প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি

editor
প্রকাশিত জুলাই ৩০, ২০২৫, ০১:৩৪ অপরাহ্ণ
তফসিল ঘোষণার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইসি

Manual8 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

Manual8 Ad Code

ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের এখনো সুনির্দিষ্ট সময়সীমা ঘোষণা করা না হলেও এই নির্বাচন অনুষ্ঠানের পুরোপুরি প্রস্তুতি নিচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচন কমিশনের একাধিক সূত্রে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, এ মুহূর্তে ইসি সচিবালয়ে চলছে আগামী সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার প্রাক-প্রস্তুতি। তবে রাষ্ট্র সংস্কারে সরকারের চলমান উদ্যোগের ফলে ভোটের দিনক্ষণ নির্ধারণে সরকারি ঘোষণার জন্য অপেক্ষা করতে হচ্ছে কমিশনকে।

 

সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাতের পর প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচনের প্রস্তুতি সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। তাকে জানিয়েছি, আমাদের নির্বাচনের প্রস্তুতি চলছে ফুল গিয়ারে।’

Manual6 Ad Code

এর আগে গত ১৫ জুন সিইসি বলেন, ‘ভোট ফেব্রুয়ারিতে বা এপ্রিলে যখনই হোক, আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে। সরকারের পূর্ব ঘোষণা (ডিসেম্বর থেকে জুন) মাথায় রেখেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। এখন আমরা প্রস্তুতির বাইরে কিছু চিন্তা করছি না।’

Manual7 Ad Code

ইসি প্রধানের সেই ঘোষণা অনুযায়ী সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে ইসি সচিবালয়ে চলছে নানা কর্মযজ্ঞ। এরই মধ্যে ভোটার তালিকা প্রকাশ, নতুন রাজনৈতিক দলের নিবন্ধন, সংসদীয় আসনের সীমানা পুনর্নির্ধারণ, প্রবাসীদের ভোটাধিকার নিশ্চিত করা, নির্বাচনসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন আইন-বিধি সংস্কারসহ বিশাল কর্মযজ্ঞ প্রায় গুছিয়ে এনেছে সংস্থাটি। প্রস্তুতি হিসেবে আগামী ১০ আগস্ট হালনাগাদ ভোটারের খসড়া প্রকাশ এবং ৩১ আগস্ট চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে ইসি। সবশেষ হালনাগাদসহ এবার দেশে ভোটার প্রায় ১৩ কোটি। ভোট গ্রহণের জন্য ক্ষতিগ্রস্ত ভোট কেন্দ্র মেরামতসহ প্রস্তুত করা হচ্ছে প্রায় ৪৬ হাজার ভোট কেন্দ্র। ভোট গ্রহণের দায়িত্ব পালনে থাকবেন যারা, সেসব দায়িত্বশীল পদের নির্বাচন কর্মকর্তাদের রদবদল করা হচ্ছে। এ ছাড়া নির্বাচন প্রক্রিয়ায় স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে সিসিটিভির মাধ্যমে ভোট কেন্দ্র মনিটরিং এবং ‘বিতর্কিত’ বিগত তিন নির্বাচনে দায়িত্ব পালন করা ব্যক্তিদের ভোটে না রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

ইসি সচিবালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বিগত ১৫ দিনে দুই দফায় নির্বাচন কমিশনের ১২২ জন কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। তার আগে ১৫ জুলাই ৫১ জন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাকে এবং চলতি বছরের শুরুতে ইসি সচিবালয়ের কেন্দ্রীয় ও মাঠপর্যায়ের ৬২ কর্মকর্তার পদে রদবদল করা হয়। এ ছাড়া ভোটের সময় দায়িত্ব পালনের জন্য প্রিসাইডিং ও পোলিং অফিসারসহ সবমিলিয়ে নির্বাচনসংশ্লিষ্ট প্রায় ৯ লাখ কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইসির নির্বাচনি প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক এস এম আসাদুজ্জামান আরজু।

