প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রোহিঙ্গা ঠেকাতে ইসির বায়োমেট্রিক ফাঁদ

editor
প্রকাশিত মার্চ ১৮, ২০২৫, ০৯:১৯ অপরাহ্ণ
রোহিঙ্গা ঠেকাতে ইসির বায়োমেট্রিক ফাঁদ

Manual3 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

রোহিঙ্গাদের ভোটার হওয়া ঠেকাতে বায়োমেট্রিক ফাঁদ পাতবে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। আর এ জন্য জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) কাছে থাকা রোহিঙ্গাদের বায়োমেট্রিকসমৃদ্ধ ডাটাবেজের সহায়তা নেবে নির্বাচন কমিশন। এ ক্ষেত্রে কোনো রোহিঙ্গা চাইলেই বাংলাদেশে ভোটার হতে পারবে না। গোপনে দালালের মাধ্যমে ভোটার হতে গেলে ধরা পড়বে বায়োমেট্রিকের জালে। এ বিষয়ে আজ বুধবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে বৈঠক করবে ইউএনএইচসিআর।

এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনের পরিচালক (নিবন্ধন ও প্রবাসী) মো. আবদুল মমিন সরকার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়েছে, জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের মহাপরিচালকের সভাপতিত্বে বুধবার দুপুর আড়াইটায় নির্বাচন ভবন সম্মেলনকক্ষে বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনএইচসিআরের সমন্বিত তত্ত্বাবধানে প্রস্তুতকৃত জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের নাগরিকদের যৌথ নিবন্ধনের বায়োমেট্রিক তথ্যভান্ডার বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক ব্যবহার বিষয়ে এক সভা হবে। সভায় ইউএনএইচসিআরের বায়োমেট্রিক তথ্যভান্ডারের ব্যবহার নিয়ে আলোচনা হবে বলে জানিয়েছে ইসি কর্মকর্তারা।

জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন অনুবিভাগের সিস্টেম ম্যানেজার মুহাম্মদ আশরাফ হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা এসে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব নেওয়ার চেষ্টা করছে। এখন তাদের ফিঙ্গার প্রিন্ট যদি আমাদের কাছে থাকে রেজিস্ট্রেশনের সময় যদি ভেরিফায়েড করতে পারি, তা হলে তাদের ভোটার হওয়ার সময় আটকে দেওয়া যাবে। আর তারা ভোটার হতে পারবে না।

এ বিষয়ে বুধবার জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার সঙ্গে আলোচনা হবে যে কবে নাগাদ থেকে আমরা ওই ডাটা ব্যবহার করতে পারব। তিনি বলেন, আমার ধারণা তাদের কাছে ১৭ থেকে ১৮ লাখ রোহিঙ্গার ডাটা আছে। এর বেশি হওয়ার কথা না। আমরা সাড়ে ১২ কোটি মানুষের ডাটা ধারণ করি আর এটা আমাদের কাছে কোনো বিষয় না। এর সঙ্গে নির্বাচনের কোনো সম্পর্ক নেই।

রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে অনুপ্রবেশের পর থেকে উদ্বিগ জন্ম-মৃত্যু নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ, পাসপোর্ট অধিদফতর ও নির্বাচন কমিশনসহ দেশের তিনটি গুরুত্বপূর্ণ সংস্থা। সরকারের পক্ষ থেকে নানা পদক্ষেপ নেওয়া হলেও ঠেকানো যাচ্ছে না রোহিঙ্গারের নাগরিকত্ব। দালালদের মাধ্যমে মোটা অঙ্কের ঘুষ দিয়ে এনআইডি পেয়ে যাচ্ছে রোহিঙ্গারা। আর এসব এনআইডি দিয়ে সহজেই পেয়ে যাচ্ছে বার্থ সার্টিফিকেট ও বাংলাদেশি পাসপোর্ট। এরপর বাংলাদেশি পাসপোর্ট ব্যবহার করে চলে যায় বিদেশে। আর এতে সংকুচিত হচ্ছে বাংলাদেশের শ্রম বাজার। আর এ জন্য রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজ পেতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পৃথকভাবে চিঠি দিচ্ছে তিনটি প্রতিষ্ঠানই। রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে পৃথক যে কমিটি রয়েছে সেখানে তারা নিয়মিত এ বিষয়ে সভা করছে।

