প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

বাণিজ্যের বাইরে ভিন্ন চাপ যুক্তরাষ্ট্রের

editor
প্রকাশিত জুলাই ১৫, ২০২৫, ১২:৩৯ অপরাহ্ণ
বাণিজ্যের বাইরে ভিন্ন চাপ যুক্তরাষ্ট্রের

Manual6 Ad Code

 

Manual3 Ad Code

প্রজন্ম ডেস্ক:

যুক্তরাষ্ট্র সরকার শুল্ক ইস্যুতে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য-সংক্রান্ত প্রসঙ্গের বাইরে ভিন্ন আরও অনেক ইস্যুতেও বাংলাদেশকে চাপ দিচ্ছে। এর মধ্যে জিও-পলিটিক্যাল প্রসঙ্গ এবং বিশেষ কিছু দেশের সঙ্গে বিনিয়োগ বা দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ককে প্রাধান্য না দেওয়ার জন্যও চাপ দিয়েছে ডোনাল্ট ট্রাম্প প্রশাসন। শুল্ক জটিলতা নিয়ে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিনের নেতৃত্বে সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্র সফর শেষে গতকাল দেশের ব্যবসায়ী, অর্থনীতিবিদসহ অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকে এসব তথ্য জানানো হয়। বৈঠকে অংশ নেওয়া একাধিক ব্যবসায়ী নেতা সময়ের আলোকে এসব তথ্য জানান।

যুক্তরাষ্ট্র সফর থেকে ফিরে আসা বাংলাদেশে প্রতিনিধি দলের সদস্যরা সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত বৈঠকে অংশীজনদের সামনে এও জানান, বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় ট্যারিফ, নন-ট্যারিফ ইস্যুগুলো একটি প্যাকেজ হিসেবে আলেচনা করতে চায় মার্কিন প্রশাসন। শুধু শুল্ক-সংক্রান্ত বিষয়গুলো নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে তারা আলোচনা করতে চান না, অন্যান্য অশুল্ক অনেক বিষয়কে প্রাধান্য দিচ্ছে।

এসব তথ্য জানিয়ে গতকালের বৈঠকে অংশ নেওয়া একজন শীর্ষ ব্যবসায়ী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফর করে আসা বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধি দল আমাদের কাছে জানিয়েছে, ‘শুল্ক ইস্যু সামনে রেখে মার্কিন প্রশাসন অশুল্ক এমন অনেক ইস্যু উপস্থাপন করেছে, যা বাংলাদেশের পক্ষে মানা সম্ভব না। যেমন তারা বলেছে বাংলাদেশের বন্ধুপ্রতিম একটি দেশের সঙ্গে বিনিয়োগসহ অন্যান্য বিষয়ে বেশি প্রধান্য দেওয়া যাবে না। শুধু তাই নয়, মার্কিন সরকার যে দেশের ওপর বাণিজ্য নিষেধাজ্ঞা দেবে সে দেশের সঙ্গে বাংলাদেশও বাণিজ্যিক সম্পর্ক রাখতে পারবে না। এসব কথা শুনে আমার কাছে মনে হয়েছে, শুল্ক ইস্যুকে হাতিয়ার হিসেবে সামনে রেখে বাংলাদেশকে চাপে ফেলে মার্কিন সরকার তার অন্য উদ্দেশ্য হাসিল করতে চাইছে।’

অবশ্য বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, যুক্তরাষ্ট্র সফরে বিভিন্ন বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু ও শুল্ক ইস্যুর সার্বিক পরিস্থিতি আমাদের সামনে ব্যাখ্যা করেছেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন। মার্কিন সরকারের সঙ্গে তারা কীভাবে নেগোসিয়েশন করছেন তার রূপরেখা তুলে ধরেছেন। উপদেষ্টার কথা শুনে আমার মনে হয়েছে শুল্ক-সংক্রান্ত বিষয়ে মার্কিন সরকারের সঙ্গে বাংলাদেশের আলোচনা ঠিকমতোই এগোচ্ছে। তবে উভয় পক্ষের আলোচনা ট্যারিফ বা ট্রেড-সংক্রান্ত বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল না। বাণিজ্য-সংক্রান্ত নয়, এমন অনেক বিষয়ও আলোচনায় স্থান পায় বলে আমাদের জানানো হয়। তবে আমরা পরামর্শ দিয়েছি, বাংলাদেশের স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে মার্কিন প্রশাসনকে শুল্কের বিষয়ে ৫ থেকে ১০ বছরের রোডম্যাপ যেন দেওয়া হয়। এতে বছর বছর শুল্ক নিয়ে জটিলতায় পড়তে হবে না।

Manual6 Ad Code

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের গতকালের বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারক সমিতির (বিজিএমইএ) সভাপতি মাহমুদ হাসন খান বাবু। বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, বাণিজ্য উপদেষ্টা আমাদের জানিয়েছেন শুল্ক ও শুল্কের বাইরের অনেক ইস্যু নিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে প্যাকেজ আলোচনা করতে চায় মার্কিন সরকার। অর্থাৎ, ট্যারিফের বাইরেও অনেক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়েছে ওয়াশিংটনের বৈঠকে। তবে আমরা আশাবাদী সরকার যে পথে বা যেভাবে আলোচনা এগিয়ে নিচ্ছে, তাতে ভালো কিছু অর্জন করা যাবে। একই সঙ্গে আমি পরামর্শ দিয়েছি শুল্ক-সংক্রান্ত জটিলতা নিরসনে বাংলাদেশ সরকার যেন লবিস্ট নিয়োগ দেয়।

