প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভোট-অনলাইনেও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ

editor
প্রকাশিত মে ১২, ২০২৫, ০৭:৫২ পূর্বাহ্ণ
ভোট-অনলাইনেও নিষিদ্ধ আওয়ামী লীগ

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সব পথ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে আওয়ামী লীগের। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত আওয়ামী লীগের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার সরকারি সিদ্ধান্তের কারণে আসন্ন ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রার্থী দেওয়ার কোনো সুযোগ পাবে না দলটি। এ ছাড়া নির্বাচন কমিশনে (ইসি) দলটির নিবন্ধন বাতিলের ঝুঁকিও রয়েছে। দলীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধের সরকারি প্রজ্ঞাপন হাতে পাওয়ার পর নির্বাচন বিষয়টি সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নিতে ইসি সভা করবে।

 

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সাবেক অতিরিক্ত সচিব ও নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের সদস্য বেগম জেসমিন টুলি বলেন, নির্বাচন কমিশনে নিবন্ধিত একটি রাজনৈতিক দলের যাবতীয় কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়া মানে সেই দল নির্বাচন কমিশন থেকে কোনো সুযোগ-সুবিধা পাবে না। ভোটার তালিকা পাবে না, নির্বাচনে প্রার্থী মনোনয়নও দিতে পারবে না। ব্যালট পেপারেও ওই দলটির জন্য প্রতীক বরাদ্দ হবে না। নিবন্ধন আপাতত বহাল থাকলেও নিবন্ধিত দলের তালিকায় ওই দলটির ক্ষেত্রে ‘যাবতীয় কার্যক্রম স্থগিত’ কথাটি লেখা থাকবে।

 

এদিকে নির্বাচন কমিশনও আওয়ামী লীগের নিবন্ধন বহাল থাকবে কি না, সে বিষয়ে দ্রুত কমিশন সভায় বসতে যাচ্ছে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, ‘আমরা আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের বিষয়ে সরকারি গেজেট প্রকাশের অপেক্ষায় আছি। কাল (সোমবার) গেজেট প্রকাশিত হলে আমরা নির্বাচন কমিশন বিষয়টি নিয়ে আলোচনায় বসব। কমিশনের আলোচনার পরই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। বর্তমান বাংলাদেশের স্পিরিট বুঝেই আমাদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে।’

 

নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের জ্যেষ্ঠ সচিব আখতার আহমেদ বলেন, আওয়ামী লীগ বিষয়ে সরকারি গেজেট পাওয়ার পর কমিশন বৈঠকেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। কার্যক্রম নিষিদ্ধ হলে নিবন্ধন বাতিল হবে কি না, সে বিষয়ে আইনগত দিক খতিয়ে দেখে কমিশন সিদ্ধান্ত নেবে।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রধান ও জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সদস্য ড. বদিউল আলম মজুমদারও মনে করেন, আওয়ামী লীগ পুরোপুরি নিষিদ্ধ হতে যাচ্ছে। দলটি ও দলের শীর্ষ নেতারা এ দেশে নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার আর কোনো সুযোগ পাবে না।

নির্বাচন ব্যবস্থা সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনেও ১৫ বছরের শেখ হাসিনা সরকারের আমলে বাংলাদেশে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের ঘটনাকে ‘নৃশংস ইতিহাস’ আখ্যায়িত করে বলা হয়েছে, ‘ভয়াবহ মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে যাদের বিরুদ্ধে বিশ্বাসযোগ্য প্রমাণের ভিত্তিতে অভিযোগপত্র গৃহীত হয়েছে (বা হবে), একটি দুর্বৃত্তমুক্ত বাংলাদেশ সৃষ্টির স্বার্থে তাদের নির্বাচনী অঙ্গন থেকে দূরে রাখার কোনো বিকল্প নেই। বস্তুত এসব ভয়াবহ অপরাধীকে সংসদ সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হলে পুরো জাতির, বিশেষত যাঁরা জুলাইয়ের গণ-অভ্যুত্থানে চরম আত্মত্যাগ করেছেন, তাঁদের রক্তের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতার সমতুল্য হবে বলে আমরা মনে করি।’

 

Manual3 Ad Code

 

ফেসবুক-ইউটিউবে পক্ষে কথা বললেই গ্রেপ্তার:

 

আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ হওয়ার পর দলটির নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের বৈধতা পেয়েছে পুলিশ। এত দিন প্রশ্নের মুখে পড়ার ভয় থাকলেও এখন আর আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে পুলিশকে বাধার মুখে পড়তে হবে না। ফলে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা গোপনে কোথাও বৈঠক, সমাবেশ কিংবা মিছিল করলে সংশ্লিষ্ট এলাকার থানার পুলিশ তাঁদের গ্রেপ্তার করতে পারবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে এত দিন আওয়ামী লীগ ও এর ভ্রাতৃপ্রতিম সংগঠনের নেতাকর্মীরা মিছিল করলেও গ্রেপ্তার করতে দ্বিধায় পড়তেন পুলিশ কর্মকর্তারা। কিন্তু বর্তমানে শুধু মিছিল-সমাবেশ নয়, ফেসবুক-ইউটিউবে কেউ আওয়ামী লীগের পক্ষে কথা বললে তাকেও গ্রেপ্তার করা যাবে।

Manual7 Ad Code

 

বিদেশে থেকে যাঁরা আওয়ামী লীগের পক্ষে ফেসবুক পোস্ট দেবেন, কমেন্ট করবেন, তাঁদের বিরুদ্ধেও মামলা করা যাবে। এ ছাড়া এখন থেকে পুলিশ পেনাল কোডের ১৮৮ ধারা অনুযায়ী আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতে পারবে। পুলিশ ও আইনজীবীদের সঙ্গে কথা বলে এসব তথ্য জানা গেছে।

 

সংশ্লিষ্ট একজন পুলিশ কর্মকর্তা জানান, আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধ করে সোমবার (আজ) সরকারি আদেশ জারি হওয়ার কথা রয়েছে। সরকারি আদেশ জারি হওয়ার পর পুলিশ সদর দপ্তর থেকে মাঠ পর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের কাছে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশনা পাঠানো হবে। কেউ সরকারের আদেশ অমান্য করলে যাতে গ্রেপ্তার করা হয় সেই নির্দেশনা দেওয়া হবে।

 

Manual6 Ad Code

তিনি আরো জানান, কাগজে-কলমে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধ না হলেও দলটির অবস্থা নিষিদ্ধের মতোই। নিষিদ্ধ হলেও সংগঠনটির নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে পুলিশকে যে ব্যবস্থা নিতে হতো কার্যক্রম নিষিদ্ধের পরও একই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এখন থেকে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের ক্ষেত্রে আর প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে না।

 

Manual2 Ad Code

গতকাল রাতে আইজিপি বাহারুল আলম বলেন, ‘পুলিশ আইনের ভেতর থেকে কাজ করছে। আওয়ামী লীগের বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে যে সিদ্ধান্ত দেওয়া হবে সেভাবেই পুলিশ কাজ করবে।’

 

সূত্র জানায়, এত দিন ফেসবুক, ইউটিউবে আওয়ামী লীগের পক্ষে কনটেন্ট তৈরি, পোস্ট দেওয়া, পোস্টে কমেন্ট করার জন্য কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি। তবে সরকারের পক্ষ থেকে বর্তমানে আওয়ামী লীগের পক্ষে সাইবার স্পেসে কার্যক্রম নিষিদ্ধ করায় তাদের গ্রেপ্তার করা যাবে।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারের এই সিদ্ধান্তের ফলে পুলিশ আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করতে পারবে। পেনাল কোডের ১৮৮ ধারায় বলা হয়েছে, যদি কোনো কাজ করা থেকে বিরত থাকার আদেশ জারি করে সরকার, তাহলে ওই আদেশ অমান্যকারীকে গ্রেপ্তার করা যাবে। এর জন্য ছয় মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডের বিধান রয়েছে।’

 

বন্ধ হচ্ছে আওয়ামী লীগ সংশ্লিষ্ট সব পেজ :

দেশের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের কার্যক্রম নিষিদ্ধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত শনিবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে এক ব্রিফিংয়ে এ তথ্য জানান আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, শুধু অফলাইনে নয়, অনলাইনেও আওয়ামী লীগ কোনো কার্যক্রম পরিচালনা করতে পারবে না। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আওয়ামী লীগের ফেসবুক পেজসহ সাইবার স্পেসে দলটির কার্যক্রম বন্ধে পদক্ষেপ নেবে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code