প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১২ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৭শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২১শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

সাত কলেজ নিয়ে চতুর্মুখী অবস্থানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৫, ২০২৫, ০৫:২৪ পূর্বাহ্ণ
সাত কলেজ নিয়ে চতুর্মুখী অবস্থানে শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা

Manual4 Ad Code

স্টাফ রিপোর্টার:
শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের তীব্র আন্দোলনের মধ্যেই ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করা হয়েছে। প্রকাশিত খসড়ার ওপর অংশীজনের মতামত আহ্বান করা হয়েছে। নির্ধারিত ইমেইলে (ds univl@moedu.gov.bd)বা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগের সিনিয়র সহকারী সচিবের কাছে সাত কার্যদিবসের মধ্যে খসড়া অধ্যাদেশের ওপর মতামত পাঠানোর জন্য বলা হয়েছে। গতকাল বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বিভাগে এই অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশ করা হয়।

এদিকে অধ্যাদেশের খসড়া প্রকাশের আগে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের এ নিয়ে ত্রিমুখী অবস্থান ছিল। এখন তা বেড়ে চতুর্মুখী অবস্থান হয়েছে। ঢাকার সাতটি সরকারি কলেজকে একীভূত করে প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগে আপত্তি জানিয়ে গতকাল বুধবার একযোগে নিজ নিজ কলেজে মানববন্ধন করেছেন শিক্ষকেরা। আবার শিক্ষকদের এই দাবিকে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করে দ্রুত অধ্যাদেশ জারি না হলে কঠোর আন্দোলনের হুমকি দিয়েছেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।

অন্যদিকে খসড়া অধ্যাদেশ অনুযায়ী, চলমান ২০২৩-২৪ সেশন ও ২০২৪-২৫ সেশন শুধু ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি সনদপ্রাপ্ত হবে। এর আগের চলমান সেশনগুলো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে সার্টিফিকেট প্রাপ্ত হবে বলে জানানো হয়েছে। এর প্রতিবাদে আন্দোলনে নেমেছেন বাকি শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা। এছাড়া ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটির নামে অধ্যাদেশ জারি হলে কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য নষ্ট হবে বলে দাবি করেছেন ঢাকা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজের উচ্চ মাধ্যমিকের (এইচএসসি) শিক্ষার্থীরা; এ সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারি না করার দাবিতে কলেজ দুটির শিক্ষার্থীরা তিন দিন ধরে মানববন্ধন করছেন।

Manual5 Ad Code

শিক্ষকদের মানববন্ধন: গতকাল দুপুর ১২টার দিকে ঢাকার সাত কলেজ স্বাতন্ত্র্য রক্ষা কমিটির ব্যানারে এক যোগে সাত কলেজে মানববন্ধনকালে শিক্ষকরা বলেন, প্রস্তাবিত কাঠামো বাস্তবায়িত হলে কলেজগুলোর উচ্চশিক্ষা ও নারী শিক্ষার সংকোচন এবং কলেজের স্বতন্ত্র কাঠামো ও ঐতিহ্য বিলুপ্ত হবে। বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারের কর্মকর্তাদের (শিক্ষক) পদও বিলুপ্ত হওয়ার আশঙ্কা আছে। প্রকারান্তরে শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ হবে। শিক্ষকরা বলেন, সাত কলেজের জন্য একটি বিশ্ববিদ্যালয় হোক, সেটির বিপক্ষে তারাও নন। কিন্তু সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। আর সেই বিশ্ববিদ্যালয়টি হবে অধিভুক্তমূলক। কোনোভাবেই কলেজের সম্পদের মালিকানা প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের নামে হস্তান্তর করা যাবে না। তা কলেজগুলোর নামে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে।

Manual1 Ad Code

দুপুরে ঢাকা কলেজে গিয়ে দেখা যায়, কলেজের মূল ফটকের সামনের রাস্তায় বিপুলসংখ্যক শিক্ষক মানববন্ধন করছেন। তারা সাংবাদিকদের বলেন, যেভাবে বিশ্ববিদ্যালয় করার কথা বলা হচ্ছে, তাতে কলেজগুলোর সমস্যা বাড়বে। ইডেন মহিলা কলেজ ও বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজে নারী শিক্ষার সুযোগ সংকোচন হয়ে যাবে। মোটাদাগে উচ্চশিক্ষার সংকোচন হবে। আবার এই সাত কলেজের মধ্যে ঢাকা কলেজসহ পাঁচটি কলেজে উচ্চমাধ্যমিক আছে। উচ্চমাধ্যমিকের মান কমে যাওয়া বা উচ্চমাধ্যমিকের অবকাঠামোগত সংকোচনের পদক্ষেপ তাদের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে না। আর শিক্ষা ক্যাডারের পদগুলোর সুরক্ষাও চান তারা।

