প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

যে কারণে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগে আগ্রহ কম

editor
প্রকাশিত জুন ২, ২০২৫, ০১:১৫ অপরাহ্ণ
যে কারণে সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগে আগ্রহ কম

Manual7 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

ইম্পিলিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট (আইএ) না থাকায় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা। চার দফায় ডাকা দরপত্রের এখনও একটিও শেষ করা সম্ভব হয়নি। বিদ্যুৎ বিভাগ এবং বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্র বলছে, জুন পর্যন্ত আরেক দফা সময় বাড়ানো হচ্ছে।

Manual1 Ad Code

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) যে প্রি-বিড বৈঠক করেছে, সেখানে দেশি- বিদেশি বিনিয়োগকারীরা আইএ-এর বিধান যুক্ত করার জন্য অনুরোধ করেছেন। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে বর্তমান দরপত্র পক্রিয়ার মধ্যে আইএ-এর মতো একই ধরেনর বিধান সংযুক্ত করা হয়েছে।

বিদ্যুৎ জ্বালানি খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। টানা চতুর্থবার সময় বাড়ানো হলেও আইএ না থাকায় কোনও বিদেশি, এমনকি দেশীয় বিনিয়োগকারীও বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণে আগ্রহ দেখাচ্ছেন না।

সূত্র বলছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি) এবং বিদ্যুৎ বিভাগকে বিনিয়োগকারীরা আইএ সংযুক্ত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছিল। তবে এত দিন আইএ ছাড়াই বিনিয়োগ সংস্থানের চেষ্টা করছিল সরকার।

Manual8 Ad Code

বিদ্যুৎ বিভাগের একজন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘আগে কেন্দ্র নির্মাণের সময় আইএ করা হতো। এই আইএ (ইম্পিলিমেন্টেশন এগ্রিমেন্ট)-এর মাধ্যমেই উদ্যোক্তাকে তার বিনিয়োগ ফেরত দেওয়ার নিশ্চয়তা দেওয়া হতো। কিন্তু বর্তমান সরকার দায়িত্ব নেওয়ার পর কেন বা কী কারণে আইএ তুলে দেওয়া হলো সেটা ঠিক বোধগম্য নয়।’

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘আইএ না থাকায় বিনিয়োগ আসবে না আমরা শুরু থেকেই বুঝতে পারছিলাম। এখন আইএ যোগ করার বিষয়ে সরকার নীতিগতভাবে একমত হয়েছে।’ তবে এ বিষয়ে তিনি সরাসারি মন্তব্য করার জন্য উযুক্ত ব্যক্তি নন বলে জানান।

সাধারণত বিদ্যুৎ কেনার জন্য বেসরকারি এমনকি সরকারি উদ্যোক্তারা সরকারের জন্য বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তি (পিপিএ) সই করে। তবে বিদ্যুৎকেন্দ্র বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বিদ্যুৎ বিভাগ উদ্যেক্তা প্রতিষ্ঠান এবং পিডিবির সঙ্গে পৃথকভাবে আইএ করে। এই চুক্তিতে বলা থাকে— কেন্দ্রটির বিদ্যুৎ ক্রয়ে কোনও কারণে পিডিবি অপারগ হলে, বা বিদ্যুৎ কেনার পর পিডিবি অর্থ পরিশোধ করতে না পারলে, পিডিবির পক্ষে সরকার এই বিদ্যুৎ বিক্রির অর্থ পরিশোধ করবে।

Manual7 Ad Code

উল্লেখ্য, বাংলাদেশে বিদ্যুৎকে একটি সেবা খাত হিসেবে দেখা হয়। ফলে সরকার এখান থেকে মুনাফার বদলে ভর্তুকি দিয়ে থাকে। পিডিবি বছরে অন্তত ৪০ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিয়ে বিদ্যুৎসেবা সচল রাখে। সঙ্গত কারণে সরকার অর্থ ভর্তুকি না দিলে বিদ্যুৎ খাত সচল রাখা সম্ভব না। উদ্যোক্তারা এ কারণে পিডিবির বিদ্যুৎ ক্রয় চুক্তির পাশাপাশি সরকারের পক্ষ থেকেও নিশ্চয়তা চায়।

