প্রজন্ম ডেস্ক:
কবে হবে ভোট, কবে তফসিল? রাজনৈতিক অঙ্গনের এমন বাহাসের মধ্যে আটকে আছে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলো। নির্বাচন নিয়ে কিছুতেই কাটছে না ভোট নিয়ে দিনক্ষণের ধোঁয়াশা। অন্যদিকে নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে ধোঁয়াশায় রয়েছে নির্বাচন আয়োজনকারী সংস্থা খোদ নির্বাচন কমিশনও।
নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে এখনও বলার মতো কিছু নেই বলে জানিয়েছে নির্বাচন কমিশন। তবে ডিসেম্বরকে সামনে রেখে ভোটের প্রস্তুতির কথা বললেও অনেকটা ধীরে চলছে নির্বাচনি ট্রেন।
ইসি কর্মকর্তারা বলছেন, ভোট নিয়ে সরকারের গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষায় আছে ইসি। দিনক্ষণ নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলের মধ্যে ঐকমত্য তৈরি হলেই গতি বাড়বে নির্বাচনি ট্রেনের।
এ প্রসঙ্গে নির্বাচন কমিশনার (ইসি) আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, আমাদের ভোটের প্রস্তুতিগুলোকে অনেকটা রুটিন ওয়ার্ক হিসেবে দেখছি এবং সেভাবেই প্রস্তুতি নিচ্ছি। নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে এখনও বলার মতো কিছু নেই। দিনক্ষণ নিয়ে স্পেসিফিকলি বলার মতো সময় এখনও আসেনি।
ভোট নিয়ে সরকার ও দলগুলোর ভিন্ন মতামত : গত ২৭ এপ্রিল কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের জুনের মধ্যেই অনুষ্ঠিত হবে। সময়সীমা নির্ভর করবে সংস্কারের বিষয়ে কতটা ঐকমত্য তৈরি হয় তার ওপর। সংস্কার প্রক্রিয়ায় যদি বেশি সময় প্রয়োজন হয়, তা হলে হয়তো আমরা জুন পর্যন্ত যাব। কিন্তু জুনের পরে আর যাব না।
এর আগেও ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন আগামী ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। তবে একেবারে নির্দিষ্ট দিনক্ষণ এখনও স্পষ্ট হয়নি।
এমন পরিস্থিতিতে ভোটের সুনির্দিষ্ট দিনক্ষণ নিয়ে ধোঁয়াশা কাটছেই না। দ্রুত নির্বাচন চেয়ে বারবার তাগিদ দিচ্ছে বিএনপি ও সমমনা দলগুলো। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে আন্দোলনে যাওয়ার হুঁশিয়ারিও দিয়েছে তারা। তবে নির্বাচন নিয়ে বিপরীতমুখী অবস্থানে রয়েছে শিক্ষার্থীদের নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) ও জামায়াতে ইসলামী।
এনসিপির মতে, মৌলিক সংস্কার ছাড়া নির্বাচন অর্থহীন। সরকার থেকে কোনো দিকনির্দেশনা আসার আগেই নির্বাচনি রোডম্যাপ নিয়ে কথা বলায় ইসির প্রতি সন্দেহও প্রকাশ করছে এনসিপি। তাই সরকারের পক্ষ থেকে সুস্পষ্ট রোডম্যাপ ঘোষণার আগে নির্বাচন নিয়ে কথা বলতে নির্বাচন কমিশনকে (ইসি) সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে দলটি।
নির্বাচন কমিশন গঠন আইন, রাজনৈতিক দল নিবন্ধনবিধি ও নির্বাচন-সংক্রান্ত বিভিন্ন ইস্যুতে গত ২০ এপ্রিল দুপুরে আগারগাঁওয়ে ইসি কার্যালয়ে সিইসি এ এম এম নাসির উদ্দিনের সঙ্গে বৈঠক করে এনসিপির পাঁচ সদস্যের একটি প্রতিনিধি দল।
বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ে এনসিপির মুখ্য সমন্বয়ক নাসীরউদ্দীন পাটওয়ারী বলেন, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমরা অনেক কথা ইসি থেকে শুনতে পাই। যেগুলো আমাদের প্রধান উপদেষ্টা থেকে শুনিনি। রোডম্যাপের কথা শুনিনি, এগুলো ইসি থেকে এসেছে। এ জন্য আমরা বলব, কোনো জায়গায় কথা বলার জন্য ইসি নিজেদের জায়গায় সতর্ক থাকবেন।
অন্যদিকে নির্বাচন নিয়ে গত শনিবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে জামায়াতের আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি মাস জাতীয় নির্বাচনের জন্য উপযুক্ত সময়। তখন নির্বাচন করা না গেলে এপ্রিলের পর আর যাওয়া ঠিক হবে না।
তিনি বলেন, আমরা দুটি সময়কে উপযুক্ত মনে করি। একটি ফেব্রুয়ারিতে, মানে রোজার আগে। তবে যদি এ সময়ের মধ্যে সংস্কারগুলো এবং বিচারের দৃশ্যমান প্রক্রিয়া জনমনে আস্থা সৃষ্টির পর্যায়ে না আসে, তা হলে সর্বোচ্চ এপ্রিল পার হওয়া উচিত না। কারণ এরপর কুরবানির ঈদ এবং ঝড়বৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।
