প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর সরকার

editor
প্রকাশিত মার্চ ১৫, ২০২৫, ১০:০৯ পূর্বাহ্ণ
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কঠোর সরকার

Manual5 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণের প্রশ্নে এবার কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। দাবি আদায়ের নামে সড়ক অবরোধ, জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টি, পুলিশের ওপর হামলা, ছিনতাই-ডাকাতিসহ অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড ঠেকাতে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। সে অনুসারে ইতোমধ্যেই প্রয়োজনীয় কিছু পদক্ষেপও নিয়েছে পুলিশ, র‌্যাবসহ আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলো।

 

এই প্রেক্ষাপটে বৃহস্পতিবার (১৩ মার্চ) থেকে রাজধানী ঢাকায় বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ করে গণবিজ্ঞপ্তি জারি করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।

 

Manual3 Ad Code

অন্যদিকে গাজীপুরে শিল্প-পুলিশের একটি অনুষ্ঠানে হুঁশিয়ারি দিয়ে পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বাহারুল আলম বলেছেন, দাবি আদায়ের নামে রাস্তা অবরোধ করলে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এর আগে গত ৯ মার্চ সচিবালয়ে আইনশৃঙ্খলা নিয়ে ‘কোর সভা’ শেষে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী বলেন, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ওপর যেকোনো আক্রমণ বরদাশত করা হবে না। এখন থেকে কঠোর হস্তে তা দমন করা হবে।

 

Manual5 Ad Code

সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পুলিশের ওপর একের পর এক হামলা-অবজ্ঞা, কথায় কথায় আন্দোলন, দাবি আদায়ের নামে সড়ক অবরোধ, জনভোগান্তি সৃষ্টি, প্রকাশ্যে বেপরোয়া ছিনতাই-ডাকাতির ঘটনার প্রেক্ষাপটে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়। এসব ক্ষেত্রে পরিস্থিতির প্রয়োজনে সর্বোচ্চ কঠোরতা দেখাবে পুলিশ। এরই মধ্যে এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তর থেকেও মাঠপর্যায়ে দেওয়া হয়েছে কড়া নির্দেশনা।

 

Manual1 Ad Code

পুলিশ সদর দপ্তরের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, ৫ আগস্টের পর থেকে গতকাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালনকালে পুলিশ সদস্যের ওপর ২৩০টির বেশি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ৭০টির মতো ঘটনা বেশি আলোচনায় আসে। এসব ঘটনার বাইরেও সড়কে পুলিশ সদস্যরা হামলার শিকার হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এরই ধারাবাহিকতায় গত শুক্রবার নিষিদ্ধ সংগঠন হিযবুত তাহরীরের মিছিল থেকেও পুলিশের ওপর হামলার চেষ্টা হয়। যদিও সেদিন কঠোর পদক্ষেপ নিয়েছিল পুলিশ তথা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। সেখানে পুলিশকে সহযোগিতার জন্য সেনাবাহিনীও বেশ ভূমিকা রাখে। অন্যদিকে গত মঙ্গলবার শাহবাগে ধর্ষণবিরোধী আন্দোলন থেকে পুলিশের ওপর হামলা হয়। সেখানেও পরে পুলিশ কঠোর ‘অ্যাকশন’ চালায়। মূলত এখন থেকে ধীরে ধীরে আরও কঠোর পদক্ষেপ নেওয়ার বিষয়ে নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়েছে পুলিশ বা আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

এ বিষয়ে পুলিশ সদর দপ্তরের গণমাধ্যম শাখার সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি) ইনামুল হক সাগর বলেন, আইনেই বলা আছে- আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে পুলিশের ওপর হামলা বা সরকারি কাজে বাধা দেওয়া শাস্তিযোগ্য অপরাধ। এসব অপরাধকারীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে হবে। আইন অনুযায়ী এসব বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

 

