঠার স্বার্থেই। গুম-খুন-নির্যাতনের মতো অপরাধের বিচার ত্বরান্বিত করতে এবং আগামীতে এ ধরনের ন্যক্কারজনক পদক্ষেপের রাশ টানতে অন্তর্বর্তী সরকার যে সদিচ্ছার পরিচয় দিচ্ছে, জাতি তা মনে রাখবে নিশ্চয়ই। একইসঙ্গে এখনো যারা নিখোঁজ রয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করতে সরকার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে, এটাই প্রত্যাশা।

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code