প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ঢাকা এখন ‘তপ্ত দ্বীপ’, বাড়ছে ঝুঁকি

editor
প্রকাশিত এপ্রিল ২৬, ২০২৫, ০৯:৩৯ পূর্বাহ্ণ
ঢাকা এখন ‘তপ্ত দ্বীপ’, বাড়ছে ঝুঁকি

Manual7 Ad Code

 

Manual6 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

নানা কারণে রাজধানী ঢাকার তাপমাত্রা প্রতিনিয়ত বাড়ছে। অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণ, সবুজের পরিমাণ কমে যাওয়া, পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার ফলে বাতাস প্রবাহিত হওয়ার করিডরও সংকুচিত হয়ে আসছে। ফলে নগরীর বিভিন্ন এলাকা এখন হিট আইল্যান্ড বা তপ্ত দ্বীপে পরিণত হচ্ছে। এ কারণে ঝুঁকিও বাড়ছে।

 

Manual5 Ad Code

নগর পরিকল্পনাবিদ ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, ‘ঢাকার অনেক স্থান এখন হিট আইল্যান্ডে পরিণত হয়েছে। কারণ আমাদের কংক্রিটাইজেশন তো বাড়ছে আর বাড়ছে। আজিমপুরে আগে যেখানে ৫-৬ তলা ভবন ছিল, এখন সেগুলো কংক্রিটের টাওয়ার (সুউচ্চ ভবন)। আশপাশে আরও ভবন নির্মাণের কারণে জায়গাটা হিট আইল্যান্ড হয়ে গেছে। খালি জায়গা যেগুলো ছিল সেগুলোতে আমরা ভবন বানাচ্ছি আর বানাচ্ছি। ফলে আমাদের ঝুঁকি বাড়ছে।’

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ২০২১ সালের এক গবেষণা, ঢাকার অন্তত ২৫টি গুরুত্বপূর্ণ স্থানকে হিট আইল্যান্ড হিসেবে চিহ্নিত করে। গবেষকদের ধারণা, বর্তমানে রাজধানীতে হিট আইল্যান্ড আরও অনেক বেড়েছে। বৈশ্বিক তাপমাত্রা যেখানে ১ থেকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়ছে, সেখানে রাজধানীর জায়গায় তাপমাত্রা বাড়ছে ৫ থেকে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত।

গত বছর রাজধানী ঢাকায় মাত্রাতিরিক্ত হিট ওয়েভ বা তাপপ্রবাহের ফলে নগরীর বাসিন্দাদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। সে সময় ‘ঢাকায় তাপদাহ: নগর পরিকল্পনা ও উন্নয়ন ব্যবস্থাপনার দায়’ করণীয় শীর্ষক সেমিনারে জানানো হয়, কংক্রিটের পরিমাণ মাত্রাতিরিক্ত বৃদ্ধি, ভবনের নকশায় পরিবেশ ও জলবায়ুর ধারণা অনুপস্থিত, কাচ নির্মিত ভবন ও এসিনির্ভর ভবনের নকশা তৈরি, খাল, পুকুর ভরাট, দখল ও ধ্বংস, সবুজ এলাকা নষ্ট করে অপরিকল্পিত স্থাপনা নির্মাণ, বনায়ন না করা বহুবিধ কারণে ঢাকার তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। একই সঙ্গে জানানো হয়, নগর এলাকায় সরু রাস্তার পাশেই সুউচ্চ ভবন নির্মাণ, সরকারি-বেসরকারি সংস্থাসমূহের জলাশয়-জলাধার-সবুজ এলাকা ধ্বংস করা; ময়লার ভাগাড়, ইটভাটা, যানবাহন ও শিল্পকারখানার ধোঁয়া থেকে সৃষ্ট বায়ু দূষণে নগরের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের তথ্য বলছে, ১৯৯৯ সালে রাজধানীতে কংক্রিট আচ্ছাদিত এলাকা ছিল ৬৪ দশমিক ৯৯ ভাগ, ২০০৯ সালে সেটা বেড়ে হয় ৭৭ দশমিক ১৮ ভাগ। আর ২০১৯ সালে সেটা আরও বেড়ে যায় (৮১ দশমিক ৮২ ভাগ)। সংগঠনটির ২০২৩ সালের গবেষণা অনুযায়ী, গত ২৮ বছরে রাজধানী ঢাকার সবুজ এলাকা কমে মাত্র ৯ শতাংশে দাঁড়িয়েছে; জলাভূমি নেমে এসেছে মাত্র ২.৯ ভাগে। যদিও নগর পরিকল্পনার মানদণ্ড অনুযায়ী, একটি আদর্শ শহরে ২৫ শতাংশ সবুজ এলাকা এবং ১০ থেকে ১৫ শতাংশ জলাশয়-জলাধার থাকার কথা।

