প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

২০শে ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৫ই পৌষ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

এ বি এম খায়রুল হক গণতন্ত্র ধ্বংসের কারিগর

editor
প্রকাশিত জুলাই ২৫, ২০২৫, ০১:৪২ অপরাহ্ণ
এ বি এম খায়রুল হক গণতন্ত্র ধ্বংসের কারিগর

Manual4 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

সদ্য গ্রেপ্তার হওয়া সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে বলা হয় বিচারব্যবস্থা ধ্বংস ও শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বানানোর নেপথ্যের কারিগর। নানা কারণে সমালোচিত এই বিচারপতির বিরুদ্ধে বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে অনেক আগেই, যা আজও বিদ্যমান। গত বছরের ৫ আগস্ট আওয়ামী সরকার ক্ষমতাচ্যুত হওয়ার পর থেকেই তাকে গ্রেপ্তারের দাবিতে শক্ত অবস্থান নেয় বিএনপিসহ বিভিন্ন দল।

Manual7 Ad Code

বৃহস্পতিবার (২৪ জুলাই) রাজধানীর ধানমন্ডির নিজ বাসা থেকে তাকে গ্রেপ্তার করেছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। বাংলাদেশের ইতিহাসে কোনো সাবেক প্রধান বিচারপতিকে গ্রেপ্তার করার ঘটনা এটিই প্রথম।

বিগত সরকারের সময়ে হাইকোর্টের বিচারপতি, আপিল বিভাগের বিচারপতি ও পরে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে থাকার সময় খায়রুল হকের দেওয়া কয়েকটি রায় নিয়ে বেশি বিতর্কের সৃষ্টি হয়েছে। বিতর্কিত রায়গুলো তৎকালীন সরকার ও আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক অবস্থানের জন্য সুবিধাজনক বা সমর্থনসূচক ছিল। রায়ের মধ্য দিয়ে তিনি রাজনৈতিক বিষয়কে আদালতের আওতায় এনে প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান ‘স্বাধীনতার ঘোষক নন’ বলে উল্লেখ করেন। জিয়াউর রহমানের সহধর্মিণী বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে উচ্ছেদ করতে চূড়ান্ত রায় দেন তিনি। বিতর্কিত দুই বিচারপতিকে শপথ পড়ানো, হাইকোর্টের আগাম জামিনের এখতিয়ার কেড়ে নেওয়া, ত্রাণের টাকায় অনৈতিকভাবে নিজের চিকিৎসা করা, দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারি প্লট বাগিয়ে নেওয়া, ক্ষমতার অপব্যবহারসহ নানা অপকর্মের কারণে তিনি এখনো ব্যাপক সমালোচিত।

বৃহস্পতিবার তাকে গ্রেপ্তারের পর বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হককে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। তাকে শাস্তি দেওয়ার মধ্য দিয়ে নিশ্চিত করতে হবে ভবিষ্যতে বিচারকাজে কেউ কাউকে যাতে আর ব্যবহার করতে না পারে।’

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান নিজের ফেসবুক পেজে লেখেন, ‘এ বি এম খায়রুল হক ফ্যাসিস্ট সরকারের আমলে প্রধান বিচারপতির দায়িত্বে ছিলেন। কোনোমতেই তিনি তার দায়িত্বের মর্যাদা উপলব্ধি করেননি এবং আমানত রক্ষা করেননি। এই মর্যাদাপূর্ণ চেয়ারে বসে ইতোপূর্বে কেউ দেশ ও জাতির এত বড় ক্ষতি করেননি। তার হঠকারী রায়ের মাধ্যমে রাজনৈতিক মাফিয়াদের হাতে গুম, খুন, লুণ্ঠনসহ সব অপকর্মের লাইসেন্স ও হাতিয়ার তুলে দেওয়া হয়েছিল।’

