প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

রোহিঙ্গা স্রোত থেমে নেই

editor
প্রকাশিত জুলাই ১৬, ২০২৫, ১২:৩৭ অপরাহ্ণ
রোহিঙ্গা স্রোত থেমে নেই

Manual6 Ad Code

 

# অব্যাহত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন

 

# ৩৪ ক্যাম্পে দৈনিক জন্ম নিচ্ছে ৮২ রোহিঙ্গা শিশু

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

মায়ানমারের আরাকান রাজ্য থেকে কক্সবাজারে রোহিঙ্গার স্রোত থেমে নেই। সর্বশেষ জাতিসংঘই বলেছে, গত ১৮ মাসে নতুন করে এসেছে দেড় লাখ রোহিঙ্গা। অব্যাহত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে কক্সবাজারের স্থানীয়রা উদ্বিগ্ন। অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গাদের স্থান সংকুলান করা যাচ্ছে না।
তাদের কারণে সামাল দেওয়া যাচ্ছে না এলাকার আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সেই সঙ্গে আশ্রিত রোহিঙ্গাদের মধ্যে দৈনিক জন্ম নিচ্ছে গড়ে ৮২ রোহিঙ্গা শিশু।

অনুপ্রবেশকারী রোহিঙ্গা বেড়ে যাওয়ায় আগামী ডিসেম্বর থেকে রোহিঙ্গা সহায়তা হ্রাস বা বন্ধ হয়ে গেলে দেশের প্রধান পর্যটনকেন্দ্রের জেলা কক্সবাজার বহুমুখী সমস্যার সম্মুখীন হয়ে পড়বে বলে স্থানীয়রা আশঙ্কা করছে।

Manual7 Ad Code

কক্সবাজারের রোহিঙ্গা ক্যাম্প তত্ত্বাবধানের সরকারি দায়িত্বে থাকা রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) কার্যালয়ের সর্বশেষ গত ১৩ জুলাইয়ের তথ্য বলছে, ভাসানচরসহ উখিয়া-টেকনাফের ৩৪টি ক্যাম্পের দুই লাখ ৩৬ হাজার ৭৯১টি পরিবারে মোট রোহিঙ্গা ১১ লাখ ৪৩ হাজার ৯৬ জন। তথ্য মতে, ক্যাম্পগুলোতে প্রতিবছর জন্ম নিচ্ছে কম করে হলেও ৩০ হাজার রোহিঙ্গা শিশু। সেই হিসাবে দৈনিক গড়ে ৮২টি শিশু ভূমিষ্ঠ হচ্ছে মাত্র আট হাজার একর আয়তনের ভূমির ক্যাম্পগুলোতে।

Manual5 Ad Code

মায়ানমারের আরাকান রাজ্যের বুচিদং তমবাজার থেকে দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে নাফ নদের এপারে আশ্রয় নিয়েছেন রোহিঙ্গা মা আজিজা খাতুন। সঙ্গে রয়েছে তাঁর দুই মেয়ে আর তিন নাতি-নাতনি। ছোট মেয়ে ছেনুয়ারা বেগমের স্বামীকে আরাকান আর্মির সদস্যরা ধরে নিয়ে গেছে বেশ কিছুদিন আগে। বড় মেয়ে সাজিদা বেগমের স্বামীও নিখোঁজ। পরিবারের আরো অনেকের খোঁজখবর নিচ্ছিল আরাকান আর্মি।

Manual3 Ad Code

পরিস্থিতি মোটেই সুখকর নয়। শেষ পর্যন্ত নাফ নদের এপারে আশ্রয়ের উদ্দেশ্যে পা বাড়ান আজিজা। গত ১০ জুলাই উখিয়ার পালংখালী ইউনিয়নের শফিউল্লাহকাটা রোহিঙ্গা ক্যাম্পের এক আত্মীয়ের বস্তি ঘরে উঠেছেন তিনি। রোহিঙ্গা ক্যাম্পের ৮ ফুট বাই ১০ ফুটের একটি কক্ষে এমনিতেই একটি পরিবারের গাদাগাদি অবস্থা। সেখানে নতুন করে আসা ছয়জন অতিথির শোয়ার ব্যবস্থা করাও মুশকিল। অগত্যা প্রতিবেশীদের সহযোগিতায় কোনো রকমে দিন কাটছে আজিজার। কিন্তু কত দিন এভাবে থাকা সম্ভব হবে—এই প্রশ্ন আজিজার। আজিজা খাতুনের মতো আরাকান থেকে প্রায় প্রতিদিনই একজন-দুজন বা পরিবারভিত্তিক রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশ অব্যাহত রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে রোহিঙ্গা শরণার্থী ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি) অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত ১৮ মাসে এক লাখ ২০ হাজার রোহিঙ্গা নতুন করে ক্যাম্পগুলোতে আশ্রয় নিয়েছে। তবে জাতিসংঘের শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশন (ইউএনএইচসিআর) কয়েক দিন আগে দেড় লাখের তথ্য দিয়েছে। আমার মনে হয়, এক লাখ ২০ হাজারের বাইরে এখনো পর্যন্ত তালিকাভুক্ত না হওয়ায় ৩০ হাজারের সংখ্যা আমাদের অফিসে নেই। নতুন করে আসা রোহিঙ্গাদের স্থান সংকুলানের জন্য উখিয়া-টেকনাফেও পর্যাপ্ত জায়গার অভাব রয়েছে। এ কারণে নতুন আসা রোহিঙ্গাদের বর্তমান ক্যাম্পগুলোতেই অবস্থান করা ছাড়া কোনো গত্যন্তর নেই।’ তিনি অবশ্য স্বীকার করেন, ক্যাম্পগুলোর বাইরেও আশপাশের এলাকায় বাসাবাড়ি ভাড়া নিয়েও সচ্ছল রোহিঙ্গারা বসবাস করছে।