মানববন্ধন থেকে শিক্ষকদের পক্ষ থেকে ১১ দফা দাবির কথা জানানো হয়। এগুলোর মধ্যে আছে সাত কলেজের নাম বা কাঠামো পরিবর্তন করে কোনো অনুষদে অথবা স্কুলে রূপান্তর করা যাবে না। কলেজের লোগোসহ স্থাবর ও অস্থাবর সম্পত্তি নিজ নিজ কলেজের নামে অক্ষুণ্ণ রাখতে হবে। বিদ্যমান কোনো বিষয় বিয়োজন করা যাবে না। প্রয়োজনে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস অবশ্যই পৃথক স্থানে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। সাত কলেজকে পরীক্ষাগার বা গিনিপিগ বানিয়ে কোনো পরীক্ষামূলক বিশ্ববিদ্যালয় মডেল চাপিয়ে দেওয়া যাবে না ইত্যাদি।

গতকাল সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষকেরাও মানববন্ধন করেছেন। সেখানে শিক্ষক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এম এম আতিকুজ্জামান বলেন, ‘এত বিশ্ববিদ্যালয় থাকতে এই সাত কলেজের দিকে কেন নজর দেওয়া হলো? একটি স্বার্থান্বেষী মহল চাচ্ছে এই সাতটা কলেজকে ভ্যানিশ করে দেওয়ার জন্য।’ এর আগে গত ১৭ সেপ্টেম্বর প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় করার বিষয়ে আপত্তি জানিয়ে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) সামনে এই সাত কলেজের কয়েক শ শিক্ষক মানববন্ধন করেন।

প্রস্তাবিত কাঠামোয় নতুন বিশ্ববিদ্যালয় করার উদ্যোগের প্রতিবাদে বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজের উচ্চমাধ্যমিক স্তরের ছাত্রীরা মঙ্গলবার অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। তারা আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেছেন, প্রস্তাবিত কাঠামোয় বিশ্ববিদ্যালয় হলে নারী শিক্ষার এই প্রতিষ্ঠান সংকুচিত হবে এবং নারী শিক্ষা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এজন্য তারা চান প্রস্তাবিত ‘ঢাকা কেন্দ্রীয় বিশ্ববিদ্যালয়’ নতুন জায়গায় করা হোক। সেটি পূর্বাচল, কেরানীগঞ্জ বা ঢাকার পার্শ্ববর্তী অন্য কোনো এলাকায় করতে হবে, কিন্তু বিদ্যমান মহিলা কলেজকে সংকুচিত করে নয়। গত ১৬ সেপ্টেম্বর ঢাকার সরকারি সাত কলেজ কলেজিয়েট বা অধিভুক্তমূলক কাঠামোর আওতায় রাখার প্রস্তাব দিয়েছেন সাত কলেজে কর্মরত শিক্ষা ক্যাডার কর্মকর্তারা। তারা এ প্রস্তাবনা শিক্ষা উপদেষ্টা বরাবর দিয়েছেন। ঢাকা সেন্ট্রাল ইউনিভার্সিটি বাস্তবায়িত হলে ঐ সব কলেজের শিক্ষাব্যবস্থা ক্ষতির মুখে পড়বে বলে মনে করছেন তারা।

অধ্যাদেশের খসড়া প্রত্যাখ্যান শিক্ষার্থীদের :প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের খসড়া অধ্যাদেশে চলমান সব শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়নি। এমন হঠকারী সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে গতকাল বিকাল ৪টায় ঢাকা কলেজ কেন্দ্রীয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে সংবাদ সম্মেলন করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা বলেন, এমন অন্যায্য ও বৈষম্যমূলক সিদ্ধান্তে চলমান শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থীরা গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করছে। শিক্ষার্থীদের দাবি, সব বর্ষ ও সেশনের শিক্ষার্থীদেরকে সমানভাবে প্রস্তাবিত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করতে হবে, অন্যথায় শিক্ষাজীবন মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে। সংবাদ সম্মেলনে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশের খসড়ার বিভিন্ন অসংগতি তুলে ধরা হয়।

Manual6 Ad Code

অধ্যাদেশের খসড়া প্রত্যাখ্যান করে চলমান সেশনের শিক্ষার্থীদের এই ইউনিভার্সিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা। তারা বলেন, অধ্যাদেশের খসড়া একটি বৈষম্যমূলক এবং অবিবেচনাপ্রসূত দলিল। অধ্যাদেশের খসড়া সংশোধন না হলে ফের রাজপথে কঠোর থেকে কঠোর কর্মসূচি দিতে বাধ্য হবেন শিক্ষার্থীরা।

Manual4 Ad Code

প্রসঙ্গত, সরকারি এই সাত কলেজ হলো ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, বাঙলা কলেজ ও তিতুমীর কলেজ।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code