Manual5 Ad Code

কিন্তু রোহিঙ্গাদের ডাটাবেজের সঙ্গে ইসি, পাসপোর্ট ও জন্ম নিবন্ধনের অটোমেটিক আইডেন্টিফিকেশন সিস্টেম (অ্যাফিস) ক্রসম্যাচিং শেয়ারিং করতে না পারায় রোহিঙ্গাদের চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে পড়েছে। ফলে রোহিঙ্গা শনাক্ত করতে না পারায় তাদের জন্য হুমকি হয়ে পড়েছে। রোহিঙ্গারা যাতে জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্ট বা জন্মনিবন্ধন করতে না পারে, সে জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার কাছে রক্ষিত রোহিঙ্গা ডাটাবেজ ব্যবহার করতে চাচ্ছে পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধন কর্তৃপক্ষ ও ইসি। সর্বশেষ গত ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচন কমিশন থেকে তথ্য চেয়ে পররাষ্ট্র সচিবকে চিঠি পাঠানো হয়। এর আগেও কয়েক দফা পত্রবিনিময় হয়।

জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার হিসাব অনুযায়ী, ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা পরিবারের সংখ্যা ১ লাখ ৭৩ হাজার ৪৪টি। এসব পরিবারের সদস্য সংখ্যা ৭ লাখ ৪১ হাজার ৯৪৭ জন। আর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, বাংলাদেশে বর্তমানে ১১ লাখ ৫৮ হাজার ২৫৯ জন রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। অন্যদিকে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৪১৭ জন রোহিঙ্গা বাংলাদেশে অবস্থান করছে। এর মধ্যে আশ্রয়প্রার্থী এতিম শিশু রয়েছে ৩৯ হাজার ৮৪১টি। নিবন্ধনকৃত আশ্রয় প্রার্থীর সংখ্যা ১১ লাখ ১৮ হাজার ৫৭৬ জন। বাংলাদেশে অবস্থানের পর আরও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা শিশু জন্ম নিয়েছে বলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। প্রতিনিয়ত ইউএনএইচসিআর বায়োমেট্রিক প্রক্রিয়ায় তাদের নিবন্ধন করছে।

Manual8 Ad Code

অন্যদিকে বাংলাদেশ সরকার ও জাতিসংঘ শরণার্থী সংস্থার (ইউএনএইচসিআর) যৌথ চেষ্টায় ডাটাবেজ তৈরি হলেও এখন তা এককভাবে ইউএনএইচসিআরের কব্জায় রয়েছে। এখন পুরো ডাটার একক মালিকানা দাবি করছে সংস্থাটি। এ নিয়ে ইউএনএইচসিআর ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মধ্যে আলোচনা চলছে।

Manual7 Ad Code

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মিয়ানমার ডেস্কের পরিচালক সুজন দেবনাথ বলেন, রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। এটা বাংলাদেশ সরকারের ডাটা। তারা এই ডাটা অবশ্যই দেবে। ওনারা ডাটা সংরক্ষণ করে বাংলাদেশকে সাহায্য করেছে। এখন আমরা এটা কীভাবে নিতে পারি, আমাদের আইন, আমাদের সক্ষমতা ইত্যাদি বিবেচনা করে টেকনিক্যাল পর্যায়ে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেব। তাদের কাছে সব রোহিঙ্গাদেরই ডাটা আছে। কালকে মিটিংয়ের পর আমরা বিস্তারিত জানতে পারব। ওনারা এটা বাংলাদেশ সরকারকে দেবে- কারণ এটা আমাদের প্রয়োজন। তাদের আর আমাদের মাঝে কোনো দূরত্ব নেই, আমরা একই পথে আছি। তারাও দেবে, আমরাও নেব, এখন প্রসিডিউর পর্যায়ে আছে।

Manual6 Ad Code

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউএনএইচসিআরের বাংলাদেশের প্রতিনিধি ও প্রধান সেক্রেটারি এসএম জিল্লুর রহমান বলেন, আমি ছুটিতে ঢাকার বাইরে আছি, এ বিষয়ে তেমন কিছু বলতে পাব না।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code