প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

২৫ বছরে সর্বোচ্চ সংঘাতে বিশ্ব, ৩৯ দেশে বাড়ছে চরম দারিদ্র্য: বিশ্বব্যাংক

editor
প্রকাশিত জুন ২৭, ২০২৫, ০৭:১৮ অপরাহ্ণ
২৫ বছরে সর্বোচ্চ সংঘাতে বিশ্ব, ৩৯ দেশে বাড়ছে চরম দারিদ্র্য: বিশ্বব্যাংক

Manual5 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual4 Ad Code

বিশ্বব্যাপী অর্থনীতি যখন মহামারি পরবর্তী পুনরুদ্ধারে ব্যস্ত, তখন এক শ্রেণির দেশ আরও গভীর সংকটে নিমজ্জিত হচ্ছে। সংঘাত ও অস্থিতিশীলতায় আক্রান্ত ৩৯টি দেশের ওপর একটি বিস্তৃত মূল্যায়নে বিশ্বব্যাংক জানিয়েছে, এসব দেশের অর্থনীতিতে চরম দারিদ্র্য দ্রুত বাড়ছে, তীব্র খাদ্য সংকট দেখা দিচ্ছে, এবং বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা বাস্তবায়ন থেকে আরও দূরে সরে যাচ্ছে।

Manual1 Ad Code

বিশ্বব্যাংকের মূল্যায়ন প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০২০ সালের পর বিশ্বব্যাপী সংঘাতের হার বৃদ্ধি ও প্রাণঘাতী হয়ে ওঠায় এসব দেশ অর্থনৈতিকভাবে পিছিয়ে পড়ছে। ২০২০ সাল থেকে প্রতি বছর এসব দেশের মাথাপিছু জিডিপি গড়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ হারে হ্রাস পেয়েছে, যেখানে অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে বেড়েছে গড়ে ২ দশমিক ৯ শতাংশ হারে।

চলতি বছর সংঘাতপীড়িত দেশগুলোতে ৪২১ মিলিয়ন মানুষ প্রতিদিন ৩ ডলারের কম আয় নিয়ে জীবনযাপন করছে, যা বিশ্বের অন্যান্য অংশের তুলনায় বেশি। ২০৩০ সালের মধ্যে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৩৫ মিলিয়নে পৌঁছাতে পারে, যা বিশ্বের ৬০ শতাংশ মানুষ।

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের প্রধান অর্থনীতিবিদ ইন্দরমিত গিল বলেন, গত তিন বছরে বিশ্ব মূলত ইউক্রেন ও মধ্যপ্রাচ্যের সংঘাতের দিকেই নজর দিয়েছে, যা এখন আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। অথচ সংঘাত ও অস্থিতিশীলতায় ভোগা ৭০ শতাংশেরও বেশি মানুষ আফ্রিকার। এই অবস্থার কোনো পরিবর্তন না হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয়ে পড়ে। আজ যে দেশগুলো সংঘাতে আক্রান্ত, তাদের অর্ধেকই ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এমন পরিস্থিতির ভেতর রয়েছে। এই মাত্রার দুর্দশা অবশ্যম্ভাবীভাবে সংক্রামক হয়ে উঠছে।

বিশ্বব্যাংকের বিশ্লেষণটি ব্যাখ্যা করে, বিশ্বের চরম দারিদ্র্য দূর করার লক্ষ্য কেন এখনো অধরা রয়ে গেছে। বর্তমানে এমন অঞ্চলগুলোতে চরম দারিদ্র্য রয়েছে, যেখানে উন্নয়ন করা সবচেয়ে কঠিন। প্রতিবেদনে ৩৯টি দেশকে সংঘাত বা অস্থিতিশীলতায় আক্রান্ত হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, যার মধ্যে ২১টি সক্রিয় সংঘাতে রয়েছে।

অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশে চরম দারিদ্র্যের হার যেখানে এক অঙ্কে নেমে এসেছে মাত্র ৬ শতাংশ। সেখানে সংঘাতপীড়িত দেশগুলোতে এই হার প্রায় ৪০ শতাংশ। এসব দেশের মাথাপিছু জিডিপি বর্তমানে বছরে গড়ে মাত্র দেড় হাজার ডলার, যেখানে অন্য উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বেড়ে ৬ হাজার ৯০০ ডলার হয়েছে।

এছাড়া, এসব দেশে জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে তাল মিলিয়ে কর্মসংস্থান বাড়ছে না। ২০২২ সালে এসব দেশে ২৭০ মিলিয়নেরও বেশি মানুষ কর্মক্ষম বয়সী ছিল, কিন্তু তাদের অর্ধেকেরও কম কর্মসংস্থানে যুক্ত ছিলেন।

