প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৯শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৪ঠা পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৮শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

পরমাণুকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু ইরানের!

editor
প্রকাশিত জুলাই ১, ২০২৫, ০৮:২১ পূর্বাহ্ণ
পরমাণুকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু ইরানের!

Manual5 Ad Code

 

Manual6 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প আবারও বলেছেন, তিনি ইরানকে পারমাণবিক অস্ত্র তৈরি করতে দেবেন না। ইসরায়েল ও ইরানের সাম্প্রতিক ১২ দিনের সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি সামরিকভাবে হস্তক্ষেপ করে দেশটিতে। কিন্তু এ হামলা ইরানের পারমাণবিক স্থাপনাগুলোকে আদৌ কতটা ক্ষতি করেছে, তা নিয়ে এখনো নানা প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে।

Manual3 Ad Code

এরই মধ্যে ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে জোর তৎপরতার নতুন ছবি প্রকাশ্যে এলো।

Manual7 Ad Code

আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন খোদ জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থার (আইএইএ) প্রধান। বলেছিলেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের হামলায় মোটেও ইরানের পারমাণবিক কেন্দ্রগুলো সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে যায়নি। বড়জোর মাসখানেক! তারপরই ইরান ফের তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ শুরু করে দিতে পারে। আইএইএ প্রধান রাফাল গ্রোসির সেই শঙ্কাই সত্যি হলো। নতুন স্যাটেলাইট ইমেজে দেখা যাচ্ছে, ইরানের পরমাণুকেন্দ্রে ফের ভারী মেশিন, গাড়ি ঢুকছে-বেরোচ্ছে।

ম্যাক্সারের নতুন স্যাটেলাইট ছবিটি ইরানের ‘দুর্ভেদ্য’ ফোর্দো পরমাণু ঘাঁটির। এ কেন্দ্রে ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণের কাজ জোরেশোরে চালাত। নতুন ছবিটি ২৯ জুনের। মানে, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার পর। দেখা যাচ্ছে, এ কেন্দ্রে জোর তৎপরতায় নির্মাণকাজ চলছে। ভারী ভারী মাটি কাটার মেশিন, ক্রেন, বুলডোজার এমনকি লরিও চলাচল করছে। নতুন রাস্তা তৈরি হচ্ছে।

ইরানের যে তিনটি পরমাণু ঘাঁটিতে যুক্তরাষ্ট্রের বিমানসেনা বাংকার ব্লাস্টার বোমা ফেলেছিল, তার মধ্যে একটি ফোর্দো। এ ঘাঁটিতে বোমা ফেলে ইরানের পারমাণবিক গবেষণাকে পুরোপুরি স্তব্ধ করে দেওয়ার দাবি করেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। যদিও তার এ দাবি নস্যাৎ করে দেয় তেহরান। জানায়, কিছু ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে বটে, কিন্তু পাহাড়ের কোলে মাটির নিচের এ ঘাঁটিটি মোটেই মার্কিন হামলায় মাটিতে মিশে যায়নি। তেহরান যে স্রেফ ফাঁকা বুলি ছাড়েনি, সেটা ম্যাক্সারের নতুন স্যাটেলাইট ইমেজেই স্পষ্ট হয়ে গেল। গত রবিবার ফক্স নিউজের সানডে মর্নিং ফিচারস অনুষ্ঠানে ট্রাম্প দাবি করেন, ১৩ জুনের আগমুহূর্তে ইরান ছিল পারমাণবিক অস্ত্র তৈরির খুব কাছাকাছি। এ সময়েই যুক্তরাষ্ট্র ইরানের শীর্ষ তিনটি পারমাণবিক স্থাপনা ফোর্দো, নাতাঞ্জ ও ইসফাহানে হামলা চালায়। তবে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা ও জাতিসংঘের পারমাণবিক পর্যবেক্ষক সংস্থা (আইএইএ) জানায়, ইরান পারমাণবিক বোমা বানানোর কাজ করছিল এমন প্রমাণ নেই। ইরানও বহুদিন ধরে বলে আসছে, তাদের পারমাণবিক কর্মসূচি পুরোপুরি শান্তিপূর্ণ এবং বেসামরিক উদ্দেশ্যে। ট্রাম্প বলেন, আমরা পুরোপুরি ধ্বংস করে দিয়েছি ওইসব স্থাপনা, কিন্তু বেশ কিছু আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যম জানায়, এ হামলা কাক্সিক্ষত ক্ষতি করতে পারেনি। আইএইএ সোমবার জানায়, র্ফোদো প্ল্যান্টে ঠিক কতটা ক্ষতি হয়েছে, তা এখনো স্পষ্ট নয়। এ প্ল্যান্টেই রয়েছে ইরানের সবচেয়ে বেশি উচ্চমাত্রায় সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম, যা পারমাণবিক অস্ত্র তৈরিতে লাগে। আইএইএ’র প্রধান রাফায়েল গ্রসি বলেন, ইরান চাইলে কয়েক মাসের মধ্যেই আবার ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করতে পারে। কিন্তু ট্রাম্পের দাবি, এ হামলা ইরানের পারমাণবিক স্বপ্নকে দশকের পর দশক পিছিয়ে দিয়েছে।