অব্যাহত রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশে উদ্বেগ জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা বিএনপির সভাপতি ও উখিয়া-টেকনাফ সংসদীয় আসনের সাবেক এমপি শাহজাহান চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা নিয়ে আমরা কক্সবাজারে বহুমুখী সমস্যার মুখে পড়েছি। এভাবে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকলে ক্রমে সমস্যাও বাড়বে।’ তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের কারণে এমনিতেই আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে রাখা যাচ্ছে না। তদুপরি এলাকার মানুষের শ্রমেও ভাগ বসিয়েছে রোহিঙ্গারা। তাদের কারণে স্থানীয় হাটবাজারে পণ্যসামগ্রীর দামও বেড়েছে। এমন অবস্থায় আগামী ডিসেম্বর মাস থেকে রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা নিয়েও উদ্বেগজনক খবর দিয়েছে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো। রোহিঙ্গাদের খাদ্য সহায়তা বন্ধ করে দেওয়া হলে পরিস্থিতি যে কী দাঁড়াবে তা আর বলার অপেক্ষা রাখে না।

Manual8 Ad Code

টেকনাফ উপজেলার হোয়াইক্যং ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মওলানা নূর আহমদ আনোয়ারী বলেছেন, ‘উখিয়া-টেকনাফের দুটি উপজেলার স্থানীয় বাসিন্দা ছয় লাখ আর আমাদের দ্বিগুণ সংখ্যার রোহিঙ্গা হচ্ছে ১২ লাখ। এমনিতেই এখন আমরা সংখ্যালঘু, তার ওপর আরো রোহিঙ্গার অনুপ্রবেশ অব্যাহত থাকলে স্থানীয়দের অবস্থা কাহিল হয়ে পড়বে।’ তিনি অবিলম্বে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করার দাবি জানিয়েছেন। উখিয়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি সরওয়ার জাহান চৌধুরী মায়ানমার থেকে রোহিঙ্গাদের মাধ্যমে অস্ত্র ও মাদকের চালান পাচার কঠোর হস্তে দমনের ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন। তিনি উদ্বেগ জানিয়ে বলেন, মায়ানমার থেকে অস্ত্র, ইয়াবাসহ মাদক এনে ক্যাম্পগুলোতে মজুদ করা হয়। সেখান থেকে সারা দেশে ছড়িয়ে পড়ছে এসব মাদক ও অস্ত্র।

স্থানীয়রা জানিয়েছে, আগে থেকেই ১১ লাখ রোহিঙ্গার চাপে চরম দুর্ভোগে আছে স্থানীয়রা। বলতে গেলে স্থানীয়দের নিয়ন্ত্রণ চলে গেছে রোহিঙ্গাদের হাতে। সীমান্ত জনপদেও বাসিন্দাদের চলতে হয় জন্ম নিবন্ধন, ন্যাশনাল আইডি কার্ড হাতে নিয়ে। রোহিঙ্গাদের অনুপ্রবেশের ফলে উখিয়ার মানুষ প্রাণখুলে নিঃশ্বাস নিতে পারে না। ধুলাবালির কারণে নাকমুখ চেপে ধরে চলতে হয়। স্বাভাবিক চলাফেরার সুযোগও নেই। অতিরিক্ত গাড়ির চাপে রাস্তায় বেরোতে পারে না স্থানীয়রা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে পড়ে নাকাল হওয়ার চিত্র প্রতিদিনের। কত দিন বাজারে গিয়ে তাজা মাছ, তরিতরকারি পায় না উখিয়ার মানুষ। স্থানীয়রা বাজারে পৌঁছার আগেই তা চড়া দামে রোহিঙ্গারা কিনে নিয়ে যায়।

এ প্রসঙ্গে উখিয়া উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান রাসেল চৌধুরী জানান, এলাকাবাসীর প্রতিটি দিন কাটছে নিদারুণ কষ্টে। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর কাছে একরকম জিম্মিদশার মধ্যে আছে উখিয়ার মানুষ। প্রতিনিয়ত তাদের ভয়ে তটস্থ থাকে স্থানীয়রা। তাদের হাতে নিগৃহীত হওয়ার ভয়ে গা বাঁচিয়ে চলে সবাই। তাদের কারণে এলাকাবাসী মারাত্মক সামাজিক, অর্থনৈতিক, পরিবেশ, প্রতিবেশ ও জীববৈচিত্র‍্য সংকটে আছে। উখিয়ার মানুষের রাত কাটে রোহিঙ্গাদের অস্ত্রের ঝনঝনানির ভয়ে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code