প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বিএসএফের গুলি থেকে রেহাই পাচ্ছে না নারী-পুরুষ কেউ

editor
প্রকাশিত জুলাই ১৩, ২০২৫, ১০:৪০ পূর্বাহ্ণ
বিএসএফের গুলি থেকে রেহাই পাচ্ছে না নারী-পুরুষ কেউ

Manual8 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

পৃথিবীর কোনো সীমান্তে নির্বিচারে মানুষ হত্যার উদাহরণ না থাকলেও বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তে বিরামহীন হত্যা চলছেই। ১৯৭২ থেকে ২০২৪ সাল পর্যন্ত এক হাজার ৯৫৬ জন বাংলাদেশি প্রাণ হারিয়েছে সীমান্তে।

মানবাধিকারকর্মীরা বলছেন, ভারত সীমান্ত হত্যা শূন্যের কোঠায় আনার কথা মুখে বললেও বাস্তবে সে পথে হাঁটছে না। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া দরকার বাংলাদেশের।

অন্যদিকে ভারতীয় সীমান্ত বাহিনী ভারতের দিক থেকে সাধারণ মানুষকে ঠেলে পাঠিয়ে দিচ্ছে (পুশ ইন) এ দেশে। গত কয়েক মাসে দুই হাজারের বেশি মানুষকে পুশ ইন করেছে বলে জানা গেছে।

গত শুক্র ও শনিবারও বিএসএফের গুলিতে ঠাকুরগাঁও ও সুনামগঞ্জের সীমান্তে দুজন প্রাণ হারিয়েছেন। ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে নতুন সরকার দায়িত্ব নেওয়ার ২৩ দিন পর গত বছর ১ সেপ্টেম্বর মৌলভীবাজারের জুড়ি এলাকায় স্বর্ণা দাস (১৪) নামের এক কিশোরীকে গুলি করে হত্যা করে বিএসএফ।

Manual7 Ad Code

অষ্টম শ্রেণির ছাত্রী স্বর্ণা দাসকে নিয়ে সেদিন রাতে তার মা সঞ্জিতা রানী দাস ভারতের ত্রিপুরায় ভাইকে দেখতে যাচ্ছিলেন। তাঁরা ত্রিপুরা রাজ্যের কালেরকান্দি সীমান্তে কাঁটাতারের বেড়ার কাছে পৌঁছলে বিএসএফ তাদের লক্ষ্য করে এলোপাতাড়ি গুলি ছুড়লে স্বর্ণা মারা যায় এবং স্বর্ণার মাসহ কয়েকজন আহত হয়। এর সাত দিন পর ঠাকুরগাঁওয়ের বালিয়াডাঙ্গী সীমান্তে ১৫ বছরের কিশোর জয়ন্ত সিংহকে হত্যা করে বিএসএফ।

Manual7 Ad Code

 

গত ২৮ ফেব্রুয়ারি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবা সীমান্তে বিএসএফের গুলিতে নিহত হন আল আমিন (৩২) নামের একজন।

এর পরদিন কক্সবাজারে ৬৪ বিজিবি ব্যাটালিয়নের পতাকা উত্তোলন অনুষ্ঠানে বিজিবি মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মোহাম্মদ আশরাফুজ্জামান সিদ্দিকী বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি (ভারতকে), এটা (হত্যা) কোনোভাবেই কাম্য নয় এবং এটা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা এ ধরনের ঘটনার প্রতিবাদ চালিয়ে যাব। আর যদি একটি হত্যার ঘটনাও ঘটে, তাহলে আমরা আরো কঠোর অবস্থানে যাব।’ এ ধরনের হুঁশিয়ারিতেও পরিস্থিতির উন্নতি হয়নি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা। বিভিন্ন সীমান্তে হত্যা চলছেই।

 

আন্তর্জাতিক আদালতে মামলা দেওয়ার পরামর্শ :

 