আইএ-তে সরকারি নিশ্চয়তার মধ্যে তিনটি বিষয় উল্লেখ থাকে। এগুলো হচ্ছে— সরকার নির্ধারিত মেয়াদে বিদ্যুৎ কিনবে, প্রয়োজনীয় অবকাঠামোগত সহায়তা প্রদান করবে এবং বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময়ের সুবিধা দেবে।

যেহেতু বিদ্যুৎ কেনার জন্য সরকার আন্তর্জাতিক দরপত্র আহ্বান করে, সঙ্গত কারণে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হার একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ডলারের দাম যখন যা থাকবে, সে অনুযায়ী অর্থ পরিশোধ করতে হয়। সরকারের পক্ষ থেকে ডলার দেওয়া না হলে পিডিবির পক্ষ থেকে ডলার সংস্থান করা সম্ভব না। ফলে পিডিবি যতই ক্রয় চুক্তি করুক না কেন, সরকারেরও বাধ্যবাধকতা থাকাটা এক্ষেত্রে জরুরি বিষয় বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এছাড়া এই চক্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের শর্তাবলি বলে একটি বিধান থাকে। অর্থাৎ বিদ্যুৎকেন্দ্র কত দিনে তৈরি হবে, তার সময়সীমা এখানে উল্লেখ থাকে। একইসঙ্গে বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যাতে পরিবেশের ক্ষতি না করে— এজন্য পরিবেশগত ছাড়পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা জুড়ে দেওয়া হয়।

Manual3 Ad Code

আইএ-তে কেবলমাত্র উদ্যোক্তা প্রতিষ্ঠানই নিশ্চয়তা পায় তেমন নয়। বিদ্যুৎকেন্দ্রটি যাতে নির্দিষ্ট সময়ে এবং দেশের আইনের মধ্যে থেকে বাস্তবায়ন হয়, সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

এছাড়া আইএ-তে বিরোধ নিষ্পত্তির বিধান, অর্থাৎ যদি সরকার ও কোম্পানির মধ্যে কোনও বিরোধ হয়, তাহলে সেটি কীভাবে নিষ্পত্তি হবে, তার উল্লেখ থাকে।

প্রসঙ্গত, গত ৫ ডিসেম্বর প্রথম দফায় সৌর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দরপত্র আহ্বান করা হয়। এরপর আরও দুই ধাপে কয়েকটি দরপত্র আহ্বান করা হয়। প্রথম দফায় ডাকা দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়সীমা ছিল চলতি বছরের ৩ ফেব্রুয়ারি। পরে দফায় দফায় সময় বাড়ানো হয়। এখন দরপত্র জমা দেওয়ার সময় বাড়িয়ে ৩০ জুন নির্ধারণ করা হয়েছে।

এ বিষয়ে একর্ন ইনফ্রাস্ট্রাকচার সার্ভিস লিমিটেডের সিইও আব্দুর রাজ্জাক রুহানী বলেন, ‘আইএ না থাকাতে ব্যাংকগুলো আগ্রহী হবে না। যেহেতু পিডিবি কয়েক বছর ধরে বিনিয়োগকারীদের ঠিক মতো টাকা দিতে পারছে না, সে কারণে আমরা আইএ’র কথা বলছি।’ তিনি বলেন, ‘চুক্তি বাতিলের একটি ধারা ছিল, সেটা ৯ বছরের জন্য তুলে দেওয়া হয়েছে।’ এরপরও সরকার যদি আইএ-এর শর্ত জুড়ে দেয়, তাহলে অনেকে বিনিয়োগে আগ্রহী হবেন বলে তিনি আশা করেন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual4 Ad Code