প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ অস্বস্তিতে সরকার

editor
প্রকাশিত নভেম্বর ৩, ২০২৪, ০৬:২২ পূর্বাহ্ণ
ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ অস্বস্তিতে সরকার

Manual5 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
বেলারুশের ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হওয়ায় চাপের মুখে পড়ছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। দেশটির (বেলারুশ) অর্থমন্ত্রী ৫৫ লাখ মার্কিন ডলার ঋণের কিস্তি পরিশোধের তাগিদ দিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদকে। এর কারণ হচ্ছে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর এবং চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত দুটি কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি সরকার। এ জন্য অর্থ উপদেষ্টার নির্দেশনা চেয়েছেন বেলারুশের অর্থমন্ত্রী ইউরি সেলিভারসাতু। সম্প্রতি নয়াদিল্লিতে বাংলাদেশ হাইকমিশনারকেও এ বিষয়ে একটি কূটনৈতিক পত্র দিয়েছে দিল্লির বেলারুশ দূতাবাস। সেখান থেকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে ওই চিঠি অর্থ মন্ত্রণালয়ে এসেছে। ইআরডি সূত্রে এসব তথ্য পাওয়া গেছে।

চিঠিতে বেলারুশ অর্থমন্ত্রী বলেন, ঋণের কিস্তি পরিশোধের ব্যাপারে আগেও একটি পত্র দিয়েছি, যার জবাব পাওয়া যায়নি। এছাড়া ডলারে ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে লেনদেনের মাধ্যম সুইফট ব্যবহারে মার্কিন নিষেধাজ্ঞার কথা বলা হলেও সেটি এ ক্ষেত্রে কার্যকর হবে না বলে চিঠিতে উল্লেখ করেন তিনি।

Manual1 Ad Code

সূত্রমতে, ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে ২৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলার এবং ২০২৪ সালের মার্চে ২৭ লাখ ৭০ হাজার মার্কিন ডলারের ঋণের কিস্তি পরিশোধ বন্ধ করে রেখেছে বাংলাদেশ সরকার। ২০১৫ সালে স্থানীয় সরকার বিভাগের আওতায় সড়ক তৈরির জন্য ৫ কোটি মার্কিন ডলারের নির্মাণ সামগ্রীর যন্ত্রাংশ সরবরাহ করেছিল বেলারুশ সরকার।

Manual1 Ad Code

চিঠিতে বেলারুশের অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে বেলারুশের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে আপনাকে (অর্থ উপদেষ্টা) ধন্যবাদ। আমাদের দেশের অর্থনীতির সম্ভাব্যতা ও পরিকল্পনা বিবেচনা করে আমরা আরও সহযোগিতা বাড়ানোর আশা করছি। কিন্তু ২০১৫ সালে বেলারুশ সরকার বাংলাদেশের সড়ক তৈরির জন্য স্থানীয় সরকার বিভাগকে নির্মাণ কাজে ব্যবহারের যন্ত্রাংশ প্রদান করেছিল। কিন্তু ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর থেকে এর মূল্য পরিশোধে কিস্তি বন্ধ রেখেছে। বকেয়া পাওনার জন্য বেলারুশ সরকার বৈদেশিক বাণিজ্য চুক্তির আওতায় বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার বিভাগে যোগাযোগ করেছে। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে অর্থ উপদেষ্টার নির্দেশনা চাওয়া হয় ওই চিঠিতে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফট থেকে বেলারুশকে বিচ্ছিন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো। ফলে বাংলাদেশ সুইফট ব্যবহার করে বেলারুশের সঙ্গে আর্থিক লেনদেন করতে পারছে না। এতে বেলারুশ থেকে নেওয়া ঋণের কিস্তি পরিশোধের ক্ষেত্রে জটিলতা দেখা দেওয়ায় ২০২৩ সালে সেপ্টেম্বরের কিস্তি পরিশোধ করতে পারেনি বিগত সরকার।

তবে ওই সময়ে ঋণের কিস্তি পরিশোধের জন্য লেনদেন বিকল্প মাধ্যম চীনের আন্তঃব্যাংক লেনদেন পদ্ধতি ‘সিএফএক্সপিএস’ ব্যবহারের জন্য বাংলাদেশকে প্রস্তাব দেয় বেলারুশ সরকার। ‘সিএফএক্সপিএস’ পদ্ধতিতে ঋণের কিস্তি দেওয়ার ক্ষেত্রে প্রথমে মার্কিন ডলার ব্যবহারের কথা হয়। যদি ডলারে সেটি সম্ভব না হয় সেক্ষেত্রে চীনা মুদ্রা ইয়েন বা রাশিয়ার মুদ্রা রুবল এর মাধ্যমে পরিশোধের প্রস্তাব দেয় বেলারুশ সরকার।