Manual5 Ad Code

বিশ্বব্যাংক গ্রুপের উপপ্রধান অর্থনীতিবিদ এম. আয়হান কোস বলেন, গত দেড় দশকে প্রবৃদ্ধির বদলে অর্থনৈতিক অচলাবস্থা এসব সংঘাতপ্রবণ দেশের সাধারণ বাস্তবতা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্ব সম্প্রদায়ের এসব দেশের দুরবস্থার দিকে আরও মনোযোগ দেওয়া জরুরি। যদিও এটি সহজ কাজ নয়, কিন্তু আগে এমন জায়গায় উন্নয়নের নজির রয়েছে। সুনির্দিষ্ট নীতিমালা ও শক্তিশালী আন্তর্জাতিক সহায়তার মাধ্যমে সংঘাত প্রতিরোধ, শাসনব্যবস্থা মজবুতকরণ, প্রবৃদ্ধি তরান্বিত করা ও কর্মসংস্থান সৃষ্টি সম্ভব।

২০০০-এর দশকের শুরু থেকে এখন পর্যন্ত পাঁচ বছর মেয়াদে সংঘাতের হার ও প্রাণহানির মাত্রা তিনগুণের বেশি বেড়েছে। এই প্রভাব বিভিন্ন উন্নয়ন সূচকে স্পষ্ট। সংঘাত-আক্রান্ত দেশগুলোতে গড় আয়ু বর্তমানে ৬৪ বছর, যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় সাত বছর কম। শিশু মৃত্যুর হার সেখানে দ্বিগুণের বেশি। তীব্র খাদ্য অনিরাপত্তা রয়েছে ১৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর মধ্যে, যা অন্য উন্নয়নশীল দেশের গড়ের চেয়ে ১৮ গুণ বেশি। স্কুলপড়ুয়া শিশুদের ৯০ শতাংশই ন্যূনতম পঠনদক্ষতা অর্জন করতে পারছে না।

একবার সংঘাত শুরু হলে তা দীর্ঘস্থায়ী হয় এবং এর অর্থনৈতিক প্রভাব গভীর ও দীর্ঘমেয়াদি হয়ে পড়ে। আজ যেসব দেশ সংঘাতে রয়েছে, তাদের অর্ধেক ১৫ বছর বা তারও বেশি সময় ধরে এই পরিস্থিতির মধ্যে আছে। এসব সংঘাতে ১০ লাখের মধ্যে ১৫০ জনের বেশি নিহত হয়েছেন, পাঁচ বছরে মাথাপিছু জিডিপিতে গড়ে ২০ শতাংশ পতন হয়েছে।

প্রতিবেদন বলছে, এই বাস্তবতায় সংঘাত প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ ফলপ্রসূ হতে পারে। ‘আগাম সতর্কীকরণ ব্যবস্থা’ থাকলে সময়োচিত হস্তক্ষেপে সংঘাত ঠেকানো সম্ভব হয়, যা সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ার পর পদক্ষেপ নিলে তেমন কার্যকর হয় না।

সংঘাত প্রতিরোধে ‘ভঙ্গুর বা দুর্বল শাসন কাঠামো’ দূর করাও জরুরি। কেননা দুর্বল শাসন কাঠামোর কারণে টেকসই উন্নয়ন, শান্তি বজায় রাখা ও বিচার নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। তবে বাস্তবতা কঠিন হলেও এই দেশগুলোর সামনে কিছু সুবিধা ও সম্ভাবনা রয়েছে। সুবিধাগুলো যথাযথ নীতিমালার মাধ্যমে কাজে লাগাতে পারলে অর্থনৈতিক পুনর্গঠন সম্ভব।

এসব দেশে প্রাকৃতিক সম্পদ (খনিজ, বন, তেল, গ্যাস, কয়লা) থেকে আয়ের হার গড় জিডিপির ১৩ শতাংশ, যা অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের তুলনায় তিনগুণ বেশি। খনিজ সম্পদের প্রাচুর্যতায় ভরা কঙ্গো প্রজাতন্ত্র, মোজাম্বিক ও জিম্বাবুয়ের মতো দেশগুলো বৈদ্যুতিক যান, বায়ু টারবাইন ও সৌর প্যানেলের মতো নবায়নযোগ্য প্রযুক্তিও কাজে লাগাতে পারে।

আরও একটি দীর্ঘমেয়াদি সুবিধা হলো তরুণ ও বর্ধনশীল জনগোষ্ঠী। উন্নত ও বেশিরভাগ উন্নয়নশীল দেশেই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী এরই মধ্যে স্থিতিশীল বা হ্রাস পাচ্ছে। কিন্তু সংঘাতপীড়িত দেশগুলোতে আগামী কয়েক দশক পর্যন্ত এই অংশটি বৃদ্ধি পাবে। ২০৫৫ সালের মধ্যে এসব দেশে প্রতি তিনজনের মধ্যে দুজন কর্মক্ষম বয়সে থাকবে, যা বিশ্বের মধ্যে সর্বোচ্চ অনুপাতে পৌঁছাবে।

Manual6 Ad Code

প্রতিবেদনটিতে আরও বলা হয়, এই ‘জনসংখ্যাগত সুযোগ’ কাজে লাগাতে হলে স্বাস্থ্য, শিক্ষা, অবকাঠামো ও একটি প্রাণবন্ত বেসরকারি খাত গড়ে তুলতে হবে, যা আরও বেশি ও উন্নত কর্মসংস্থান তৈরি করতে পারে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code