# ৫ আগস্ট পুলিশের খোয়া যাওয়া একটি অস্ত্রের সন্ধান মিলেনি
# বাতিল হচ্ছে অর্ধশত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স
স্টাফ রিপোর্টার:
বিয়ানীবাজার থানায় লাইসেন্স করা সব বৈধ অস্ত্র জমা দিয়েছেন মালিকরা। সরকারি নির্দেশনার আলোকে আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ১৬ বছরে প্রাপ্ত বৈধ লাইসেন্সের ভিত্তিতে নেয়া অস্ত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিল গত বছরের ৩ সেপ্টেম্বর। যথাসময়েই বৈধ অস্ত্রধারীরা পুলিশের কাছে তা জমা দেন। তবে ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর বিয়ানীবাজার থানা থেকে খোয়া যাওয়া দু’টি আগ্নেয়াস্ত্রের একটির হদিস এখনো মিলেনি।
থানা পুলিশ সূত্র জানায়, ৪২টি অস্ত্র আগে থেকেই থানায় জমা ছিল। বাকিগুলো মালিকরা সরকারি নির্দেশনা অনুযায়ী জমা দিয়েছেন। বিয়ানীবাজারে বর্তমানে বৈধ অস্ত্রের সংখ্যা ১৬১টি। তবে অবৈধ অস্ত্রের ঝনঝনানি এখানে খুব বেশি। রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তারের ক্ষেত্রে এসব বৈধ-অবৈধ অস্ত্র বেশি ব্যবহৃত হয়। উপজেলায় লাইসেন্সপ্রাপ্ত ও অবৈধ উপায়ে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারকারীর সংখ্যা পতিত আওয়ামীলীগ সরকারের সময়ে বেড়েছে। সর্বশেষ দেশব্যাপী আলোচিত চারখাইয়ের চিনিকাণ্ডের ঘটনায়ও অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার করে ছিনতাইকারীরা। এ ঘটনায় ব্যবহৃত অস্ত্র এখনো উদ্ধার করতে পারেনি প্রশাসন।
এ ছাড়াও বিয়ানীবাজার সরকারি কলেজে ছাত্রলীগের আধিপত্য বিস্তারকে কেন্দ্র করে গুলিতে নিহত হন খালেদ আহমদ লিটু (২৩) নামের এক তরুণ। ২০১৭ সালের ১৭ জুলাই কলেজ ক্যাম্পাসের শ্রেণিকক্ষে এ ঘটনা ঘটে। পৌর শহরের দক্ষিণ বাজারে সিএনজি স্ট্যান্ড দখলকে কেন্দ্র করে পরিবহন শ্রমিকের দু’পক্ষের সংঘর্ষে সবজি ব্যবসায়ী নিজু গুলিবিদ্ধ হয়ে ঘটনাস্থলেই মারা যান। উপজেলার কালাইউরায় সংঘর্ষ থামাতে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান থানার তৎকালীন ওসি সৈয়দ মোনায়েমুল ইসলাম। ২০১৯ সালের ৩১শে আগস্ট গভীর রাতে অস্ত্র উদ্ধারে যাওয়ার পর শেওলা সেতুসংলগ্ন এলাকায় পুলিশের সঙ্গে গোলাগুলিতে ঘটনাস্থলেই মারা যান মিসবাহ উদ্দিন। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে একটি পাইপগান উদ্ধার করে। ২০১৮ সালের ৩রা নভেম্বর মাথিউরায় পূর্বপার গ্রামের সুমন আহমদের বসতঘর থেকে ৭ রাউন্ড গুলিসহ দু’টি রিভলবার ও বিপুলসংখ্যক রামদা উদ্ধার করে পুলিশ। এ ছাড়াও উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি আশরাফুল ইসলামের ছেলে নাবিল আশরাফকে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার করে র্যাব। এর আগে কোনাগ্রামে আপন ভাইয়ের লা্ইসেন্স করা বন্ধুকের গুলিতে মারা যান অপর ভাই।
গত ৫ই আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর দেশের পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে বিয়ানীবাজারে বেশকিছু অবৈধ অস্ত্র আছে বলে দাবি করে আসছে উপজেলা বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী। তারা অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের কার্যক্রম শুরু করার তাগিদ দেন। একটি বিশ্বস্থ সূত্রের দাবী, ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া বিয়ানীবাজারের অন্তত: অর্ধশত আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে জমা পড়া অস্ত্রের লাইসেন্সের তথ্য যাচাইয়ে এগুলোর কাগজপত্রে অসংগতি পাওয়ায় এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।
সূত্র জানায়, বিয়ানীবাজারে বৈধ অস্ত্রের বেশীরভাগ ব্যবহারকারীই প্রবাসী। এরপরেই রাজনীতিক ও জনপ্রতিনিধিদের স্থান। ৩য় অবস্থানে আছেন ব্যবসায়ীসহ অন্যান্য পেশার লোকজন। বিয়ানীবাজারে গত দেড় যুগেও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করা হয়নি। বিচ্ছিন্নভাবে র্যাব ও পুলিশ একাধিক অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার করলেও তাতে সাধারণ মানুষের সন্তুষ্টি ফিরেনি।
বিয়ানীবাজার থানার ওসি আশরাফ উজ্জামান বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর দায়িত্ব হচ্ছে অবৈধ অস্ত্র শনাক্ত করে অভিযান চালিয়ে সেগুলো উদ্ধার করা। পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে চেষ্টা করছে।
Sharing is caring!