প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জুলাই সনদ ঘোষণায় দোলাচল

editor
প্রকাশিত জুন ২৯, ২০২৫, ১১:৩৪ পূর্বাহ্ণ
জুলাই সনদ ঘোষণায় দোলাচল

Manual7 Ad Code

 

Manual1 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

রাজনীতিতে জুলাই সনদ এখন গুরুত্বপূর্ণ দাবি হয়ে উঠেছে। জামায়াতসহ ৫ আগস্ট পরবর্তী প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক সংগঠনগুলো জুলাই সনদ ঘোষণার জোরালো দাবি তুলেছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিসহ (এনসিপি) তাদের সমমনা সংগঠনগুলো এ দাবিতে বেশ সরব। জুলাই সনদের দাবিতে কর্মসূচি অব্যাহত রেখেছে তারা।

এদিকে অন্তর্বর্তী সরকার জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণা করার কথা জানিয়েছে। জুলাই স্পিরিটকে ধারণ করে ৩৬ দিনের কর্মসূচিও দিয়েছে জুলাই আন্দোলনের মধ্য দিয়ে প্রতিষ্ঠিত সরকার। তবুও জুলাই সনদ ঘোষণা সম্ভব না অসম্ভবের আলোচনা শুরু হয়েছে। জুলাই মাসে ঘোষণা না করার সম্ভাবনার আলোচনাও রয়েছে।

জুলাই সনদ নিয়ে সরকারি একাধিক সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, জুলাই মাসের মধ্যে জুলাই সনদ ঘোষণার কথা থাকলেও প্রস্তুতিতে কিছুটা ঘাটতি রয়েছে। আগামী মাসে ঘোষণা করার মতো চূড়ান্ত হয়নি জুলাই সনদ। তাই জুলাই সনদ ঘোষণার জন্য আরও কিছু সময় নিতে পারে অন্তর্বর্তী সরকার। এই নিয়ে সরকার পতনের আন্দোলনের সঙ্গে সম্পৃক্ত সবার সঙ্গে কথা বলে জুলাই সনদ ঘোষণার সময় আরেকটু বাড়িয়ে নিতে পারে সরকার এ ইঙ্গিত পাওয়া গেছে।

জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদ এবং জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে জেলা ও উপজেলায় কর্মসূচি ঘোষণা ও তা পালন করেছে এনসিপি। জুলাই ঘোষণাপত্র, জুলাই সনদ এবং জুলাই গণহত্যার বিচারের দাবিতে সংশ্লিষ্ট জেলা ও উপজেলা সমন্বয় কমিটিগুলোকে কর্মসূচি পালন করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

জানা গেছে, জুলাই সনদ এখনই ঘোষণা করতে হবে এমন অনড় অবস্থানে না থাকলেও মৌলিক বিষয়গুলো ঠিকঠাক রেখে যেকোনো সময় ঘোষণা হলেও দ্বিমত করবে না বিএনপি। তবে মৌলিক জায়গাগুলো ঠিক না থাকলে জুলাই সনদ নিয়ে আপত্তি তুলবে তারা।

Manual1 Ad Code

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ^র চন্দ্র রায় বলেন, জুলাই সনদ নিয়ে আমাদের দ্বিমত নেই। তবে বেসিক ঠিক রেখে অর্থাৎ মুক্তিযুদ্ধ, একাত্তর, সংবিধান ও মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনাকারী সরকার এসব ঠিক রেখে জুলাই সনদ হতে হবে। ৫ আগস্টের সুফল সবাইকে দিতে চাইলে জুলাই সনদ জুলাইতে ঘোষণা করা সম্ভব তা না হলে অসম্ভব। বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের এ নেতা আরও বলেন, ৫২-ভাষা আন্দোলনের পর থেকে এদেশে অনেক বিপ্লব হয়েছে, কই সনদের দাবি তো কেউ তোলেনি।