একটি সাম্প্রতিক আইএইএ রিপোর্টে বলা হয়, ইরানের কাছে ৪০০ কেজিরও বেশি ৬০ শতাংশ মাত্রার ইউরেনিয়াম রয়েছে। এটি আরও সমৃদ্ধ করলে, ৯টি পারমাণবিক বোমা তৈরির মতো পর্যাপ্ত উপাদান হয়ে যেতে পারে। ট্রাম্প অবশ্য এ তথ্য এবং হামলার কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ করা সংবাদমাধ্যমগুলোকে ভুয়া খবর ছড়াচ্ছে বলে অভিযুক্ত করেন। তিনি বলেন, ওরা চেষ্টা করেছিল ভিন্ন একটা গল্প বানাতে, কিন্তু শেষে দেখা গেল, ওইসব স্থাপনা সম্পূর্ণ ধ্বংস হয়ে গেছে। এটা ইরানের পারমাণবিক প্রোগ্রামের জন্য এক দুঃস্বপ্ন। অনেকে দাবি করেছিলেন, ইরান আগেভাগেই ফোর্দো থেকে সমৃদ্ধ ইউরেনিয়াম সরিয়ে ফেলেছিল। ট্রাম্প সেটাও অস্বীকার করেন। তিনি বলেন, তাদের সময়ই ছিল না সরানোর। আর এ প্ল্যান্ট তো পাহাড়ের নিচে, পাথরের মধ্যে; অনেকেই বলেছিল ওটা ধ্বংস করা সম্ভব নয়। কিন্তু আমাদের বোমা ওটা চিরে গেছে, ঠিক মাখনের মতো!

Manual1 Ad Code

কূটনৈতিক আলোচনা পুনরায় শুরু করতে চাইলে যুক্তরাষ্ট্রকে ইরানে আরও হামলার চিন্তা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে বলে মন্তব্য করেছেন শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির উপপররাষ্ট্রমন্ত্রী মাজিদ তাখত-রাভাঞ্চি। বিবিসিকে তিনি বলেছেন, ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন মধ্যস্থতাকারীদের মাধ্যমে ইরানকে জানিয়েছে যে, তারা এ সপ্তাহেই ফের আলোচনা শুরু করতে চায়। কিন্তু আলোচনা চলার সময় আরও হামলা হবে কি না এ প্রশ্ন নিয়ে সুস্পষ্ট জবাব দেয়নি তারা। চলতি মাসে ইসরায়েল যখন আচমকা ইরানের সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনায় হামলা চালায়, তখনো তেহরানের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে আলোচনা চলছিল। ইসরায়েলি হামলার পাল্টায় পরে ইরানও ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়ে জবাব দেয়। ইরানের তিনটি পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা মেরে যুক্তরাষ্ট্র ২১ জুন এ সংঘাতে সরাসরি যুক্ত হয়ে পড়ে। এর পাল্টায় তেহরান কাতারের মার্কিন ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করে। তারপর তড়িঘড়ি ইসরায়েল-ইরানের মধ্যে একটি যুদ্ধবিরতি হলে পরিস্থিতি ঠাণ্ডা হয়ে আসে। তাখত-রাভাঞ্চি বলছেন, শান্তিপূর্ণ উদ্দেশ্যে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করার যে অধিকার রয়েছে, তাতে অটল থাকবেন তারা।

