এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন:
ইমান, নামাজ, রোজা, যাকাত, হজ্জ এই ৫টি ইবাদত প্রতিটি ঈমানদার এর জন্য ফরজ। তবে শর্ত আছে, ইমান, নামাজ এবং রোজা এবাদত করতে টাকা পয়সা কিছুই লাগেনা। শারিরিক ও মানষিকভাবে সুস্থ হলে-ই পালন করা বাধ্যতামূলক। যাকাত এবং হজ্জ এই ২টি এবাদত করতে হলে আর্থিক ভাবে স্বাভলম্বি হতে হবে। যাহাদের নির্দিষ্ট পরিমান টাকা খরচ এর পর অবশিষ্ট টাকা থেকে আড়াই পার্সেন্ট হারে যাকাত বাধ্যতামূলক। তবে এ টাকা বিতরন করতে হবে আপন ভাই বোন মাতা পিতা তাহাদের নিকট নহে। কারন তাহারাতো ক্ষেত্র বিশেষ আপনার এমনিতেই উত্তারাধীকার। হজ্জ করার বিধান হল, হজ্জে যাতায়াত থাকা খাওয়া এবং অবস্থানকালীন সময়ে নির্ভরশীলদের থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা থাকিলে ঐ দিন থেকেই হজ্জের আনুষ্ঠানিকতা সম্পাদনের জন্য হজ্জে যাওয়া ফরজ করা হয়েছে। দেখা যায় ৩০/৪০ লক্ষ টাকা উপার্জিত সম্পদ আছে।
কিন্তু নিয়ত করে বসে আছেন, এ টাকা দিয়ে, ছেলে-মেয়েকে বিবাহ, বিদেশ বা অন্য কিছু করিতে ইচ্ছুক। ভূলে গেলেন- ফরজ এবাদতের কথা। ক্যান্সার বা অন্য কোন কঠিন রোগ হয়ে গেল? উপার্জিত সম্পদ দিয়ে চিকিৎসা করালেন। কিন্তু সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অতি সামান্য। অথচ ফরজ এবাদত তরক করার কারনে কাল হাসরের মাঠে কঠিন শাস্তি ভোগ করতে হবে। সুদ, ঘোষ, ব্যভিচার, গুম, অপহরন ইত্যাদি ক্ষমতার জোরে দিদারছে করলেন। কিন্তু একটু চিন্তা করে দেখুন এসব অন্যায় কাজের জন্য প্রতিদান আপনি বা আপনার উত্তারাধীকারীগনকে এসব অপকর্মের ফলাফল ভোগ করিতেই হবে। অন্যের জমি প্রভাব খাটিয়ে জবরদখল করলেন। বাড়ীঘর নির্মান করলেন। অন্যায়ভাবে দূর্বলের উপর প্রভাবপ্রতিপত্তি, গালিগালাজ, মারধর ইত্যাদি করলেন। আইন আদালতে মিথ্যা মামলা দিয়ে হয়রানিমূলক কাজ করবেন। বৈধ অধিকারের উপর সহযোগিতার পরিবর্তে অসহযোগীতা করলেন। ঘুষ, দুর্নিতির আশ্রয় নিয়ে বৈধ অধিকারের উপর অহেতুক হয়রানি করলেন। সরকার কর্তৃক নির্ধারিত প্রাপ্য সুযোগ সুবিধার পরিবর্তে অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে সম্পদের পাহাড় গড়লেন। অন্যের বৈধ হক অবৈধভাবে প্রভাব খাটিয়ে তসরুপ করলেন। আমানতের খেয়ানত করলেন। সহজ সরল মানুষকে চাপে ফেলে হয়রানি করলেন। ইমাম মোয়াজ্জিন ও ইসলামী স্কলারদের কিভাবে সম্মানী ও সম্মান দিতে হয় তা কিন্তু জানেন। ইসলামের সেবকদের উপর অশিক্ষিত মুর্খ, গোয়ারগোন্ডা অবৈধভাবে হস্তক্ষেপ করলেন। সামাজিকভাবে প্রতিষ্ঠিত সর্বোচ্ছ বিদ্যাপিঠ থেকে উচ্চতর সনদপত্র প্রাপ্ত প্রাজ্ঞ শিক্ষাবিদ ও বহুগুনে গুনান্বিত জ্ঞানি ব্যক্তিকে সম্মান না দিয়ে অসম্মান করার চেষ্টা করলেন। চরিত্র হনন করলেন। সমাজের অক্ষম, অপদার্থ, অশিক্ষিত, অল্প শিক্ষিত, চরিত্রহীন ব্যক্তি প্রভাব খাটিয়ে দ্বারা সমাজ পরিচালনার দায়িত্ব নিলেন।
