প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

দ্বিগুণ হলো আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ফি, চাইলেই মিলবে না অস্ত্র

editor
প্রকাশিত জুলাই ১৫, ২০২৫, ০১:১৩ অপরাহ্ণ
দ্বিগুণ হলো আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ফি, চাইলেই মিলবে না অস্ত্র

Manual6 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া হয় প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স। এসব লাইসেন্সের অধিকাংশই ছিল আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী ও দলটির সমর্থক ব্যবসায়ীদের নামে।

বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার ব্যক্তি কিংবা প্রাতিষ্ঠানিক পর্যায়ে সব ধরনের আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ফি ও নবায়ন ফি দ্বিগুণ করেছে। এছাড়া পিস্তল/রিভলবার/রাইফেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা এবং শটগানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই লাখ টাকা আয়কর দেওয়ার নিয়ম করা হয়েছে।

সম্প্রতি আগ্নেয়ান্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০১৬ বাতিল করে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০২৫ প্রকাশ করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় বেশকিছু পরিবর্তন আনা হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ফি ও নবায়ন ফি বাড়ানো হয়েছে। আগ্নেয়াস্ত্রের জন্য আয়করও বাড়ানো হয়েছে।

স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, আগ্নেয়াস্ত্রের ক্ষেত্রে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার কিছুটা কড়াকড়ি করেছে। ‘যাকেতাকে’ আর আগ্নেয়াস্ত্র দেওয়া হবে না। যারা আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের যোগ্য শুধু তাদের যাচাই-বাছাই শর্তে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হবে।

 

Manual5 Ad Code

এদিকে আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে দেওয়া পাঁচ হাজারের বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স বাতিল করেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশে জমা পড়া ও জমা না পড়া অস্ত্রের লাইসেন্সের তথ্য যাচাইয়ে এগুলোর কাগজপত্রে অসঙ্গতি পাওয়ায় এ পদক্ষেপ নেওয়া হয়। অস্ত্র জমা না দেওয়া ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মামলার প্রক্রিয়াও শুরু হচ্ছে।

 

সূত্র বলেছে, সব লাইসেন্স স্থগিত করে অস্ত্র জমা দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হলেও এখনো সাত হাজারের বেশি লাইসেন্সের অস্ত্র জমা পড়েনি। বাড়ি বাড়ি গিয়েও পুলিশ এসব লাইসেন্সধারী বা লাইসেন্সের বিপরীতে থাকা অস্ত্র পায়নি। ক্ষমতার পটপরিবর্তনের পর অস্ত্রের লাইসেন্স পাওয়া ব্যক্তিদের অনেকে গাঢাকা দিয়েছেন। অনেকে পাড়ি জমিয়েছেন বিদেশে।

 

পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) তথ্য অনুযায়ী, দেশে বৈধ আগ্নেয়াস্ত্রের ৪৯ হাজার ৬৭১টি লাইসেন্স রয়েছে। এগুলোর মধ্যে সাড়ে ৪৬ হাজার লাইসেন্স ব্যক্তির নামে। বাকিগুলো প্রতিষ্ঠানের নামে। ব্যক্তির নামে থাকা লাইসেন্সগুলোর মধ্যে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে আছে অন্তত আট হাজার ২০০টি লাইসেন্স। বিএনপির নেতাকর্মীদের নামে লাইসেন্স আছে প্রায় দুই হাজার ৫০০টি। অন্য দলগুলোর রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের নামে আছে মাত্র ৭৯টি লাইসেন্স।

Manual6 Ad Code

তথ্য বলছে, বিভাগভিত্তিক হিসেবে সবচেয়ে বেশি আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স রয়েছে ঢাকা বিভাগে ১৪ হাজার ৬৮৩টি। সবচেয়ে কম ময়মনসিংহে দুই হাজার ১১৮টি। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের নামে থাকা লাইসেন্সগুলোর অধিকাংশ দলটি গত ১৫ বছরে ক্ষমতায় থাকাকালে দেওয়া।

দেশের প্রচলিত আইনের বিধান অনুযায়ী, লাইসেন্স ছাড়া কেউ আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে বা বহন করতে পারেন না। এটি ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে গণ্য হয়। ব্যক্তিগত কিংবা ব্যবসায়িক নিরাপত্তার জন্য প্রত্যেক নাগরিক লাইসেন্স করা আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারেন। ছোটবড় যে কোনো ধরনের আগ্নেয়াস্ত্র কিনতে হলে তার জন্য সরকারের অনুমতি নিতে হয়, অর্থাৎ অস্ত্র কেনার জন্য আগে লাইসেন্স করতে হয়।

 

আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের নতুন নীতিমালায় যে পরিবর্তন

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ২০১৬ সালে জারি করা আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্সের সংশোধন বাতিল বলে গণ্য হবে। এছাড়া আগে জারি করা এ সংক্রান্ত অন্যান্য নির্বাহী আদেশ বা নির্দেশাবলির ওপরে বর্তমানে জারি করা নীতিমালা প্রাধান্য পাবে এবং এ নীতিমালা অবিলম্বে কার্যকর হবে।

 

ব্যক্তি পর্যায়ে আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদানে যে পরিবর্তন

