প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৭ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২২শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৬ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন ব্যাংকে গ্রাহকের চিৎকার: ‘আমার টাকা আমাকে দিন’

editor
প্রকাশিত অক্টোবর ২৫, ২০২৪, ০৮:৫৪ পূর্বাহ্ণ
বিয়ানীবাজারের বিভিন্ন ব্যাংকে গ্রাহকের চিৎকার: ‘আমার টাকা আমাকে দিন’

Manual8 Ad Code

 

স্টাফ রিপোর্টার:

 

দুর্বল ব্যাংকের অসংখ্য গ্রাহক বিয়ানীবাজারের শাখাগুলোতে প্রতিদিনই চেক নিয়ে টাকা তুলতে গিয়ে হয়রানির শিকার হচ্ছেন। লাখ টাকা বা ৫০ হাজার টাকার চেক দিলে ব্যাংকের শাখা থেকে সংশ্লিষ্ট গ্রাহককে বলা হচ্ছে পাঁচ বা দশ হাজার টাকা তোলার জন্য। মোটা অঙ্কের টাকা অল্প অল্প করে কয়েকদিন ধরে তোলার পরামর্শও ব্যাংক কর্তৃপক্ষ গ্রাহককে দিচ্ছে। ফলে সেই ব্যাংকগুলোর গ্রাহকদের মধ্যে এক ধরনের হতাশা দেখা দিয়েছে। প্রতিদিনই এসব ব্যাংক থেকে গ্রাহকদের চিৎকার-চেঁচামেচির শব্দ শোনা যায়।

Manual7 Ad Code

 

সরজমিন ঘুরে দেখা যায়, বিয়ানীবাজার পৌরশহরের ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংকে নিজের জমা টাকা নিতে আসা গ্রাহকদের হাহাকার, অসহায়ত্ব। এসব ব্যাংকের ব্যবস্থাপকরা সকালে এসে বাইরে বের হয়ে যান, আবার বিকেলে ফিরেন। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে ব্যাংকের প্রধান ফটকের বেশীরভাগ অংশ বন্ধ থাকে। বাংলাদেশ ব্যাংকের মধ্যস্থতা ও গ্যারান্টির আওতায় দুর্বল ব্যাংকগুলোতে দেওয়া তারল্যের সঠিক ব্যবহার হচ্ছে কি না তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন গ্রাহকদের অনেকেই। তাদের অভিযোগ, প্রাপ্ত অর্থ ব্যাংকগুলো নিজেদের বেতন-ভাতা পরিশোধ ও অন্যান্য পরিচালন ব্যয়ে কাজে লাগাচ্ছে। সে কারণে গ্রাহকের চাহিদামতো অর্থ সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না।

Manual6 Ad Code

নিজের টাকা তুলতে গিয়ে না পাওয়ার ২টি বেদনাদায়ক অভিযোগ এসেছে আগামী প্রজন্ম’র কাছে। একটি অভিযোগ করেছেন নয়াগ্রামের এক মধ্যপ্রাচ্য প্রবাসী। তিনি বিয়ানীবাজার পৌরশহরের একটি বেসরকারি ব্যাংকের শাখায় মেয়াদি আমানত (ফিক্সড ডিপোজিট রিসিপ্ট বা এফডিআর) করে রেখেছেন। দুটি ছোট কন্যাসন্তান নিয়ে এখন তিনি বড় আর্থিকসংকটে পড়েছেন। এদিকে তার একটি নির্মাণাধীন বাড়ির কাজও শেষ করা বিশেষ প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। এ অবস্থায় আজাদুর রহমান তার এফডিআরের ৩০ লাখ টাকা ভাঙাতে ব্যাংকটির শাখায় যান। কিন্তু ওই শাখা থেকে প্রতিদিনই তাকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, ব্যাংকে টাকা নাই। একপর্যায়ে বাধ্য হয়ে আজাদুর রহমান ওই শাখায় তার একটি চলতি হিসাবে থাকা ৭৫ হাজার টাকা তুলতে চান। তাকে শাখা কর্মকর্তারা ১০ হাজার টাকা সেধেছেন।

 

Manual5 Ad Code

টাকা না পেয়ে হতাশ আজাদ বলেন, ‘আমি এখন বিপদে। আমার টাকা আমি চাই। অন্য কারও টাকা নয়। আমার দাবি, আমার টাকা আমাকে দিন।’

 

Manual8 Ad Code

দ্বিতীয় অভিযোগটি ন্যাশনাল ব্যাংকের বিয়ানীবাজার শাখার বিরুদ্ধে। ব্যাংকটির গ্রাহক মনজুরুল ইসলাম একটি এফডিআর করেছিলেন ১০ বছর আগে। এফডিআরটির মেয়াদ পূর্ণ হয়েছে। কিন্তু তিনি টাকা তুলতে ব্যাংকে গেলে কর্মকর্তাদের কেউ তার কথা আমলে নেন না। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, ‘ওরা আমাকে এভাবে দেখে যেন আমি ওদের কাছে ভিক্ষা চাইতে গেছি।’

কয়েকটি ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ব্যাংকগুলোতে নগদ অর্থ জমা পড়ছে কম এবং এর বিপরীতে উত্তোলনের চাহিদা বেশি। প্রতিদিন প্রধান কার্যালয়ের সামান্য বরাদ্দ পেয়ে তাই দিয়ে রেশনিং করে শাখা চালাতে হচ্ছে।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সিলেট জোনের অতিরিক্ত পরিচালক ও তথ্য প্রধানকারী কর্মকর্তা মো: গোলাম মাহমুদ চৌধুরী বলেন ‘তারল্য সংকট যাতে দীর্ঘায়িত না হয় সেজন্যই বাংলাদেশ ব্যাংক দায়িত্ব নিয়ে আর্থিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়া ব্যাংকগুলোর চাহিদার বিপরীতে যথাসম্ভব তারল্য সহায়তার ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। এটি একটি সাময়িক ব্যবস্থা। তারল্য সহায়তা প্রাপ্ত ব্যাংকগুলোকে নিজেদের ঘুরে দাঁড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সহায়তা পেয়েও যেসব ব্যাংক নিজেদের উন্নতি করতে পারবে না সেই সব ব্যাংকের ব্যাপারে বাংলাদেশ ব্যাংক অন্য ব্যবস্থা নেবে এবং এটি গভর্নর মহোদয় ব্যাংকগুলোর কর্তৃপক্ষকে জানিয়ে দিয়েছেন।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code