প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ: এখনো দর-কষাকষির আশায় বাংলাদেশ

editor
প্রকাশিত জুলাই ৮, ২০২৫, ০৯:০৯ পূর্বাহ্ণ
ট্রাম্পের শুল্ক আরোপ: এখনো দর-কষাকষির আশায় বাংলাদেশ

Manual3 Ad Code

 

Manual8 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সোমবার ১৪টি দেশের পণ্যে নতুন শুল্কহার ঘোষণা করেছেন। এতে বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে এই চড়া শুল্ক। তবে বাংলাদেশ সরকার এখনো আশাবাদী, আলোচনার মাধ্যমে ভালো কিছু বয়ে আনতে পারবে।

তবে এ সিদ্ধান্তের আগে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারস্পরিক শুল্ক (রেসিপ্রোকাল ট্যারিফ) নিয়ে সমঝোতা ইতিবাচক ফলাফল আনতে ব্যর্থ হয়েছে। কারণ এ সময়ের আগে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চূড়ান্ত কোনো বৈঠকে বসতে পারেনি বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা।

এদিকে ট্রাম্প জানিয়েছেন, এই সময়সীমা পুরোপুরি অপরিবর্তনীয় নয়। আলোচনার পাশাপাশি শুল্কছাড়েরও সুযোগ রয়েছে। এখন সেই অপেক্ষায় রয়েছে বাংলাদেশ। যদিও ওই চূড়ান্ত বৈঠকের দিনক্ষণ এখনো পাওয়া যায়নি। বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কয়েকদিন ধরে ‘শিগগির’ বৈঠক হবে-এ আশায় দিন পার করছে।

মঙ্গলবার (৮ জুলাই) বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, আমরা ১০ বা ১১ জুলাই যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বৈঠকে বসতে পারবো। বাণিজ্য উপদেষ্টা থাকবেন সেখানে, আমিও যাবো। এখন আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরবো। নতুন শুল্কহার ঘোষণা আজ সকালে জানতে পারলাম। এর ওপর আমরা আমাদের অন্যান্য স্টেকহোল্ডারদের মতামত নিয়ে পরবর্তী করণীয় কী হবে সেটা নিয়ে কথা বলবো।

শুল্কহার ঘোষণার আগে কোন বৈঠক করা গেলো না- এমন প্রশ্নের জবাবে সচিব বলেন, আমরা একটি পারস্পরিক সমঝোতার মধ্যে যাওয়ার চেষ্টার মধ্যেই এ নতুন শুল্কহার প্রস্তাব দেওয়া হলো। ফলে তাদের পরবর্তী পদক্ষেপ আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়।

তবে আলোচনার সুযোগ এখনো রয়েছে জানিয়ে মাহবুবুর রহমান বলেন, একটা বড় চাপ দিয়ে এরপর আলোচনা আশা করিনি। দেখি, এখন বৈঠক করি। তারপরও আশা করছি, এর চেয়ে ভালো কিছু পাবো।

Manual8 Ad Code

 

বাণিজ্য সচিব আরও বলেন, ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে দেওয়া চিঠির সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্র চুক্তির জন্য নতুন একটি ডকুমেন্টস পাঠিয়েছে। সেটা এখন বিবেচনা করে আলোচনা করা হবে। তারা (যুক্তরাষ্ট্র) কী চেয়েছে এবং চুক্তি হলে তারা কতটা রিভিউ করবে সেটা নির্ধারণ হবে চূড়ান্ত বৈঠকে।

 

এদিকে বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশিরউদ্দিন বর্তমানে ওই বৈঠকে অংশ নিতে যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। তবে গত কয়েকদিন ধরে বৈঠকের দিনক্ষণ নিয়ে ধোঁয়াশা চলছে। বাণিজ্য সচিবেরও দুই দিন আগে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার কথা থাকলেও তিনি এখনো যাননি। সমালোচকরা বলছেন, বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা ইতিবাচক ফল আনতে পারেননি।

গত ৩ এপ্রিল বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর পাল্টা শুল্ক আরোপ করেন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সেসময় বাংলাদেশি পণ্যের ওপর ৩৭ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করা হয়েছিল। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশি পণ্যের ওপর গড়ে ১৫ শতাংশ হারে শুল্ক আরোপ করা হতো। আর সর্বশেষ গতকাল (৭ জুলাই) ৩৫ শতাংশ শুল্ক নির্ধারণ করেছে দেশটি। এ সময় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে এ তথ্য জানিয়ে লেখা একটি চিঠি ট্রুথ সোশ্যালে শেয়ার করেন ট্রাম্প।

Manual2 Ad Code

সোমবারের ঘোষণায় বাংলাদেশের পাশাপাশি দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপানসহ মোট ১৪টি দেশের ওপর নতুন শুল্কহার নির্ধারণের কথা বলা হয়েছে। হোয়াইট হাউজের ঘোষিত ৯০ দিনের শুল্ক বিরতির সময়সীমা শেষ হওয়ার প্রেক্ষাপটে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানানো হয়। শুরুতে এই শুল্ক ৯ জুলাই থেকে কার্যকর হওয়ার কথা থাকলেও তা পিছিয়ে ১ আগস্ট থেকে কার্যকর করা হবে বলে জানানো হয়েছে।

 

বাংলাদেশের সঙ্গে একই দিনে দক্ষিণ কোরিয়া ও জাপান থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর নতুন করে ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। এছাড়া মিয়ানমার ও লাওসের ওপর ৪০ শতাংশ, দক্ষিণ আফ্রিকার ওপর ৩০ শতাংশ, মালয়েশিয়া ও তিউনিসিয়ার ওপর ২৫ শতাংশ, ইন্দোনেশিয়ার ওপর ৩২ শতাংশ, বসনিয়ার ওপর ৩০ শতাংশ, সার্বিয়ার ওপর ৩৫ শতাংশ, কম্বোডিয়া ও থাইল্যান্ডের ওপর ৩৬ শতাংশ এবং কাজাখস্তানের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে। তবে এখনো অনেক দেশ রয়েছে, যাদের শুল্ক পরে ঘোষণা হবে।

তবে ট্রাম্পের নতুন এ পাল্টা শুল্কে ঝুঁকির মুখে পড়বে রপ্তানি খাত তাতে সন্দেহ নেই। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান সানেমের নির্বাহী পরিচালক ড. সেলিম রায়হান বলেন, বাংলাদেশি রপ্তানি পণ্যে যুক্তরাষ্ট্রের ৩৫ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপ বড় ধরনের অর্থনৈতিক আঘাত, বিশেষ করে তৈরি পোশাকশিল্পের জন্য। আগে যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্কহার ছিল প্রায় ১৫ শতাংশ, এখন তা দ্বিগুণেরও বেশি। এই হঠাৎ ও ব্যাপক শুল্ক বৃদ্ধির কারণে বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

Manual1 Ad Code

তিনি আরও বলেন, উদ্বেগজনক হলো যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় শুল্ক আলোচনায় নিযুক্ত বাংলাদেশের প্রতিনিধিরা ইতিবাচক ফল আনতে পারেননি বলেই মনে হচ্ছে। ভারসাম্যপূর্ণ চুক্তিতে পৌঁছাতে ব্যর্থ হওয়া বর্তমান বৈশ্বিক বাণিজ্য বাস্তবতা ও ভূরাজনৈতিক পরিবর্তনের পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual6 Ad Code