প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জুলাইয়ের ক্ষত, বিচারের প্রত্যাশা: শহীদ পরিবারগুলোর এক বছর অপেক্ষা

editor
প্রকাশিত আগস্ট ৫, ২০২৫, ০৬:৫৩ পূর্বাহ্ণ
জুলাইয়ের ক্ষত, বিচারের প্রত্যাশা: শহীদ পরিবারগুলোর এক বছর অপেক্ষা

Manual8 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
২০২৪ সালের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনে স্বৈরশাসক শেখ হাসিনার পতন ঘটে। যা জুলাই গণঅভ্যুত্থান বা জুলাই বিপ্লব নামে পরিচিতি পেয়েছে দেশের ইতিহাসে। জুলাই গণঅভ্যুত্থানের এক বছর পূর্ণ হয়েছে। দেশের মানুষ এখন তাকিয়ে আছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের দিকে। কারণ, এই ট্রাইব্যুনালেই হচ্ছে শেখ হাসিনা ও তার সহযোগীদের মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচার।

শেখ হাসিনার ১৬ বছরের স্বৈরশাসনকালে এবং জুলাই গণঅভ্যুত্থানে নিহত-আহতদের পরিবার ও স্বজনেরা আছেন বিচারের অপেক্ষায়। এরই মধ্যে জুলাই-আগস্টে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে দায়ের করা দুটি মামলায় অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করার নির্দেশ দিয়েছেন ট্রাইব্যুনাল। শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে ‍তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। এছাড়া অপর দুটি মামলায় অভিযোগ গঠনের শুনানির দিন ধার্য হয়েছে। ৩০টি মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে। চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম আশাবাদ ব্যক্ত করে বলেছেন, আগামী ডিসেম্বরের মধ্যে ‘টপ কমান্ডারদের’ বিচার শেষ হবে।

সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রসিকিউটর গাজী এম এইচ তামিম ঢাকা পোস্টকে বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দুটি মামলার অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্যে শেখ হাসিনার মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। দুটি মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশের দিন ধার্য রয়েছে। ৩০টি মামলা প্রি-ট্রায়াল পর্যায়ে রয়েছে। এসব মামলার তদন্ত শেষ পর্যায়ে রয়েছে।

দুটি ট্রাইব্যুনালে চলমান মামলার মোট আসামি ২০৯ জন। যাদের মধ্যে ৮৪ জন গ্রেপ্তার রয়েছেন। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ৪৫০টি অভিযোগ জমা পড়েছে বলেও জানান তিনি।

Manual8 Ad Code

টপ কমান্ডারদের বিচার শেষ হবে ডিসেম্বরের মধ্যে
চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম বলেন, মানবতাবিরোধী অপরাধে সাধারণত ‘টপ কমান্ডার’ বা শীর্ষ অপরাধীদের বিচার করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে টপ কমান্ডারদের বিচার চলতি বছরের ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি। এছাড়া অভিযুক্ত ব্যক্তিদের সবার বিচারই আগামী এক বছরের মধ্যে শেষ করা হবে।

সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে চিফ প্রসিকিউটর এ আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তাজুল ইসলাম আরও বলেন, আমাদের প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে— যে গুম, গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ বাংলাদেশের মাটিতে হয়েছে, সেই অপরাধের যারা মাস্টারমাইন্ড (মূলহোতা), যারা একদম সর্বোচ্চ জায়গায় বসে থেকে অপরাধগুলো সংঘটিত করেছিলেন তাদের বিচার করা। সেক্ষেত্রে এই ট্রাইব্যুনাল হাজার হাজার মানুষের বিচার করতে পারবে না এবং সেই লক্ষ্যে অগ্রসরও হচ্ছেন না তারা।

‘মানবতাবিরোধী অপরাধে সাধারণত টপ কমান্ডারদের বিচার করা হয়। জুলাই-আগস্টের গণহত্যার প্রধান নিউক্লিয়াস ছিলেন সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার নিচের দিকে কয়েকজন ছিলেন, তাদের বিচারকে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে।’
চিফ প্রসিকিউটর বলেন, দ্রুত সময়ের মধ্যে আমরা বিচার শেষ করতে চাই। সেই সক্ষমতা আমাদের আছে।

Manual8 Ad Code

শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ চলমান
জুলাই-আগস্টের গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় শেখ হাসিনাসহ তিন আসামির বিরুদ্ধে গত ১০ জুলাই আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেন বিচারপতি গোলাম মর্তূজা মজুমদারের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। ক্ষমতাচ্যুত প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পাশাপাশি এ মামলার অপর দুই আসামি হলেন– সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল ও পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন। এর মধ্যে সম্পূর্ণ সত্য প্রকাশ করার শর্তে চৌধুরী আবদুল্লাহ আল মামুনের রাজসাক্ষী হওয়ার আবেদন গ্রহণ করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

