প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

১৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার জব্দ

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ১৬, ২০২৫, ০৭:০২ অপরাহ্ণ
১৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার জব্দ

Manual1 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual2 Ad Code

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দেশান্তরী হন দলীয় সরকারের অধিকাংশ নেতা। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে আটক হয়ে জেলহাজতেও আছেন নেতাদের অনেকে। তাদের সঙ্গে জড়িত ছিল দেশে শীর্ষ ১০টি শিল্পগোষ্ঠীর উদ্যোক্তা।

বিদেশে অর্থ পাচার, অবৈধভাবে সম্পদ আহরণ ও পুঁজিবাজারে শেয়ার জালিয়াতিসহ বিভিন্ন অপকর্মের দায়ে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। মামলার পরে দেশের ১০ গ্রুপের ১৭ হাজার কোটি টাকার শেয়ার জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একই সঙ্গে বিভিন্ন ব্যাংকে স্থিতি থাকা তাদের প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা জব্দ এবং বিদেশযাত্রায় ৮৪ জনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে সাবেক স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলামের স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের নামে থাকা ১৪টি কোম্পানির শেয়ার ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। এসব শেয়ারের মূল্য ৩ কোটি ১৯ লাখ ১২ হাজার ৪৮০ টাকা।

Manual2 Ad Code

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পক্ষে সংস্থার উপপরিচালক আবু মোহাম্মদ আনোয়ারুল মাসুদ এসব সম্পদ ক্রোক ও ফ্রিজ চেয়ে আদালতে আবেদন করেন। যার পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার মেট্রোপলিটন সিনিয়র স্পেশাল জজ জাকির হোসেন গালিবের আদালত দুদকের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে এ আদেশ দেন।

আদালতের নির্দেশনা গতকাল বুধবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং সেন্টার ডিপোজটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) কাছে নির্দেশনা পাঠিয়েছেন আদালত।

 

Manual7 Ad Code

বিদেশে পাচার হওয়া কয়েকশ বিলিয়ন ডলার ফেরত আনার চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার। ফেরত সম্পদের যথাযথ ব্যবস্থাপনার উদ্দেশ্যে ইতোমধ্যে সরকারের আন্তঃসংস্থা একটি টাস্কফোর্স পুনর্গঠন করেছে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে সম্পদ অবরুদ্ধসহ শেয়ার বিক্রি, হস্তান্তর বা উপহার প্রদান নিষিদ্ধ করে জব্দের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

দেশের শীর্ষ গ্রুপের মধ্যে রয়েছেÑ এস আলম গ্রুপ, বেক্সিমকো গ্রুপ, নাবিল গ্রুপ, সামিট গ্রুপ, ওরিয়ন গ্রুপ, জেমকন গ্রুপ, নাসা গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, সিকদার গ্রুপ ও আরামিট গ্রুপ। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পরে শিল্পগ্রুপের প্রধান ব্যক্তিদের ব্যক্তিগত আর্থিক বিষয়ে তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তাদের মধ্যে এস আলম গ্রুপের কর্ণধার সাইফুল আলম ও সামিট পাওয়ার গ্রুপের মোহাম্মদ আব্দুল আজিজ খান বাংলাদেশের নাগরিকত্ব অনেক আগেই ত্যাগ করেছেন। ৫ আগস্ট সরকার পতনের আগে তারা আওয়ামী সরকারের বিভিন্ন সুবিধা নিয়ে বিদেশে ব্যবসা-বাণিজ্য গড়ে তোলেন। এস আলমের বিরুদ্ধে দেশের বেসরকারি খাতের ৭টি ব্যাংক নিয়ন্ত্রণের অভিযোগ রয়েছে। ৭টি বেসরকারি ব্যাংক থেকে তিনি কয়েক লাখ কোটি টাকা নামে-বেনামে গ্রহণ ও পাচার করেন।

অন্যদিকে, সামিট পাওয়ার গ্রুপের আব্দুল আজিজ বাংলাদেশি হলেও সিঙ্গাপুরে অবস্থান করেন এবং সেখানকার শীর্ষ ১০০ ধনীর মধ্যে অবস্থান নেন। তবে তার ভাই আওয়ামী সরকারের সাবেক মন্ত্রী ফারুক খান জেলহাজতে আছেন। সঙ্গে আছেন সাবেক আইনমন্ত্রী আনিসুল হক, শিক্ষামন্ত্রী ড. দীপুমনি, বেক্সিমকো গ্রুপের সালমান এফ রহমান, নাসা গ্রুপের নজরুল মজুমদারসহ অনেক নেতাকর্মী। ৫ আগস্ট সরকার পতনের পরে গত সেপ্টেম্বরে বিদেশে পাচার হওয়া সম্পদ ফেরাতে নতুন করে আন্তঃসংস্থা টাস্কফোর্স গঠন করে সরকার। টাস্কফোর্সে সভাপতিসহ মোট ৯ সদস্য রাখা হয়েছে। পূর্বে টাস্কফোর্সের আহ্বায়ক ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এবং সদস্য সংখ্যা ছিল ১৪।