Manual4 Ad Code

এদিকে গতকাল সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে বিএনপির আইনবিষয়ক সম্পাদক ও জাতীয়তাবাদী আইনজীবী ফোরামের মহাসচিব ব্যারিস্টার কায়সার কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘দেশের বিচার বিভাগ ও গণতন্ত্র হত্যা এবং হাসিনাকে ফ্যাসিস্ট বানানোর মেইন আর্কিটেক্ট (প্রধান কারিগর) হলেন সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক। তার এমন শাস্তি হওয়া উচিত, যাতে ভবিষ্যতে বিচারাঙ্গনে নতুন কোনো খায়রুল হকের জন্ম না হয়।’
মামলার শুনানিতে রাজনৈতিক পক্ষপাতমূলক বক্তব্য ও আওয়ামী লীগকে খুশি করতে দেওয়া রায়ের মধ্য দিয়ে তার প্রতি সরকারের বিশেষ সুদৃষ্টি অনেকটাই প্রকাশ্য রূপ নেয় ২০১০ সালে। কয়েকজন সিনিয়র বিচারপতিকে ডিঙিয়ে তাকে প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ দেয় সরকার। ২০১০ সালের ৩০ সেপ্টেম্বর দেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে তিনি শপথ গ্রহণ করেন। এরপর আওয়ামী লীগকে খুশি করতে আরও কিছু বিতর্কিত রায় দেন। বিচার বিভাগের উচ্চাসনে বসে ফ্যাসিবাদ প্রতিষ্ঠায় শেখ হাসিনাকে সহযোগিতা করাই যেন ছিল তার মূল কাজ।

Manual1 Ad Code

বিতর্কিত সেই রায়

তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিলের সংক্ষিপ্ত রায় ও পূর্ণাঙ্গ রায়ে ব্যাপক রদবদলের ক্ষেত্রে এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে তীব্র সমালোচনা আজও বিদ্যমান। ২০১১ সালের ১০ মে এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগের সাত বিচারপতির বেঞ্চের ঘোষিত সংক্ষিপ্ত রায়ে বলা হয়েছিল, ‘সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনী প্রসপেক্টিভলি (ভবিষ্যতের জন্য) বাতিল ও অসাংবিধানিক ঘোষণা করা হলো, যা সাধারণত আইনসিদ্ধ নয়। জনগণ ও রাষ্ট্রের নিরাপত্তাই সর্বোচ্চ আইন। সংসদ চাইলে আগামী দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত হতে পারে। তবে সংসদ ইচ্ছা করলে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান হিসেবে সাবেক প্রধান বিচারপতি বা আপিল বিভাগের বিচারকদের বাদ দিয়ে প্রয়োজনীয় সংশোধনী আনতে পারে।’

সংক্ষিপ্ত এই রায় ঘোষণার পর এ বি এম খায়রুল হক চাকরির মেয়াদ শেষে প্রধান বিচারপতির পদ থেকে অবসর নেন। রায় ঘোষণার ১৬ মাস পর অবসরে থাকা অবস্থায় ২০১২ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়। পূর্ণাঙ্গ রায়ে পরবর্তী দুই মেয়াদে (দশম ও একাদশ সংসদ নির্বাচন) তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বলবৎ থাকার বিষয়টি ছিল না। শুধু তা-ই নয়, সরকারের মেয়াদ শেষ হলেও সংসদ বহাল থাকার কথা যুক্ত করা হয়। এতে সংক্ষিপ্ত রায়ের সঙ্গে পূর্ণাঙ্গ রায়ের ব্যাপক অসংগতি নিয়ে সে সময় জোরালো বিতর্ক ও সমালোচনা শুরু হয়।