সিএফএক্সপিএস হচ্ছে চায়না ফরেন এক্সচেঞ্জ পেমেন্ট সিস্টেম। এই পদ্ধতি ব্যবহার করে চীন তাদের বৈদেশিক মুদ্রার লেনদেন কার্যক্রম পরিচালনা করছে।

সূত্রমতে, বেলারশকে বিল পরিশোধের বিষয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি) ২০২৩ সালেই কাজ শুরু করেছিল। কিন্তু মার্কিন ডলারের বিপরীতে ইয়েন বা রুবল ব্যবহার করতে গেলে বাংলাদেশ এবং বেলারুশের মধ্যে বিদ্যমান যে বাণিজ্য চুক্তি আছে সেটি সংশোধন করতে হবে। পরে চুক্তির কিছু ধারা সংশোধন করে প্রস্তাব আকারে ২০২৩ সাালেই অর্থ মন্ত্রণালয়ের বিবেচনার জন্য পাঠায় ইআরডি। সংশোধিত চুক্তিতে বলা হয়, ঋণ পরিশোধের ক্ষেত্রে মার্কিন ডলারের পাশাপাশি চীনের ইয়েন ও রুবলস ব্যবহার করা যাবে।

কিন্তু এরপর চলে আসে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দেশে এক ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ তৈরি হয়। যার ফলে বেলারুশের সঙ্গে লেনদেন কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। জানুয়ারিতে নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ পুনরায় ক্ষমতায় আসার পরও এ আইনটি সংশোধন করা হয়নি। কারণ অর্থ মন্ত্রণালয়ে নতুন অর্থমন্ত্রী এসে এ বিষয়টি নিয়ে কাজ করেননি। যে কারণে ২০২৪ সালের মার্চ মাসেও ঋণের কিস্তি পরিশোধ করা সম্ভব হয়নি। এর সঙ্গে যুক্ত হয় জুলাই থেকে অস্থিতিশীল পরিবেশ। ফলে রাজনৈতিক পরিস্থিতি ও পেমেন্ট সিস্টেম জটিলতায় পড়ে এখনো বন্ধ আছে বেলারুশের ঋণের কিস্তি পরিশোধ।

সূত্র জানায়, ২০১৩ সালে বেলারুশ হতে সহজ শর্তে দ্রব্য ঋণ (কমোডিটি লোন) গ্রহণের মাধ্যমে দ্রব্য আমদানির বিষয়ে ওই বছরের ৯ জুলাই একটি ফ্রেমওয়ার্ক এগ্রিমেন্ট অন প্রভিশনস অব এক্সপোর্ট কমোডিটি ক্রেডিট শীর্ষক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। এ চুক্তির শর্তের আওতায় স্থানীয় সরকার বিভাগ বেলারুশ হতে প্রায় ৪০০ কোটি টাকার দ্রব্য (যান ও যন্ত্রপাতি) আমদানি করে।

Manual1 Ad Code

এসব যন্ত্রপাতি পৌরসভা ও সিটি করপোরেশনের বর্জ্য সংগ্রহ, পরিবহণ ও পরিষ্কার, ড্রেন নির্মাণ, মেরামত ও পরিষ্কার, রাস্তা নির্মাণ ও মেরামত ইত্যাদি কাজে ব্যবহৃত হচ্ছে। মোট ঋণের মধ্যে বেলারুশ থেকে যন্ত্রপাতি কেনার জন্য ৩৩১ কোটি ডলার ঋণ নেওয়া হয়। ইতোমধ্যে ১৩টি কিস্তি পরিশোধ হয়েছে। ১৪ নম্বর কিস্তি পরিশোধের আগেই আর্থিক লেনদেনের বার্তা আদান-প্রদানকারী আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান সুইফট থেকে বেলারুশের কয়েকটি ব্যাংককে বিচ্ছিন্ন করেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্র পশ্চিমা দেশগুলো।

২০২২ সালের ১২ মার্চ শনিবার থেকে এটি কার্যকর হয়। এতে ওই দুই দেশের ব্যাংকগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যাংকগুলো আর সরাসরি লেনদেন করছে না। ফলে ১৪ নম্বর কিস্তির অঙ্ক ২৬ লাখ ৪৮ হাজার ৮৯৩ মার্কিন ডলার এবং ঋণের সুদ এক লাখ ২১ হাজার ৬১২ ডলার মিলে মোট ২৭ লাখ ৭০ হাজার ৫০৫ ডলার পরিশোধ করা যাচ্ছে না। এরপর নতুন আরও একটি কিস্তি বকেয়া পড়েছে।

Manual2 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code