সীমান্তে হত্যা বন্ধে বাংলাদেশকে আন্তর্জাতিক আদালতে ভারতের বিরুদ্ধে মামলা করার পরামর্শ দিয়েছেন মানবাধিকার সংস্থা ‘অধিকার’ এর পরিচালক এ এস এম নাসির উদ্দিন এলান। তিনি বলেন, সীমান্ত হত্যা বন্ধের বিষয়ে ভারতের সঙ্গে সরকারপ্রধান থেকে শুরু করে সীমান্ত বাহিনীর প্রধানদের বৈঠকে তাঁরা প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু এ কাজ করেই যাচ্ছেন তাঁরা। পৃথিবীর কোনো সীমান্তে এমন নির্বিচারে হত্যার উদাহরণ নেই। এ অবস্থায় তিনি মনে করেন, বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক আদালতে যাওয়া উচিত।

 

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভারতের প্রবণতা হলো বাংলাদেশ সীমান্তে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করা। গুলি করে মানুষ হত্যা করে আতঙ্ক তৈরির মাধ্যমে বোঝানো যে, তোমরা বেশি বাড়াবাড়ি করো না, আমরা বড় শক্তি।’

 

সীমান্ত দিয়ে পুশ ইন :

শুধু হত্যা করেই ক্ষান্ত হচ্ছে না বিএসএফ। তারা ভারত থেকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিচ্ছে সাধারণ মানুষদের। গত কয়েক মাসে আন্তর্জাতিক আইন-কানুন ভেঙে দুই হাজারের বেশি মানুষকে পুশ ইন করা হয়েছে।

 

সম্প্রতি প্রকাশিত বিবিসি বাংলার এক সংবাদে বলা হয়েছে, বেশ কিছু রোহিঙ্গা মুসলিমকেও ভারতীয় নৌবাহিনীর জাহাজ আন্দামান সাগরে নামিয়ে দিয়ে মিয়ানমারের দিকে সাঁতরে যেতে নির্দেশ দিয়েছে এমন ঘটনাও ঘটেছে বলে খবর পাওয়া গেছে। এই কৌশলের অংশ হিসেবেই দিল্লি, রাজস্থান, জম্মু, গুজরাট, মহারাষ্ট্র, তেলেঙ্গানা বা কর্ণাটকের মতো বিভিন্ন রাজ্য থেকে বাংলা ভাষাভাষী মুসলিমদের অনুপ্রবেশকারী হিসেবে সন্দেহ হলেই ঢালাওভাবে আটক করে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী পশ্চিমবঙ্গ বা আসামের মতো রাজ্যে। তারপর বিএসএফ রাতের অন্ধকারে বন্দুকের মুখে এদের ঠেলে দিচ্ছে বাংলাদেশের দিকে। গত ৩ জুলাইও ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি বিশেষ এয়ারক্র্যাফট এ রকম ২৫০ জন নারী-পুরুষকে গুজরাটের ভাদোদরা থেকে এয়ারলিফট করে উত্তর-পূর্ব ভারতে এনে বিএসএফের কাছে হস্তান্তর করেছে বলে ভারতীয় মিডিয়া রিপোর্ট করেছে। এদেরও পুশ ইন করা হয়েছে এরই মধ্যে অথবা হবে যেকোনো দিন।

 

Manual4 Ad Code

‘অনেকটা যেন ভারত সরকার এই লোকগুলোকে ‘কিডন্যাপ’ করে বর্ডারে নিয়ে এসে নো ম্যানস ল্যান্ডে ছেড়ে দিয়ে যাচ্ছে’, বলেছেন দিল্লিতে সাউথ এশিয়া হিউম্যান রাইটস ডকুমেন্টেশন সেন্টারের নির্বাহী পরিচালক রবি নায়ার। অনুপ্রবেশকারীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে যে নিজস্ব রীতিনীতি বা ‘স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিডিওর’ আছে সেটাও মানার কোনো ধার ধারছে না দিল্লি, তা একেবারেই পরিষ্কার।

 

Manual5 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code