পূর্ণাঙ্গ রায়টি লেখেন বিচারপতি খায়রুল হক। রায়ে তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ সালের সংবিধানের ত্রয়োদশ সংশোধনীর আইন সংবিধানে বর্ণিত রাষ্ট্রীয় মূলনীতি এবং মৌলিক কাঠামোকে নষ্ট করে দেওয়ার কারণে তা অসাংবিধানিক, বেআইনি এবং অকার্যকর বলে গণ্য হয়েছে।’ রায়ে তিনি আরও বলেন, ‘সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিষয়টি সংসদের কর্তৃত্বাধীন। সংসদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচনের একটি যুক্তিসংগত সময়ের আগে সংসদ ভেঙে দেওয়া যেতে পারে এবং এ সময়টি ৪২ দিন হতে পারে। নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা নতুন মন্ত্রিসভা গঠন না হওয়া পর্যন্ত রাষ্ট্র পরিচালনায় স্বাভাবিক এবং সাধারণ কার্যাবলি সম্পাদন করবে। নির্বাচনি তফসিল ঘোষণার পর থেকে নির্বাচনি ফলাফল ঘোষণা পর্যন্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে সম্পৃক্ত সব ব্যক্তি এবং প্রজাতন্ত্রের সব কর্মকর্তা-কর্মচারী নির্বাচন কমিশনের অধীনে থাকবে।’ পূর্ণাঙ্গ রায়ে বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি হন), বিচারপতি এস কে সিনহা (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি এবং সরকারের চাপে পদত্যাগ ও দেশত্যাগে বাধ্য হন) এবং বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন (পরবর্তী সময়ে প্রধান বিচারপতি হন)।

ওই রায়ের সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বহাল রাখার পক্ষে মত দেন বিচারপতি মো. আবদুল ওয়াহহাব মিঞা। তার সঙ্গে একমত পোষণ করেন বিচারপতি নাজমুন আরা সুলতানা। তবে বিচারপতি মো. ইমান আলী তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পক্ষে বা বিপক্ষে মত না দিয়ে বিষয়টি জাতীয় সংসদের ওপর ছেড়ে দেন। দেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের লক্ষ্যে ১৯৯৬ সালে ত্রয়োদশ সংশোধনীর মাধ্যমে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা প্রবর্তন করা হয়েছিল। ২০১১ সালে সর্বোচ্চ আদালতের রায়ের পর একই বছর আওয়ামী লীগ সরকার নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা বাতিল রেখে বিদ্যমান সংসদ ও সরকারের অধীনেই নির্বাচন অনুষ্ঠানের বিধান যুক্ত করে সংবিধানের পঞ্চদশ সংশোধনী পাস করে। এই সংশোধনীর মাধ্যমে মূলত ক্ষমতাসীন দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনের ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনা হয়। এই সংশোধনীর বিরুদ্ধে গত বছর রিট করা হয়। শুনানি শেষে তত্ত্বাবধায়ক সরকারব্যবস্থা সরাসরি না ফেরানোসহ পঞ্চদশ সংশোধনীর কিছু বিষয়ে হস্তক্ষেপ না করে সেগুলো পরবর্তী সংসদের ওপর দায়িত্ব দিয়ে রায় ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। গত ৮ জুলাই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়।

খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদের রায়

ঢাকা সেনানিবাসের বাড়ি ছাড়তে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে খালেদা জিয়ার আপিল আবেদন (লিভ টু আপিল) ২০১০ সালের ২৯ নভেম্বর খারিজ করেন তৎকালীন প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের নেতৃত্বে আপিল বিভাগের তিন বিচারপতির বেঞ্চ।

এর আগে হাইকোর্টের রায়ের ভিত্তিতে ওই বছরের ১৩ নভেম্বর ক্যান্টনমেন্টের বাড়ি থেকে খালেদা জিয়াকে উচ্ছেদ করা হয়।

১৯৮১ সালের ৩০ মে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে নিহত হওয়ার পর ওই বছরের ১২ জুন তৎকালীন অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি বিচারপতি আবদুস সাত্তার শহিদ মইনুল সড়কের বাড়িটি খালেদা জিয়ার নামে বরাদ্দ দেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেই ২০০৯ সালের ৮ এপ্রিল ওই বাড়ির ইজারা বাতিলের সিদ্ধান্ত নেয়। এরপর বাড়িটি খালি করতে খালেদা জিয়াকে তিন দফায় নোটিশ দেয় সামরিক ভূমি ও সেনানিবাস অধিদপ্তর। পরে হাইকোর্টের রায়ের মাধ্যমে তাকে উচ্ছেদ করা হয়।