 

আগামী সপ্তাহে ফের দরকষাকষি : বাণিজ্য উপদেষ্টা

এদিকে অংশীজনদের সঙ্গে বৈঠকে শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন বলেন, পাল্টা শুল্ক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তৃতীয় পর্যায়ের আলোচনার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তৃতীয় পর্যায়ের নেগোসিয়েশনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের কাছে সময় চাওয়া হয়েছে। আগামী সপ্তাহেই আবার বিষয়টি নিয়ে আবার আলোচনা শুরু হবে। বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র শুল্ক আলোচনা শেষে দেশে ফিরে সোমবার এ সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করেন বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন।
তিনি বলেন, আমরা আশা করছি যুক্তরাষ্ট্র যৌক্তিক পর্যায়ে শুল্ক নির্ধারণ করবে। আশা করি, বাংলাদেশ তার সক্ষমতা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে ব্যবসা চালিয়ে যেতে পারবে। শুল্ক আলোচনার দ্বিতীয় দফার শেষ দিন ছিল ১১ জুলাই। যুক্তরাষ্ট্রের রাজধানী ওয়াশিংটন ডিসিতে এ আলোচনা হয়।

Manual1 Ad Code

উপদেষ্টা আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের এ বিষয়ে নন ডিসক্লো‌জার এগ্রিমেন্ট রয়েছে। ফলে যুক্তরাষ্ট্র কী চেয়েছে বা কী আলোচনা হয়েছে তার বিস্তারিত বলা সম্ভব নয়।

বাণিজ্য সচিব মাহবুবুর রহমান বলেন, শুল্ক আরোপ বাংলাদেশের জন্য বড় ধরনের অভিঘাত। সে জন্য সরকার সর্বাত্মক পর্যায়ে জড়িত থেকে কাজ করছে। ইতিমধ্যে কিছু কাজ করা হয়েছে, আরও কিছু কাজ করতে হবে। এখন আমরা স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আলোচনা করলাম। তাদের মতামত নিলাম। আমাদের প্রস্তুতি আছে। সামনে যেকোনো বিষয়ে এলে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সেটি নিয়ে আমরা আলোচনা করব।

ব্যবসায়ীদের পক্ষ থেকে বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ট্যারিফ আলোচনা করা হচ্ছে। ইতিমধ্যের যে আলোচনা হয়েছে সেটি নিয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের যা অবহিত করা হয়েছে তাতে আমরা সন্তুষ্ট।

উল্লেখ্য, গত ২ এপ্রিল যুক্তরাষ্ট্র বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ওপর রিসিপ্রোকাল ট্যারিফ আরোপ করে। যুক্তরাষ্ট্র এ শুল্ক আরোপ করার পর বিশ্ববাণিজ্যে নেতিবাচক প্রভাব পড়লে ৭ এপ্রিল এই শুল্ক ৯ জুলাই পর্যন্ত স্থগিত করে। এরপর গত ৮ জুলাই প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসকে পাঠানো এক চিঠিতে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বাংলাদেশের পণ্য আমদানিতে ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের কথা জানান। নতুন এ শুল্ক হার ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হওয়ার কথা।

এর মধ্যে বিভিন্ন দেশ যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আলোচনার মাধ্যমে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করেছে। বাংলাদেশও দ্বিপক্ষীয় চুক্তি করার চেষ্টা করছে। সে জন্যই বাণিজ্য উপদেষ্টার নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য প্রতিনিধি সংস্থা ইউএসটিআইর সঙ্গে কয়েক দফা বৈঠক করেছে। যদিও ওইসব বৈঠকে সব বিষয়ে বাংলাদেশ এবং যুক্তরাষ্ট্র সম্মত হতে পারেনি।

Manual3 Ad Code

সাংবাদিকদের ব্রিফিংয়ের আগে বাণিজ্য উপদেষ্টা সেখ বশিরউদ্দিন দেশের বিশিষ্ট ব্যবসায়ী ও অর্থনীতিবিদদের নিয়ে বৈঠক করেন। বৈঠকে তৈরি পোশাক রফতানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএর সভাপতি মাহমুদ হাসান খান বাবু, বিকেএমইএর সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম, বাংলাদেশ চেম্বার অব ইন্ডাস্ট্রিজ সভাপতি আনোয়ারুল আলম চৌধুরী পারভেজ, এপেক্স ফুটওয়ারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ নাসিম মঞ্জুর, সানেমের নির্বাহী পরিচালক সেলিম রায়হান, পলিসি এক্সচেঞ্জ বাংলাদেশের চেয়ারম্যান মাসরুর রিয়াজ, র‍্যাপিড চেয়ারম্যান ড. আবদুর রাজ্জাক, ট্যারিফ কমিশনের সাবেক সদস্য মোস্তফা আবিদ খান, এফবিসিসিআইর প্রশাসক হাফিজুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বাণিজ্য মন্ত্রণালয় সচিব মাহবুবুর রহমান, অতিরিক্ত সচিব নাজনীন কাউসার চৌধুরী বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code