আবেদনকারী কর্তৃক আবেদনের পূর্ববর্তী তিন করবছরে ধারাবাহিকভাবে পিস্তল/রিভলবার/রাইফেলের ক্ষেত্রে ন্যূনতম পাঁচ লাখ টাকা এবং শটগানের ক্ষেত্রে ন্যূনতম দুই লাখ টাকা আয়কর দিতে হবে। ২০১৬ সালের নীতিমালায় এ অর্থের পরিমাণ ছিল যথাক্রমে তিন লাখ এবং এক লাখ টাকা।

পিস্তল/রিভলবারের ক্ষেত্রে আবেদনকারীর অস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তির যোগ্যতা যাচাই-বাছাইপূর্বক সংশ্লিষ্ট জেলা ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে যোগ্য বিবেচিত হলে সুপারিশ সহকারে প্রস্তাবটি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অনাপত্তি দিলে জেলা ম্যাজিস্ট্রেট লাইসেন্স ইস্যু করবেন।

 

কোনো আবেদনকারী নীতিমালায় নির্ধারিত যোগ্যতা সম্পূর্ণরূপে অর্জন না করলে তার আবেদন মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে পারবেন না। এরূপ কোনো আবেদন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে প্রাপ্তির পর দুই বছরের মধ্যে কোনো কার্যক্রম গ্রহণ করা না হলে তা ‘নথিজাত’ হয়েছে বলে বিবেচিত হবে।
লাইসেন্স ও নবায়ন ফিতে যে পরিবর্তন

ক. ব্যক্তি পর্যায়
লাইসেন্সের ইস্যু ফি: পিস্তল/রিভলবারের ফি ছিল ৩০ হাজার টাকা, এখন তা দ্বিগুণ হয়ে ৬০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বন্দুক/শটগান/রাইফেলের ফি ছিল ২০ হাজার টাকা, এখন তা দ্বিগুণ হয়ে ৪০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

লাইসেন্সের নবায়ন ফি: পিস্তল/রিভলবারের ফি ছিল ১০ হাজার টাকা, এখন তা দ্বিগুণ হয়ে ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে। বন্দুক/শটগান/রাইফেলের ফি ৫ হাজার টাকা থেকে দ্বিগুণ হয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

 

 

খ. আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা ব্যাংক পর্যায়
লং ব্যারেল লাইসেন্স ইস্যু ফি ছিল ২০ হাজার টাকা, এখন তা ৫০ হাজার টাকা করা হয়েছে। লং ব্যারেল লাইসেন্স নবায়ন ফি ছিল পাঁচ হাজার টাকা, এখন তা ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

Manual2 Ad Code

 

প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে

লং ব্যারেল লাইসেন্স ইস্যু ফি ছিল ৫০ হাজার টাকা, এখন তা এক লাখ টাকা করা হয়েছে। লং ব্যারেল লাইসেন্স নবায়ন ফি ছিল ১০ হাজার টাকা, এখন তা ২০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

আরও পড়ুন

ডিলার এবং মেরামতকারী প্রতিষ্ঠান

লাইসেন্স ইস্যু ফি ছিল এক লাখ টাকা, এখন তা কমিয়ে ৪০ হাজার টাকা করা হয়েছে। লাইসেন্স নবায়ন ফি ছিল ২০ হাজার টাকা, এখন তা কমিয়ে ১০ হাজার টাকা করা হয়েছে।

সেফ কিপিং (আইন/বিধি অনুযায়ী নিরাপদ রাখার জন্য নির্ধারিত স্থান): লাইসেন্সের ইস্যু ফি ছিল ২০ হাজার টাকা, এখন তা বাড়িয়ে ৩০ হাজার টাকা করা হয়েছে। লাইসেন্স নবায়ন ফি ছিল পাঁচ হাজার টাকা, এখন তা বাড়িয়ে ছয় হাজার টাকা করা হয়েছে।

নতুন নীতিমিলায় ডুপ্লিকেটিং লাইসেন্স ফি হিসেবে ৫০০ টাকা অথবা মূল লাইসেন্স ফির মধ্যে যেটি কম সেটি উল্লেখ করা হয়েছে।

Manual1 Ad Code

 

লাইসেন্স বাতিল বা বাজেয়াপ্তকৃত অস্ত্র সম্পর্কিত বিধান

২০১৬ সালের নীতিমালায় বলা ছিল, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রাপ্তির পাঁচ বছরের মধ্যে অস্ত্র ক্রয় না করলে লাইসেন্সটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে। ২০২৫ সালের নীতিমালায় বলা হয়েছে, আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স ইস্যুর তিন বছরের মধ্যে অস্ত্র ক্রয় না করলে লাইসেন্সটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে বাতিল বলে গণ্য হবে। অর্থাৎ সরকার এখানে দুই বছর কমিয়ে এনেছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব (রাজনৈতিক ও আইসিটি অনুবিভাগ) খন্দকার মো. মাহাবুবুর রহমান বলেন, ‘আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স প্রদান, নবায়ন ও ব্যবহার নীতিমালা-২০২৫ আপডেট করা হয়েছে। কিছু সমস্যা ছিল সেগুলো দূর করার জন্যই আপডেট করা হয়েছে। নতুন নীতিমালায় ফি বাড়ানো হয়েছে।’

‘এছাড়া ভবিষ্যতে আগ্নেয়াস্ত্র ‘যাকেতাকে’ দেওয়া হবে না। আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স যারা পেয়েছিলেন তাদের সব লাইসেন্স এরই মধ্যে বাতিল করা হয়েছে’- যোগ করেন এ কর্মকর্তা।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code