এ ধরনের চেষ্টা করাও বড়ধরনের অন্যায়। অহেতুক ও অযাচিতভাবে অন্যের মৌলিক অধিকারের উপর হস্তক্ষেপ করা ন্যায় নীতি বিবর্জিত। কলেজ বিশ^বিদ্যালয় বা ইসলামী জ্ঞান অর্জন করা কয়জনের ভাগ্যে জোটে। সমাজ বিনির্মানে এসব বরেন্য ব্যক্তিদের কাজে লাগানো ও সহযোগীতা করা সাধারন জনগনের কাজ। কিন্তু বাস্তবে কি এসব শ্রেনী ও পেশার মানুষরা যোগ্যতম চেয়ারে বসার কি সুযোগ পাচ্ছে? না। এনালগ যোগের সেই বখাটে ব্যক্তি প্রভাব প্রতিপত্তি খাটিয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে পদায়ন না করে সেই অযোগ্যব্যক্তি চেয়ারে বসে আছে। তাহার আদেশ, নির্দেশ বর্তমান প্রযুক্তির যুগে কিছু শিক্ষিত নামধারী প্রতিবন্ধিদের তালিকাভুক্ত হয়ে অযোগ্য ব্যক্তিরা অযোগ্য কাজে সহযোগিতা করিতেছে। প্রকারান্তরে এসব শিক্ষিত নামের প্রতিবন্ধিরা সবচেয়ে বেশী দেশ জাতির জন্য অভিশাপ। হাল আমলে এসব প্রতিবন্ধি কথিত শিক্ষিতদের তালিকা দির্ঘ হচ্ছে। আর এ তালিকা দির্ঘ হওয়ার অন্যতম কারন সে দুর্নিতিবাজ। মুখে দুর্নিতিবিরোধী কথা বললে ও অন্তরে বা আপাদমস্তক তাহার মধ্যে দুর্নিতির বিষ বাষ্প নিহীত। নিজের অর্জিত শিক্ষাগত যোগ্যতা বা গুনাবলি দুর্নিতির কারনে আড়াল হয়ে যাচ্ছে। দুর্নিতিকে আড়াল করতে এসব অযোগ্যদের সহযোগীতা নিতে হচ্ছে। এসব শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর সনদকে শুধুমাত্র রুটি রোজগার এর অন্যতম হাতিয়ার মাত্র। তাহাকে তো আর শিক্ষিত বলা যায় না। সাধারন জনগন এসব শিক্ষিত সনদদারীদের মূল্যায়ন করে থাকে পশুর সাথে। শিক্ষিত ঐ ব্যক্তি যাহার মধ্যে সামাজিক এবং একাডেমিক শিক্ষার সমন্বয় ঘাটিয়াছে। ন্যায়-অন্যায় বলার যোগ্যতা অর্জন করিয়াছে। সদা সৎ কাজ করিব, অসৎ কাজে সগযোগীতা করিব না। ন্যায় নীতির প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অগ্রনী ভূমিকা পালন করিব। নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করিব না। অযোগ্য, অপদার্থ, অসৎ, চরিত্রহীন ইত্যাদি গুনাবলি ব্যক্তি যাহাই করুক না কেন, সাধারন জনগন কিন্তু তাহাদের দোষকে আমলে নিবে না। কারন সে অশিক্ষিত। তাহার লজ্জাস্থান বলতে কিছু নেই। কিন্তু সামাজিক ও একাডেমিক শিক্ষায় শিক্ষিত ব্যক্তিকে কিন্তু সাধারন জনগন তাহার দোষকে কিছুতেই ছাড় দিবে না। কারন সে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান থেকে সর্বোচ্ছ সনদ অর্জন করিয়াছে। সুতরাং তাহার প্রতিটি আচার আচরন সাধারন জনগন অনুসরন করে। তাহাদের দোষ কিছুতেই ক্ষমারযোগ্য নহে। ন্যাচারেলি তাহার প্রতিটি কাজ কর্ম অনুসরনযোগ্য হওয়া উচিত। এসব বয়ান কি আমরা জানি না? জানি, কিন্তু মানি না। আর না মানিলে আপনি কিন্তু মুনাফিক শ্রেনীর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহর ঘোষনা মতে, মুনাফিকের বেহেশত যাওয়ার সুযোগ নেই।
লেখক: এডভোকেট মো: আমান উদ্দিন, সভাপতি, সু-শাসনের জন্য নাগরিক (সুজন), বিয়ানীবাজার, সিলেট। মোবাইল: ০১৮১৯-১৭৬২১৭।
Sharing is caring!