প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিয়ানীবাজারে ওয়াজ নয়-আওয়াজ হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে দ্বীনি ‌’আবেদন’

editor
প্রকাশিত জানুয়ারি ১৫, ২০২৫, ০৭:৫৬ অপরাহ্ণ
বিয়ানীবাজারে ওয়াজ নয়-আওয়াজ হচ্ছে, হারিয়ে যাচ্ছে দ্বীনি ‌’আবেদন’

Manual2 Ad Code

 

Manual3 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:

 

বিয়ানীবাজার উপজেলার শহরে, গ্রামে-গঞ্জে, পাড়া-মহল্লায় অবস্থিত মসজিদ, মাদরাসা কিংবা দ্বীনদরদী মুসলিমদের উদ্যোগে ওয়াজ মাহফিলের আয়োজন-বেশ পরিচিত একটি চিত্র। এমন দৃশ্য দেশের অন্যান্য এলাকায় দেখা গেলেও বিয়ানীবাজারে তুলনামুলক বেশী।

Manual2 Ad Code

আয়োজিত এসব ওয়াজ মাহফিলে প্রাজ্ঞ আলেম, পীর-মাশায়েখ ও বুজুর্গরা সাধারণ মুসলমানদের জন্য ধর্মীয় নানা বিষয় নিয়ে দিকনির্দেশনামূলক বক্তব্য দিয়ে থাকেন। দূর-দূরান্ত থেকে পায়ে হেঁটে, সাইকেল বা বিভিন্ন যানবাহনের মাধ্যমে ধর্মপ্রাণ মুসলমানরা এ সব ওয়াজ মাহফিলে অংশগ্রহণ করে থাকেন এবং সারারাত জেগে, গভীর আগ্রহ সহকারে কোরআন-হাদিসের আলোচনা শোনেন। পর্দার আড়ালের নারীরাও নিজ বাসা বাড়িতে বা আত্মীয়ের বাড়িতে এসে ওয়াজ শোনে থাকেন। বিয়ানীবাজার উপজেলার মানুষ যে ধর্মপ্রাণ- এসব ওয়াজ মাহফিলের উপস্থিতি দেখে তা অনুমান করা যায়।

শীতকালে উপজেলাব্যাপী ওয়াজ মাহফিলের আয়োজনও এখানকার ঐতিহ্যগত সভ্যতার অংশ। বিয়ানীবাজারে কমবেশি সারা বছরই ওয়াজ-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। তবে সাধারণত শীতকালকেই ওয়াজ-মাহফিলের মৌসুম বলা হয়। ঋতু হিসেবে শীতকালের সময় দুই মাস হলেও ওয়াজ-মাহফিলের শীতকালীন ঋতু প্রায় পাঁচ মাস। নভেম্বর থেকে মার্চ মাস পর্যন্ত এ দীর্ঘ সময় ধরে উপজেলার কোন না অঞ্চলে ওয়াজ-মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়।

বিয়ানীবাজার পিএইচজি সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের আরবি শিক্ষক মাওলানা হুমায়ুন রশিদ জাইদী বলেন, ‘ওয়াজ-মাহফিল মূলত একটি ধর্মীয় মজলিশ। এখানে আমলদার বিজ্ঞপ্রাজ্ঞ বুজুর্গ আলেমগণ সাধারণ মানুষকে ধর্মের উপদেশ বাণী শুনিয়ে থাকেন। সর্বসাধারণের জন্য ধর্মের বিষয়কে তারা সহজ করে উপস্থাপন করেন। নীতি-নৈতিকতা অর্জন, সভ্যতা ও শিষ্টাচার শিখন এবং আত্মিক ও চারিত্রিক উৎকর্ষ সাধনের পথ ও পদ্ধতি দীলি দরদ ও আন্তরিকতার সঙ্গে বাতলে দেন। মাহফিলের মূল উদ্দেশ্য সর্বস্তরের জনগণকে ধর্মের মৌলিক বিধিবিধান, সমকালীন জীবন জিজ্ঞাসার সমাধান সম্পর্কে অবগত করা এবং সাধারণ মানুষ যেন নববি আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে ধর্ম পালনের প্রতি উৎসাহিত হয় সে পরিবেশ ও আবেদন তৈরি করা। ঈমান ও আমলের প্রতি আহ্বান করা। কিন্তু ইদানীং ওয়াজ-মাফিল দ্বীনি আবেদন হারিয়েছে।’

 

হেফাজতে ইসলামের উপজেলা সভাপতি মুফতি আব্দুল ক্বারীম হাক্কানী জানান, মাহফিলে কিছু বক্তার হাস্যরস, কৌতুক, উদ্ভট আচরণসহ অযথা কথাবার্তায় মানুষ কিছুটা আগ্রহ হারাচ্ছে। তিনি বলেন, ওয়ায়েজ মূলত একজন ধর্মপ্রচারক। ধর্মপ্রচারককে অবশ্যই ধর্মপ্রচারের মূল্য লক্ষ্য ও আবেদন রক্ষার বিষয়ে সতেচন থাকতে হবে। তাওহিদ বা একত্ববাদ প্রতিষ্ঠার মিশন ও ভিশন ছিল যুগে যুগে আগত সব নবীর ওয়াজ-নসিহতের মূল বিষয়।

Manual7 Ad Code

 

বিয়ানীবাজার উপজেলায় বিশাল-সৌন্দর্যমন্ডিত আয়োজনের পরও ওয়াজের মূল লক্ষ্য থেকে সরে যাচ্ছে ওয়াজ-মাহফিলের সব আয়োজন। বিভিন্ন কারণে আজ এর স্বকীয়তা ও আবেদন হারাতে বসেছে। যা হেদায়াতপ্রার্থী মানুষের জন্য দুঃজনক!

এ বিষয়ে মাওলানা নুরুল ইসলাম জিহাদী ক্ষোভের স্বরে জানান, ইউটিউব বক্তাকে আমন্ত্রিত করা, অযোগ্য ভাইরাল বক্তা দাওয়াত করা, আয়োজকদের নিজেদের স্বার্থ লাভের ফিকির বেশি থাকা, চুক্তিভিত্তিক বাণিজ্যিক বক্তার সয়লাব, ধর্ম সম্পর্কে টুকটাক-জানা কণ্ঠশিল্পী, আজান-ইকামত শুনিয়ে মারহাবা শোনার প্রত্যাশী আধা মৌলভি, কমেডিয়ান বক্তা, বিশেষ কোনো গোষ্ঠীর কাছে হঠাৎ শায়খ বনে যাওয়া বক্তা, কণ্ঠে ও জনপ্রিয়তায় শীর্ষে থাকা কিছু বক্তার কারণে আজকাল ওয়াজ-মাহফিল থেকে মূল আবেদন আল্লাহর ভয় হৃদয়ে জাগ্রত হওয়া ও দ্বীন ইসলামের ওপর অবিচল থাকার প্রভাব প্রায় শূন্যের কোঠায় এসে ঠেকেছে।

Manual4 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code