প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ভূ-অর্থনৈতিক জটিলতায় লাভবান হতে পারে বাংলাদেশ

editor
প্রকাশিত জুন ১০, ২০২৫, ০১:১৪ অপরাহ্ণ
ভূ-অর্থনৈতিক জটিলতায় লাভবান হতে পারে বাংলাদেশ

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

জটিল ভূ-অর্থনৈতিক জালে জড়িয়ে পড়ছে বর্তমান বিশ্ব। ডোনাল্ড ট্রাম্প যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রচলিত বৈশ্বিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে। একদিকে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা যেমন সঠিকভাবে কার্যকর ভূমিকা রাখতে পারছে না, অপরদিকে বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী ও ধনী রাষ্ট্র যুক্তরাষ্ট্র একতরফাভাবে বিভিন্ন দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করছে। বিশেষ করে বিশ্বের দ্বিতীয় ধনী দেশ চীনের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের ‘শুল্কযুদ্ধ’কে বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। কারণ এই যুদ্ধে বৈশ্বিক উৎপাদন কেন্দ্রে পরিবর্তন আসতে পারে এবং তাতে লাভবান হতে পারে বাংলাদেশ।

চীনে উৎপাদিত পণ্যের ওপর অধিকহারে মার্কিন শুল্ক আরোপ করা হলে বেইজিং তার উৎপাদন কেন্দ্র বাংলাদেশসহ অন্যান্য দেশে সরিয়ে নিতে পারে। গত মার্চে প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের বেইজিং সফরের সময়ে এ বিষয়ে আলোচনা হয়েছে। বাংলাদেশে চীনা বিনিয়োগ বাড়ানোর এই সুযোগ নেওয়ার চেষ্টা করা দরকার বলে মনে করেন সাবেক কূটনীতিকরা।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টার সফরের সময় বাংরাদেশে চীনা বিনিয়োগের বিষয়টিকে অধিক গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। এর ফলশ্রুতিতে বাংলাদেশে চীনা বাণিজ্যমন্ত্রীর নেতৃত্বে প্রায় ১৫০ জনের একটি বিনিয়োগকারী দল সম্প্রতি ঢাকা সফর করেছে।’

চট্টগ্রামের আনোয়ারায় চীন অর্থনৈতিক ও শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার বিষয়টিকে চীনের কর্তৃপক্ষ অগ্রাধিকার দিচ্ছে জানিয়ে সরকারের দায়িত্বশীল এই কর্মকর্তা বলেন, ‘ভালো বিনিয়োগ পরিবেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে নিষ্কণ্টক জমি, যেখানে উৎপাদনের জন্য প্রয়োজনীয় সব ব্যবস্থা থাকবে। আনোয়ারায় চীনের জন্য বরাদ্দ শিল্পাঞ্চলটিকে সেভাবেই গড়ে তুলতে চায় বেইজিং।’

উল্লেখ্য, গত কয়েক বছর ধরে আনোয়ারায় চীনের শিল্পাঞ্চলটি গড়ে তোলার জন্য আলোচনা করে আসছিল বেইজিং। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ভূ-রাজনৈতিক কারণে বিষয়টিকে তৎকালীন সরকার সেভাবে গুরুত্ব না দেওয়ায় শিল্পাঞ্চলটি গড়ে ওঠেনি।

Manual4 Ad Code

 

জটিল ভূ-অর্থনীতি

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর গড়ে ওঠা বৈশ্বিক অর্থনৈতিক কাঠামো ভেঙে পড়ছে। বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সব ধরনের শুল্ক ও অশুল্ক বাধা দূর করার বিষয়ে সবদেশের মধ্যে যে ঐকমত্য, সেটি এখন আর কাজ করছে না। বরং যুক্তরাষ্ট্রসহ পৃথিবীর অনেক দেশ চরম জাতীয়বাদী আবেগকে (আল্ট্রা ন্যাশনালিস্ট সেন্টিমেন্ট) গুরুত্ব দেওয়ার কারণে শুল্ক-অশুল্ক বাধা ব্যবহার করা হচ্ছে। এর ফলে বাংলাদেশের মতো ছোট অর্থনীতিগুলো সমস্যার মুখোমুখি হচ্ছে।

সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘‘যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, জাপান বা অন্য বড় অর্থনীতির মধ্যে ‘বাণিজ্যযুদ্ধের’ প্রভাবে অনিশ্চিত একটি পরিস্থিতি তৈরি হবে, এটাই স্বাভাবিক।’’

‘এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশের মতো দেশগুলোকে সঠিকভাবে অবস্থান নিতে হবে। বড় অর্থনীতির সঙ্গে দর কষাকষি করে জাতীয় স্বার্থ বজায় রাখতে হবে’, বলে তিনি জানান।

Manual8 Ad Code

আরেকজন সাবেক কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশিদের জন্য কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে প্রয়োজনীয় উৎপাদন কেন্দ্র এবং দেশীয় বিনিয়োগের পাশাপাশি বিদেশি বিনিয়োগ না হলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জিত হবে না।’

কোন খাতে বিনিয়োগ প্রয়োজন এবং ওই খাতগুলোতে কোন দেশ বিনিয়োগে আগ্রহী, তাদের সঙ্গেই আলোচনা করা দরকার জানিয়ে তিনি বলেন, ‘চীনকে আমরা বিনিয়োগ করার জন্য বলতে পারি। কিন্তু আমাদের যে খাতে বিনিয়োগ দরকার, সেটিতে তারা আগ্রহী নাও হতে পারে। এ বিষয়গুলোতে বাংলাদেশি কর্তৃপক্ষের পরিষ্কার ধারণা থাকা প্রয়োজন।’

 

চীন কোথায় বিনিয়োগ করতে চায়

Manual7 Ad Code

প্রধান উপদেষ্টা মুহাম্মদ ইউনূসের চীন সফরকালে প্রকাশিত যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়— ‘চীন অবকাঠামোগত উন্নয়ন এবং শিল্পায়নের অগ্রগতিতে বাংলাদেশকে সমর্থন অব্যাহত রাখবে। বাণিজ্যিকনীতি এবং বাজারভিত্তিক পদ্ধতি অনুসারে টেক্সটাইল ও পোশাক, ক্লিন এনার্জি, ডিজিটাল অর্থনীতি, কৃষি এবং উৎপাদনের মতো ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সঙ্গে বিনিয়োগ সহযোগিতা পরিচালনা করতে চীনা কোম্পানিগুলোকে উৎসাহিত করবে।’

এ বিষয়ে সাবেক একজন কূটনীতিক বলেন, ‘বাংলাদেশের জন্য কৃষি খাত অত্যন্ত প্রয়োজনীয় এবং এই বিষয়ে চীনের কাছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি রয়েছে।’

চীন বড় বড় প্রকল্পে বাংলাদেশকে সহায়তা করছে। কিন্তু বেইজিংয়ের কাছ থেকে কৃষি খাতে বড় আকারে সহায়তা আমাদের খাদ্য নিরাপত্তায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে তিনি জানান।

Manual6 Ad Code

এই কর্মকর্তা আরও বলেন, ‘এগুলো ছোট বিনিয়োগ। কিন্তু এর প্রভাব অনেক বেশি। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, উন্নতজাতের বীজ, কৃষিতে যন্ত্রের সঠিক ব্যবহার, সঠিকভাবে সার প্রয়োগের মাত্রা ইত্যাদি বিষয়গুলোতে বেশি অর্থের প্রয়োজন নেই। কিন্তু এটি কর্মসংস্থান থেকে শুরু করে খাদ্য নিরাপত্তায় বড় ভূমিকা রাখতে পারে।’

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code