প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্তহীনতা: অস্থিতিশীল দেশ

editor
প্রকাশিত জুলাই ২৪, ২০২৫, ০৯:১১ পূর্বাহ্ণ
গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে সিদ্ধান্তহীনতা: অস্থিতিশীল দেশ

Manual7 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে সমন্বয়হীনতা ও দায়িত্বশীলতার অভাবে নানা ধরনের অস্থিরতা তৈরি হচ্ছে কি না এ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। সম্প্রতি কয়েকটি ঘটনা তারই ইঙ্গিত দিচ্ছে বলে মনে করছেন রাজনীতিবিদরা।

রাজনীতিবিদদের মতে, সরকার সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে না পারায় পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণেরও বাইরে চলে গেছে। এছাড়া অনেকদিন ধরেই সরকারের মধ্যে একটা সমন্বয়হীনতা রয়েছে। সরকারের গুরুত্বপূর্ণ চেয়ারে বসে একেক সময় একেক ধরনের কথা বলা হয়।

মাইলস্টোনে বিমান দুর্ঘটনার পর সোমবার দিনগত রাতে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা নিয়ে সিদ্ধান্তহীনতা ও মঙ্গলবার মাইলস্টোনে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের নম্বরে অর্থ জমা দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে পরে সমালোচনার পরিপ্রেক্ষিতে তা সরিয়ে নেওয়া সমন্বয়হীনতা ও সিদ্ধান্তহীনতার উল্লেখযোগ্য উদাহরণ।

মাইলস্টোনে মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর বিভিন্ন মহল থেকে মঙ্গলবারের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিতের দাবি ওঠে। এ নিয়ে রাতে রাজধানীতে বিক্ষোভও হয়। এমনকি অনলাইন একটিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য তার ফেসবুক পেজে জানিয়েছেন, তিনি শিক্ষা উপদেষ্টাকে ফোন করে পরীক্ষা স্থগিতের পরামর্শ দেন। কিন্তু মধ্যরাত পর্যন্ত এ নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয় কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেনি।

তবে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম আরও আশ্চর্যজনক তথ্য দিয়েছেন। কয়েকজন উপদেষ্টা নাকি শিক্ষা উপদেষ্টাকে ফোন করে পাননি।

এমন পরিস্থিতিতে রাত পৌনে তিনটায় তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, শিক্ষা উপদেষ্টা মহোদয়ের সাথে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের মাননীয় উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের সাক্ষাৎ হয়েছে। আজকের এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করার সিদ্ধান্ত জানিয়েছেন মাননীয় শিক্ষা উপদেষ্টা।

কাছাকাছি সময়ে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভুঁইয়ার ফেসবুক পেজে দেওয়া এক পোস্টে বলা হয়, আজকের এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে।

এরপর দিবাগত রাত তিনটার দিকে ‘জরুরি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি’ হিসেবে তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা মো. মামুন অর রশিদ হোয়াটসঅ্যাপ গ্রুপে সাংবাদিকদের বলেন, রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ি এলাকায় মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে বিমান বিধ্বস্তে হতাহতের ঘটনায় মঙ্গলবারের (২২ জুলাই ২০২৫) এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষা স্থগিত করা হয়েছে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টাকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন শিক্ষা উপদেষ্টা।

কিন্তু শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা শিক্ষাবোর্ড এ বিষয়ে কোনো বিজ্ঞপ্তি দেয়নি।

Manual5 Ad Code

এরপর মঙ্গলবার সকালে প্রধান উপদেষ্টার প্রেস উইং থেকে পরীক্ষা স্থগিতের বিষয়টি জানানো হয়।

পাশাপাশি সকালে আন্তঃশিক্ষা বোর্ড সমন্বয় কমিটি সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে পরীক্ষা স্থগিতের কথা জানায়।

দুর্ঘটনার পর সারাদিন অতিবাহিত হলেও মন্ত্রণালয় বা বোর্ড কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি। এমন এক সময় সিদ্ধান্ত নেওয়া হলো যখন পরীক্ষার সময় বাকি ছিল মাত্র কয়েক ঘণ্টা। আবার সেই সিদ্ধান্ত সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় জানায়নি। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। মঙ্গলবার সচিবালয়ের পাশাপাশি দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ে। একদল ছাত্র শিক্ষা উপদেষ্টার পদত্যাগের দাবিতে সচিবালয়ের সামনে অবস্থান নেয়। তখন সরকার শিক্ষা সচিবকে প্রত্যাহার করার কথা জানায়। কিন্তু ততক্ষণে আন্দোলন সহিংস রূপ নেয়। ছাত্ররা সচিবালয়ে ঢুকে ভাঙচুর শুরু করে। পরবর্তীতে আইন শৃঙখলাবাহিনী ছাত্রদের ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এ নিয়ে দিনভর সচিবালয় এলাকা ও গুলিস্তান এলাকা ছিল অশান্ত।