গত ২৬ জুলাই রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন যমুনায় ১৪টি রাজনৈতিক দলের সঙ্গে বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। বৈঠক শেষে জাতীয় পার্টির (কাজী জাফর) চেয়ারম্যান মোস্তফা জামাল হায়দার গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দেশব্যাপী চলমান অরাজকতা সমাধানের একমাত্র পথ নির্বাচন, এটা সরকার বুঝতে পেরেছে। এ জন্য প্রধান উপদেষ্টা সুস্পষ্টভাবে তাদের জানিয়েছেন, আগামী ৪-৫ দিনের (৩১ জুলাই) মধ্যে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সময় তিনি ঘোষণা করবেন।’ এরপর গত সোমবার সংসদ নির্বাচনের জন্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রস্তুতির বিষয়ে বাহিনীর প্রধানদের সঙ্গে উচ্চপর্যায়ের এক বৈঠক করেন প্রধান উপদেষ্টা। পরে এ বিষয়ে সংবাদ সম্মেলন করেন প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব শফিকুল আলম ও উপপ্রেস সচিব আবুল কালাম আজাদ মজুমদার।

তারা জানান, প্রধান উপদেষ্টার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত উচ্চপর্যায়ের এই বৈঠকে নির্বাচনকালীন সারা দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষা, ভুয়া তথ্য প্রতিরোধ এবং প্রশাসনিক প্রস্তুতির ওপর বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। বৈঠকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্বাচনের আগে সহিংসতা বা অস্থিরতা সৃষ্টি হতে পারে এমন হটস্পটগুলো দ্রুত চিহ্নিত করতে বলা হয়েছে।

 

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ৮ লাখ সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। ৫ লাখ ৭০ হাজার থাকবেন আনসার এবং ১ লাখ ৪১ হাজার থাকবেন পুলিশ বাহিনীর সদস্য। নির্বাচনের সময় আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে প্রায় ৬০ হাজার সেনাসদস্য মোতায়েন থাকবেন। এ ছাড়া নির্বাচন ঘিরে গুজব ও ভুয়া তথ্য ছড়ানোর প্রবণতা বেড়ে যাওয়ায় সরকার ‘ন্যাশনাল ইনফরমেশন সেন্টার’ গঠনের পরিকল্পনা নিয়েছে। সরকার সন্ত্রাসবিরোধী কর্মকাণ্ডে জিরো টলারেন্স নীতি মেনে চলছে এবং নির্বাচনি নিরাপত্তাকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিচ্ছে। নির্বাচনকে কেন্দ্র করে প্রশাসনে আরও প্রয়োজনীয় রদবদল করা হবে।

Manual7 Ad Code

গত বছরের ৫ আগস্ট গণ-অভ্যুত্থানের পর ৮ আগস্ট প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে দায়িত্ব নেয় অন্তর্বর্তী সরকার। পরে দলগুলোর মধ্যে বিশেষ করে বৃহৎ রাজনৈতিক দল বিএনপি ২০২৫ সালের ডিসেম্বরের মধ্যেই নির্বাচন দাবি করে। এর পরিপ্রেক্ষিতে গত ৬ জুন ঈদুল আজহার আগের দিন জাতির উদ্দেশ্যে দেওয়া ভাষণে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হবে। পরে লন্ডনে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে বৈঠকের পর প্রধান উপদেষ্টা প্রস্তুতি সাপেক্ষে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারিতে নির্বাচনের সম্ভাবনার কথা জানান।

ইসি ও সরকারের বিভিন্ন সূত্র জানায়, আগামী সংসদ নির্বাচনের জন্য প্রাথমিকভাবে দুটি তারিখ সামনে আসছে। দেশের পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকলে ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির ৮ অথবা ১১ তারিখে ভোট গ্রহণ হতে পারে। এ দুটি দিন নিয়ে বিভিন্ন মহলে আলোচনা চলছে। তবে ৮ ফেব্রুয়ারি রবিবার ভোট গ্রহণের সম্ভাবনা বেশি।

সংসদ নির্বাচনের তারিখ যেটাই নির্ধারণ করা হোক না কেন, নির্বাচন কমিশনের সব ধরনের প্রস্তুতি অব্যাহত রয়েছে। সম্প্রতি ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচনের সব প্রস্তুতি শেষ করতে প্রধান উপদেষ্টার নির্দেশের পর চার নির্বাচন কমিশনারের নেতৃত্বে গুরুত্বপূর্ণ পাঁচটি বিষয়ে আলাদা কমিটি গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। নির্বাচনকালীন মাঠের আইনশৃঙ্খলা, মাঠ প্রশাসন, ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা, নির্বাচনি অনিয়ম তদন্ত ও প্রবাসী ভোট নিয়ে ইসির এসব কমিটি কাজ করবে।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual7 Ad Code