প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

দুই জামায়াতকর্মী হত্যার মূলহোতা মানিক শতকোটি টাকার মালিক

editor
প্রকাশিত মার্চ ১০, ২০২৫, ০৬:৪৬ পূর্বাহ্ণ
দুই জামায়াতকর্মী হত্যার মূলহোতা মানিক শতকোটি টাকার মালিক

Manual6 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় দুই জামায়াত কর্মী হত্যার নেপথ্যে ছিলেন এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিক। জামায়াতে ইসলামীর পক্ষ থেকে এমনটিই দাবি করা হয়েছে।

Manual5 Ad Code

আর এই নজরুল ইসলাম মানিক নানা অপকর্মের মাধ্যমে অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন। আওয়ামী লীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত মানিক বিগত ১৬ বছরে নানা অপকর্মের মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তার বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গিয়ে এসব ভয়াবহ তথ্য পাওয়া গেছে।

আওয়ামী লীগের দলীয় সাবেক এমপি ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামউদ্দীন নদভীর ডান হাত ছিলেন তিনি। ইটভাটা নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিষ্ঠা, বালুমহালের ব্যবসা, দখল, হত্যাসহ নানা অপকর্মের মাধ্যমে শতকোটি টাকার মালিক বনেছেন।

স্থানীয়রা বলছেন, ৫ আগস্টের পর মানিক আত্মগোপনে গেলে তার ইটভাটা ও বনভূমি থেকে অন্তত ৫০ কোটি টাকার সম্পদ লুট হয়েছে। আর এই লুটপাটে নেতৃত্ব দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে নিহত জামায়াত কর্মী নেজাম উদ্দিন ও আবু ছালেকের বিরুদ্ধে।

মঙ্গলবার উপজেলার ছনখোলায় এলাকাবাসীর হামলায় নৃশংসভাবে খুন হন তারা। জামায়াতের দাবি, সালিশের নামে ডেকে নিয়ে মব জাস্টিসের মাধ্যমে তাদের দুই কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। এর নেপথ্যে ছিলেন পলাতক মানিক।

একজন ইউপি চেয়ারম্যান হয়ে এমন প্রভাব-প্রতিপত্তি অর্জন ও শতকোটি টাকার মালিক বনে যাওয়ার ঘটনাটি আলাদিনের চেরাগ হাতে পাওয়ার মতো বলেই মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মানিকের বাবা ছিলেন একজন চৌকিদার। মানিক দীর্ঘদিন প্রবাসে ছিলেন। ২০০০ সালের পর দেশে ফেরেন। এরপর আওয়ামী লীগের রাজনীতি শুরু করেন। ২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বেপরোয়া হতে শুরু করেন মানিক। ২০১৪ সালের নির্বাচনে ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী এমপি ‘নির্বাচিত’ হওয়ার পর মানিকের শক্তি আরও বেড়ে যায়।

Manual2 Ad Code

একপর্যায়ে নদভীর ডান হাত হিসাবে পরিচিতি পান তিনি। ২০১৭ সালে এওচিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নির্বাচিত হন। ছিলেন পাঁচ বছর। ২০১৬ সালে একটি হত্যা মামলায় মানিককে ধরতে তার বাড়িতে অভিযান চালায় পুলিশ। তখন তার ঘর থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র, গুলি ও সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। আওয়ামী লীগের ত্রাসের রাজত্বের আমলে এওচিয়া ইউনিয়নের ছনখোলা এলাকায় ‘কেবিএম’ ও ‘এইচবিএম ব্রিকস’ নামে দুটি ইটভাটা গড়ে তোলেন মানিক। বনে যান সাতকানিয়ার ইটভাটা মালিক সমিতির নেতা। উপজেলার সবকটি ইটভাটার নিয়ন্ত্রণ নিয়ে তিনি আয় করতে থাকেন অবৈধ টাকা। মাসোহারা দিয়ে ম্যানেজ রাখতেন উপজেলা, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনকে।

Manual5 Ad Code

অপকর্মের টাকায় মানিক বিপুল সম্পদের মালিক হন। তার সম্পদের মধ্যে আরও রয়েছে মাছের প্রজেক্ট, কক্সবাজারে আবাসিক হোটেল ও দোকান, বান্দরবানে আবাসিক হোটেল ও দোকান, চট্টগ্রামের খাতুনগঞ্জে টিনের দোকান, রিয়াজউদ্দিন বাজারেও তার দোকান রয়েছে। নগরীর ২ নম্বর গেট এলাকায় রয়েছে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট। সাতকানিয়ার এওচিয়ায় গ্রামে রয়েছে তার আলিশান বাড়ি। রয়েছে ভি-৬ মডেলের একটি প্রাডো গাড়ি ও একটি নোহা। এছাড়া ইট পরিবহণে রয়েছে একাধিক ট্রাক।

মানিকের একজন আত্মীয় নাম প্রকাশ না করার শর্তে যুগান্তরকে জানান, ৫ আগস্টের পর মানিক পালিয়ে যান। নেজামের নেতৃত্বে কিছু লোকজন মানিকের মৎস্য খামার থেকে অর্ধশতাধিক ট্রাক মাছ লুট করে নিয়ে যায়। ১৮ ডিসেম্বর মধ্যরাতে ৩০-৩৫টি ট্রাক নিয়ে এসে মানিকের মালিকানাধীন কেবিএম ব্রিকফিল্ড থেকেও ২ কোটি টাকার ইট নিয়ে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।

সাতকানিয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ভারপ্রাপ্ত) মোহাম্মদ আরিফুল ইসলাম বলেন, ওই ঘটনার জন্য সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম মানিককে দায়ী করা হচ্ছে নিহতের পরিবার ও একটি সংগঠনের পক্ষ থেকে। হত্যায় কার কী ভূমিকা ছিল তদন্তে তা বেরিয়ে আসবে এবং জড়িত যারাই থাকুক সবাইকে আইনের আওতায় আনা হবে।

জামায়াতের ২ কর্মী হত্যায় মামলা, ইউপি চেয়ারম্যানসহ ৬২ আসামি : জামায়াতের দুই কর্মী হত্যার ৫ দিন পর সাবেক দুই ইউপি চেয়ানম্যান ও তাঁতীলীগের এক নেতাসহ ৬২ জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। নিহত আবুল ছালেকের স্ত্রী সুরমি আক্তার বাদী হয়ে সাতকানিয়া থানায় মামলাটি করেন। আসামিদের মধ্যে রয়েছেন-নজরুল ইসলাম মানিক, মোহাম্মদ হারুন, মো. মমতাজ, কামরুল ইসলাম, আজিজুল হক, মাহমুদুল হক, আবু সামা, মো. সাজ্জাদ, মো. মিজান প্রকাশ পিচ্চি মিজান, মো. কফিল, সোহেল আহমদ, মো. বেলাল, মো. হেলাল, মো. হামিদ, মো. ইছহাক, মো. মোজাফ্ফর মেম্বার, প্রকাশ জুইন্না, কমরু, মো. সিফাত, মো. সালাম, মো. আলম, মিজানুর রহমান মারুফ ও রমজান আলী (কাঞ্চনা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান)।

Manual6 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code