প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

৮ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৩শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
১৭ই জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

হবিগঞ্জে শকুনের জন্য বিশেষ রেস্তোরাঁ, পায় নিরাপদ খাদ্য

editor
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৬, ২০২৫, ০৮:০০ পূর্বাহ্ণ
হবিগঞ্জে শকুনের জন্য বিশেষ রেস্তোরাঁ, পায় নিরাপদ খাদ্য

Manual6 Ad Code

নিউজ ডেস্ক:
এ বছরের মার্চ মাসের ২৭ তারিখ গেলাম হবিগঞ্জের রেমা-কালেঙ্গা বনে। একদম ভোরের আলো ফোটার আগেই পৌঁছালাম। এখানে শকুনের নিরাপদ খাবারের জন্য আমরা একটা ‘বিশেষ রেস্তোরাঁ’ করেছি। এই রেস্তোরাঁ বা ফিডিং স্টেশনে খাবার হিসেবে নিয়মিত আস্ত গরু দেওয়া হয়। শকুনেরা এসে খেয়ে যায়। শকুন সংরক্ষণের উদ্দেশ্য প্রকৃতি সংরক্ষণবিষয়ক সংস্থাগুলোর আন্তর্জাতিক জোট আইইউসিএন ও বন অধিদপ্তরের উদ্যোগে এই রেস্তোরাঁ আমরা চালু করেছিলাম ২০১৪ সালে।

আমরা যখন সকালে রেমা বনে পৌঁছালাম, তখন এই রেস্তোরাঁয় ১৩টি শকুনকে একসঙ্গে খেতে দেখলাম। একটি বাদে সব কটিই ছিল বাংলা শকুন। এদের মধ্যে পাঁচটি নতুন বাচ্চাও ছিল। দেখে মনটা ভরে গেল। এ বছর আমরা ১২টি শকুনের বাসার সন্ধান পেয়েছিলাম রেমা–কালেঙ্গার এই বনে। মূলত প্রজননকালে আমরা সাত মাস খাবার দিয়ে থাকি। যেসব শকুন বাসা বানায় ও ডিমে তা দেয়, তাদের জন্যও খাবার সংগ্রহে অনেক সুবিধা হয়। সহজেই নিরাপদ খাবার পায়।

Manual7 Ad Code

রেমা বনে শকুনের রেস্তোরাঁর পাশাপাশি একটি শকুনের মনিটরিং সেন্টারও আছে। সেই ঘরের ভেতর থেকে ছোট্ট একটি ফুটো দিয়ে শকুনের জন্য রেস্তোরাঁটির সবকিছু দেখা যায়। ওই ঘরের ভেতর বসেই সেদিন প্রায় তিন ঘণ্টা কাটিয়ে দিলাম। অসাধারণ এক অনুভূতি। মা-বাবার সঙ্গে বাচ্চাগুলো খুনসুটি করছে আর একসঙ্গে খাবার খাচ্ছে। কেউ খাবার খাওয়ার পরে গাছে উড়ে যাচ্ছে আবার কেউবা গোসল সেরে ডানা মেলে বসে আছে। খাবার শেষ হলে শকুন সাধারণত এ রকম আচরণই করে থাকে।

Manual5 Ad Code

শকুনের জন্য আবার রেস্তোরাঁ বা খাবার হোটেল! এ রকম খবর শুনে অনেকেই অবাক হন। নানা মানুষ নানা কথা বলেন। মনে মনে অনেকে হয়তো আমাদের পাগলও ভাবেন। কিন্তু মাত্র তিন যুগে এ পৃথিবী থেকে এই প্রাণী যে অনেকটা হারিয়ে গেল, তা হয়তো কেউই খেয়াল করেননি। এ দেশে এখন কোনোরকমে টিকে আছে আড়াই শ বা এর কম শকুন। শকুন হারিয়ে যাওয়ার পেছনে প্রধান কারণ হলো অনিরাপদ খাবার। ব্যথানাশক ওষুধ কিটোপ্রোফেন, ডাইক্লোফেনাক অথবা ফ্লুনিক্সিন যদি আমরা পশু চিকিৎসায় ব্যবহার করি আর সেই পশু যদি মারা যায়, শকুন তা খেলে সঙ্গে সঙ্গে শকুনও মারা পড়ে। এই মরা গরু খেলে ওষুধটির প্রভাবে শকুনের কিডনিতে সমস্যা সৃষ্টি করে। ওষুধের বিষক্রিয়ায় মারা যায়। এভাবেই গোটা দুনিয়া থেকে শকুনগুলো হারিয়ে গেল।

এই ওষুধগুলোর ওপর শকুনের প্রভাব নিয়ে অনেকে গবেষণা করেছেন। সব মিলিয়ে প্রায় ২৭৪টি বৈজ্ঞানিক গবেষণাপত্র পাওয়া যায়, যার সব কটিতেই বলা হয়েছে শকুন রক্ষা করতে হলে ক্ষতিকর ওষুধমুক্ত পরিবেশ তৈরি করতে হবে। আমাদের উপমহাদেশে ডাইক্লোফেনাক নিষিদ্ধ হয়েছে। বাংলাদেশে কিটোপ্রোফেনও নিষিদ্ধ করা হয়েছে। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বাজারে কিটোপ্রোফেন ওষুধ না থাকলেও গত এক বছরে ফ্লুনিক্সিন নামের আরেকটি ক্ষতিকর ওষুধে বাজার সয়লাব হয়ে গেছে। পশু চিকিৎসায় নিরাপদ ওষুধ মেলেক্সিক্যাম আর টলফামেনিক অ্যাসিড থাকতে কেন এসব বাজারে আসছে, তা আমাদের কাছে বোধগম্য নয়।

Manual8 Ad Code

শকুনের জন্য বিশেষ এই রেস্তোরাঁর উদ্যোগ মূলত শকুনের নিরাপদ খাবার পাওয়ার জন্য। তা–ও যে কটি শকুন টিকে আছে, এগুলো যেন আর হারিয়ে না যায়। কিছুদিন আগে একটা বাচ্চা শকুন অসুস্থ হয়ে পড়ল। বেশ কয়েক দিন বাচ্চাটিকে পরিচর্যা কেন্দ্রে রেখে আমরা সুস্থ করে তুলি। এখন এই বাচ্চাও দিব্যি প্রকৃতিতে ঘুরে বেড়াচ্ছে, রেস্তোরাঁটিতে এসে খাবার খাচ্ছে।

আজ ৬ সেপ্টেম্বর আন্তর্জাতিক শকুন সচেতনতা দিবস। এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য ‘ক্ষতিকর ওষুধমুক্ত পরিবেশ, শকুন সংরক্ষণের প্রতিশ্রুতি’।

Manual7 Ad Code

বাংলাদেশের হবিগঞ্জ জেলার রেমা–কালেঙ্গা বন ছাড়া আর বেশির ভাগ শকুন টিকে আছে সুন্দরবন অঞ্চলে। শকুনের জন্য নিরাপদ অঞ্চল ছাড়া এরা প্রকৃতিতে টিকে থাকতে পারবে না। তাই শকুনের জন্য ক্ষতিকর ওষুধমুক্ত পরিবেশ খুবই দরকার।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code