প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

চোখের জলে সন্তানদের শেষ বিদায়!

editor
প্রকাশিত জুলাই ২৩, ২০২৫, ০৬:৪৮ পূর্বাহ্ণ
চোখের জলে সন্তানদের শেষ বিদায়!

Manual2 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

‘ভাগনিকে দাফন করা হয়েছে। ভাগনে মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছে। কী বলব, হৃদয়ে রক্তক্ষরণ হচ্ছে, ভাষা হারিয়ে ফেলেছি, কথা বলতে পারছি না। ফুলের মতো শিশুসন্তান। কী তাদের অপরাধ? কেন এমন হলো? এটাই কি নিয়তি ছিল…?’

অত্যন্ত ভারাক্রান্ত মন নিয়ে কথাগুলো বলছিলেন রাজধানীর উত্তরায় মাইলস্টোন ট্র্যাজেডিতে নিহত নাজিয়ার মামা হুমায়ুন কবির।

তিনি জানান, গতকাল মঙ্গলবার বাদ জোহর উত্তরার কামাড়পাড়া এলাকায় নাজিয়ার লাশ দাফন করা হয়। শোকাহত আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু-বান্ধব, সহপাঠী ও এলাকাবাসী তাকে চোখের জলে শেষ বিদায় জানান। নাজিয়ার ভাই নাফি এখনো ঢাকা মেডিকেল কলেজের বার্ন ইউনিটে রয়েছে। মাইলস্টোন স্কুলে পড়ত আপন দুই ভাইবোন। গত সোমবার বিমানবাহিনীর প্রশিক্ষণ যুদ্ধবিমান ওই স্কুলে বিধ্বস্ত হয়।

নাজিয়ার মতো কোমলমতি শিশুদের মৃত্যুতে পরিবার ও স্বজনদের পাশাপাশি শোকে স্তব্ধ পুরো দেশ।

মাইলস্টোন স্কুলে তৃতীয় শ্রেণিতে পড়ত নাজিয়া। আর প্রথম শ্রেণিতে পড়ত নাফি। যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দগ্ধ দুজনকে উদ্ধার করে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়। চিকিৎসাধীন অবস্থায় সোমবার রাত সাড়ে ৩টায় মৃত্যু হয়েছে নাজিয়ার। তার ছোট ভাই নাফি এখনো হাসপাতালে ভর্তি। শোকে স্তব্ধ তার বাবা-মা কারও সঙ্গে কথা বলতে পারছেন না।

হুমায়ুন কবির বলেন, ‘এমন মৃত্যু মেনে নেওয়া যায় না। এটা দুর্ভাগ্য বলে আমরা মেনে নিয়েছি। নাফি আইসিইউতে আছে।’ ছেলেটার অবস্থাও ভালো না বলতে বলতেই দুই চোখ ভিজে আসে মামা হুমায়ুনের।

নাজিয়া ছাড়াও গতকাল নিহত শিক্ষার্থী সামিউল করিমের লাশ দাফন সম্পন্ন হয়েছে। সকাল সাড়ে ১০টায় বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জ উপজেলার চাঁনপুর ইউনিয়নের বীর মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল স্কুল মাঠে তার জানাজা সম্পন্ন হয়।

Manual3 Ad Code

মা রেশমা বেগম মেহেন্দীগঞ্জের মুক্তিযোদ্ধা মোস্তফা কামাল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা ও বাবা রেজাউল করিম শামীম ব্যবসায়ী। মাইলস্টোনে সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল সামিউল।

সামিউলের স্বজন আবু জাহের বলেন, ‘এভাবে যেন কোনো মায়ের বুক খালি না হয়। এ শোক পাহাড় সমান। সরকার ও স্কুল কর্তৃপক্ষ এ দায় এড়াতে পারে না।’ আবাসিক এলাকায় যুদ্ধবিমানের প্রশিক্ষণ না করার জন্য সরকারের কাছে তিনি বিনীত অনুরোধ জানান।

বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় দগ্ধ হয়ে মারা যাওয়া সপ্তম শ্রেণির ছাত্র সায়ান ইউসুফের লাশও গতকাল তার গ্রামের বাড়িতে দাফন করা হয়েছে। তার লাশবাহী গাড়ি গতকাল দুপুর পৌনে ১টার দিকে লক্ষ্মীপুর সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর গ্রামে পৌঁছায়। তার মৃত্যুতে শোকে স্তব্ধ সবাই।

নিহত সায়ানের চাচা মিজানুর রহমান জানান, সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় সায়ান। ঝলসানো শরীর নিয়ে ঘটনাস্থল থেকে নিজেই বের হয়ে আসে। পরে বাবা-মা তাকে শনাক্ত করেন।

Manual6 Ad Code

তিনি বলেন, ‘সন্তানের এমন মৃত্যু কোনো বাবা-মায়ের কাম্য নয়। সায়ান ভালো ছাত্র ছিল। তাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল বাবা-মায়ের। কিন্তু একটা দুর্ঘটনায় সব শেষ হয়ে গেল।’ গতকাল বেলা ৩টার দিকে জানাজা শেষে দাদা ডা. মাকসুদুর রহমানের কবরের পাশে দাফন করা হয় সায়ানের লাশ।

মাইলস্টোন কলেজ শাখার রসায়ন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক এ এফ এম ইউসুফের ছেলে সায়ান। গত ঈদুল আজহার ছুটিতে সায়ান গ্রামের বাড়িতে মা-বাবা ও বোনের সঙ্গে ঈদ করতে এসেছিল। তার মৃত্যুতে পরিবার ও আত্মীয়-স্বজনদের মাঝে শোকের মাতম চলছে।

Manual2 Ad Code

এদিকে বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থী উক্য চিং মারমার (১৩) মৃত্যুতে রাঙামাটির রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া হেডম্যানপাড়া গ্রামের সবাই শোকে মুহ্যমান। সোমবার দিবাগত রাত ৩টায় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মৃত্যু হয় তার।

উক্য চিং মারমা রাজস্থলী উপজেলার বাঙ্গালহালিয়া ইউনিয়নের হেডম্যানপাড়ার বাসিন্দা কৃষিবিজ্ঞানের শিক্ষক বাবু উসাইমং মারমার একমাত্র সন্তান। মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ছিল সে। গতকাল বিকেলে ঢাকা থেকে উক্য চিংয়ের লাশ গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীদের রীতি অনুসারে পারিবারিক শ্মশানে তার সৎকার সম্পন্ন হওয়ার কথা রয়েছে।

নিহতের খালা নেলী মারমা জানান, একমাত্র ছেলেকে হারিয়ে শোকে পাথর হয়ে গেছে উক্য চিংয়ের পরিবার।

উত্তরায় যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত মোট ৩১ জন মারা গেছে বলে জানিয়েছে আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর (আইএসপিআর)। এই ৩১ জনের ১০ জন জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে, ১ জন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে, ১৬ জন সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে (সিএমএইচ), ২ জন লুবানা জেনারেল হাসপাতালে, ১ জন উত্তরা আধুনিক হাসপাতালে এবং ১ জন ইউনাইটেড হাসপাতালে মারা গেছে।

Manual2 Ad Code

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual3 Ad Code