# দু’জনের নামে মামলা # সেই আইফোন উদ্ধার
# গলায় রশি পেঁচিয়ে হত্যা # রশি কেনা হয় আটগঞ্জ বাজার থেকে
# বোন জামাই-সম্বন্ধীর পরিকল্পনা
মিলাদ জয়নুল ও হাফিজুর রহমান তামিম, সরজমিন ঘুরে:
বিয়ানীবাজারে চাঞ্চল্যকর ইমন আহমদ (২০) হত্যাকান্ডের এজাহারনামীয় প্রধান আসামী আশরাফুল করিম (২৫) ছিল পরিবার থেকে বিচ্ছিন্ন। কিছুদিন আগে পরিবারের অমতে অন্য জেলার এক নারীকে বিয়ে করে পৃথকভাবে বসবাস শুরু করেন তিনি। ওই নারীকে বিয়ের পর থেকে বিপদগামী হতে শুরু করেন আশরাফুল। এক সময়ের কার চালক পরে টমটম চালানো শুরু করেন-এলাকাঘুরে এসব তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, ধৃত আশরাফুলের সম্বন্ধী সাজেদুল ইসলাম মুন্না সম্প্রতি বিদেশ যেতে আগ্রহী হয়ে ওঠেন। কিন্তু বিদেশে যাওয়ার টাকা জোগাড় করা সম্ভব হয়নি তাদের। এ কারণে নিহত ইমনের আইফোন ১৫ প্রো-ম্যাক্সের উপর নজর দেন বোন জামাই ও সম্বন্ধী। এটি অন্যত্র বিক্রি করার জন্য ৭-৮ দিন থেকে উভয়ের মধ্যে পরিকল্পনা চলে। এরই অংশ হিসেবে গত রবিবার বাদ মাগরিব ইমনকে নিয়ে বালিঙ্গার আটগঞ্জে ওয়াজ মাহফিলের বাজারে যান আশরাফুল। আটগঞ্জ বাজারের একটি দোকান থেকে আগেই রশি কিনে রাখেন সম্বন্ধী মুন্না। রাতের নীরবতা বাড়ার পর শালেস্বর আইডিয়াল একাডেমি মাদ্রাসার পাশে তাকে নিয়ে যায় আশরাফুল। সেখানে মুন্নাও ছিলেন। একপর্যায়ে আইফোন নিয়ে ধস্তাধস্তির একপর্যায়ে গলায় রশি পেঁচিয়ে আইফোন ছিনিয়ে নেন তারা। বিষয়টি ধামাচাপা দেয়ার জন্য পরবর্তীতে হাত-পা ও মুখ রশি দিয়ে বেধে জনৈক অপু সিদ্দিকির বাড়ির নির্জন পুকরে উপুড় করে ফেলে দেয়া হয় হতভাগা ইমনকে-পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে এমন চিত্র ওঠে এসেছে।
পুলিশ জানায়, বুধবার সকালে ভিডিওকলে আশরাফুলের দেখানো জায়গা থেকে হাত-পা ও মুখ বাধা অবস্থায় নিহতের উপুড় করা লাশ পাওয়া যায়।
স্থানীয় যুবক নুরুল আমীন বলেন, ধূর্ত আশরাফুল হত্যাকান্ডের পর নিজের ফেসবুক আইডি থেকে ইমন নিখোঁজের তথ্য শেয়ার করে। এমনকি সে তাকে খোঁজাখুজিতেও অংশ নেয়। যদিও মঙ্গলবার রাতে দায়ের করা জিডির পর থেকে সে গা ঢাকা দেয়ার চেষ্টা করে। পুলিশ প্রযুক্তির সহায়তায় ইমনের ফোন কলে আশরাফুলের দফায়-দফায় কল দেয়ার বিষয়টি সন্দেহ করে তাকে হেফাজতে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ শুরু করে। এরপরই হত্যকান্ডের বিষয়টি ধরা পড়ে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুল মালিক জানান, আশরাফুল বখাটেপনায় জড়িত। তার পিছনের ব্যাকগ্রাউন্ড ভালো নয়।
বিয়ানীবাজার থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) ছবেদ আলী বলেন, নিহত ইমনের খোয়া যাওয়া আইফোন উদ্ধার করা হয়েছে। এছাড়াও অপর এজাহার নামীয় আসামী সাজেদুল ইসলাম মুন্নাকে গ্রেফতারে অভিযান চলছে। তিনি বলেন, এ ঘটনায় আশরাফুল ও মুন্নাকে এজাহারনামীয় আসামী করে মামলা দায়ের করা হয়েছে। নিহতের ভাই জাবেদ আহমদ বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন। স্থানীয়রা জানান, ইমন আহমদের পিতা মুতলিব মিয়াও ডাকতদের হাতে গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন।
বিয়ানীবাজার থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) মো: ওমর ফারুক বলেন, ধৃত আসামী আশরাফুলকে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি প্রদানের জন্য আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে। আদালতে তার জবানবন্দি প্রদানের পর হত্যাকান্ডের রহস্য আরোও পরিষ্কার হয়ে যাবে।
নিহত ইমন আহমদ কুড়ারবাজার ইউনিয়নের খশির নামনগর গ্রামের মুতলিব মিয়ার ছেলে। প্রধান আসামী এবং ধৃত আশরাফুলও একই গ্রামের আব্দুল করিম মনাইর ছেলে। অপর আসামী মুন্নার বাড়ি টাঙ্গাইল জেলায়।
একটি সূত্র জানায়, মুন্নার বিদেশ যাওয়ার অনেক কাজ এগিয়েছে। যে কোন সময় সে দেশ ছাড়তে পারে।
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে জানাযার নামাজ শেষে পারিবারিক কবরস্থানে ইমন আহমদকে দাফন করা হয়েছে।
অপরদিকে কুড়ার বাজার ইউনিয়নের বৈরাগীবাজার এলাকাবাসী হত্যকান্ডের রহস্য উদঘাটন ও প্রধান আসামী গ্রেফতার হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। তারা অপর আসামীকে গ্রেফতারের পাশাপাশি জড়িতদের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তির দাবী জানিয়েছেন। বুধবার রাতে বৈরাগীবাজার এলাকার বিপুল সংখ্যক লোকজন থানার অফিসার ইনচার্জের সাথে দেখা করে তদন্তে আরোও সহায়তার আশ্বাস দিয়ে পুলিশ প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানান।
Sharing is caring!