রায়ে জিয়া স্বাধীনতার ঘোষক নন

আওয়ামী লীগের সরকারের সময় ২০০৯ সালে হাইকোর্টের তৎকালীন বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হক রায়ে উল্লেখ করেন জিয়াউর রহমান নন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানই স্বাধীনতার ঘোষক। রায়ে জিয়াউর রহমানকে স্বাধীনতার ঘোষক উপস্থাপন করে প্রকাশিত ‘বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ, দলিলপত্র’-এর তৃতীয় খণ্ড বাতিল ঘোষণা করেন। এই খণ্ডটি দেশ-বিদেশের সব স্থান থেকে বাজেয়াপ্ত ও প্রত্যাহারেরও নির্দেশ দেন। রায়ে বলা হয়, যারা এ রকম ইতিহাস বিকৃতির সঙ্গে জড়িত, তারা সংবিধান লঙ্ঘন করেছেন। দেশের সব মাধ্যমের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পাঠ্যক্রমে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস বাধ্যতামূলকভাবে সন্নিবেশ করতেও সরকারকে নির্দেশ দেন।

দুই বিতর্কিত বিচারপতিকে শপথ

২০১০ সালের ১১ এপ্রিল ১৭ জনকে হাইকোর্টের অতিরিক্ত বিচারপতি নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে একজন হত্যা মামলার আসামি ও অন্যজন প্রধান বিচারপতির দরজায় লাথি মেরেছিলেন উল্লেখ করে ওই দুজনকে শপথ না পড়ানোর দাবিতে সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির বিএনপি সমর্থিত আইনজীবীরা আন্দোলন শুরু করেন। ওই সময় প্রধান বিচারপতি মোহাম্মদ ফজলুল করিম দুজনকে বাদ দিয়ে অপর ১৫ জনকে শপথ পড়ান। মোহাম্মদ ফজলুল করিম অবসরে যাওয়ার পর কয়েকজন জ্যেষ্ঠ বিচারপতিকে ডিঙিয়ে প্রধান বিচারপতি হন এ বি এম খায়রুল হক। ফলে শপথবঞ্চিত দুই বিচারপতির অপেক্ষা অবসান হয় এবং নিয়োগের প্রায় ছয় মাস পর ২০১০ সালের ১ সেপ্টেম্বর তাদের শপথ পড়ান এ বি এম খায়রুল হক।

আগাম জামিনের এখতিয়ার কেড়ে নেওয়া

প্রধান বিচারপতি হিসেবে এ বি এম খায়রুল হকের দেওয়া অনেক বিতর্কিত রায়গুলোর একটি হচ্ছে- বিচারকদের আগাম জামিন দিতে হাইকোর্ট বিভাগের এখতিয়ার কেড়ে নেওয়া। একটি আগাম জামিনের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের আপিলের রায়ের মাধ্যমে এখতিয়ার কেড়ে নেন খায়রুল হকের নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ। ওই সময় আপিল বিভাগের অন্যতম বিচারপতি ছিলেন সুরেন্দ্র কুমার সিনহা (পরে প্রধান বিচারপতি হন এবং সরকারের চাপে পদত্যাগ করেন)।

সরকারি প্লট নিতে দুর্নীতি

মিথ্যা তথ্য দিয়ে অনিয়ম ও দুর্নীতির মাধ্যমে পূর্বাচল নতুন শহর প্রকল্পে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার অভিযোগে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে অনুসন্ধান শুরু করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। গতকাল বৃহস্পতিবার নিয়মিত সংবাদ সম্মেলনে দুদকের মুখপাত্র ও মহাপরিচালক আক্তার হোসেন বিষয়টি নিশ্চিত করেন। তিনি জানান, রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) ও গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের অসাধু কর্মকর্তাদের যোগসাজশে প্লট বরাদ্দ নেওয়ার ঘটনায় এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে আসা অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
এদিকে দুদক সূত্র জানায়, অভিযোগের ভিত্তিতে গত ২৯ জুন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের এনফোর্সমেন্ট টিম রাজউক কার্যালয়ে অভিযান চালায়। অভিযানে সংশ্লিষ্ট প্লট সম্পর্কে প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহ করা হয়। এতে প্রাথমিকভাবে অভিযোগের সত্যতা পেয়ে সাবেক প্রধান বিচারপতি এ বি এম খায়রুল হকসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করার সুপারিশ জানিয়ে কমিশনে প্রতিবেদন পেশ করা হলে কমিশন তা অনুমোদন করে।

