প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

স্থলপথে ভারতের নিষেধাজ্ঞা: বড় ক্ষতি হবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে

editor
প্রকাশিত মে ১৮, ২০২৫, ১১:৩২ পূর্বাহ্ণ
স্থলপথে ভারতের নিষেধাজ্ঞা: বড় ক্ষতি হবে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানিতে

Manual5 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

বাংলাদেশ থেকে স্থলবন্দর দিয়ে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য, পোশাকসহ প্রায় সাত ধরনের পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে ভারত। এতে মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে ভারতে বাংলাদেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি। গত বছর (২০২৩-২৪ অর্থবছর) বাংলাদেশ থেকে ভারতে প্রায় ১৫৭ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছিল। এর মধ্যে পোশাক ও প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যই বেশি।

বাংলাদেশ থেকে তিন দশকেরও বেশি সময় ধরে প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্য রপ্তানি হচ্ছে দেশটিতে। এ দেশের প্রক্রিয়াজাত খাদ্যপণ্যের একটি অন্যতম বড় বাজার ভারত। ওই দেশের মূল ভূখণ্ডের পাশাপাশি উত্তর-পূর্বাঞ্চলের রাজ্যগুলোতে (সেভেন সিস্টার্স) বাংলাদেশি খাদ্যপণ্যের বড় বাজার রয়েছে।

এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ থেকে ভারতের আসাম, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে ল্যান্ড কাস্টমস স্টেশন (এলসিএস)/ইন্টিগ্রেটেড চেকপোস্ট (আইসিপি) দিয়ে ফল, ফলের স্বাদযুক্ত পানীয়, কোমল পানীয়, প্রক্রিয়াজাত বিভিন্ন খাদ্যসহ প্লাস্টিক পণ্য, সুতা, সুতার উপজাত, আসবাবপত্র রপ্তানি করা যাবে না বলে জানিয়েছে ভারত। পশ্চিমবঙ্গের চ্যাংড়াবান্ধা ও ফুলবাড়ী শুল্ক স্টেশন বা এলসিএসের জন্যও এটি প্রযোজ্য হবে।

 

এ পরিস্থিতিতে ভারতে খাদ্যপণ্য রপ্তানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে জানিয়ে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপের পরিচালক (বিপণন) কামরুজ্জামান কামাল বলেন, স্থলপথে পণ্য আমদানিতে নিষেধাজ্ঞার কারণে কার্যত ভারতের সঙ্গে রপ্তানি বন্ধ হয়ে যাবে। কারণ নৌপথে পণ্য পরিবহন বাংলাদেশের কোম্পানিগুলোর জন্য প্রতিযোগিতামূলক হবে না। খরচের পাশাপাশি সময়ের কারণে আমরা পারবো না। আবার সব জায়গায় নৌপথে পণ্য যাবেও না। বিশেষ করে সবচেয়ে বড় বাজার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে সে সুযোগ নেই।

 

Manual5 Ad Code

কামরুজ্জামান কামাল বলেন, যেসব বন্দর দিয়ে আমরা রপ্তানি করি সেগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। অর্থাৎ স্থলবন্দর ব্যবহার করে এসব সামগ্রী আমদানিতে যে বিধিনিষেধ আরোপ করেছে ভারত, সেটি কার্যকর হলে আমাদের পণ্য রপ্তানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্ত হবে, বন্ধ হয়ে যাবে। এ নিয়ে আমরা সরকারের উদ্যোগ প্রত্যাশা করছি।

 

Manual7 Ad Code

 

ড্যানিশ ফুডের হেড অব বিজনেস দেবাশীষ সিংহ বলেন, মূলত সেভেন সিস্টার্সের বাজারে ভারতের নিজস্ব পণ্যের চেয়ে বাংলাদেশের পণ্যের আধিক্য বেশি ছিল। কারণ ভারতের মূল ভূখণ্ডের কোম্পানিগুলোর চেয়ে আমাদের দেশের কোম্পানিগুলো কম খরচে সেখানে পণ্য পৌঁছাতে পারতো। সে সুযোগ বন্ধ করার জন্য এই পদক্ষেপ বলে মনে হচ্ছে। এ দেশের কোম্পানিগুলোর জন্য বড় দুঃসংবাদ এটি।

দেবাশীষ সিংহ বলেন, ভারতে রপ্তানির জন্য আমরা ছয়টি স্থলবন্দর ব্যবহার করি, এর সবগুলো বন্ধ করা হয়েছে। ভারত এখন কেবল কলকাতা ও মুম্বাই সমুদ্রবন্দর দিয়ে বাংলাদেশের পণ্য আমদানির সুযোগ দিচ্ছে। এ দুটি বন্দর রপ্তানিকারকদের একদম কাজে আসবে না, ওইসব দিয়ে রপ্তানিও হয় না।

Manual8 Ad Code

 

তিনি বলেন, এখন অন্য কোনোভাবে রপ্তানি করার সুযোগ থাকলেও বাংলাদেশি কোম্পানি খরচে পোষাতে পারবে না। কারণ আমরা আগে বর্ডার পার হলেই আসাম, গোহাটি, মেঘালয়, ত্রিপুরা ও মিজোরামে পণ্য পৌঁছাতে পারতাম স্থলপথে। ওই পথে না গেলে নৌপথে অনেক ঘুরে, বারবার ট্রান্সপোর্ট পরিবর্তন করে খরচে টিকতে পারবো না।

 

Manual3 Ad Code

এদিকে, গত এপ্রিলে ট্রান্সশিপমেন্টের মাধ্যমে নিজ দেশের বন্দর ব্যবহার করে তৃতীয় দেশে বাংলাদেশের পণ্য যাওয়ার ব্যবস্থা প্রত্যাহার করে ভারত। এখন স্থলবন্দর ব্যবহার করে বাংলাদেশ থেকে খাদ্যপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানির ক্ষেত্রে ভারতীয় আমদানিকারকদের জন্য বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। দুটি সিদ্ধান্তই বাংলাদেশের রপ্তানির জন্য নেতিবাচক। এ নিয়ে বাংলাদেশ সরকারের আন্তরিক উদ্যোগ প্রত্যাশা করছেন রপ্তানিকারক ও অর্থনীতিবিদরা।

সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান বলেন, এ ধরনের অশুল্ক প্রতিবন্ধকতা বাংলাদেশি রপ্তানিকারকদের জন্য জটিলতা তৈরি করবে। দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক বাণিজ্যের বিকাশেও বাধা সৃষ্টি করবে।

 

নিয়ন্ত্রণমূলক তদারকি একটি দেশের সার্বভৌম অধিকার, তবে এ ধরনের হঠাৎ ও বেছে বেছে কিছু বন্দরে আরোপিত নিষেধাজ্ঞা, বিশেষ করে স্থলপথে বাণিজ্যের খরচ বাড়িয়ে দেয় এবং অনিশ্চয়তা তৈরি করে। আমি আশা করি, দ্বিপক্ষীয় ও আঞ্চলিক সহযোগিতার চেতনায় এসব অশুল্ক বাধা পুনর্বিবেচনা করা হবে। গঠনমূলক সংলাপ ও বাণিজ্য সহজীকরণে আরও ভালো সমন্বয় উভয় দেশের জন্যই মসৃণ, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও টেকসই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি উৎসাহিত করতে সহায়ক হবে।

 

এ বিষয়ে বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, বিষয়টিকে আমরা গভীরভাবে দেখছি। এভাবে নানা বিষয়ে নিষেধাজ্ঞায় দুই দেশের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। শিগগির আমরা ভারতের সঙ্গে এ নিয়ে বৈঠক করবো।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code