Manual2 Ad Code

জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থার (এফএও) এর তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে বার্ষিক ২ দশমিক ৬ শতাংশ হারে বন উজাড় হয়েছে, যা বৈশ্বিক গড় হারের প্রায় দ্বিগুণ। অথচ, পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় দেশে মোট ভূ-খণ্ডের মোট আয়তনের ২৫ শতাংশ বনভূমি থাকা আবশ্যক। ইউএসএইড এর ২০২২ সালের জরিপ অনুযায়ী, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে গাছ রয়েছে ১৪ শতাংশ এবং দক্ষিণ সিটি করপোরেশন এলাকায় ১০ শতাংশেরও কম। অথচ, নগরে ৩০ থেকে ৪০ ভাগ সবুজ এলাকা থাকা জরুরি। এ ছাড়া রাজধানীতে অনুমোদনহীন ভবন নির্মাণও তাপমাত্রা বাড়ার পেছনে দায়ী বলে বিশ্লেষকরা মন্তব্য করেছেন।

তাপমাত্রা কমাতে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন পানি ছিটানো ও বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম শুরু করেছিল। সম্ভাব্য ঝুঁকি মোকাবিলায় নতুন কোনো কার্যক্রম নেওয়া হবে কি না জানতে চাইলে সিটি করপোরেশনের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (পরিবেশ, জলবায়ু ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সার্কেল) মোহাম্মদ আবুল কাশেম বলেন, ‘আমাদের নিয়মিত কার্যক্রম চলমান রয়েছে। নতুন পরিকল্পনা নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে এখনো জানা নেই।’ সিটি করপোরেশনের জনসংযোগ কর্মকর্তা মকবুল হোসাইন খবরের কাগজকে বলেন, ‘আমাদের ১০টি স্প্রে মেশিন রয়েছে, যেগুলো দিয়ে দিনে দুইবার রাস্তায় পানি ছিটানো হয়- যা বায়ুদূষণ রোধে একটু ভূমিকা রাখে। আর আমাদের নিয়মিত বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম চলমান। বিশেষ করে দ্রুত ফলাফল পেতে আমরা বড় বড় গাছ রোপণ করছি। আসন্ন বর্ষা মৌসুমে আরও বৃক্ষরোপণ করা হবে। পাশাপাশি আমরা ছাদবাগান করতেও উৎসাহ দিচ্ছি।’

তাপমাত্রা কমাতে করণীয় সম্পর্কে পরিকল্পনাবিদ অধ্যাপক ড. আদিল মুহাম্মদ খান বলেন, জলবায়ু অভিযোজন পরিকল্পনা অনুযায়ী নগরে বৃক্ষরোপণ করতে হবে। জলাশয়গুলো পুনরুদ্ধার, কংক্রিট ও সবুজের ভারসাম্য আনা, সরু রাস্তার পাশে সুউচ্চ ভবন নির্মাণ করার প্রবণতা বন্ধ করতে হবে। একই সঙ্গে বায়ুদূষণ নিয়ন্ত্রণে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

Manual8 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code