এসব বিষয়ে জাতীয় নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, গতকাল থেকে আজকে পর্যন্ত যে পরিস্থিতি ডেভেলপ হচ্ছে এ ক্ষেত্রে সরকার আরও দায়িত্বশীল ও মানবিক আচরণ করতে পারতো। আমাদের কাছে মনে হয়েছে সরকারের দায়িত্বশীল আচরণ সঠিক সময়ে সঠিক পদক্ষেপ নিতে না পারায় পরিস্থিতি তাদের নিয়ন্ত্রণেরও বাইরে চলে গেছে। আজকে সারাদিন অনেক ঘটনা দেখেছেন। মাইলস্টোনের শিক্ষার্থীদের ছয় দফা দাবির সাথে সংহতি প্রকাশ করছি। কিছু কিছু উপদেষ্টার দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ দেখেছি। বিশেষত শিক্ষা উপদেষ্টা। গতকাল রাত তিনটা চারটার সময়ে আমাদের জানতে হচ্ছে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করতে হবে। অন্য উপদেষ্টারা তাকে ফোন দিয়ে পাচ্ছেন না। সরকারের যদি এই অবস্থা হয়, নিজেদের উপদেষ্টাদের মধ্যে সমন্বয় নেই, যেখানে পুরো ছাত্র সমাজ ট্রমাটাইজড। সেখানে একটা সিদ্ধান্ত নিতে রাত তিনটা চারটা বাজতেছে, অনিশ্চয়তা তৈরি হচ্ছে শঙ্কা তৈরি হচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে যদি সরকারের উপদেষ্টা দায়িত্বশীল আচরণ করতো তাহলে এই ধরনের পরিস্থিতি তৈরি হতো না।

Manual4 Ad Code

মাইলস্টোনে দুই উপদেষ্টার অবরুদ্ধ হওয়া নিয়ে নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, শিক্ষা উপদেষ্টা যিনি রাতে একটা দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণ করলেন। তিনি জাতির সামনে ক্ষমা না চেয়ে আবার স্পটে চলে গেলেন। এই যে পুরো ঘটনাটায় আমরা দায়িত্বশীল আচরণ দেখতে পেলাম না সরকারের বিভিন্ন উপদেষ্টার জায়গা থেকে। পুরো জাতি ট্রমাইটাইজ, সেখানে আরও বেশি ক্ষোভের সঞ্চার করছে।

Manual2 Ad Code

এদিকে মঙ্গলবার প্রধান উপদেষ্টার ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ থেকে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ভবনে বাংলাদেশ বিমানবাহিনীর যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হওয়ার ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তিদের জন্য অর্থসহায়তা চেয়ে একটি পোস্ট দেওয়া হয়। পোস্টে বলা হয়, ‘মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে প্রশিক্ষণ বিমান বিধ্বস্ত হয়ে ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য যারা অর্থ সাহায্য করতে চান, তারা উপরোক্ত ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিলের উল্লেখিত নম্বরে তা জমা দিতে পারেন। হিসাবের নাম: প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ ও কল্যাণ তহবিল, চলতি হিসাব নম্বর-০১০৭৩৩০০৪০৯৩, সোনালী ব্যাংক লি., প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় করপোরেট শাখা। ’ এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ব্যাপক সমালোচনা শুরু হয়। এর কিছুক্ষণ পর পেজ থেকে পোস্টটি সরিয়ে ফেলা হয়।

Manual6 Ad Code

এ দুই বিষয়ে অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট পিনাকী ভট্টাচার্য এক পোস্টে বলেন, ইন্টেরিম গেসে পাগল হইয়া। প্রধান উপদেষ্টার ত্রাণ তহবিলে টাকা চেয়েছিল। ………… পোস্ট ডিলেট দিয়েছে। কাল পরীক্ষা পেছনের এক সিদ্ধান্ত নিতেই এরা রাত পার করে ব্লান্ডার করেছে। অথচ ফ্রিতেই এই পরামর্শ দিয়েছিলাম বিকেল ৩টায়। আবার আজ সকালে ত্রাণের পোস্ট দিয়ে ……….। এটার পেছনে সমস্যা হচ্ছে মানুষ কি চায় সেটাকে সব সময় পপুলিজম হিসেবে নেগেটিভলি রিড করা। আর বয়স্ক উপদেষ্টাদের কথা কি বলব, এদের আমরা ফ্রি সার্ভিস দিতে দিতে আকাশে তুলেছি। স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নিজেই মুরব্বী ও অসুস্থ একজন মানুষ। এরা রাষ্ট্রটা হাতে পাইয়াও কিছুই করতে পারতেছে না। সচিবালয়ে ঢুকে পড়তে যাচ্ছে ছাত্ররা। একটা শিক্ষা দেওয়ার প্রয়োজন আছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক ও বাম গণতান্ত্রিক জোটের সমন্বয়ক রুহিন হোসেন প্রিন্স সরকারের সমন্বয়হীনতা নিয়ে এক প্রশ্নে বলেন, অনেকদিন ধরেই আমরা দেখে আসছি সরকারের মধ্যে একটা সমন্বয়হীনতা। একেক সময় একেক ধরনের কথা বলা হয়। বিশেষ করে সরকারের যারা প্রেসে কথা বলে বা দায়িত্বে আছে তাদের কথায় এটা বেশি দেখা যাচ্ছে। সরকার তো চলে একটা কেন্দ্র থেকে। কিন্তু এ ধরনের সমন্বয়হীন কথাবার্তায় মনে হয় আসলে কেন্দ্র কোথায়। মানুষের মধ্যে এ ধরনের নানা প্রশ্ন, বিভ্রান্তি ও সংশয় তৈরি হচ্ছে। এই যে বিমান দুর্ঘটনার মধ্য দিয়ে যে মর্মান্তিক ঘটনা ঘটে গেল, তারপরে সাহায্যের কথা বলা হলো, আবার সেটা প্রত্যাহার করা হলো, গভীর রাতে এইচএসসি পরীক্ষা স্থগিত করা হলো। আরো অনেক ঘটনা দেখা যায়, এইসবের মধ্য দিয়ে সমন্বয়হীনতা স্পষ্ট হয়ে ওঠে। এতে অস্থিতিশীলতা তৈরি হচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে দেশের মধ্যে আরো স্থিতিশীলতা বাড়বে ‌। এজন্যই আমরা আগেই বলেছিলাম, দ্রুত একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করা। সেটা যত দেরি হবে দেশে অস্থিতিশীলতাও তত বাড়বে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual2 Ad Code