প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

নির্মাণসামগ্রীর দাম কমলেও গতি ফেরেনি কাজে

editor
প্রকাশিত মার্চ ১১, ২০২৫, ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ
নির্মাণসামগ্রীর দাম কমলেও গতি ফেরেনি কাজে

Manual2 Ad Code

 

Manual4 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual3 Ad Code

গত কয়েক বছর বাড়ি ও বিভিন্ন স্থাপনা নির্মাণে ভুগিয়েছে নির্মাণসামগ্রীর আকাশচুম্বী দাম। তবে গতি ছিল নির্মাণকাজে। সবশেষ ছয়-সাত মাসে অধিকাংশ নির্মাণ উপকরণের দাম কমেছে। তবু গতি ফেরেনি কাজে, বরং আগের চেয়ে কমেছে। পণ্য বিক্রিতেও ভাটা। কমেনি ফ্ল্যাটের দামও।

রাজধানীর বিভিন্ন খুচরা বাজার ঘুরে দেখা যায়, নির্মাণের প্রধান উপকরণ রড এখন বিক্রি হচ্ছে প্রতি টন ৮৮ থেকে ৯০ হাজার টাকা। ২০২৩ সালের মধ্যভাগে রডের দাম বেড়ে লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়। মূলত ৫ আগস্টের পর রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে নতুন প্রকল্প কমেছে। এতে চাহিদা অনেকটাই কমে গেছে রডের। রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার কারণে ব্যক্তিপর্যায়ের নির্মাণকাজও হচ্ছে কম।

রডের পাশাপাশি দাম কমেছে মোটা প্লেট, পাতলা প্লেট ও অ্যাঙ্গেলের। বর্তমানে প্রতি টনে ১০ থেকে ১৫ হাজার টাকা কমে অ্যাঙ্গেল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯২ হাজার টাকায়। মোটা প্লেটে টনে প্রায় ১৫ হাজার টাকা কমে বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে এক লাখ ২০ হাজার টাকায়। পাতলা প্লেট প্রতি টন বিক্রি হচ্ছে দেড় লাখ টাকায়।

 

ইট-সিমেন্টের দামও কম

নির্মাণের অন্যতম উপকরণ ইট ও সিমেন্টের দামও কমেছে। যদিও বাড়তি রয়েছে বালুর দাম। ১৩-১৪ টাকায় উঠে যাওয়া ইট এখন মানভেদে ৮-১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। ট্রাকভাড়াসহ তিন হাজার ইট এখন ৩২ হাজার টাকায় পাওয়া যাচ্ছে, মাস কয়েক আগেও তা ট্রাকভাড়াসহ ৪২ থেকে ৪৩ হাজার টাকায় কিনতে হয়েছে। প্রতি বস্তায় ২০ থেকে ৩০ টাকা কমে সিমেন্ট বিক্রি হচ্ছে ৪৯৫ থেকে ৫২০ টাকার মধ্যে। গত ছয় থেকে সাত মাস আগেও প্রতি বস্তা সিমেন্ট বিক্রি হয়েছে ৫৫০-৫৬০ টাকা পর্যন্ত।

 

রড-সিমেন্ট-বালুর দাম নিয়ে আল্লাহর দান ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে বিল্ডিংয়ের কাজ কমে গেছে। এর আগে যেভাবে বিক্রি হয়েছে এখন তার অর্ধেক বিক্রি হচ্ছে। কাজ চলমান থাকলে দাম বাড়ে, এখন কাজ না থাকায় চাহিদা কমে গেছে। এ কারণে সব কিছুর দাম কমেছে।’

তার কথার সঙ্গে একমত পোষণ করে এ দোকানের ক্রেতা আবেদিন বলেন, ‘আমার বাড়ির সামনের যে জায়গা সেখানে বড় বিল্ডিং করতে পারবো না। এ কারণে পুরোনো বিল্ডিংয়ের সংস্কার করছি। এখানে তো আর আহামরি রড-সিমেন্ট লাগবে না।’

 

বেড়েছে বালুর দাম

অত্যধিক দাম বেড়েছে বালুর। বর্তমানে প্রতি সিএফটি সাদা বালু বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩২ টাকায়, যা ছয় মাস আগেও বিক্রি হয়েছে ১৮ থেকে ২০ টাকায়। লাল বালু প্রতি সিএফটি বিক্রি হচ্ছে ৫২ থেকে ৬২ টাকায়। ছয় থেকে সাত মাস আগেও যা বিক্রি হয়েছিল ৪০ থেকে ৪২ টাকায়। মূলত অবৈধ বালু উত্তোলন বন্ধ থাকায় এ অবস্থা।

ঢাকার বালু ব্যবসায়ী শফিক বলেন, ‘বর্তমানে প্রতিদিনই অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে নদীতে। এতে বালু উত্তোলন কমেছে। এ কারণে সব ধরনের বালুর দামই বেড়েছে।’

 

যেসব কারণে কমছে না ফ্ল্যাটের দাম

নগরে ফ্ল্যাট-অ্যাপার্টমেন্টের দাম বাড়ার পেছনে আবাসনের উদ্যোক্তারা পাঁচ কারণ দেখছেন। এর মধ্যে অন্যতম প্রধান কারণ নতুন ড্যাপে (২০২২) যোগ হয়েছে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার)। জমি অনুযায়ী ভবনের উচ্চতা-আকারে এসেছে ব্যাপক পরিবর্তন, ভবন হচ্ছে ছোট। যেখানে ব্যবসায়ী-জমির মালিক উভয়েই আগ্রহ হারাচ্ছেন।