ক্ষমতার অপব্যবহার

আইন কমিশনের চেয়ারম্যান থাকাকালে এ বি এম খায়রুল হকের বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ ওঠে। আইন কমিশনের গাড়িচালক হিসেবে চাকরি করতেন এস এম সামসুল আলম। তিনি ২০১৩ সালে ক্ষমতার অপব্যবহার করে সামসুল আলমকে চাকরি থেকে বাধ্যতামূলক অবসরে পাঠান। সামসুল আলম চাকরি হারিয়ে অত্যন্ত মানবেতর জীবনযাপন করছেন। সম্প্রতি তিনি চাকরি ফেরত চেয়ে প্রধান উপদেষ্টা বরাবর আবেদন করেছেন।

ত্রাণের টাকায় নিজের চিকিৎসা

Manual2 Ad Code

প্রধান বিচারপতি থাকাকালে এ বি এম খায়রুল হক প্রধানমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিল থেকে নিয়েছিলেন ১০ লাখ ৩৭ হাজার ২৫০ টাকা। সোনালি ব্যাংক সুপ্রিম কোর্ট শাখায় এ বি এম খায়রুল হকের ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্টের হিসাবে ২০০৯ সালের ২৭ জুলাই অ্যাকাউন্ট পে-চেকের মাধ্যমে ১০ লাখ ৩৭ হাজার ২৫০ টাকা জমা হয়। ওই দিনই তিনি (বিচারপতি খায়রুল হক) নগদ ৯ লাখ টাকা ওঠান। এর পরের দিন ২৮ জুলাই ২০ হাজার টাকা নগদ ওঠানো হয়েছে। এবং একই দিন অপর একটি অ্যাকাউন্ট পে-চেকের মাধ্যমে ৩৮ হাজার ৬০০ টাকা তার হিসাব থেকে ডেবিট হয়েছে। আইনজীবীদের দাবি, এ বি এম খায়রুল হক অনৈতিকভাবে গরিবের টাকা দিয়ে নিজের চিকিৎসা করিয়েছেন। এটি একটি গর্হিত কাজ।

এ বি এম খায়রুল হক ১৯৪৪ সালের ১৮ মে মাদারীপুর জেলার রাজৈর এলাকায় জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতার নাম রফিকুল হক। তিনি আইন বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এলএলবি এবং যুক্তরাজ্যের লিংকনস্‌-ইন থেকে বার-অ্যাট-ল’ ডিগ্রি লাভ করেন। ১৯৭০ সালে মাদারীপুর জেলা জজ আদালতে আইন পেশায় যুক্ত হন। ১৯৭৬ সালে হাইকোর্টের আইনজীবী হিসেবে নিবন্ধিত হন। ২৫ বছর হাইকোর্ট ও সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে ওকালতি করার পর ১৯৯৮ সালের এপ্রিলে হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। ২০১০ সালে আপিল বিভাগের বিচারপতি এবং একই বছর বাংলাদেশের ১৯তম প্রধান বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান তিনি। ৬৭ বছর পূর্ণ হওয়ায় পরের বছরের (২০১১ সাল) ১৭ মে তিনি অবসর গ্রহণ করেন। ২০১৩ সালের ২৩ জুলাই খায়রুল হককে তিন বছরের জন্য আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। মেয়াদ শেষে তাকে আইন কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে কয়েক দফায় পুনর্নিয়োগ দেওয়া হয়। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে গত বছরের ১৩ আগস্ট তিনি পদত্যাগ করেন। এরপর তাকে আর প্রকাশ্যে দেখা যায়নি।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual8 Ad Code