প্রকাশনার ১৬ বছর

রেজি নং: চ/৫৭৫

১৫ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
৩০শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
২৪শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

জুলাই আন্দোলনে রেহাই পায়নি নারী-শিশুরাও

editor
প্রকাশিত জুলাই ৩০, ২০২৫, ০২:০২ অপরাহ্ণ
জুলাই আন্দোলনে রেহাই পায়নি নারী-শিশুরাও

Manual8 Ad Code

 

প্রজন্ম ডেস্ক:

 

জুলাই আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের বিভিন্ন বাহিনীর পাশাপাশি অঙ্গসংগঠনের রাজনৈতিক নেতাকর্মীরা নানা নির্যাতন চালায়। এই হামলা- নির্যাতন থেকে বাদ পড়েনি নারী-শিশুরাও।

গত বছরের জুলাই আন্দোলনের নৃশংস ঘটনাগুলোর সঙ্গে নির্বিচারে গ্রেপ্তারের ঘটনাও তুলে ধরা হয়েছে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে দেওয়া আনুষ্ঠানিক অভিযোগপত্রে।

এই মামলায় আসামি করা হয়েছে তৎকালীন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল এবং পুলিশের তৎকালীন মহাপরিদর্শক চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুনকে। যদিও চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন এরইমধ্যে রাজসাক্ষী হয়েছেন।

ফরমাল চার্জ মোট ১৩৫ পৃষ্ঠার। এই ফরমাল চার্জ আদালতে তুলে ধরেন চিফ প্রসিকিউটর মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম, প্রসিকিউটর মো. আব্দুস সোবহান তরফদার, মো. মিজানুল ইসলাম যেটি সরাসরি সম্প্রচার করা হয়।

Manual2 Ad Code

জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনারের কার্যালয়ের প্রতিবেদনকে তথ্যসূত্র হিসেবে উল্লেখ করে বলা হয়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন কলেজের নারী শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার পাশাপাশি ঢাকার যাত্রাবাড়ী, উত্তরা, ধানমন্ডি, মিরপুর এবং ঢাকার বাইরে সাভার, কুমিল্লা, সিলেট ও রংপুরেও নারী বিক্ষোভকারীদের ওপর হামলা করা হয়।

অনুরূপভাবে তাদের নির্বিচারে গ্রেপ্তার, নির্যাতন ও অন্যান্য নিপীড়নের শিকার হতে হয়েছে। নারীরা যেন বিক্ষোভে অংশ না নিয়ে এবং নেতৃত্ব না দেয় তার জন্য এই নির্যাতন করা হয়। নারীদের শারীরিক নির্যাতনের লক্ষ্যে তাদের শরীরের বিভিন্ন স্থানে লক্ষ্য করে আঘাত করা হয়। আঘাত করার পাশাপাশি তাদের নারী পরিচয়ের কারণে লাঞ্ছিত করা হয়।

Manual5 Ad Code

পুলিশ, আওয়ামী লীগ, ছাত্রলীগসহ তাদের বিভিন্ন অঙ্গসংগঠনের কর্মীরা নারী বিক্ষোভকারীদের ধর্ষণ, বিবস্ত্র করে দেওয়া সহ বিভিন্ন যৌন হয়রানির হুমকি দেয়।

Manual5 Ad Code

এ ছাড়া নিরাপত্তা বাহিনী নির্বিচারে রাইফেল ও শটগানের প্রাণঘাতী গুলি ব্যবহার করে শিশু বিক্ষোভকারীদের হত্যা করেছে। উদাহরণস্বরূপ মোহাম্মদপুরে পুলিশ শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভকারী ও জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়।

এতে ১৭ বছর বয়সী এক নিরস্ত্র শিক্ষার্থী মাথায় গুলিবিদ্ধ হয়ে ১৯ জুলাই শহীদ হয়। ১৮ জুলাই ধানমন্ডিতে আরেক ১২ বছর বয়সী শিশু পুলিশের গুলিবর্ষণে প্রায় ২০০ এর মতো ধাতব গুলির পিলেট (সীসা বুলেট) শরীরে বিদ্ধ হয়ে অভ্যন্তরীণ রক্তক্ষরণে মারা যায়।

আরও অনেক শিশু আজীবনের জন্য পঙ্গুত্ববরণ করেছে, অনেক শিশু গুরুতরভাবে আহত হয়েছে। আওয়ামী লীগের সমর্থকদের গুলিতে ১৬ বছর বয়সী এক কিশোরের পায়ে গুলি লাগায় শেষ পর্যন্ত তার পা কেটে ফেলতে হয়। পুলিশের নির্বিচারে গুলিতে ধাতব পিলেটের (সীসা বুলেট) আঘাতে আরেক ১৭ বছর বয়সী কিশোরের উভয় চোখ অন্ধ হয়ে যায়।

Manual8 Ad Code

শহীদদের মধ্যে খুবই অল্প বয়সী শিশুও ছিল যারা বাবা-মায়ের সঙ্গে বিক্ষোভ স্থলে গিয়েছিলো বা ঘটনাস্থলের আশেপাশে দাঁড়িয়েছিল। নারায়ণগঞ্জে ছয় বছর বয়সী এক মেয়ে শিশু বাড়ির ছাদে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যায়।

শিশুদের যেন-তেন গ্রেপ্তার করে বিভিন্ন থানা, গোয়েন্দা কার্যালয় কিংবা কারাগারে প্রাপ্তবয়স্কদের সঙ্গে একই কক্ষে আটক রাখা হতো। সেখানে তাদের নির্যাতন ও অপদস্থ করা হতো এবং স্বীকারোক্তি আদায়ের লক্ষ্যে তাদের জবরদস্তিও করা হতো।

এসব ঘটনাসহ জুলাই আন্দোলনের পুরো ঘটনায় যৌথ দায় হিসেবে শেখ হাসিনাসহ তিনজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ নিবন্ধন (১২৭ নম্বর) করা হয়। ওই অভিযোগের প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন তদন্ত সংস্থার উপ-পরিচালক মো. জানে আলম খান। পরে তদন্ত করেন উপপরিচালক মো. আলমগীর (পিপিএম)।

সার্বিক সহযোগিতা করেছিলেন বিশেষ তদন্তকারী কর্মকর্তা তানভীর হাসান জোহা। এ ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা মো. আলমগীর ১২ মে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন। পরবর্তী সময়ে ৩১ মে সম্পূরক অভিযোগ দেওয়া হয়। ১ জুন আনুষ্ঠানিক অভিযোগ উপস্থাপন করা হয়।

গত ১০ জুলাই শেখ হাসিনার মামলায় অভিযোগ গঠন করা হয়। এ মামলায় আগামী ৩ আগস্ট সূচনা বক্তব্য এবং ৪ আগস্ট প্রথম সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেছেন ট্রাইব্যুনাল-১।

৫ আগস্টের পর ট্রাইব্যুনালে গত ২৫ জুন পর্যন্ত ২৭টি মামলা হয়েছে। এসব মামলায় সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ২০৬ জনকে আসামি করা হয়েছে। এর মধ্যে গ্রেপ্তার করা হয়েছে ৭৩ জনকে। কারাগারে মৃত্যু হয়েছে এক আসামির।

Sharing is caring!

Manual1 Ad Code
Manual5 Ad Code