জামায়াতের নায়েবে আমির আবদুল্লাহ মোহাম্মদ তাহের বলেন, জুলাই সনদ হলো একটি স্পিরিট। যা স্বৈরাচার ও ফ্যাসিস্টমুক্ত বাংলাদেশ গড়ে তোলার একটি দলিল। সে সঙ্গে স্মার্ট ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়। মৌলিক কিছু সংস্কারকে ভিত্তি ধরেই এ সনদ দাবি করে তিনি বলেন, এখানে কিছু কিছু বিষয়ে বিএনপিসহ দুয়েকটি দলের দ্বিমত আছে। আশা করছি তারাও ঐকমত্যে আসবেন। তা না হলে সংকট থেকেই যাবে। জুলাইতে জুলাই সনদ ঘোষণা করা সম্ভব হবে কী না জানতে চাইলে তিনি বলেন, জুলাইতেই সম্ভব হতে পারে। ঐকমত্যের খাতিরে কিছুটা পেছালেও ক্ষতি তো নেই।

জুলাই সনদে সব রাজনৈতিক সংগঠন একমত পোষণ ও স্বাক্ষর করা নিয়ে সরকারের মধ্যে কিছুটা সন্দেহের সৃষ্টি হয়েছে বলে রাজনীতি সংশ্লিষ্ট মহলের ধারণা। ঘোষিত সনদে অনৈক্য সৃষ্টি হতে পারে এমন আশঙ্কাও পোষণ করছে সরকারের একটি অংশ। সেটি নিয়ে নতুন কোনো সমালোচনার সৃষ্টি হলে তা মোকাবিলা করার শক্তি সরকার সমর্থিত মহলের আছে কি না তাও গভীরভাবে ভাবছে অন্তর্বর্তী সরকার। সরকার ঘনিষ্ঠ অপর একটি সূত্র দেশ রূপান্তরকে বলেন, জুলাই সনদ ঘোষণা করার পক্ষের শক্তি আগের মতো শক্তিশালী অবস্থানে নেই বলে মনে করছে সরকার। নানা সমালোচনায় জড়িয়ে জনপ্রিয়তায় ধস নেমেছে এনসিপিসহ নতুন করে প্রতিষ্ঠিত ছাত্র সংগঠনগুলোর।

তাছাড়া, রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ একটি মহলের ভেতরেও জুলাই সনদ নিয়ে বিভক্তি ও ভুল বোঝাবুঝি তৈরি হয়েছে। তারা জুলাই সনদের চেয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন নির্বাচনকে। এ অবস্থায় সেটি ঘোষণা করা হলে সরকার উদ্ভূত পরিস্থিতি কতটা নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে তা নিয়ে নানা মতভেদ সৃষ্টি হয়েছে।

জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম ছাত্রনেতা মুসাদ্দেক আলী ইবনে মোহাম্মদ নিজ বয়ানে বলেন, ‘৭২ সালে একটি দেশের লেখা গল্পকে বাংলাদেশের মানুষের সামনে হাজির করা হয়েছিল। যার নাম দেওয়া হয়েছিল সংবিধান। এই সংবিধান হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বানিয়েছিল। চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে ১০ মাস পরেও জুলাই সনদ হয়নি। সরকার বারবার ওয়াদা করে ওয়াদার বরখেলাপ করছে। দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারের অবস্থান স্পষ্ট করে অবিলম্বে জুলাই মাসের মধ্যে সনদ ঘোষণা করতে হবে। অনথ্যায় কঠোর কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে।’