Manual4 Ad Code

এছাড়া অন্য কারণের মধ্যে রয়েছে ফ্ল্যাটের খরচ বেশি। কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা বলছেন, কোনো একটি বিল্ডিংয়ের কাজ শেষ করতে আড়াই থেকে চার বছর পর্যন্ত সময় লেগে যায়। এ সময়ের মধ্যে অনেক পণ্যের দাম বেড়ে যায়। পুরো প্রকল্পে ওই দামের প্রভাব থাকে। এতে দাম কমানো সম্ভব হয় না।

ফার ও সাইনিং মানি বেশি

ফার ইস্যুতে জমির দাম বহুগুণে বেড়েছে। দুই বছরে এলাকাভেদে দেড় গুণ পর্যন্ত দাম বেড়েছে। আবার বেড়েছে জমিদাতার সাইনিং মানি। সাইনিংয়ে জায়গাভেদে (গুলশান-বনানী) জমিদাতা দুই কোটি টাকা পর্যন্ত পান প্রতি কাঠায়। মিরপুর এলাকায় সাইনিং মানি ৩০ লাখ থেকে ৫০ লাখ, আফতাবনগরে ৭০ লাখ, বনশ্রীতে ৬৫ থেকে ৭০ লাখ টাকা। আবার জমির মালিক জমি দিচ্ছেন না এখন।

Manual5 Ad Code

 

চাঁদাবাজি

নির্মাণে বাড়তি খরচের পেছনে রয়েছে স্থানীয় চাঁদাবাজি চক্র। রাজধানীর কোনো এলাকায় বিল্ডিং নির্মাণ হলেই মিউচ্যুয়াল চাঁদাবাজি হতো। এখানে এক গ্রুপ চাঁদা নিলেই সে টাকা অন্যরাও ভাগ পেতো। চাঁদা না পেলে তারা কাজ বন্ধ করে দেন। চাঁদার কারণে কাজ বন্ধ থাকলেও লোকসান গুনতে হয়। ৫ আগস্টের পর অন্য একটি গ্রুপ চাঁদাবাজি করতে এলেও ব্যবসায়ীরা ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বসে চাঁদা না দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। এতে বর্তমানে চলমান প্রকল্পে চাঁদাবাজি কমেছে বলে জানান রিহ্যাব নেতারা।

 

কমেছে প্ল্যান পাস

ফ্ল্যাটের বাড়তি দামের বড় কারণ নতুন ড্যাপে ফারের কারণে নতুন প্রজেক্ট পাস নেই। জমির মালিক ও উদ্যোক্তারা সুউচ্চ বিল্ডিংয়ের অনুমতি না পাওয়ায় তারা নতুন প্ল্যান পাস করতে চাচ্ছেন না। রাজউকের এক সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে প্ল্যান পাসের জন্য আবেদন পড়েছিল ২০ হাজার ৯৩৮টি, পরের ২০২২-২৩ অর্থবছরের প্ল্যান পাসের আবেদন সাড়ে পাঁচ হাজার কমে জমা পড়েছিল ১৬ হাজার ৫২৫টি। পরের বছর আরও কমে যায়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে প্ল্যান পাসের জন্য আবেদন জমা পড়েছিল ৯ হাজার ৫৮৬টি। অর্থাৎ, এক বছরে প্রায় ৭ হাজার প্ল্যান পাসের আবেদন কমে যায়।

 

তবে ঠিক কী কারণে প্ল্যান পাসের আবেদন কমছে এ নিয়ে কথা বলতে রাজি হননি রাজউক কর্মকর্তারা। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগের একজন কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘নতুন ড্যাপের পর থেকেই প্ল্যান পাসের আবেদন কমছে। তবে সংকট কাটাতে কাজ চলমান, আসন্ন ঈদের আগেই সংকট সমাধানে ভালো কিছু আসতে পারে।’

 

জমি দিতে চাচ্ছেন না মালিক

রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় এর আগে প্রায় প্রতিটি জমিতে (প্লট) সুউচ্চ বিল্ডিং করা যেত। এখন সেখানে ফার ইস্যু যোগ হওয়ায় কমে গেছে ভবনের উচ্চতা ও ফ্ল্যাটের সংখ্যা। এ কারণে জমির মালিক আগের মতো বেশি ফ্ল্যাটের মালিক হতে পারবেন না। এ কারণে কোনো ডেভেলপার কোম্পানির কাছে জমি দিতে চাচ্ছেন না জমির মালিক।

 

এ বিষয়ে জমির মালিক তৌহিদুজ্জামান বলেন, ‘আমার ধানমন্ডি এলাকায় বাড়ি। আমার বাড়িটি বর্তমানে তিন তলা, সড়কের আয়তনের কারণে আমি পাঁচ থেকে সাড়ে পাঁচ তলার বেশি করতে পারবো না। তাহলে ডেভেলপার কোম্পানিকে কীভাবে দেবো, এখনই আমি ভালো আছি। বরং আমার পুরাতন বাড়িটি সংস্কার করে বাসা ভাড়া বাড়িয়ে দিলেই আয় বেশি হবে।’

এ বিষয়ে ব্রিক ওয়ার্কস লিমিটেডের চেয়ারম্যান এবং রিহ্যাবের সিনিয়র সহ-সভাপতি লিয়াকত আলী ভূঁইয়া বলেন, ‘এর আগে প্রতি বছর গড়ে ১৮ থেকে ২০ হাজার প্ল্যান পাস হতো। রাজউকের ৮ জোনে গড়ে দুই থেকে আড়াই হাজার প্ল্যান পাস করতো। এখন ফার ও ড্যাপ ইস্যুতে সেখানে এক হাজার থেকে ১২শ প্ল্যান পাস হচ্ছে। ব্যবসায়ী বা জমির মালিক কেউ আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code