গাইবান্ধা প্রতিনিধি :
সুদানে জাতিসংঘের (ইউএন) শান্তিরক্ষা মিশনের একটি ঘাঁটিতে সন্ত্রাসী ড্রোন হামলায় নিহত ছয় বাংলাদেশি শান্তিরক্ষীর একজন গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার মো. সবুজ মিয়া। তার মৃত্যুর খবরে পলাশবাড়ীতে নেমে এসেছে শোকের ছায়া। পরিবার, স্বজন ও গ্রামবাসীর কান্নায় ভারী হয়ে উঠেছে পুরো এলাকা।
নিহত সবুজ মিয়া পলাশবাড়ী উপজেলার মহদিপুর ইউনিয়নের ছোট ভগবানপুর গ্রামের মৃত হাবিবুর রহমান ও ছকিনা বেগমের ছেলে। মাত্র দুই বছর বয়সে বাবাকে হারান সবুজ। দরিদ্র পরিবারের সন্তান সবুজকে অভাব অনটন সঙ্গে সংগ্রাম করে বড় হতে হয়।
জানা গেছে, এক মাস সাত দিন আগে গত ৭ নভেম্বর জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের হয়ে সুদানে যান সবুজ মিয়া। সেখানে তিনি বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর অসামরিক লন্ড্রি কর্মচারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন।
সবুজের মৃত্যুর খবরে তার মা ছকিনা বেগম ও স্ত্রী নুপুর আক্তার বারবার জ্ঞান হারিয়ে ফেলছেন। স্ত্রী নুপুর আক্তার কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, ‘সুদানে যাওয়ার পর গত শনিবার বিকেলে কয়েক মিনিটের জন্য ওর সঙ্গে কথা হয়েছিল। এরপর রাত ১২টার দিকে হঠাৎ খবর পাই—ও আর নেই।’
ছেলে হারানোর খবরে বারবার মূর্ছা যাচ্ছিলেন মা ছকিনা বেগম। বিলাপ করত করতে তিনি বলেন, ‘বাবা হামার একমাত্র বুকের ধন আছিল। গত মাসেই সুদান গেছে। ফোনে কথা কয়া খোঁজ নিত। এখন হামার খোঁজ নিবে কে? হামার বাবার লাশ বাড়িতে চাই। ওকে বাড়িতে আনলে হামার আত্মা শান্তি পাবে।’
সবুজের মৃত্যুতে গ্রামজুড়ে শোকের ছায়া নেমে এসেছে। ওই গ্রামের আমিনুল ইসলাম জানান, সবুজ ছিলেন অত্যন্ত ভদ্র ও পরিশ্রমী যুবক। মা ও স্ত্রীকে নিয়েই চলছিল তার ছোট সংসার। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি ছিলেন তিনি। তার মৃত্যুর ফলে পরিবারটি এখন নিঃস্ব হয়ে পড়েছে।
পারিবারিক সূত্র জানায়, এক ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবুজ ছিলেন ছোট। বড় বোনের বিয়ে হয়ে যাওয়ায় মা ও স্ত্রীকে নিয়েই বাড়িতে থাকতেন তিনি। দেড় বছর আগে ২০২৩ সালের ৭ মার্চ নাটোর জেলার বাসিন্দা নুপুর আক্তারকে বিয়ে করেন সবুজ। তাদের কোনো সন্তান নেই।
সবুজ মিয়া প্রায় ১১ বছর আগে প্রতিবেশী এক চাচার মাধ্যমে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীতে অসামরিক ধুপি হিসেবে যোগ দেন। পরবর্তীতে তিনি লন্ড্রি কর্মচারীর পদে উন্নীত হন। তিন মাস আগে ছুটিতে বাড়িতে এসে আবার কর্মস্থলে যোগ দেন।
এ বিষয়ে পলাশবাড়ী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শেখ জাবের আহমেদ জানান, নিহতের বিষয়ে খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে এবং সরকারিভাবে প্রয়োজনীয় সব ধরনের সহযোগিতার উদ্যোগ নেওয়া হবে।
উল্লেখ্য, সুদানের আবেই অঞ্চলে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনের আওতাধীন কাদুগলি লজিস্টিক বেসে শনিবার (১৩ ডিসেম্বর) স্থানীয় সময় দুপুর আনুমানিক ৩টা ৪০ মিনিট থেকে ৩টা ৫০ মিনিট পর্যন্ত বিচ্ছিন্নতাবাদী সশস্ত্র গোষ্ঠীর ড্রোন হামলায় ছয়জন বাংলাদেশি শান্তিরক্ষী নিহত হন। এ ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও আটজন শান্তিরক্ষী।
Sharing is caring!