এ প্রসঙ্গে সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ বলেন, ‘পুলিশ যে ধাক্কা (৫ আগস্টের প্রেক্ষাপট) খেয়েছে, সেখান থেকে উঠে আসার জন্য যা করা দরকার তা নানা কারণে পুলিশ করতে পারছে না। তাদের মনোবল একেবারেই ভঙ্গুর। প্রতিনিয়তই তারা বিভিন্নভাবে শারীরিক-মানসিক নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন। প্রতিনিয়ত এগুলো আমরা দেখছি। এই অবস্থা থেকে উঠে আসার জন্য বাহিনীর সবাই যেভাবে চেষ্টা করছেন, সেই চেষ্টাটা আরও একটু দৃশ্যমান করতে হবে। অপরাধ দমনের জন্য পুলিশের দৃশ্যমান অ্যাকশন এই মুহূর্তে খুব দরকার। এই দৃশ্যমান অ্যাকশনগুলো যদি খুব ভালো হয় বা শক্ত হয় বা কঠিন হয়, তাহলে অপরাধীরা মেসেজ পাবে যে এগুলো আর করা যাবে না।’

তথ্য বিশ্লেষণে জানা যায়, গত ৬ মার্চ সন্ধ্যায় কিশোরগঞ্জের পাকুন্দিয়ায় পুলিশের কাছ থেকে একাধিক মামলার আসামি নিষিদ্ধ সংগঠন ছাত্রলীগ নেতা নাজমুল আলম মুন্নাকে ছিনিয়ে নেওয়ার ঘটনা ঘটে। গত ৪ মার্চ সন্ধ্যায় ভোলার বোরহানউদ্দিন উপজেলায় পুলিশের ওপর হামলা চালিয়ে মো. আকবর হোসেন নামে এক আসামিকে ছিনিয়ে নেন তার পরিবার ও স্বজনরা। ওই হামলায় মো. কামরুল ইসলাম নামে এক এএসআই আহত হন। গত ২৮ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রামের পতেঙ্গায় চেকপোস্টে পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) ইউসুফ আলী ১০-১৫ জনের মবের শিকার হন। গত ২৬ ফেব্রুয়ারি তেজগাঁও থানার একটি টহল দল কারওয়ান বাজারে মাদক কারবারি শাহীন আলমকে মাদকসহ হাতেনাতে গ্রেপ্তার করলেও মাদক কারবারিরা দেশীয় অস্ত্র নিয়ে পুলিশের ওপর হামলা চালায়। এই ঘটনার পর পুলিশ একটি মামলা করলে প্রধান দুই আসামিকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

 

এ বিষয়ে অপরাধ বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকল্যাণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ড. তৌহিদুল হক বলেন, ‘পুলিশ বাহিনীকে এখন ঘুরে দাঁড়াতে হবে। যথেষ্ট সময় চলে গেছে, এখন কঠোর হওয়ার বিকল্প নেই। যে পরিস্থিতির জন্য যেমন ভূমিকা দরকার, তেমনই পদক্ষেপ নিতে হবে পুলিশকে। আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণ, মব ভায়োলেন্স, ছিনতাই-ডাকাতির মতো অপরাধের বিষয়ে পুলিশকে কঠোরতা প্রদর্শন করতে হবে।’

 

 

সচিবালয়, যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ

 

Manual6 Ad Code

এ বিষয়ে বৃহস্পতিবার ডিএমপি কমিশনার শেখ মো. সাজ্জাত আলী স্বাক্ষরিত এক গণবিজ্ঞপ্তি জারি করা হয়েছে। এতে বলা হয়, ‘জনশৃঙ্খলা রক্ষার স্বার্থে ডিএমপি অর্ডিন্যান্স (অর্ডিন্যান্স নং-III/৭৬)-এর ২৯ ধারায় অর্পিত ক্ষমতাবলে আজ ১৩ মার্চ বৃহস্পতিবার থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বাংলাদেশ সচিবালয়, প্রধান উপদেষ্টার সরকারি বাসভবন যমুনা ও পার্শ্ববর্তী এলাকায় (হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়, শাহবাগ মোড়, কাকরাইল মোড়, মিন্টো রোড) যেকোনো প্রকার সভা-সমাবেশ, গণজমায়েত, মিছিল ও শোভাযাত্রা ইত্যাদি নিষিদ্ধ করা হলো।’

