প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিয়ানীবাজারে উপেক্ষিত নারী জনপ্রতিনিধি

editor
প্রকাশিত মার্চ ৭, ২০২৫, ০৯:৩৫ অপরাহ্ণ
বিয়ানীবাজারে উপেক্ষিত নারী জনপ্রতিনিধি

Manual2 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:

 

Manual1 Ad Code

নাসিমা বেগম ভোটের মাঠে লড়াই করে বিয়ানীবাজার উপজেলার আলীনগর ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু জনগণের মনোনীত এই প্রতিনিধির অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। পদে পদে পড়ছেন বাধার মুখে। আক্ষেপের সুরে নাসিমা বেগম বলেন, ‘আমাদের শুধু চেয়ারটাই আছে, মানুষের জন্য কিছু করার ক্ষমতা নেই।’ পরিষদের সভায় যান, মাঝে মধ্যে কথা বলার সুযোগ থাকে। কিন্তু সিদ্ধান্তে তা আর ওঠে না।

 

বিয়ানীবাজারের চারখাই ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত নারী আসনের সদস্য সাথী রাণী দেরও একই উপলব্ধি। তিনি বলেন, আমাদের কেউ বা দেখেন ‘অলঙ্কার’ হিসেবে, কেউ বা দেখেন ‘আপদ’ হিসেবে। খুব কম ক্ষেত্রেই সাধারণ আসনের নির্বাচিত মেম্বার বা চেয়ারম্যানরা আমাদের সম্মানের চোখে দেখেন। নীতিমালা বলেন, পরিপত্র বলেন, আইন বলেন, যেটুকু ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে সেটুকুর মূল্যায়ন করা হচ্ছে না। কী কী কাজ আসে, কত টাকা বরাদ্দ আসে- জানতে চাইলে বলা হয় না। জনগণের কাছে প্রতিশ্রুতি দিয়ে নির্বাচিত হয়ে এখন তাদের কাছে মুখ দেখাতে পারছি না।

 

বিয়ানীবাজার উপজেলার ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধিদের চিত্র প্রায় একই। জনগণের ভোটে সরাসরি নির্বাচিত হলেও পরিষদে তাদের নেই সুনির্দিষ্ট কোনো কাজ, নেই মূল্যায়ন। উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে তাদের নেই কোনো ভূমিকা। পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নে নেই সম্পৃক্ততা।

 

উপজেলার ১০টি ইউনিয়নে ৩০ জন নারী জনপ্রতিনিধি দায়িত্ব পালন করছেন। কয়েক মাস আগে উপজেলায় মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান ১জন, জেলা পরিষদে সংরক্ষিত ওয়ার্ডে ১ জন ও পৌরসভায় ৩ জন নারী সদস্য ছিলেন। বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেয়ার পর ইউনিয়ন পরিষদ রেখে বাকী পরিষদগুলো বাতিল করে দেয়ায় নারী জনপ্রতিনিধির সংখ্যা কমেছে।

 

স্থানীয় সরকারের সব স্তরে সংরক্ষিত কোটায় এক-তৃতীয়াংশ নারী সদস্য রাখার ব্যবস্থা আছে। ইউনিয়ন পরিষদে সাধারণ কোটায় নির্বাচিত সদস্যদের নির্দিষ্ট ওয়ার্ড বা নির্বাচনী এলাকা আছে। সংরক্ষিত নারী সদস্য তিনটি ওয়ার্ডের প্রতিনিধিত্ব করেন। কিন্তু ওই তিনটি ওয়ার্ডে একজন করে পুরুষ সদস্য থাকায় নারী সদস্যের ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হয় না। আইন অনুযায়ী সাধারণ আসন সবার জন্য উন্মুক্ত। অর্থাৎ সেখানে নারী সদস্য থাকতে পারেন। যদিও বাস্তবে তা খুব কম।

বিয়ানবাজার উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান জেসমিন নাহারের বেড়ে ওঠা শিক্ষিত পরিবারে। উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের সর্বশেষ ভোটে বিপুল সংখ্যক ভোট পেয়ে নির্বাচিত হন। তিনি বলেন, চেয়ারম্যান ও সাধারণ আসনের ভাইস চেয়ারম্যানদের মতোই সমানসংখ্যক ভোটারের কাছে আমাদের যেতে হয়েছে। কিন্তু যে কয়দিন দায়িত্ব পালন করেছি, সমান সুযোগ পাইনি। তিনি আক্ষেপ করে বলেন- ‘আসলে এই পোস্ট তৈরির কোনো মানে হয় না। এটি শুভঙ্করের ফাঁকি!’

 

Manual7 Ad Code

এ রকম নানা অভিযোগ উপজেলার নারী জনপ্রতিনিধিদের। তারা বলছেন, আইন ও বিধিমালায় নারী জনপ্রতিনিধিদের কাজের পরিধি নির্ধারণ করা আছে। এর পরও স্থানীয় বেশির ভাগ নারী জনপ্রতিনিধির আসলে কোনো কাজ নেই, দাপ্তরিক কাজে আনুষ্ঠানিক মতামত দেয়া ছাড়া। এ নিয়ে আপত্তি জানালেও কোনো সমাধান হয়নি। ফলে আইনে নারী জনপ্রতিনিধিদের বেশ কিছু ক্ষমতা দেয়া থাকলেও তা বাস্তবায়ন হচ্ছে না।

দুবাগ ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের সদস্য মোছা: পারুল বেগম বলেন, ‘নারী সদস্য হিসেবে তেমন কোনো কাজ আমাদের থাকে না। এলাকার মানুষ মেম্বার হিসেবে জানে, সম্মান করে এটাই পাওয়া। ইউনিয়নের সব কাজ চেয়ারম্যান ও পুরুষ সদস্যরাই করেন।পরিষদের পুরুষ সদস্যরাও সব সময় সহযোগিতা করেন না।’

Manual5 Ad Code

 

Manual4 Ad Code

সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজারের বেশির ভাগ নারী জনপ্রতিনিধি স্বল্পশিক্ষিত হওয়ায় নিজেদের দায়িত্ব সম্পর্কেও জানেন না। এই সুযোগে পুরুষ মেম্বাররাও তাদের ওপর ছড়ি ঘোরান। যার কারণে চেয়ারম্যান ও পুরুষ সদস্যদের সব সিদ্ধান্তে সম্মতি দেয়া ছাড়া তাদের কিছু করার থাকে না।

 

স্থানীয় নারী জনপ্রতিনিধির এই বঞ্চনার মাঝে আজ ৮ মার্চ নারী দিবস পালিত হচ্ছে। এই দিবসকে ঘিরেও এখানে নারী প্রতিনিধিদের কোন উদ্দীপনা নেই।

 

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code