তেহরান গোপনে পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর পথে অগ্রসর হচ্ছে, এমন অভিযোগ উড়িয়ে দিয়ে তিনি বলেছেন, গবেষণার জন্যও ইরানকে পারমাণবিক উপাদান পেতে দেওয়া হয়নি, তাই আমাদের নিজেদের ওপরই নির্ভর করতে হয়েছে। এখন সেটার মাত্রার কী হবে, সক্ষমতা কেমন থাকবে সেগুলো নিয়ে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু কেউ যদি বলে, তোমরা ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করতে পারবে না, শূন্য সমৃদ্ধ থাকতে হবে আর যদি রাজি না হও তাহলে আমরা বোমা মারব, তবে তো সেটা জঙ্গলের আইন হলো। ইরান পারমাণবিক অস্ত্র বানানোর কাছাকাছি পৌঁছে গেছে এমন দাবি করে গত ১৩ জুন শিয়া সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশটির সামরিক ও পারমাণবিক স্থাপনার পাশাপাশি ইসরায়েল তেহরানের শীর্ষ সামরিক কমান্ডার ও বিজ্ঞানীদেরও হত্যা শুরু করে। এর বদলায় ইরানও পাল্টা হামলায় নামলে দুপক্ষ টানা ১২ দিন ধরে একে অন্যের বিভিন্ন স্থাপনায় আকাশপথে হামলা চালাতে থাকে।

এদিকে, ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর (আইডিএফ) কাছে সরঞ্জাম বিক্রয়ের কারণে দুটো প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে ব্যবসা বন্ধ করার ঘোষণা দিয়েছে নরওয়ের বৃহত্তম পেনশন তহবিল কেএলপি। গতকাল সোমবার প্রকাশিত এক বিবৃতিতে কেএলপি বলেছে, প্রতিষ্ঠান দুটির মারফত সরবরাহকৃত সরঞ্জাম গাজা যুদ্ধে ব্যবহার করছে আইডিএফ। কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরা এ খবর জানিয়েছে। কেএলপির বিনিয়োগ শাখার প্রধান কিরান আজিজ বলেছেন, গত বছর জাতিসংঘ মারফত আমরা জানতে পারি, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ওশকোশ করপোরেশন এবং জার্মানভিত্তিক থাইসেনক্রাপের বিক্রি করা সরঞ্জাম গাজা যুদ্ধে ব্যবহার করছে ইসরায়েল। যথেষ্ট পর্যালোচনার পর আমরা এ সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে, প্রতিষ্ঠান দুটি আমাদের বিনিয়োগ নীতিমালার লঙ্ঘন করেছে। তাই কেএলপির বিনিয়োগ তালিকা থেকে তাদের বাদ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মার্কিন প্রতিষ্ঠান ওশকোশ মূলত ট্রাক ও সামরিক বাহন নিয়ে কাজ করে। আর জার্মান প্রতিষ্ঠানটি এলিভেটর থেকে শুরু করে যুদ্ধজাহাজের মেশিনারিসহ বিভিন্ন ধরনের উৎপাদনে জড়িত। কেএলপির তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর জুন পর্যন্ত ওশকোশে ১৮ লাখ এবং থাইসেনক্রাপে ১০ লাখ ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code