 

 

রাতে চলছে ডিএমপির বিশেষ অভিযান

 

ডিএমপির গণমাধ্যম শাখা জানিয়েছে, রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় জননিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে বুধবার দিবাগত রাতে ৬৬৭টি টহল টিম ও ৭১টি চেকপোস্ট পরিচালনা করা হয়। এই রাতে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিভিন্ন অপরাধে জড়িত অভিযোগে ২৩৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। যার মধ্যে ৭ জন ডাকাত, ১৩ জন পেশাদার সক্রিয় ছিনতাইকারী, ৩ জন চাঁদাবাজ, ১২ জন চোর, ২৩ জন মাদক কারবারি, ৩৭ জন পরোয়ানাভুক্ত আসামিসহ অন্যান্য অপরাধে জড়িত অপরাধী রয়েছেন। এর আগে গত মঙ্গলবার রাতে রাজধানীতে ঢাকা মহানগর পুলিশ ৬৬৭টি টহল টিম ও ৭১টি চেকপোস্ট পরিচালনা করে। সে রাতেও বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে জড়িত অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয় ১৯৭ জনকে।

 

এদিকে মাঠপর্যায়ে ডিএমপির একাধিক থানার অফিসার্স ইনচার্জের (ওসি) সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মাঠপর্যায়ে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে পুলিশের সদস্যরা হামলার শিকার হচ্ছেন। একই সঙ্গে অনেকেই ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করে আইনি কাজে বাধা সৃষ্টি করছেন। এ বিষয়ে বাহিনী থেকে বলা হয়েছে- পুলিশের ওপর হামলা করা হলে সে যেই হোক, কোনো ছাড় দেওয়া হবে না। একই সঙ্গে সরকারি কাজে বাধা বা আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে বাধা দিলে আমরা সেই বিষয়েও কঠোর আইনি ব্যবস্থা নিতে প্রস্তুত রয়েছি। এ ছাড়া পরিদর্শক পর্যায়ের কর্মকর্তারাও বলছেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় থানাগুলোতে মামলা নেওয়া হচ্ছে।

 

এ বিষয়ে সাবেক আইজিপি আব্দুল কাইয়ুম বলেন, দেশের মঙ্গলের জন্য এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দ্রুত জাতীয় নির্বাচনের জন্য সবার আগে আইনশৃঙ্খলা ঠিক করা দরকার। তার জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে সহযোগিতার জন্য সবাইকে একমত হতে হবে। পুলিশকেও সক্ষমতা অর্জন করতে হবে। পাশাপাশি পুলিশকে তার কাজের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে হবে। এ বিষয়ে জনগণ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মধ্যে পরিষ্কার বার্তা থাকতে হবে।

 

একই প্রসঙ্গে আরেক সাবেক আইজিপি মুহাম্মদ নুরুল হুদা বলেন, দেশের বর্তমান যে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, তার উন্নয়ন করতে হলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় দৃশ্যমান হতে হবে। প্রতিরোধমূলক গ্রেপ্তার অর্থাৎ ‘প্রিভেন্টিভ অ্যারেস্টের’ ব্যবস্থা করতে হবে। কঠোর পদক্ষেপগুলো দৃশ্যমান হতে হবে। প্রতিরোধ করতে হবে মবসহ বেআইনি কর্মকাণ্ডগুলো। সাধারণ মানুষ যখন দেখবে যে অপরাধী গ্রেপ্তার হচ্ছে, বিচার হচ্ছে, শাস্তি হচ্ছে, তখন অপরাধের মাত্রা স্বাভাবিকভাবেই কমে আসবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code