জুলাই ঐক্যের অন্যতম সংগঠক ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এবি জুবায়ের বলেন, ইন্টেরিমের কাছে মোটা দাগে আমাদের চাওয়া-পাওয়া ছিল গণহত্যার বিচার, জুলাইয়ের সাংবিধানিক স্বীকৃতি, শহীদ পরিবার ও আহতদের পুনর্বাসন এবং একটা গ্রহণযোগ্য নির্বাচন। কিন্তু সুশীলতার পাল্লায় পড়ে এই প্রত্যেকটা সেক্টরেই ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে ইন্টেরিম। যে কারণে ভারতীয় আধিপত্যবাদবিরোধী অভ্যুত্থান-পরবর্তী সরকারকেও আমরা ভারতের অবৈধ পুশইনের বিরুদ্ধে নীরব দেখি। তিনি বলেন, ‘দ্রুত ঘোষণাপত্র দিন এবং গণহত্যার বিচার কার্যক্রম দৃশ্যমান করুন। এই দাবি নিয়ে আমরা জুলাই ঐক্য আগামী চারদিন সারা দেশে গণসংযোগ করব এবং জুলাই সনদের দাবিতে আগামী পহেলা জুলাই অনুষ্ঠিত হবে ছাত্র-জনতার গণমিছিল।’

ইউনাইটেড পিপলস বাংলাদেশের (আপ বাংলাদেশ) আহ্বায়ক ও জুলাই গণঅভ্যুত্থানের অন্যতম সংগঠক আলী আহসান জুনায়েদ বলেছেন, ‘জুলাই ঘোষণাপত্র ছাড়া এ রাষ্ট্রে জনগণের অধিকার আদায় সম্ভব না। এ জাতির প্রত্যাশা পূরণে জুলাই ঘোষণাপত্রের বিকল্প নেই। শহীদ পরিবার ও আহত যোদ্ধাদের নিরাপত্তার গ্যারান্টি এই সরকারকে দিতে হবে।’

Manual5 Ad Code

ত্রয়োদশ জাতীয় নির্বাচনের আগে জুলাই সনদ কার্যকর ও ঘোষণাপত্র অবশ্যই দিতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ।

Manual6 Ad Code

জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ঘোষণাপত্র দ্রুত দিয়ে দেওয়ার দাবি জানিয়েছে ইনকিলাব মঞ্চ। আগামী ৫ আগস্টের (৩৬ জুলাই) মধ্যে দাবি বাস্তবায়ন চায় তারা। দাবি না মানা হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেন তারা।

এদিকে গত শুক্রবার রাতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সক্রিয় নেতা উমামা ফাতেমা নিজের ভেরিফায়েড ফেসবুক অ্যাকাউন্টে দেওয়া পোস্টে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন। এটি সারা দেশে আলোচনায় এসেছে। এ ধরনের ঘটনায় ছাত্র নেতৃত্বকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়েছে। এ ঘটনা ছাত্র সংগঠনগুলোকে দুর্বল করে তুলছে বলে মনে করেন অন্তর্বর্তী সরকারের একাধিক কর্তাব্যক্তি। ওই পোস্টে উমামা আরও অভিযোগ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন প্ল্যাটফর্মটিকে সুবিধাবাদীরা ভেতর থেকে খেয়ে ফেলেছে। দলীয় লেজুড় ও প্রেসক্রিপশনের বাইরে এই ব্যানার স্বাধীনভাবে কাজ করলে অনেকের রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ হুমকির মুখে পড়ত। দিনের পর দিন এমন কোনো নোংরামি নেই, যা তার সঙ্গে করা হয়নি। মুখপাত্র হয়েও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ফেসবুক পেজের অ্যাকসেস পাননি বলেও উল্লেখ করেন উমামা। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কবি সুফিয়া কামাল হলের ছাত্রী উমামা জুলাই গণঅভ্যুত্থানের সময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ছিলেন। অভ্যুত্থানের পর গত বছরের ২২ অক্টোবর প্ল্যাটফর্মটির সাংগঠনিক কাঠামো পুনর্গঠন করা হলে উমামাকে মুখপাত্রের দায়িত্ব দেওয়া হয়। ২৫ জুন প্রথম কেন্দ্রীয় সম্মেলনের মাধ্যমে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নতুন কমিটি হয়েছে। কমিটিতে রিফাত রশীদ সভাপতি ও মো. ইনামুল হাসান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হয়েছেন। কিন্তু এই কমিটিতে উমামা নেই। কেন্দ্রীয় সম্মেলনে ভোটের প্রক্রিয়া নিয়েও উমামা তার পোস্টে প্রশ্ন তুলেছেন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code