এর আগে তিনি লন্ডনে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে ফিরে রোজার আগে নির্বাচনের কথা বলেছিলেন। পরে আবার ব্যাখ্যায় বলেন, আগে সংস্কার হতে হবে।
নির্বাচন কমিশনের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, ডিসেম্বরে নির্বাচন ধরেই ভোটের প্রস্তুতি নিচ্ছে কমিশন। কমিশন সেই টার্গেটে সব কাজ এগিয়ে নিচ্ছে। তবে নির্বাচনের তফসিল হবে রাজনৈতিক দল ও সরকারের মতামতের ওপর ভিত্তি করে।
নির্বাচনের দিনক্ষণ নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ করবেন কি না জানতে চাইলে সরাসরি কোনো উত্তর না দিয়ে ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার সময়ের আলোকে বলেন, প্রয়োজন অনুযায়ী বিভিন্ন ইস্যুতে দলগুলোর সঙ্গে সংলাপ হবে।
নির্বাচনের সময় নিয়ে দলগুলোর সঙ্গে আলাদা করে বসবেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, দিনক্ষণ নিয়ে বসব কি না, এটা বলতে আরও সময় লাগবে। এটা কমিশনের সিদ্ধান্ত তো এককভাবে বলার কোনো সুযোগ নেই। সরকারের সিগন্যালের অপেক্ষা করছেন কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ রকম দৃশ্যমান অদৃশ্যমান কিছু নেই। এটা কমিশনের সিদ্ধান্ত। বিভিন্ন ইস্যুতে যখন মনে করবে তখন ইসি রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসবে।
ইসির ভোটের প্রস্তুতি : নির্বাচনকে সামনে রেখে ঢিলেঢালে চলছে ভোটের প্রস্তুতি। নির্বাচনি এলাকার সীমানা পুনর্নির্ধারণ কাজ এখনও শুরু করতে পারেনি ইসি। সীমানা পুনর্নির্ধারণ সংক্রান্ত বিষয়ে অন্তত ৫৫টি আসনে ৩৬০টির মতো আবেদন পেয়েছে কমিশন। এসব আবেদনের বিষয়ে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত চেয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছে। কিন্তু এখনও কোনো সাড়া মেলেনি। এ ছাড়া রাজনৈতিক দলের নিবন্ধনের জন্য গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত সময় বেঁধে দিয়েছিল নির্বাচন কমিশন। এ সময়ের মধ্যে ৬৫টি দল নির্বাচন কমিশনে আবেদন করেছে। তবে এর মধ্যে এনসিপিসহ ৪৬টি দলই আবেদন করেছিল সময় বৃদ্ধির জন্য। ফলে দল নিবন্ধনের জন্য আগামী ২২ জুন পর্যন্ত সময় বাড়িয়েছে ইসি। বিদ্যমান আইনবিধি অনুযায়ী এই সময়ের মধ্যে দলগুলোকে আবেদন করতে হবে। এ ছাড়া নির্বাচনি সামগ্রীর জন্য জাতিসংঘ উন্নয়ন কর্মসূচির (ইউএনডিপি) দিকে তাকিয়ে আছে কমিশন। নির্বাচনি দশটি গুরুত্বপূর্ণ সামগ্রীর মধ্যে বড় দুটি সামগ্রী (অমোচনীয় কালি ও স্ট্যামপ্যাড) দিয়ে সহায়তা করবে ইউএনডিপি। বাকি ৮টি সামগ্রী কেনা হবে দেশীয় বাজার থেকে। এতে ব্যয় হবে আট থেকে নয় কোটি টাকা। ক্রয় প্রক্রিয়া শুরু করতে গত ১০ এপ্রিল দরপত্র আহ্বান করেছে নির্বাচন কমিশন। আগামী ১৩ মে দরপত্র যাচাই-বাছাই শেষে শুরু হবে ক্রয় প্রক্রিয়া। এতে সময় লাগবে প্রায় চার মাস, যা পর্যাপ্ত সময় বলে মনে করছে ইসি।
অন্যদিকে জাতীয় ও স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচন প্রস্তুতি, ভোটকেন্দ্র স্থাপন নীতিমালা, নির্বাচন পর্যবেক্ষণ দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষকদের জন্য নীতিমালা প্রণয়ন, নির্বাচন আচরণবিধি পরিবীক্ষণ কার্যক্রম ও ভোটগ্রহণকারী কর্মকর্তাদের প্যানেল প্রস্তুতসহ অনেক কাজ এখনও বাকি।
ইসি বলছে, জুনের মধ্যে তারা প্রস্তুতিমূলক কাজ শেষ করতে চায়। ভোটের প্রস্তুতি নিয়ে ইসি আনোয়ারুল ইসলাম সরকার বলেন, নির্বাচনি এলাকার সীমানা নির্ধারণ নিয়ে এখনও কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি। তবে আমাদের প্রায়োরিটির প্রথম তালিকায় রয়েছে ভোটার তালিকা। এটাতে আমরা শতভাগ সফল। আমাদের ৬২ লাখ ভোটার নিবন্ধনের টার্গেট ছিল সেখানে ৬৩ লাখ নিবন্ধন করেছে। আগামী জুনের মধ্যে ভোটের প্রস্তুতি শেষ করার চেষ্টা করব।
Sharing is caring!