Manual5 Ad Code

গতকাল সোমবার (৪ আগস্ট) পর্যন্ত এ মামলায় তিনজন সাক্ষীর সাক্ষ্যগ্রহণ শেষ হয়েছে। পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ৬ আগস্ট (বুধবার) দিন ধার্য রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল।

চানখাঁরপুলে ৬ জনকে গুলি করে হত্যা
রাজধানীর চানখাঁরপুল এলাকায় ছয়জনকে গুলি করে হত্যার ঘটনায় করা মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) সাবেক কমিশনার হাবিবুর রহমানসহ আট আসামির বিরুদ্ধে গত ১৪ জুলাই আনুষ্ঠানিক অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরু করেছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একইসঙ্গে এ মামলার সূচনা বক্তব্যের জন্য আগামী ১০ আগস্ট এবং সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ১১ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল।

রংপুরে আবু সাঈদ হত্যা
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালীন রংপুরের বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ হত্যার ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠনের আদেশের জন্য ৬ আগস্ট দিন ধার্য রেখেছেন ট্রাইব্যুনাল। বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে আদেশ দেবেন। মামলার ৩০ জন আসামির মধ্যে গ্রেপ্তার রয়েছেন ছয়জন। পলাতক ২৪ আসামির জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী দেওয়া হয়েছে।

আশুলিয়ায় ৬ লাশ পোড়ানো
জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন চলাকালীন সাভারের আশুলিয়ায় লাশ পোড়ানোর ঘটনায় মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় অভিযোগ গঠন বিষয়ে শুনানি হবে ৭ আগস্ট (বৃহস্পতিবার)। প্রসিকিউশনের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ এ দিন ধার্য করেছেন। এ মামলার ১৬ আসামির বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক অভিযোগ (ফরমাল চার্জ) আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল-২। এই ১৬ আসামির মধ্যে আটজন গ্রেপ্তার আছেন।

তারা হলেন– ঢাকা জেলার সাবেক অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (ক্রাইম অ্যান্ড অপস) মো. আব্দুল্লাহিল কাফী, ঢাকা জেলা পুলিশের সাবেক অতিরিক্ত সুপার (সাভার সার্কেল) মো. শাহিদুল ইসলাম, তৎকালীন ওসি এএফএম সায়েদ, ডিবি পরিদর্শক মো. আরাফাত হোসেন, এসআই মালেক ও কনস্টেবল মুকুল।

জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের বিচারের পাশাপাশি গত দেড় দশকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বিরোধী দলের নেতাকর্মীদের গুমের ঘটনায় শেখ হাসিনাসহ ১১ জনের বিরুদ্ধে এবং মতিঝিলের শাপলা চত্বরে হেফাজতে ইসলামের মহাসমাবেশে হামলার ঘটনায় করা আরেকটি মামলার তদন্ত করছে তদন্ত সংস্থা। এ মামলায় হাসিনার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি রয়েছে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে প্রাপ্ত অভিযোগ ও অভিযুক্তের সংখ্যা, দ্রুত বিচার নিষ্পত্তির প্রয়োজনের প্রেক্ষাপটে সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের সাবেক বিচারপতি নজরুল ইসলাম চৌধুরীকে চেয়ারম্যান করে গত ৮ মে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-২ গঠন করে সরকার। এই ট্রাইব্যুনালের অপর দুই সদস্য হচ্ছেন– অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মঞ্জুরুল বাছিদ এবং মাদারীপুরের জেলা ও দায়রা জজ নূর মোহাম্মদ শাহরিয়ার কবীর।

Manual4 Ad Code

এদিকে, ট্রাইব্যুনাল-২ গঠনের পর বিচারপতি মো. গোলাম মর্তূজা মজুমদার, বিচারপতি মো. শফিউল আলম মাহমুদ এবং অবসরপ্রাপ্ত জেলা ও দায়রা জজ মো. মোহিতুল হক এনাম চৌধুরীর সমন্বয়ে গঠিত বিদ্যমান আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১ হিসেবে ঘোষণা করা হয়।

গত বছরের জুলাই-আগস্টে ছাত্র-জনতার আন্দোলন নির্মূলে আওয়ামী লীগ সরকার, তার দলীয় ক্যাডার ও সরকারের অনুগত প্রশাসনসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি অংশ গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ সংঘটিত করে বলে একের পর এক অভিযোগ জমা পড়ে। জাজ্বল্যমান এসব অপরাধের বিচার এখন অনুষ্ঠিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে।

আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউশন টিমে চিফ প্রসিকিউটরসহ ১৭ জন প্রসিকিউটর রয়েছেন। তদন্ত সংস্থায় ২২ জন তদন্ত কর্মকর্তা রয়েছেন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code