প্রজন্ম ডেস্ক:
ঘটনা যেমন ঘটছে, তেমনি দুর্ঘটনাও। এখন প্রশ্ন উঠেছে, ঘটনা-দুর্ঘটনাকে কি কোনো মহল তাদের স্বার্থের পুঁজি করছে? আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শতচেষ্টায় বাগে আসছে না। অতি সম্প্রতি গোপালগঞ্জের ঘটনার পর মাইলস্টোন ট্র্যাজেডি। মর্মান্তিক এ দুর্ঘটনার পরদিন শিক্ষার্থীর ন্যায্য বিক্ষোভে ‘ফ্যাসিবাদী চক্রের’ ইন্ধন নিয়েও কথা উঠেছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতাদের বক্তব্যে এসেছে, বিক্ষোভে পতিত আওয়ামী লীগের দোসররা ঢুকে পড়েছে।
এরপর অন্তর্বর্তী সরকার রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় বসেছে। বৈঠক থেকে ফ্যাসিবাদবিরোধী প্রশ্নে আবারও রাজনৈতিক দলগুলোকে ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানানো হয়েছে। গত মঙ্গলবার রাতে রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় চারটি রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠকে প্রধান উপদেষ্টা ফ্যাসিবাদবিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর দৃশ্যমান ঐক্য দেখতে চেয়েছেন। আবার রাজনৈতিক দলগুলোও সরকারের সঙ্গে থাকার প্রত্যয় ব্যক্ত করে। পরদিন বুধবারও ১৩ রাজনৈতিক দল ও জোটের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। সেখানেও ফ্যাসিবাদবিরোধী ঐক্য ধরে রাখতে রাজনৈতিক দলের নেতারা অঙ্গীকার করেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, প্রতিরোধ ও প্রতিহত করার নানা কৌশলে মাঠে নামবে আওয়ামী লীগ। কেউ কেউ মনে করেন, নামবে নয়, নেমেই গেছে আওয়ামী লীগ। ফলে ঐক্য আরও সুদৃঢ় করতে হবে জুলাই শক্তিকে।
এদিকে যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ, ‘গোপন চুক্তি’, ‘চড়া দামে গম আমদানি’ এরকম নানা ধরনের গুজব অব্যাহত রয়েছে। যদিও সরকারের পক্ষ থেকে এসব গুজবের ব্যাখ্যা দেওয়া হচ্ছে।
‘ফ্যাসিবাদী চক্রের’ ইন্ধন প্রকাশ্য না হলেও ভেতরে ভেতর বিভিন্ন মহলে এ নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। গোপালগঞ্জ ইস্যুতে গতকাল শুক্রবার মানবতার লঙ্ঘনের অভিযোগ তুলেছে আইন ও সালিশ কেন্দ্র (আসক)। পাশাপাশি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থা নিয়ে অর্থনীতিবিদ ড. দেবপ্রিয় ভট্টাচার্যের প্রতিক্রিয়া সমালোচনার মুখোমুখিও হতে হচ্ছে সরকারকে।
এদিকে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনা আছে আর কতদূর গেলে নির্বাচনের দিকে ঝুঁকবে সরকার, সংকটের উত্তরণ ঘটবে, ঘুচবে অনিশ্চয়তা, এ প্রশ্নগুলো ঘুরপাক খাচ্ছে।
রাজনৈতিক দলের নেতারা বলছেন, ষড়যন্ত্র-চক্রান্ত ও সংকট ছিন্ন করতে পারে একমাত্র নির্বাচন। একটি অঘটন বা দুর্ঘটনা ঘটলে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস তার বাসভবন যমুনায় ডেকে নিয়ে যান। রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রত্যাশা করেন। কিন্তু সংকট থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।
রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচন দাবি করে এলেও অন্তর্বর্তী সরকার তা আমলে নিচ্ছে না অভিযোগ আছে রাজনৈতিক অঙ্গনে। রাজনৈতিক দলের শীর্ষ নেতৃত্ব ও বিশ্লেষকরা মনে করেন, জাতীয় সংসদ নির্বাচনের মধ্য দিয়ে রাজনৈতিক সরকার দেশের দায়িত্বভার নিলেই তাদের অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে দেশকে অনিশ্চয়তার হাত থেকে রক্ষা করতে পারবে। এ ক্ষেত্রে যত দেরি করবে, সংকট ততই ঘনীভূত হবে।
রাজনৈতিক দলের নেতা ও বিশ্লেষকরা আরও বলেন, সরকার পরিচালনায় দায়িত্বশীলরা অদক্ষ-অনভিজ্ঞ সেটিও আলোচনায় এসেছে। রাজনৈতিক নেতৃত্বের বাইরেও সুশীল সমাজ ও বেসরকারি টেলিভিশনের আলোচনায় যারা কথা বলছেন, তারা সরকারের অদক্ষতা সামনে টেনে সমালোচনা করছেন। রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনের দাবি পূরণ করলেই শুধু সংকট থেকে দেশকে টেনে তোলা সম্ভব। সংকটের উত্তরণ ঘটাতে পারে।
রাজনৈতিক দলের নেতারা এমনটা বললেও ইতিমধ্যে সরকার ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশ নিয়েছে। লন্ডন বৈঠকের পর বলা হয়েছে, ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে নির্বাচন হবে। নির্বাচন কমিশনও বলেছে, চ্যালেঞ্জ হলেও নির্বাচন সম্ভব। নাগরিক ঐক্যের সভাপতি মাহমুদুর রহমান মান্না বলেন, ‘যারা পরাজিত হয়েছে ফ্যাসিবাদ ও পতিত শক্তি, তারা তাদের হারানো সাম্রাজ্য উদ্ধার করতে ধীরে ধীরে সর্বোচ্চ শক্তি নিয়ে নামবে এটা তারা আগে বলেছে। কিন্তু তাদের মোকাবিলা করতে যে ধরনের রণকৌশল নির্ধারণ করা জরুরি, সেটা এ সরকার পারছে না। কারণ, অভিজ্ঞতার ঘাটতি আছে এটা পদে পদে দেখা যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘নির্বাচন অনেক সমস্যার সমাধান হতে পারে।’
বাংলাদেশ কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোহাম্মদ শাহ আলম বলেন, ‘সংকট থেকে উত্তরণের একমাত্র পথ নির্বাচন। যত দ্রুত এ সরকার নির্বাচনের দিকে ধাবিত হবে, ততই দেশ সংকটমুক্ত হবে। একটি অঘটন বা দুর্ঘটনা ঘটলে প্রধান উপদেষ্টা তার বাসভবন যমুনায় ডেকে নিয়ে যান। রাজনৈতিক ঐকমত্য প্রত্যাশা করেন। এভাবে উনি কতদূর টেনে নিয়ে যাবেন? এটি কোনো সমাধান হতে পারে না। সংকট থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই।’
অন্তর্বর্তী সরকারের কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেছেন, ‘করপোরেট বা এনজিও কায়দায় সরকার চালালে হবে না। জনগণের সরকারকে বাস্তবমুখী ব্যবস্থা নিতে হবে।’ গত বৃহস্পতিবার পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট আয়োজিত সামস্টিক অর্থনীতির মাসিক পর্যালোচনা বিষয়ে আলোচনায় এ কথা বলেন তিনি।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, ‘সমন্বয়হীনতার পাশাপাশি অভিজ্ঞতার অভাব থাকায় অন্তর্র্বর্তী সরকার বিতর্কে জড়িয়ে পড়ছে।’ তিনি বলেন, ‘সরকারের কার্যক্রম দৃশ্যমান নয়। নির্বাচন যত বিলম্বিত হবে, সরকার ততই নানান ধরনের প্রশ্নের মুখে পড়বে এবং সংকট সৃষ্টি হবে।’ বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশে উত্তরা মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে মর্মান্তিক বিমান দুর্ঘটনায় নিহত শিক্ষার্থীদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে গতকাল সাক্ষাৎ অনুষ্ঠানে গিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
Sharing is caring!