 

নানা অভিযোগ থাকায় নতুন করে সাজানো হয়েছে- সিআইডি, এনবিআর ও দুর্নীতি দমন কমিশনসহ অন্যান্য সংস্থার একটি যৌথ তদন্ত দল। যা পরিচালনার দায়িত্ব পালন করছে বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ)। বাংলাদেশ ব্যাংকে এ বিষয়ের নথিপত্র প্রস্তুত করার কাজ চলছে। যার মাধ্যমে পাচারের অর্থ ফেরাতে চেষ্টা করছে সরকার।

সাবেক মন্ত্রী তাজুল ইসলামের স্ত্রী: সাবেক মন্ত্রীর স্ত্রী ফৌজিয়া ইসলামের নামে ইজারা ও বায়না দলিলে বান্দরবানের লামা উপজেলায় ৩০৪ দশমিক ৫৯ একর জমি, ঢাকা ও চট্টগ্রামে ফ্ল্যাট ক্রোক, ব্যাংক হিসাব ফ্রিজের আদেশ দিয়েছেন আদালত। অবরুদ্ধ হয়েছে ১২টি ব্যাংক হিসাব ও ১৪টি কোম্পানির শেয়ার রয়েছে। ব্যাংক হিসাবগুলোতে আছে এক কোটি ৪২ লাখ ৬৪ হাজার ১৩৫ টাকা। আর শেয়ারের মূল্য ৩ কোটি ১৯ লাখ ১২ হাজার ৪৮০ টাকা।

জব্দ হওয়া স্থাবর সম্পদের মধ্যে ঢাকার গুলশানে জমিসহ একটি ফ্ল্যাট, চট্টগ্রামের হালিশহরে চার তলা পাকা বাড়ির তিনভাগের একভাগ অংশ রয়েছে। এ ছাড়া বান্দরবানের লামা উপজেলায় ইজারা ও বায়না দলিল মূলে ৫৩ দলিলে প্রায় ৩০৪ দশমিক ৫৯ একর জমি রয়েছে।

Manual8 Ad Code

 

দুদকের আবেদনে বলা হয়েছে, ফৌজিয়া ইসলামের বিরুদ্ধে অবৈধ উপায়ে জ্ঞাত আয়ের উৎসের সঙ্গে অসঙ্গতিপূর্ণ ৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৪ টাকার সম্পদের মালিকানা অর্জন ও দখলে রাখেন। তার স্বামী মো. তাজুল ইসলাম অসদুপায়ে উপার্জিত অর্থ স্ত্রীর নামে ৬ কোটি ৯০ লাখ ২ হাজার ৪ টাকার জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনে সহায়তা প্রদান করেন।

১১টি ব্যাংক হিসাবে ১৩ কোটি ৯৩ লাখ ৫০ হাজার ২০৩ টাকা জমা ও ১৩ কোটি ১৮ লাখ ৪৪ হাজার ৯৭৫ টাকা উত্তোলনসহ সর্বমোট ২৭ কোটি ১১ লাখ ৯৫ হাজার ১৭৮ টাকা হস্তান্তর, রূপান্তর ও স্থানান্তরপূর্বক আয়ের উৎস আড়াল করে দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৭(১) ধারা এবং মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ আইন, ২০১২ এর ৪(২) ও ৪(৩) ধারা তৎসহ পেনাল কোডের ১০৯ ধারায় একটি মামলা দায়ের করা হয়।

মামলা তদন্তকালে তার নামে ব্যাংক হিসাবসমূহে গচ্ছিত অর্থের তথ্য পাওয়া যায়। যা তিনি যেকোনো সময় হস্তান্তর, স্থানান্তর বা বেহাত করার প্রক্রিয়া গ্রহণ করছেন। এর আগে ১৩ এপ্রিল সাবেক স্থানীয় সরকার মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলামের নামে থাকা ঢাকা, কুমিল্লা ও নারায়ণগঞ্জের ২৮ বিঘা জমি, কুমিল্লার বিভিন্ন জায়গায় থাকা দুটি বাণিজ্যিক স্পেস, একটি ফ্ল্যাট ও একটি দোকান ক্রোকের আদেশ দেন আদালত। এ ছাড়া তার নিজ ও স্বার্থসংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের নামে থাকা ৫০টি ব্যাংক হিসাব ও শেয়ারে জমাকৃত ২৮ কোটি টাকা অবরুদ্ধ করা নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code